১৭ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ০৬:০৪:১০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
গোপালগঞ্জ এখন মুজিববাদী সন্ত্রাসীদের আস্তানায় পরিণত হয়েছে- নাহিদ এনসিপি’র মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচি ঘিরে ব্যাপক সংঘর্ষ চারজন নিহত নিউইয়র্কে ২০ লাখ মানুষ মেডিকেইড ও ৩ লাখ পরিবার স্ন্যাপ সুবিধা হারাবে নতুন ভিসা ফিতে বাংলাদেশিদের খরচ বাড়বে আড়াই গুণ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ২ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দাবি মাহমুদ খলিলের টেক্সাসের অভিবাসন আইন এসবি ৪ অসাংবিধানিক ঘোষণা ফ্লোরিডার ‘সিনেট বিল ৪-সির কার্যকারিতা বন্ধ করলো যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট নতুন নীতি ঘোষণা : ৯ কারণে নাগরিকত্ব হারাতে পারেন জঙ্গিবাদে সতর্ক থাকার মার্কিনী পরামর্শে নানা প্রশ্ন এনসিপিসহ ১৪৪ নিবন্ধন প্রত্যাশী দলের তথ্যে ঘাটতি


বর্ণবাদী মিথ্যাচার আমেরিকার গণতন্ত্রকে বিপন্ন করছে
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩০-১০-২০২৪
বর্ণবাদী মিথ্যাচার আমেরিকার গণতন্ত্রকে বিপন্ন করছে এক্সের মালিক এলন মাস্ক, রাজনৈতিক মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দিতে ট্রাম্পকে সহায়তা করছেন


মিথ্যা গুজব এবং বিভাজক বক্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রক্রিয়াকে বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। আমেরিকার রাজনীতিতে রাজনৈতিক মিথ্যাচার নতুন কিছু নয়, তবে সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষমতা এবং রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিভাজক বক্তৃতা এই ধরনের মিথ্যাচারের বিস্তৃতিকে বাড়িয়ে তুলেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প তার নির্বাচনী প্রচারাভিযানে প্রতিটি বক্তব্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলোকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছেন। আমেরিকান ভোটাররা ৫ নভেম্বর যখন ভোট দিতে যাবেন এই উদ্বেগটি আরো তীব্র হয়ে উঠছে।

অনাগরিক ভোটারের মিথ

ট্রাম্পের প্রচারণার একটি মূল বিষয় হলো মিথ্যা দৃষ্টিভঙ্গি। তার দৃষ্টিভঙ্গিতে ডেমোক্রেটিক পার্টিই যেন অবৈধভাবে অভিবাসীদের নিয়ে আসছে। এবং যাদের অপরাধ করার রেকর্ড রয়েছে। ট্রাম্প এবং তার ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জেডি ভ্যান্স বারবার এই ‘অনাগরিক ভোটার’-এর গুজব ছড়িয়ে দিয়েছেন। বাইডেন-হারিস প্রশাসন কিছু দিন আগের কঠোর অভিবাসন নীতিগুলো বাতিল করলেও, কিছু নতুন নীতি গ্রহণ করেছে এর ফলে আশ্রয়প্রার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ কঠিন হয়ে উঠেছে। ট্রাম্প দাবি করছেন অবৈধ অভিবাসীরা ব্যাপক সংখ্যায় ভোট দিচ্ছে তা সমর্থনযোগ্য নয়। নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ব্রেন্নান সেন্টারের ২০১৬ সালের নির্বাচনের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ভোটের জালিয়াতির ঘটনা অত্যন্ত বিরল। এমনকি রক্ষণশীল হেরিটেজ ফাউন্ডেশনও ২০০৩ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে মাত্র ২৩ টি অনাগরিকের ভোট দেওয়ার চেষ্টা করেছে বলে উল্লেখ করা হয়।

সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ১০ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার ফিলাডেলফিয়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সামনে রেখে মুখোমুখি বিতর্কে অংশ নিয়ে ভুল তথ্য প্রচার করেন যে, হাইতির অভিবাসীরা ওহাইওর স্প্রিংফিল্ড শহরে পোষা কুকুর ও বিড়াল চুরি করে খাচ্ছে। তিনি তার প্রচারণার সময়েও এমন প্ররোচনামূলক ও অভিবাসীবিরোধী বক্তব্য তুলে ধরেছেন। কোনো প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও ট্রাম্প বিতর্কে স্প্রিংফিল্ড শহরের নাম উল্লেখ করে বলেন, তারা কুকুর খাচ্ছে, বিড়াল খাচ্ছে, এখানকার বাসিন্দাদের পোষা প্রাণীদের খাচ্ছে। ট্রাম্পের মন্তব্যের পর কমলা হ্যারিস তাকে ‘চরম’ বলে অভিহিত করেন এবং তার মন্তব্য শুনে হাসেন। বিতর্কের সঞ্চালক ডেভিড মুইর ও লিনসে ডেভিস বলেছেন যে, ওহাইওর স্প্রিংফিল্ড শহরের কর্মকর্তারা এ দাবিগুলোকে মিথ্যা বলে উল্লেখ করেছেন।

ইতিহাসের একটি দীর্ঘস্থায়ী কৌশল

ক্ষমতাসীনদের দ্বারা বর্ণবাদী মিথ্যাচার প্রায়শই সামাজিক বিভাজন এবং কাঠামোগত অসমতার সমর্থনে ব্যবহার করা হয়। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া সান দিয়েগো’র পিএইচডি প্রার্থী মারওয়া আবদাল্লা বলেন, ‘মিথ্যাচার একটি অস্ত্র হিসেবে জনপ্রিয় মতামতকে প্রভাবিত করতে ব্যবহৃত হয়েছে শতাব্দী ধরে। ‘ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যের অনেকটাই মানুষের মনে গেথে যায়, যদিও তারা জানে যে তিনি মিথ্যা বলছেন। তার সমর্থকরা এটি স্বীকার করলেও, তিনি যেভাবে তাদের ভিকটিমাইজড অনুভূতি পুনর্ব্যক্ত করেন, তা তাদেরকে তার পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য প্রস্তুত করে।’ তিনি আরো বলেন, বর্তমান সময়ে, সোশ্যাল মিডিয়া এবং অন্যান্য অনলাইন নেটওয়ার্কগুলো মিথ্যাচারের সমস্যা বাড়িয়ে তুলেছে। 

মুসলিমদের লক্ষ্য করে বর্ণবাদী মিথ্যাচার

বর্ণবাদী মিথ্যাচার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ওপর সরাসরি হুমকি দেয় এবং প্রায়শই বর্ণভিত্তিক রাজনৈতিক প্রার্থীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে। সেপ্টেম্বরে, ইলিনয়ের ডারিয়েনে এক সিরিয়ান-আমেরিকান স্টেট অ্যাসেম্বলি মেম্বার প্রার্থী সুজান আখরাসকে লক্ষ্যবস্তু করে একটি জরিপ চালানো হয়েছিল, যেখানে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ‘আপনি কি সুজান আখরাসকে ভোট দিবেন যদি আপনি জানেন যে তিনি ইসলামী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত?’ যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় মুসলিম নাগরিক অধিকার এবং অ্যাডভোকেসি গ্রুপ কাউন্সিল ও আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস (কেয়ার), এই বর্ণবাদী প্রচারণার তদন্তের জন্য আহ্বান জানিয়েছে। কেয়ার-শিকাগো অপারেশন ম্যানেজার ম্যাগি স্ল্যাভিন বলেন, আমরা এটিকে মেইলারে এবং টিভিতে দেখতে পাচ্ছি। আমি দেখেছি স্থানীয় বিজ্ঞাপন যেখানে বলা হয়েছে সুজান আখরাস হামাসের সঙ্গে সম্পর্কিত।

এভাবে আমেরিকার গণতন্ত্রের জন্য বর্ণবাদী মিথ্যাচার একটি ক্রমবর্ধমান হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলোর জন্য বিপদসংকেত বহন করছে। বর্ণবাদী মিথ্যাচার এবং বিভাজক বক্তব্য, বিশেষ করে এলন মাস্কের মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দ্বারা ছড়ানো তথ্য, আমেরিকার গণতন্ত্রকে আরও বিপন্ন করে তুলছে। তার ২০২ মিলিয়ন অনুসারীর মধ্যে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে পড়ার ফলে মুসলিম অভিবাসী ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ঘৃণা এবং বৈষম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি শুধু রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে দুর্বল করছে না, বরং সমাজে বিদ্যমান বিভাজনকে আরো গভীর করে তুলছে। এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলার জন্য, সঠিক তথ্য প্রচার করা এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে দাঁড়ানো অপরিহার্য। একসঙ্গে আমাদের একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং শক্তিশালী গণতন্ত্র গড়ে তোলার জন্য কাজ করতে হবে, যেখানে সব সম্প্রদায়ের জন্য সমতা, ন্যায় ও মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হবে।

শেয়ার করুন