২৬ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৪:৪৪:৩৯ পূর্বাহ্ন


দুই হাজার ডলারের ট্যারিফ চেক : ২০২৬ সালে সিদ্ধান্ত
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-১২-২০২৫
দুই হাজার ডলারের ট্যারিফ চেক : ২০২৬ সালে সিদ্ধান্ত ট্যারিফ চেক


মার্কিন নাগরিকদের জন্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রস্তাবিত ২ হাজার ডলারের শুল্কভিত্তিক (ট্যারিফ) রিবেট চেক বাস্তবায়ন হবে কি না, তা পুরোপুরি কংগ্রেসের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে বলে জানিয়েছেন হোয়াইট হাউসের শীর্ষ অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কেভিন হাসেট। ন্যাশনাল ইকোনমিক কাউন্সিলের পরিচালক কেভিন হাসেট ২১ ডিসেম্বর সিবিএসের ফেস দ্য ন্যাশন অনুষ্ঠানে বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন ২০২৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের জন্য ২ হাজার ডলারের ‘ট্যারিফ রিবেট চেক’ দেওয়ার একটি প্রস্তাব কংগ্রেসে উপস্থাপন করতে পারে। তার ভাষায়, সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং ফেডারেল সরকারের ঋত উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসায় এ ধরনের নগদ সহায়তার জন্য এখন পর্যাপ্ত সুযোগ তৈরি হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত কংগ্রেস কী সিদ্ধান্ত নেয়, তার ওপরই বিষয়টি নির্ভর করবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, কংগ্রেসে প্রয়োজনীয় আইন পাস না হলে এই রিবেট চেক কার্যকর করা সম্ভব নয়।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেও এবং ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্টসহ হোয়াইট হাউসের শীর্ষ কর্মকর্তারা কম ও মধ্যম আয়ের আমেরিকানদের জন্য ২ হাজার ডলারের এই অর্থ সহায়তার ধারণা সামনে এনেছেন। তাদের যুক্তি, শুল্ক (ট্যারিফ) থেকে অর্জিত রাজস্বের একটি অংশ সরাসরি সাধারণ মানুষের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া হলে ভোক্তা ব্যয় বাড়বে এবং সামগ্রিক অর্থনীতিতে গতি আসবে। তবে রিপাবলিকান দলের ভেতর থেকেই এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে আপত্তি উঠেছে। কংগ্রেসের কয়েকজন রিপাবলিকান নেতা মনে করছেন, ট্যারিফ থেকে প্রাপ্ত অর্থ নগদ চেক হিসেবে বিতরণ না করে জাতীয় ঋত কমানোর কাজে ব্যবহার করা উচিত।

গত জুলাই মাস থেকেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুল্ক থেকে অর্জিত রাজস্বের ভিত্তিতে কিছু মার্কিন নাগরিককে আর্থিক রিবেট দেওয়ার ধারণা প্রকাশ করে আসছেন। গত মাসে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেন-উচ্চ আয়ের ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে প্রতি ব্যক্তি কমপক্ষে ২ হাজার ডলারের একটি ডিভিডেন্ড দেওয়া হবে। এর আগে ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট জানান, সম্ভাব্য এ চেকগুলো বার্ষিক এক লাখ ডলারের কম আয় করা পরিবারগুলোর জন্য হতে পারে, যদিও বিষয়টি তখনো আলোচনাধীন ছিল।

কেভিন হাসেট বলেন, এ অর্থ বরাদ্দের জন্য কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন হবে এবং এটি সম্ভবত কর ব্যবস্থার মাধ্যমেই বাস্তবায়িত হবে। সে ক্ষেত্রে ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টকে চেক পাঠানোর ক্ষমতা দিয়ে নতুন আইন পাস করতে হবে। তবে সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এ প্রস্তাব বাস্তবায়নের সম্ভাবনা বাড়িয়েছে বলে মনে করছেন তিনি। হাসেট বলেন, আমরা প্রায় ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধির কয়েকটি ত্রৈমাসিক দেখেছি, টানা কয়েক মাস সরকার উদ্বৃত্ত বাজেট চালিয়েছে এবং গত বছরের তুলনায় বাজেট ঘাটতি প্রায় ৬০০ বিলিয়ন ডলার কমেছে। গ্রীষ্মে আমি নিশ্চিত ছিলাম না যে এমন চেক দেওয়ার অবস্থা আছে কি না, কিন্তু এখন আমি অনেকটাই নিশ্চিত। তিনি আরো বলেন, এই অর্থায়নের একটি বড় উৎস হতে পারে শুল্ক থেকে আসা রাজস্ব। তবে শেষ পর্যন্ত কর, শুল্ক ও অন্যান্য উৎস থেকে আসা রাজস্ব কীভাবে ব্যয় হবে, সে সিদ্ধান্ত কংগ্রেসই নেয়। এই মন্তব্য এমন এক সময়ে এসেছে, যখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শুল্ক নীতিকে তার প্রশাসনের অন্যতম বড় সাফল্য হিসেবে তুলে ধরছেন। প্রশাসনের দাবি, এ নীতির ফলে নতুন রাজস্ব এসেছে, যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন খাতে বিনিয়োগ বেড়েছে এবং চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে।

হাসেট জানান, চলতি বছরে আরোপিত অধিকাংশ শুল্ক কার্যকারিতা প্রমাণ করেছে। তবে তিনি স্বীকার করেন, কিছু ক্ষেত্রে সমন্বয়ের প্রয়োজন হতে পারে। বিশেষ করে যেসব পণ্য জলবায়ুগত বা বাস্তব কারণে যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন করা সম্ভব নয়, সেসব ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে। এ উদ্যোগে নেতৃত্ব দিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার। এদিকে ফেডারেল জরুরি ক্ষমতা আইনের আওতায় প্রেসিডেন্ট এককভাবে শুল্ক আরোপ করতে পারেন কি না, এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে চলমান মামলায় প্রশাসন জয়ী হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন হাসেট। তিনি বলেন, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, সুপ্রিম কোর্ট আমাদের পক্ষেই রায় দেবে। হাসেটের মতে, আদালত যদি ট্যারিফ অবৈধ ঘোষণা করেও, তবু ব্যাপক হারে শুল্ক ফেরত দেওয়ার নির্দেশ আসার সম্ভাবনা কম। কারণ বাস্তবে এই অর্থ ফেরত দেওয়া একটি বড় প্রশাসনিক সমস্যায় পরিণত হবে। তিনি ব্যাখ্যা করেন, যারা সরাসরি ট্যারিফ পরিশোধ করে। অর্থাৎ আমদানিকারকরা প্রথমে রিফান্ড পাওয়ার দাবিদার। এরপর সেই আমদানিকারককেই সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে অর্থ বণ্টনের দায়িত্ব নিতে হবে।

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট বর্তমানে ১৯৭৭ সালের ইন্টারন্যাশনাল ইমার্জেন্সি ইকোনমিক পাওয়ার্স অ্যাক্ট-এর আওতায় আরোপিত ট্রাম্প প্রশাসনের ট্যারিফের বৈধতা নিয়ে একটি চ্যালেঞ্জ বিবেচনা করছে। এর আগে দুটি নিম্ন আদালত এ আইন প্রয়োগের পদ্ধতি নিয়ে প্রশাসনের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছিল। এখন ৯ জন বিচারপতি সেই সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে কি না, তা নিয়ে শুনানি চালাচ্ছেন।

এদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট দুজনই ইঙ্গিত দিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টের রায় যাই হোক না কেন, ট্যারিফ কার্যকর রাখার জন্য সরকারের হাতে আরো বিকল্প পদ্ধতি রয়েছে। নভেম্বরের শুরুতে বেসেন্ট বলেন, যেসব দেশ তুলনামূলকভাবে বেশি মার্কিন ট্যারিফের মুখে পড়েছে, তাদের ক্ষেত্রে এ শুল্ক বহাল থাকবে। পাশাপাশি যেসব দেশ হোয়াইট হাউসের সঙ্গে চুক্তি করেছে, আদালতের রায় নির্বিশেষে তাদের সেই চুক্তির শর্ত মানতে হবে।

ডিসেম্বর ৭ তারিখে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ১৯৭৭ সালের আইনের আওতায় ট্যারিফ আরোপের বর্তমান পদ্ধতিই সবচেয়ে কার্যকর, কারণ এটি আরও সরাসরি, কম জটিল এবং অনেক দ্রুত। তবে একই সঙ্গে তিনি স্বীকার করেন, প্রয়োজনে যুক্তরাষ্ট্র্র সরকার ট্যারিফ আরোপের জন্য অন্যান্য পদ্ধতিও ব্যবহার করতে পারে। সব মিলিয়ে, ২ হাজার ডলারের ট্যারিফ রিবেট চেক এখনো প্রস্তাবের পর্যায়েই রয়েছে। কংগ্রেসের রাজনৈতিক সমর্থন, সুপ্রিম কোর্টের রায় এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি-এই তিনটি বিষয়ের ওপরই নির্ভর করছে আদৌ ২০২৬ সালে মার্কিন নাগরিকদের হাতে এই অর্থ পৌঁছবে কি না।

শেয়ার করুন