বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফসল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অবৈধ ঘোষণার জুডিশিয়াল ক্যু রুখে দিয়েছে ছাত্র-জনতা। গত ১০ আগস্ট এমন এক প্রি-প্ল্যান ঘটতে যাচ্ছিল। কিন্তু ছাত্র-জনতা যা টের পেয়ে রুখে দেয়। প্রধান বিচারপতিকে শর্টটাইমে পদত্যাগে বাধ্যকরণের ঘটনাবহুল বিষয়গুলোই তার প্রমাণ।
ঘটনায় প্রকাশ, প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানকে কেন্দ্র করে তারই তত্ত্বাবধায়নে এ ভয়ংকর ষড়যন্ত্র চলছিল। কথা ছিল, হবে জুডিশিয়াল ক্যু আর এ ষড়যন্ত্রের পেছনে ছিলেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত। এ জুডিশিয়াল ক্যুর পরিকল্পনার তথ্য পেয়ে যান সেনাবাহিনীর গোয়েন্দারা। তাদের দেওয়া তথ্য পেয়ে ষড়যন্ত্র রুখে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। গত শনিবার (১০ আগস্ট) এমন কথা জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অফিসিয়াল ফেসবুক গ্রুপ। সেখানে পোস্টটি করেন সহ-সমন্বয়ক মুসাদ্দিক আলী ইবনে মুহাম্মদ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহ-সমন্বয়কের বরাতে ওসমান গনি নাহিদ তার ভেরিফাইয়েড আইডিতে একই পোস্ট করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে করা এক পোস্টে এমনটি দাবি করেন এ সহ-সমন্বয়ক। ‘ষড়যন্ত্র ফাঁস’ শিরোনামে তিনি তার টাইমলাইনে যা লিখেছেন, তা হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের পদত্যাগের নেপথ্যে কঠিন ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে গেছে। শেখ হাসিনাকে এক্স-প্রধান বিচারপতি সিনহা যেভাবে অবৈধ ঘোষণা করতে চেয়েছিলেন, ঠিক তেমনি ষড়যন্ত্র করেছিল ওবায়দুল হাসানসহ কয়েক জন।
সজীব ওয়াজেদ জয় এতোদিন আপনাদের সঙ্গে ‘আমি নাই, মা নাই’ বলে বলে হঠাৎ গত ৯ আগস্ট রয়টার্সকে বলেছেন, তার মা পদত্যাগ করেননি। এটি একটি পরিকল্পিত ঘোষণা ছিল, যা বোঝা গেছে।
সেনাবাহিনীর নিচের দিকের অফিসাররা যদি জনগণের পক্ষে না থাকতেন, তাহলে আজকে আরেকটা রক্তের বন্যা বয়ে যেত। আজকেও সেনাবাহিনীর ছোট অফিসাররা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ থেকে ছাত্র-জনতাকে বাঁচিয়েছেন।
১০ আগস্ট শনিবার একটা ক্যুর প্ল্যান করেছিল জয় এবং আরাফাত। কিন্তু সঠিক সময়ে সেনাবাহিনীর গোয়েন্দারা ছাত্রদের কাছে তথ্য ফাঁস করে দেন। এ তথ্য জানার পর জুডিশিয়াল ক্যু রুখে দেন ছাত্ররা।
জয়-আরাফাত আর তাদের গাইডদের গোপন প্ল্যান ছিল এরকম। ড. মুহাম্মদ ইউনূস যখন রংপুরে আবু সাঈদের বাড়ি পরিদর্শন এবং কবর জিয়ারতের জন্য যাবেন এবং তারপর ওনার হেলিকপ্টার যখন আকাশে থাকবে, ঠিক সে সময়ে হাইকোর্টের অ্যাপিলিয়েড ডিভিশনের বিচারপতিরা ফুলকোর্ট বসিয়ে এ অন্তর্বর্তী সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করবেন।
সঙ্গে সঙ্গে এ ক্যুর সঙ্গে জড়িত সেনাবাহিনীর ২৫ কর্মকর্তা, চাকরি থেকে কর্মবিরতিতে থাকা দুর্নীতিবাজ পুলিশের একটি দল রাজধানীতে হট্টগোল শুরু করবে আর শেখ হাসিনা ভারত থেকে বাংলাদেশে চলে আসবেন এবং সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগের আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীরা মাঠে চলে আসবেন।
এমন এক ভয়ংকর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রধান বিচারপতি সরকারের সঙ্গে কোনো আলোচনা না করে হঠাৎ ৫৭ বিচারপতিকে জরুরি মিটিংয়ে ডাকেন। টিভি স্ক্রলে জরুরি মিটিং ডাকার সংবাদ দেখে দর্শকরাও কনফিউজড হন। কিন্তু আগে থেকে গোপন খবর পাওয়া ছাত্র-জনতা সকাল ৯টার আগেই চতুর্দিক থেকে ছুটে এসে হাইকোর্ট ঘেরাও করেন। সেনাবাহিনীর সমর্থনে প্রধান বিচারপতি পিছু হটতে বাধ্য হন এবং পালিয়ে থাকেন। মিটিং স্থগিত হয়। ছাত্ররা বিচারপতির বাসা ঘেরাও করে রাখেন। সেনাবাহিনী শৃঙ্খলা রক্ষার আবরণে সেখানে ছিল। পদত্যাগপত্র সরকারকে দেওয়া হয়েছে নিশ্চিত হয়ে ছাত্ররা হাইকোর্ট এবং বাসভবন ত্যাগ করে।
এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত আপিল বিভাগের আরো পাঁচ জন বিচারপতিকে পদত্যাগ করতে বলা হয়। পদত্যাগও করেন তারা।
এরপর ভারপ্রাপ্ত বিচারপতি নিয়োগ, সেটাও স্বৈরাচারের দোসর বিবেচনা করে ছাত্র-জনতা আবারও তাকে দ্রুত পরিবর্তনের দাবি তুলে কয়েক ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয়। পরে সৈয়দ রেফাত আহমদকে সে স্থানে প্রধান বিচারপতি ঘোষণায় সব ঘটনার পরিসমাপ্তি ঘটে।
আপিল বিভাগের বিচারপতিদের পদত্যাগ
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও আপিল বিভাগের বিচারপতিরা পদত্যাগ করেছেন। প্রথমে প্রধান বিচারপতি আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠান। এরপর একে একে আপিল বিভাগের ছয় বিচারপতিও একই প্রক্রিয়ায় পদত্যাগ করেন। আইন মন্ত্রণালয় ও সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন সূত্র তাদের এ পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। পদত্যাগকৃত আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতি হলেন-বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি কাশেফা হোসেন।