মনে রাখতে হবে ছাত্র জনতার ঐতিহাসিক আন্দোলনের ফলে ৫ আগস্ট ২০২৪ একটি নির্বাচিত সরকারের যবনিকাপাত হয়েছে। এটি কোন সেনাঅভ্যুথান নয়। দেশে সেনা শাসন বা জরুরি অবস্থা ঘোষিত হয় নি। এখনও কোন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয় নি। সেনাপ্রধান নিজ দায়িত্বে সাম্প্রতিক ছাত্র সমাজের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় সংগঠিত হত্যা, জেল, জাতীয় সম্পদ ধ্বংস সব কিছুর বিচারের দায়িত্ব নিয়েছে। রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করবেন। সেই সরকার অবশ্যই দেশের শাসনতন্ত্র অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করে নির্বাচিত সরকারকে দেশ শাসনের দায়িত্বে ফিরিয়ে দিবে।
সদ্য পদত্যাগকারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগ করলেও আওয়ামী লীগ কিন্তু একটি বিশাল রাজনৈতিক দল। অবশ্যই দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকে তাদের একধরনের স্বৈরাচারী মনোভাবের কারণে সরকারের পতন হয়েছে। কিন্তু দলটির অস্তিত্ত্ব ও স্বীকার করা যাবে না।
বর্তমান সেনাপ্রধান কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক নিয়োজিত। তিনি নিঃসন্দেহে সেনাবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় না করিয়ে বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন। সামরিক আইন বা জরুরি অবস্থা ঘোষিত হয়নি। কিন্তু আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কিন্তু এখনো নাজুক। গণভবন, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে। এগুলো কিছুর সাথে বিপ্লবী ছাত্রসমাজকে সম্পৃক্ত করা যাবে না। আবারো বলছি, আওয়ামী লীগ সরকারকে কিন্তু কোন রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠী ক্ষমতাচ্যুত করেনি। জনগণ কিন্তু কোন দল বা গোষ্ঠীকে দেশ শাসনের ম্যান্ডেট দেয়নি। দেখতে হবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপ রেখা, দেশ এবং বিদেশে তাদের গ্রহণ যোগ্যতা। এবং তাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্যে।
দেশে কিন্তু অর্থনৈতিক সংকট ঘনীভূত। এই মুহূর্তে শক্ত হাতে অনাচার, অরাজকতা, দুর্নীতি দমন করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা জরুরি। সর্বোপরি প্রয়োজন দেশপ্রেমিক সবার জাতীয় ঐক্য। সৎ মানুষদের সুশাসন। দেশে এবং প্রবাসে অনেক যোগ্য দক্ষ দেশ প্রেমিক মানুষ আছে। দেশ আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামাতকে দেশ শাসনে দেখেছে। চেনা মুখদের অধিকাংশের কলঙ্ক আছে। ছাত্ররা কিন্তু নতুন করে দেশ গঠনের পথ খুলে দিয়েছে। এখন প্রয়োজন আরো একটি সুযোগের সঠিক ব্যবহার। সাংসদ ভেঙে দেয়ার আগে বিষয়গুলো নিয়ে গভীরভাবে বিবেচনার সুযোগ আছে। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে হবে। সুযোগ কিন্তু বার বার আসবে না। কোটা সংস্কার হয়েছে রাষ্ট্রীয় সংস্কার করতে হবে এখন।
আমি ১৯৬৯ গণআন্দোলন, ১৯৭১ মুক্তিযুদ্ধ, যুদ্ধ বিজয়, ১৯৯০ স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, ১৯৯৬ আন্দোলন সম্পৃক্ত থেকে দেখেছি। কিন্তু একমাত্র ১৯৭১ মুক্তিযুদ্ধ ছাড়া অন্য আন্দোলনগুলোর ফলশ্রুতিতে দেশে সুশাসন এবং বৈষম্য হীন সমাজ ব্যবস্থা গড়ে উঠেনি। নতুন নতুন শোষক শ্রেণী গড়ে উঠেছে। এবারে ছাত্র আন্দোলনের ফসল সরকারের পতন। অনেক চ্যালেঞ্জ নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং পরবর্তী সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে, ১৯৭১, ১৭ ডিসেম্বর ঢাকা নিউ মার্কেটে যেভাবে লুটপাট দেখেছিলাম ৫ আগস্ট আবার দেখলাম গণভবনে। দেখে বিস্মিত ব্যাথিত হয়েছি। রাষ্ট্রীয় সম্পদ কোনো ব্যক্তিবিশেষের নয়। যদিও আবার সেগুলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ ফিরিয়ে এনেছেন প্রায় সবই। কিন্তু এমন মনমানসিকতা কষ্টের। বাঙালি বড় মনের। এত ছোটখাট বিষয়ে নজর দেয়া উচিৎ হয়নি। কারণ এগুলো তো জনতারই। এগুলো রক্ষা করা সবার দায়িত্ব। আসুন সবাই নতুন করে দেশ গড়ার শপথ নেই।