০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৪:১৫:১৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপ-নির্বাচন
এক উপ-নির্বাচনেও ইসির ভূমিকায় নানা প্রশ্ন...
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-০৫-২০২৩
এক উপ-নির্বাচনেও ইসির ভূমিকায় নানা প্রশ্ন...


চট্টগ্রাম-৮ আসনের (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনের উপনির্বাচন নিয়েও শুরু হয়ে গেছে নানান সমালোচনা। জাতীয় সংসদের একটি আসনে উপ-নির্বাচনে এমন বেহাল দেখে বিভিন্ন মহলের সমালোচনার ঝড় বইছে। অভিযোগের তীর এখন নির্বাচন কমিশনের উপর। প্রশ্ন উঠেছে মাঠের প্রধান বিরোধী দলের অংশগ্রহণ ছাড়াই একটি মাত্র আসনে অনুষ্ঠিত হয়েছে এই উপ-নির্বাচন। আর এই উপ-নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন যদি এধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় ব্যর্থ হয় তাহলে ৩০০ আসনের বেলায় কি হবে- এমন আলোচনাই এখন মাঠে। 

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক হিসাবে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) নেতা মইন উদ্দিন খান বাদল ২০১৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ২০১৯ সালের ৭ নভেম্বর মারা যান। তিনি মারা যাওয়ার পর ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারির উপনির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন মোছলেম উদ্দিন আহমদ। ৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর একটি হাসপাতালে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ-সদস্য মোছলেম উদ্দিন আহমদ মারা যান। এরপর আসনটি আবারও শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।

ইসির পদক্ষেপ

চট্টগ্রাম-৮ আসনের (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনের উপনির্বাচনের ভোট হয়ে গেছে গত ২৭ এপ্রিল। এ আসনে ভোটকেন্দ্র ১৯০টি। প্রধান বিরোধী না থাকলেও নির্বাচন কমিশন এর মধ্যে ৭৬ কেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) হিসাবে চিহ্নিত করেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১৭ জন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রাখা হয় বলে বলা হয়। অন্য দিকে সাধারণ কেন্দ্রের জন্য ১৬ জন করে পুলিশ সদস্য মোতায়েন রাখা হয়। ইসির পক্ষ থেকে বলা হয় সুষ্ঠু ভোটগ্রণের জন্য ২৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং ৩ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করেন। চার হাজার ৪৩২ জন কর্মকর্তা নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবেন। এরসঙ্গে আরও ৫ শতাংশ অতিরিক্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সব মিলে প্রায় ৪ হাজার ৬৫০ জন কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও প্রতিটি কেন্দ্রে পুলিশ-আনসারের সঙ্গে থাকে র‌্যাব। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে বিজিবি মোবাইল টিম দায়িত্ব পালন করে। প্রতিটি মোবাইল টিমে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করেন বলেই খবর বের হয়। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। 

কারা ছিলেন এই নির্বাচনে প্রার্থী..

৫ প্রার্থী ভোটের মাঠে ছিলেন। এরা হচ্ছেন- আওয়ামী লীগের প্রার্থী নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ (নৌকা), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের সেহাব উদ্দিন মোহাম্মদ আবদুস সামাদ (মোমবাতি), ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের অধ্যক্ষ এসএম ফরিদ উদ্দিন (চেয়ার), এনপিপির কামাল পাশা (আম), স্বতস্ত্র প্রার্থী মীর মো. রমজান আলী (একতারা)। তবে আওয়ামী লীগের নোমান আল মাহমুদ এবং ইসলামী ফ্রন্টের স উ ম আবদুস সামাদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে বলে ধারণা সাধারণ ভোটারদের।

একের পর এক অভিযোগ.. 

ভোটের দিন সকাল থেকেই শুরু হয় একের পর অভিযোগ। চট্টগ্রাম-৮ এই আসনের উপনির্বাচনে বোয়ালখালীর বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে মোমবাতি প্রতীকের এজেন্টদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া একই প্রতীকের এজেন্টদের কেন্দ্রে ঢুকতে না দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগ নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর লোকজনের বিরুদ্ধে, গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। ইসলামী ফ্রন্টের প্রার্থী সেহাব উদ্দিন মুহাম্মদ আবদুস সামাদের (মোমবাতি প্রতীক) এজেন্টদের অভিযোগ, বোয়ালখালীর পোপাদিয়ার খাজা গরীবে নেওয়াজ প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শহীদ রফিক স্মৃতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে তাদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া বোয়ালখালীর সারোয়াতলী ইব্রাহিম নুর মোহাম্মদ হাইস্কুল, ধোরলা কিশোর সংঘ প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরণদ্বীপ ঘাটিয়াইল পাড়া কেন্দ্র, পশ্চিম কধুরখীল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, পশ্চিম কধুরখীল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কধুরখীল ইউনাইটেড মুসলিম হাইস্কুল ও বেঙ্গরা কে বি কে বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে মোমবাতি প্রতীকের এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়। সকাল পৌনে ১০টার দিকে সেহাব উদ্দিন বিভিন্ন গণমাধ্যমে জানান, ‘কয়েকটি কেন্দ্রে আমার এজেন্টদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। কিছু কেন্দ্র থেকে এজেন্ট বের করে দেওয়া হয়েছে। ভোটারদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। কয়েকটি কেন্দ্রের গোপন কক্ষে আওয়ামী লীগের নেতারা বাটন টিপে দিচ্ছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তাকে ভোট স্থগিত করার অনুরোধ করেছি।’ অবশ্য এ বিষয়ে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘পোপাদিয়ায় কেন্দ্র থেকে এজেন্ট (মোমবাতি প্রতীক) বের করে দেওয়ার অভিযোগ পেয়ে যাচাই করে দেখেছি। পরে একটি কেন্দ্রে মোমবাতির এজেন্টকে ঢুকিয়ে দিয়েছি। এ ছাড়া অন্য কোনো অভিযোগ এখনো সেভাবে পাইনি।’ এদিকে নির্বাচনে আগে ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের প্রার্থী এস এম ফরিদ উদ্দিন আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছিলেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে সংশয়ে আছি। আমাদের পোস্টার-ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। ভোটের প্রতি ভোটারের আগ্রহ সৃষ্টির দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনকে নিতে হবে। অপরদিকে সন্যাশনাল পিপলস পার্টির প্রার্থী অধ্যাপক কামাল পাশা বলেছিলেন, নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে আমি শঙ্কিত। সরকারি দলের নেতাকর্মীরা বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। আমাদের পোস্টার-ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। প্রশাসনকে ভোটাররা যাতে নির্ভয়ে কেন্দ্রে আসতে পারে সে ব্যবস্থা নিতে হবে। এদিকে নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মধ্যে তেমন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না।

জয় হলো আওয়ামী লীগের

দিন শেষে ভোটের ফলাফলে চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনের উপ নির্বাচনে বেসরকারিভাবে জয়ী হন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নোমান আল মাহমুদ। অনুষ্ঠিত উপ নির্বাচনে তিনি ৬৭ হাজার ২০৫ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামী ফ্রন্টের মোমবাতি প্রতীকের প্রার্থী সেহাব উদ্দিন মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ পেয়েছেন ৫ হাজার ৮৭ ভোট। এই আসনের মোট ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ১৭ হাজার ৬৫২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৬৩ হাজার ৫৪৩ জন, নারী ২ লাখ ৫৪ হাজার ১০৯ জন। অন্যদিকে ইসলামী ফ্রন্টের মোমবাতি প্রতীকের প্রার্থী সেহাব উদ্দিন মুহাম্মদ আব্দুস সামাদ পেয়েছেন ৫ হাজার ৮৭ ভোট, ইসলামিক ফ্রন্টের চেয়ার প্রতীকের প্রার্থী সৈয়দ মুহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন ১ হাজার ৮৬০ ভোট, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপির আম প্রতীকের প্রার্থী কামাল পাশা পেয়েছেন ৬৭৩ এবং একতারা প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী রমজান আলী পেয়েছেন ৪৮০ ভোট। 

ভোটের পরে প্রতিক্রিয়া...

চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, প্রভাবমুক্ত নয় উল্লেখ করে পুনরায় নির্বাচন দাবি করে পৃথক প্রেস ব্রিফং করেছেন ইসলামী ফ্রন্টের প্রার্থী সেহাব উদ্দিন মুহাম্মদ আবদুস সামাদ (মোমবাতি প্রতীক) ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির প্রার্থী কামাল পাশা (আম প্রতীক)। তারা ঔইদিন বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় ইসলামী ফ্রন্টের প্রার্থী সেহাব উদ্দিন মুহাম্মদ আবদুস সামাদ সাংবাদিকদের বলেন, সকাল থেকে ৬ দফায় রিটানিং অফিসারের কাছে অভিযোগ জানালেও তিনি অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত অভিযোগ গ্রহণ করেননি। অভিযোগ গ্রহণ করার পরও তিনি অভিযোগের বিষয়ে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। তিনি বলেন, রিটানিং অফিসারের এই ব্যর্থতা নির্বাচনকে কুলষিত করেছে। নির্বাচন কার্যক্রমকে অকার্যকর করেছে। সরকার এ নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, প্রভাবমুক্ত, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য যথেষ্ট আন্তরিক ছিল। রাজনৈতিক দলের কিছু নেতা, কথিত জনপ্রতিনিধি এ নির্বাচন ধূলিসাৎ করেছে। 

জাতির কাছে সরকারকে বিতর্কিত করেছে উল্লেখ করে তিনি এই নির্বাচনের ফলাফল স্থগিত রাখার দাবি জানান। আবদুস সামাদ অভিযোগ করেন, উপজেলার কে বি কে উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ১২টার দিকে মাওলানা তাজুল ইসলাম মোমবাতি প্রতীকে ভোট দেওয়ায় স্থানীয় মেম্বার আব্বাস উদ্দিন ও আওয়ামী লীগ নেতা সেলিম তাকে মারধর করেন। চরণদ্বীপ আব্বাসীয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মোমবাতি প্রতীকে ভোট দেওয়ায় দুপুর আড়াইটার দিকে ইসলামী ফ্রন্ট ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সুমন ফরুকীকে কুপিয়ে এবং মো. তারেক ও হারুনুর রশীদকে মারধর করে মারাত্মকভাবে আহত করেন। তিনি বলেন, ভোট কেন্দ্রে অবাঞ্ছিত ব্যক্তিরা বাটন টিপে ভোটারদের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। এ আসনের নগর অংশে শতকরা ২-৩ ভাগ ও বোয়ালখালী অংশে ৫-৭ ভাগ ভোটার ভোট দিয়েছেন সুতরাং এ নির্বাচন কখনোই গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পারে না। এ নির্বাচনের ফলাফল স্থগিত করে পুনরায় একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দাবি করে তিনি বলেন, নির্বাচন বর্জন করিনি, শেষ পর্যন্ত আছি। অপরদিকে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির প্রার্থী কামাল পাশা (আম প্রতীক) এ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পরে না উল্লেখ করে বলেন, আমি নির্বাচন বর্জন করিনি তবে পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি।  

গণমাধ্যমের প্রতিবেদন নির্বাচন নিয়ে

বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তারা সরেজমিনে গিয়ে দেখেছে যে, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও নৌকার প্রার্থীর এজেন্টরা কেন্দ্রে কেন্দ্রে আসা-যাওয়া করছেন। তাঁদের কেউ কেউ ভোটারের সঙ্গে ভোট প্রদানের গোপন কক্ষেও ঢুকছেন। প্রতিবেদনে বলা হয় বেলা ১১টায় পোপাদিয়া ওয়ারেছ মোহছেনা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে দেখা যায়, নৌকা প্রতীক ছাড়া মোমবাতি কিংবা অন্য কোনো প্রতীকের এজেন্ট নেই। এজেন্ট না থাকার বিষয়ে লিটন কুমার চৌধুরী নামের এক নির্বাচনী কর্মকর্তার ভাষ্য, কেউ আসেননি। এই কেন্দ্রে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি মিজানুর রহমান ও আওয়ামী লীগ নেতা মেজবাহ উদ্দিন ভোটারদের আনা-নেওয়ার বিষয়টি তদারক করছিলেন। ভেতরে গোপন কক্ষে ঢুকছিলেন নৌকার এজেন্টরা। তবে কারও নৌকার ব্যাজ নেই। এজেন্টদের বুকেও নেই পরিচিতি ফলক। এটা এবারের নির্বাচনে নতুন চিত্র। বলা হয় নৌকা ছাড়া অন্য প্রার্থীর এজেন্টশূন্য ভোটের। প্রতিবেদনে বলা হয় পোপাদিয়া শহীদ রফিক স্মৃতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেখা যায়, ভোটের সব কক্ষে নৌকার এজেন্টের পাশাপাশি বহিরাগত দু-একজন করে ভোটারদের প্রভাবিত করছেন। এই কেন্দ্রের গোপন কক্ষে ভোটারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক অপর এক ব্যক্তির উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। কক্ষের বাইরে থেকে গোপন কক্ষে একাধিক ব্যক্তির উপস্থিতির ছবি তুলতে গেলে বাধা দেন কর্তব্যরত পুলিশ সদস্য। এই কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণে ছিলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মো. আলমগীর। কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা উৎপল রায় বলেন, ভোটার আসছেন এক-দুজন করে। অন্য কারও এজেন্ট আসেননি, নৌকা ছাড়া।

ফলাফল বিশ্লেষণ..

এদিকে চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনের উপনির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বড় জয় পেলেও তাদের ভোট কমে গেছে বলে বলা হয়েছে। ২০১৯ সালের ৭ নভেম্বর জাসদের কার্যকরি সভাপতি মইন উদ্দীন খান বাদলের মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিএনপির সঙ্গে লড়ে যে সংখ্যক ভোট পেয়েছিলেন, এবারের প্রার্থী তার চেয়ে ২০ হাজার ৪১ ভোট কম পেয়েছেন। তবে আগেরবার বিএনপি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পরও আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রয়াত মোছলেম উদ্দিন আহমদ পেয়েছিলেন ৮৭ হাজার ২৪৬ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আবু সুফিয়ান ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছিলেন ১৭ হাজার ৯৩৫ ভোট। অবশ্য এবার ভোটও পড়েছে কম। ৫ লাখ ১৭ হাজার ৬৫২ ভোটারের মধ্যে মাত্র ৭৫ হাজার ৩০৫ জন ভোট দিয়েছেন। ভোটের হার ১৪ দশমিক ৫৪ শতাংশ। গত উপনির্বাচনে এ হার ছিল ২২ দশমিক ৯৪ শতাংশ।

ভোটার উপস্থিতি কমে কমিশনকে দুষলেন দুই প্রার্থী

চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনের উপনির্বাচনে ভোট পড়েছে ১৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এত কমসংখ্যক ভোটারের উপস্থিতিতে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নোমান আল মাহমুদ। ৫ লাখ ১৭ হাজার ৯৫২ ভোটারের আসনটিতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী পেয়েছেন ৬৭ হাজার ২০৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের স উ ম আবদুস সামাদ পেয়েছেন ৫ হাজার ৮৭ ভোট।

শেষ কথা..

বিএনপির উদ্দেশে ইসি মো, আলমগীর সম্প্রতি আহবান জানিয়ে বলেছিলেন, এ পর্যন্ত ভালো কাজ করে যাচ্ছি এবং আগামীতেও ভালো কাজ করব। সব সময় আমাদের আহ্বান থাকবে যে, আপনারা নির্বাচনে অংশ নেন, আমাদের পরীক্ষা নেন। আপনারা তো আমাদের পরীক্ষাই নিচ্ছেন না। পরীক্ষা না নিয়েই আমরা যে অকৃতকার্য হলাম, কীভাবে আপনারা বুঝলেন? আমরা পরীক্ষা দিতে প্রস্তুতি সব সময়। তার এই ধরনের বক্তব্যে পর চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনের উপনির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের তৎপরতায় খোদ এই নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীরাই তাদের বক্তব্য দিয়ে স্পস্ট করেছে বাস্তব পরিস্থিতি। কারণ চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনের উপনির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থীরাই বলেছেন, রিটানিং অফিসারের এই ব্যর্থতা নির্বাচনকে কুলষিত করেছে। নির্বাচন কার্যক্রমকে অকার্যকর করেছে। তাদের মতে, সরকার এ নির্বাচনকে অবাধ-সুষ্ঠু-প্রভাবমুক্ত-নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য যথেষ্ট আন্তরিক ছিল। রাজনৈতিক দলের কিছু নেতা-কথিত জনপ্রতিনিধি এ নির্বাচন ধূলিসাৎ করেছে। জাতির কাছে সরকারকে বিতর্কিত করেছে উল্লেখ করে তারা এই নির্বাচনের ফলাফল স্থগিত রাখার দাবি জানান। বাংলাদেশ বিষয়ে সর্বত্র আলোচিত হচ্ছে যে আন্তর্জাতিক মহল এখানে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে। আর ঠিক তখনই এমন একটি উপ-নির্বাচনে সাধারণ প্রার্থীদের এমন অভিযোগেই বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে সরকার। তাছাড়া অভিযোগ উঠেছে এবারের উপনির্বাচনে কেন এত কম ভোট পড়ল? প্রার্থীদের দুজন এজন্যও দুষেছেন নির্বাচন কমিশনকে। তাদের অভিযোগ, কমিশন ভোটারদের আস্থা ফেরাতে পারেনি। 

ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ হয়েছে আসনটিতে। এ ক্ষেত্রে নির্বাচনের আগেই প্রতিটি কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের দাবি উঠেছিল। যা শেষ পর্যন্ত কার ইশারায় তা বাস্তবায়িত হয়নি? সে প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকা এবং ভোটকেন্দ্রের সামনে একটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের মহড়া দেওয়াসহ নানা কারণে ভোটাররা কেন্দ্রে যেতে আগ্রহী হননি বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এজন্য সেক্ষেত্রে ৩০০ আসনে নির্বাচন কমিশন আসলে কতটা সফল হবে বা পরীক্ষায় পাস করবে সে-আলোচনাই এখন সর্বত্র। কেননা আর মাত্র কয়েক মাস পর দেশে একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। আর এর আগে চট্টগ্রাম-৮ আসনের (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনের উপনির্বাচনটি ছিল ইসি’র জন্য সর্বশেষ পরীক্ষা.. যদিও সামনে ৫টি সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন আছে। তবে সংসদীয় আসনে এমন নির্বাচনেও বির্তক সরকারকে যেমন বেকায়দায় ফেলেছে অন্যদিনে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বিএনপি’কে পরীক্ষায় আসার আহবান হাস্যকর ঠেকেছে অনেকের কাছে।

শেয়ার করুন