০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ১১:১৬:১২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


লজ্জা! আহা লজ্জা!!
হাবিব রহমান
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-০৭-২০২৪
লজ্জা! আহা লজ্জা!!


সম্প্রতি হাঁটু ব্যথায় আক্রান্ত হওয়ায় পাশেই বাংলাদেশি বিপণিকেন্দ্র স্টারলিং অ্যাভিনিউতে যাওয়ার জন্য বাস ব্যবহার করি। যাওয়ার সময় আমার বাসার পাশের বাস স্টেশন এবং ফেরার পথে স্টারলিং অ্যাভিনিউতে প্রচুর বাংলাদেশি ভিড় করেন বাসে ওঠার জন্য। খুবই অবাক হই তাদের প্রায় ৯০ শতাংশ মাঝের বা পেছনের দরজা ব্যবহার করেন। সামনের দরজা ফাঁকা থাকায় স্বচ্ছন্দ্যে আমি ওখান দিয়েই বাসে উঠি। মাঝে একদিন ব্যাপারটা দৃষ্টিতে এলো। সবাই মাঝে এবং পেছনের দরজায় গাদাগাদি করে, তারপরও সামনে আসে না কেন? শেষে অনুধাবন করলাম, সামনের গেটে তো ড্রাইভার বসা থাকে। ওখান দিয়ে বাসভাড়া না দিয়ে বাসে উঠলে ড্রাইভারের চোখের সামনে দিয়ে উঠতে হয়। ভাড়া না দিলেও চক্ষুলজ্জা বলে একটা কথা আছে তো! কিন্তু একটা প্রশ্ন থেকেই যায়। এ বাসযাত্রী বাবা-মার অনেকের সঙ্গে বাচ্চারাও থাকে। তারা কি শিখছে? শিখছে ভাড়া ফাঁকি দেওয়া। আরো কড়া ভাষায় বলতে গেলে চুরি। এসব অভিভাবকের কাছে আমার প্রশ্ন-আপনাদের বাচ্চাদের কি শেখাচ্ছেন? রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বলছেন, পরিবার হচ্ছে নাগরিক গুণ অর্জনের প্রাথমিক শিক্ষাগার। আসুন না, আমাদের সন্তানদের চুরি, প্রতারণা না শিখিয়ে ভালো কিছু শিখাই!

কাকের মাংস কাকে খায় না-খায়!

কাক সাধারণত ময়লা আবর্জনা থেকে তার খাবার সংগ্রহ করে। খাওয়ার ব্যাপারে কাকের তেমন একটা বাছবিচার নেই। খাওয়ার ব্যাপারে বাছবিচার না থাকলেও এক কাক কিন্তু অন্য কাকের মাংস খায় না। এ ব্যাপারে কাকের নীতিবোধ ও নৈতিকতা প্রবল। কাকের অপর একটি বৈশিষ্ট্য হলো-কাক খুব বেশি সমব্যথী। বাংলাদেশে দেখেছি যে কোনো দুর্ঘটনায় একটি কাকের মৃত্যু ঘটলে আশপাশের সব কাক সে কাকটিকে ঘিরে কা কা রবে সমবেদনা জানাতে থাকে। আবার দেখা যায়, একটি কাক অন্য কোনো পাখি বা প্রাণী দ্বারা আক্রান্ত হলে অপরাপর কাক সম্মিলিতভাবে আক্রান্ত কাকের প্রতিরক্ষায় এগিয়ে এসে আক্রান্তকারীকে প্রতিহত করতে সচেষ্ট হয়। ‘কাকের মাংস কাকে খায় না’-এ প্রবাদটির সঙ্গে আমাদের দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের পরিচয় রয়েছে। সাধারণ্যে এ বাক্যটি ব্যাপকভাবে উচ্চারিত হয়। এ বাক্যটির ভাবার্থ হলো স্বজাতির কেউ ক্ষতি করে না, বরং যে কোনো ধরনের বিপদে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। দেখা যায় স্রষ্টার সৃষ্টি অবোধ প্রাণীও তার জাতি ভাইয়ের মর্যাদা বোঝে। একে অন্যের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করে। কিন্তু স্রষ্টার সেরা সৃষ্টি মানুষ কি তা মনে করে!

এ কাক প্রসঙ্গটা এলো বিশেষ একটা কারণে। গত ৪ জুলাই নিউইয়র্কে একটি সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলাম। উপস্থাপক একপর্যায়ে বললেন, এখানে কয়েকজন সুযোগ্য সম্পাদক উপস্থিত আছেন..ইত্যাদি ইত্যাদি। তখন নিউইয়র্কের একজন সাংবাদিক তীব্র ভাষায় এর প্রতিবাদ জানান। তার ভাষায় কেন তাদের সুযোগ্য বলা হলো, অন্যরা তাহলে কি অযোগ্য! এজন্য উপস্থাপককে ক্ষমা চাইতে বললেন। তার এ প্রতিক্রিয়ায় অনেকেই বিস্মিত হলেন। যেসব সম্পাদককে সুযোগ্য বলা হয়েছে, তাদের প্রত্যেকের সাংবাদিকতার ক্যারিয়ার ৪০-৫০ বছরের। আর তাদের পেশা একটাই, তাহলো সাংবাদিকতা। তাদের কেউ সারাজীবন সাংবাদিকতা পেশার বাইরে অন্যকিছু করেননি। আর এখনো একই পেশায় নিয়োজিত আছেন। আর যিনি এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন তিনি পেশায় একজন ফুলটাইম চাকরিজীবী আর পার্টটাইম সাংবাদিক।

আরো একটা কথা হলো, তারা কেউই উপস্থাপককে শিখিয়ে দেননি, তাদের সুযোগ্য বলার জন্য। যদি উপস্থাপকের ভুলেও হয়, তাহলে অনুষ্ঠান শেষে একান্তে তাকে ডেকে এ কথাটা বলতে পারতেন। উপস্থাপকের ভুলে যদি এটা হয়েও থাকে, তারপরও এভাবে ওপেন ফোরামে এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা কতটুকু যৌক্তিক? এতে সিনিয়র সাংবাদিক-সম্পাদকদের ইনসাল্ট করা হয় কি না তাকি তিনি একবারও ভেবেছেন?

এ প্রসঙ্গে ছোট্ট একটা ঘটনার কথা আমার মনে পড়ছে। বাঙালি মুসলিম পুনর্জাগরণের প্রবক্তাদের একজন ছিলেন লেখক ও কবি সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী। অনলবর্ষী বক্তা হিসেবে তিনি সুপরিচিত ছিলেন। একটা সভায় তিনি প্রধান অতিথি ছিলেন। আমার আব্বা তখন ছাত্র। সে সভায় তার বক্তৃতা দেওয়ার সুযোগ হয়েছিল। তিনি তার বক্তৃতায় একপর্যায়ে বললেন, মুসলিম সমাজের আজ এতো ‘অধরপতন’ কেন.. ইত্যাদি ইত্যাদি।

বক্তৃতা শেষ করে স্টেজ থেকে নামার সময় আমার আব্বাকে কাছে ডাকলেন সিরাজী সাহেব। কানে কানে তিনি বললেন, তুমি তোমার বক্তৃতায় ‘অধরপতন’ শব্দটি বলেছো। এটা ভুল। সঠিক শব্দ হলো ‘অধঃপতন’। কি সীমাহীন ভদ্রতা! কি তার সৌজন্য! একজন সামান্য ছাত্রের ভুলটাও তাকে জনসমক্ষে না বলে, কেমন চমৎকারভাবে শুধরে দিলেন! আমার আব্বা সারা জীবন সিরাজী সাহেবের এই বদান্যতার কথা সময় সুযোগ পেলেই বলতেন।

আর কি দুর্ভাগ্য আমাদের! আমরা যে কোনো ছুতোয় যে কাউকে অপমান, অপদস্থ করেই যেন আনন্দ পাই। খুশি হই। তিনি সিনিয়র বা জুনিয়র যে কেউই হোন না কেন!!

রঙ্গ ভরা ভঙ্গ ফোবানা

দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশনস ইন নর্থ আমেরিকা (ফোবানা)। আগামী লেবার ডে উইকেন্ডে আবার আসর বসবে। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসে নামে-বেনামে দুটি, কানাডার টরন্টোতে দুটি এবং মন্ট্রিয়লে বিভক্ত একটি গ্রুপের পৃথক সম্মেলন হয়েছে। নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব আর প্রতিহিংসার ফলে গত ৩৭ বছরে ছয় টুকরা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশিদের জনপ্রিয় ও মিলনমেলাখ্যাত এই ফোবানা সম্মেলন। এ বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের ফোবানা সম্মেলন হবে নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি, মেরিল্যান্ড, মিশিগান ও টেক্সাসে। প্রবাসে বাংলাদেশের ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির প্রসারে প্রায় চার দশক আগে গঠিত ঐক্যবদ্ধ ফোবানা নেতৃত্বের কোন্দলে এখন টুকরো টুকরো। এক সময় যুক্তরাষ্ট্রে আসার জন্য ফোবানার একটি আমন্ত্রণপত্রই যথেষ্ট ছিল। এ আমন্ত্রণপত্র পেতে মোটা অঙ্কের আর্থিক লেনদেন হতো। আর এসব কারণেই গত ৩৭ বছরে ফোবানা ভেঙেছে। ফোবানা নামের সংগঠনটি নর্থ আমেরিকা তথা, যুক্তরাষ্ট্রে এখন বিভক্তের মডেল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। সংগঠনটি হওয়ার কথা ছিল প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির ঐক্য ও সংহতির প্রতীক। তা এখন অনৈক্য ও বিভক্তির মডেল। প্রতি বছর ফোবানা সম্মেলনের আগে অনেক প্রশ্ন এসে জমা হয়। কিন্তু উত্তর মেলে না। তিন যুগের বেশি সময় ধরে আয়োজিত এই ফোবানা অনুষ্ঠান থেকে কমিউনিটির প্রাপ্তি কতটুকু। কমিউনিটির কল্যাণের জন্য কী করেছে সংগঠনটি বা আয়োজকরা? এমন অনেক যৌক্তিক প্রশ্ন নিয়ে তীব্র সমালোচনায় চায়ের কাপে ঝড় ওঠে কমিউনিটিতে। কিন্তু ফলাফল কূন্য। প্রতি বছর ফোবানা বিভক্ত হয়েছে ব্যক্তিস্বার্থ, নেতৃত্বের কোন্দল, অর্থ আত্মসাৎ-এসব কারণে। হয়েছে মামলা-মোকদ্দমা। তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে আদম পাচারের অভিযোগও। অনেক প্রবাসী মনে করেন, দলাদলি বাদ দিয়ে এক সঙ্গে কাজ করলে ফোবানার মধ্য দিয়ে অনেক কিছুই অর্জন করার ছিল।

শেয়ার করুন