যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন আদালতের বাইরে মাইগ্র্যান্টদের গ্রেফতারের একটি নতুন অভিযান শুরু করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) অফিসারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যেসব মাইগ্র্যান্টদের বিরুদ্ধে আদালত নির্বাসনের আদেশ দিয়েছে বা প্রসিকিউটররা আদালতকে তাদের মামলা বাতিলের অনুরোধ করেছে। তার পর তারা আদালত থাকে বার হওয়ার পর তাদের গ্রেফতার করছে । নিউ ইয়র্ক, ফিনিক্স, সিয়াটেল, শিকাগো, মিয়ামিসহ বড় বড় শহরে এ ধরনের গ্রেফতার অভিযান চলছে। অনেক অভিবাসন আইনজীবী বলছেন, তারা নিজেদের ক্লায়েন্টদের এই অভিযান দেখে অবাক হয়েছেন, কারণ তারা আইন মেনে আদালতে হাজির হয়েছেন। এই সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রব্যাপী বিভিন্ন আদালতে মুখোশধারী আইসি এজেন্টরা হাজির হয়েছেন এবং যারা নির্ধারিত শুনানির জন্য আদালতে এসেছিলেন তাদেরকে অবাক করে গ্রেফতার করেছে। এই নতুন নির্দেশিকার মাধ্যমে দ্রুত নির্বাসনের জন্য আদালত প্রক্রিয়া এড়িয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
ভিতরে থাকা বেশ কিছু রাজ্যের মধ্যে অ্যারিজোনা ও ভার্জিনিয়াতে এই অভিযান চালানো হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ দলিলের ভিত্তিতে জানা গেছে, ট্রাম্প প্রশাসন তাদের মামলা বাতিল হওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রে দুই বছরের কম সময় অবস্থানকারী মাইগ্র্যান্টদের ত্বরিত নির্বাসন প্রক্রিয়ায় দ্রুত নির্বাসনের আওতায় আনবে, যেখানে কোনো বিচারকের সামনে শুনানি হবে না।
গত জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে ‘ত্বরিত নির্বাসন’ প্রক্রিয়া সম্প্রসারণ করেন, যার মাধ্যমে দ্রুত নির্বাসন সম্ভব হয়। তবে যারা আশ্রয় আবেদন করেন এবং সেই আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়, তারা সীমিত মাত্রায় একটি সংক্ষিপ্ত বিচারিক পর্যালোচনা পেতে পারেন। ঐতিহাসিকভাবে, এই প্রক্রিয়াটি সীমান্তের কাছে সীমাবদ্ধ ছিল, কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন এবার দেশের অভ্যন্তরেও এর ব্যবহার বাড়িয়েছে।
এই নীতির বিরুদ্ধে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (এসিএলইউ) ও অন্যান্য সংগঠনরা আদালতে মামলা করেছেন, কারণ তারা মনে করেন এটি অভিবাসীদের সংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন করছে। তারা বলছেন, আশ্রয়প্রার্থী অভিবাসীরা তাদের নির্বাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারবে না এবং তাদের জন্য প্রক্রিয়াটি অনেকটাই ট্রাফিক টিকিটের মতো সহজ সরল। তবে এসব মামলা বিচারাধীন থাকলেও, ট্রাম্প প্রশাসন অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন শহরে হাজার হাজার মাইগ্র্যান্টের মামলা বাতিল করা হয়েছে, এরপর তাদেরকে আদালত থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ফেডারেল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার করছে।
অ্যারিজোনার অভিবাসন আইনজীবী মাইকেল হিরম্যানের একটি ক্লায়েন্ট ভেনেজুয়েলার এক সাবেক সামরিক কর্মকর্তা, যিনি দেশে দমনমূলক সরকারের বিরুদ্ধে আশ্রয়ের আবেদন করেছিলেন, হঠাৎ করেই মামলাটি বাতিল হয়ে গেল এবং আদালত থেকে বের হওয়ার পর তার গ্রেফতার করা হয়। ক্যালিফোর্নিয়ার অভিবাসন অধিকার সংস্থার আইনজীবী মেলিসা শেপার্ড এই গ্রেফতার অভিযানকে সম্প্রদায়ের মাঝে ভয় ছড়ানোর নির্মম কৌশল” হিসেবে অভিহিত করেছেন।
বাইডেন প্রশাসন আমলা ও অপরাধীদের নির্বাসনে গুরুত্ব দেয়ার কারণে কিছু কেস বাতিল করেছিল এবং সাধারণত আদালতের বাইরে গ্রেফতার না করার নীতি পালন করেছিল। তবে ট্রাম্প প্রশাসন এই নীতিকে উল্টো পথে পরিচালিত করছে।আইনজীবী ও বিচারকরা উদ্বিগ্ন যে, এই ধরনের দ্রুত নির্বাসন ব্যবস্থা আমেরিকার বিচার ব্যবস্থার ন্যায় বিচার প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং অভিবাসীদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করবে। ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতি কঠোর ও ব্যাপক। জাতীয় সীমান্তে জরুরি অবস্থা ঘোষণা, শত শত সৈন্য মোতায়েন, জন্মগত নাগরিকত্ব বন্ধ করার চেষ্টা, আশ্রয় প্রক্রিয়া সীমিতকরণ, এবং ভেনেজুয়েলার প্রায় ৩৫০,০০০ শরণার্থীকে মানবিক সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত করার মতো নীতিগুলো অভিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে।
সার্বিকভাবে, ট্রাম্প প্রশাসনের লক্ষ্য প্রতি বছর কয়েক মিলিয়ন অননুমোদিত অভিবাসীকে নির্বাসিত করা, যা বাস্তবায়নের জন্য প্রশাসন বিভিন্ন ফেডারেল এজেন্সির সহযোগিতায় গ্রেফতার ও নির্বাসন কর্মসূচি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করেছে।
নিউইয়র্ক সিটির পাবলিক স্কুলের ছাত্রকে গ্রেফতার করল ফেডারেল অভিবাসন কর্তৃপক্ষ
নিউইয়র্ক সিটির এক পাবলিক স্কুলের ছাত্রকে গত সপ্তাহে তার আশ্রয় মামলার শুনানির পর ফেডারেল অভিবাসন কর্তৃপক্ষ গ্রেফতার করেছে। তার পরিবার ও আইনজীবীরা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
২০ বছর বয়সী ডিলান (পরিবারের অনুরোধে নাম গোপন রাখা হয়েছে) বর্তমানে ব্রঙ্কসের ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ লার্নার্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল সাপোর্ট প্রিপারেটরি একাডেমির ছাত্র। এটি একটি বিকল্প হাই স্কুল যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে এক বছরের কম সময় থাকা এবং ইংরেজিতে পারদর্শী নন এমন তরুণদের পড়ানো হয়। ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) এজেন্টরা বুধবার ২৬ ফেডারেল প্লাজার লবিতে অবস্থিত লিফটের বাইরে ডিলানকে গ্রেফতার করে। ডিলান তার মামলার শুনানি শেষে আদালত থেকে মুক্তি পাওয়ার কয়েক মুহূর্তের মধ্যে আটক হন। গ্রেফতারের সময় তিনি তার মায়ের সঙ্গে ছিলেন এবং পরে একটি ভ্যানে তুলে নেওয়া হয়। নিউ ইয়র্ক লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স গ্রুপ এক বিবৃতিতে জানায়, ডিলান এখানে একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন যাপন করছে। সে পড়াশোনা করে, কাজ করে, বন্ধু বানিয়েছে এবং অভিবাসন বিচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পূর্ণরূপে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল। এই ধরনের অভিযান শুধু সম্প্রদায়কে ব্যাহত করে এবং অপ্রয়োজনীয়ভাবে মানুষকে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ফেলে।
ডিলানের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, আদালত তার মামলাটি বাতিল করার পর তার আশ্রয় আবেদনও বাতিল হয়ে যাওয়ায় তাকে গ্রেফতারের মুখোমুখি হতে হয়েছে। বর্তমানে তিনি পেনসিলভানিয়ার একটি অভিবাসন আটক কেন্দ্রে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত কয়েক মাসে তাকে টেক্সাস, লুইজিয়ানা ও নিউ জার্সি’র বিভিন্ন কেন্দ্রের মধ্যে স্থানান্তর করা হয়েছে, যার ফলে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
নিউইয়র্ক সিটির পাবলিক স্কুল কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে যে গ্রেফতারের সময় ডিলান স্কুলের অভ্যন্তরে ছিলেন না। নিউইয়র্ক সিটি স্কুলের চ্যান্সেলর মেলিসা অ্যাভিলেস-রামোস সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, আমাদের হৃদয় গ্রেফতার হওয়া ছাত্র এবং তার পরিবারের জন্য ব্যথিত। আমরা আমাদের সমস্ত ছাত্রের নিরাপত্তা, মর্যাদা ও অধিকার রক্ষার জন্য অবিরত সচেষ্ট থাকবো।
অভিবাসন ও শিক্ষা অধিকার প্রতিষ্ঠানের অন্যতম সহ-প্রতিষ্ঠাতা নাভিদ হাসান বলেছেন, যারা আইন মেনে তাদের কোর্ট ডেটে হাজির হচ্ছেন, তাদের এখন উদ্বিগ্ন হতে হবে যে তারা কখনোই তার বৈধ অবস্থা হারাতে পারেন। এই ঘটনা সম্প্রদায়ের মধ্যে ভয় ও অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করছে।ডিলানের পরিবারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে যে, শুক্রবার তার একটি পারিবারিক আদালতের শুনানি রয়েছে রয়েছে, যেখানে তিনি বিশেষ অভিবাসী কিশোর অধিকার পাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন,ফলে এ আইনে তাকে গ্রিন কার্ড পাওয়ার পথ খুলে দিতে পারে।ফেডারেল ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ আইসি থেকে এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।