৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৫:২৬:১৪ অপরাহ্ন


প্রবাসে সম্প্রীতি চর্চা
হাবিব রহমান
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-১১-২০২৪
প্রবাসে সম্প্রীতি চর্চা


প্রেসিডেন্ট পদে জয়ী হওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ফোন করে অভিনন্দন জানিয়েছেন তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কমলা হ্যারিস। ওই ফোনকলে কমলা শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের ওপর জোর দেন। পাশাপাশি তিনি ট্রাম্পকে সব আমেরিকানদের প্রেসিডেন্ট হওয়ার আহ্বান জানান। কথাটি বল্লাম এজন্য যে, এটাই হলো আমেরিকান গণতন্ত্রের সৌন্দর্য।

অন্যদিকে গত সপ্তাহে শেষ হলো নিউইয়র্কে বাংলাদেশ সোসাইটির বহুল আলোচিত নির্বাচন। এতে সেলিম-আলী পরিষদ বিপুল ভোটে প্রতিপক্ষকে পরাজিত করে পুরো প্যানেল নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন। এবারের নির্বাচনে অনেকগুলো ইতিহাস রচিত হয়েছে। এবারের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা সম্প্রীতির এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণার আগ থেকেই উডসাইডের কেন্দ্রে উপস্থিত ছিলেন রুহুল-জাহিদ প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী এবং সোসাইটির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সিদ্দিকী। তিনি বসেছিলেন সামনের সারিতে। নির্বাচনে সেলিম-আলী পরিষদ জয়ী হতে চলেছেন এমনটি টের পেয়েও রুহুল আমিন সিদ্দিকী দ্বিতীয় সারিতে গিয়ে বসেন। এরপর তিনি ফলাফল মেনে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার করেন। বিজয়ী সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম এবং সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে তিনি কোলাকুলি করেন। একে অন্যকে অনেকক্ষণ বুকে জড়িয়ে ধরেন। যা উপস্থিত সকলের দৃষ্টি কাড়ে এবং প্রশংসিত হয়। এছাড়াও ফলাফল ঘোষণার সময় শেষ পর্যন্ত রুহুল আমিন সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন যা সবার প্রশংসা কুড়ায়।

আবার এই প্রবাসে বিপরীত চিত্রও চোখে পড়ে। গত সপ্তাহে সংবাদপত্রের খবর-‘রাস্তায় শপথ নিলেন চট্টগ্রাম সমিতির তাহের-আরিফ পরিষদের ৮ কর্মকর্তা।’ খবরে বলা হয়, চ্যালেঞ্জ ভোট নিয়ে সমস্যার তৈরি হয়। চ্যালেঞ্জ ভোট গণনার আগে ফলাফল একরকম ছিল, গণনার পর ফলাফল আরেক রকম হয়। সৃষ্টি হয় জটিলতা। সৃষ্ট জটিলতায় এক প্যানেলের আট কর্মকর্তা রাস্তায় শপথ নিলেন। আর একই সময়ে অপর প্যানেলের ১০ জন নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে সমিতি ভবন দখল করে বসে রইলেন। কোন প্যানেল সঠিক বা বেঠিক আমি সে বিতর্কে না গিয়ে বলবো আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কমলা হ্যারিস বা সদ্য সমাপ্ত বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচনে রুহুল আমিন সিদ্দিকী যে সম্প্রীতির মহড়া দেখিয়েছেন তা কি অন্যান্য সংগঠনের কর্তাব্যক্তিরা নিজেদের মধ্যে অনুশীলন করতে পারেন না? আর তা কি খুবই কঠিন কাজ?

হোয়াটস অ্যা মিরাকল 

আমার এক বন্ধুর ৩৬ তম বিযয়েবার্ষিকী উপলক্ষে তাদের দুই জনকে ট্রিট দিতে ডিনারে গিয়েছিলাম বাফেট রেস্টুরেন্ট গোল্ডেন কোরাল এ। খাওয়ার আগেই ওয়েটারদের নেতাকে বলে এসেছিলাম তাদের বিয়েবার্ষিকীর কথা। খাওয়ার পর তারা দলবেঁধে কেক আর মোমবাতি নিয়ে হাততালি দিয়ে উচ্চস্বরে ঘোষণা দিলেন তাদের ৩৬তম বিয়েবার্ষিকীর কথা। খাবার খেতে আসা অনেকেই হাততালি দিয়ে তাদের অভিনন্দন জানালেন। হঠাৎ দূর থেকে ভিড় ঠেলে একজন ৪০-৪৫ বছরের ব্ল্যাক মহিলা কাছে এসে আমার বন্ধুর স্ত্রীর কাছে বললেন, হোয়াটস অ্যা মিরাকল। আমরা বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ডরা দুয়েক বছরের বেশি একসঙ্গে কাটাতে পারি না। তোমরা একসঙ্গে ৩৬টি বছর কীভাবে কাটালে? তার রহস্যটা আমাকে একটু বলবে কি?

আমরা একটু অবাক হলেও তার কথায় একটা চরম সত্য প্রকাশ পায়। তাহলো এদের সমাজে এক স্বামী বা বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে এতোদিন ঘর করা তাদের কাছে অবাক করার মতো ঘটনা হলেও এটাই হলো আমাদের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য, যা তাদের হৃদয়াঙ্গমের বাইরে।

যুক্তরাষ্ট্রই শেষ ভরসা 

শেখ হাসিনা তার শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্রকে নানাভাবে নাজেহাল করার অপচেষ্টা চালিয়েছেন। সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বাংলাদেশে নিযুক্ত আমেরিকান রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনাকে ‘কাজের মেয়ে মর্জিনা’ বলে ব্যঙ্গ করেছেন। আরেক রাষ্ট্রদূত বার্নিকাটের গাড়িবহরে হামলা করেছে আওয়ামী দুর্বৃত্তরা। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কর্মকর্তারা ঘন ঘন বাংলাদেশে আসায় তাদের বিনা দাওয়াতের অতিথি বলে ব্যঙ্গ করেছেন আরেক সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। শেখ হাসিনার সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎ করতে পারেননি আমেরিকার অনেক রাষ্ট্রদূত। তিনি নিজে বহুবার আমেরিকার উদ্দেশ্যে বিষোদগার করেছেন। কিন্তু ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তার ভিন্ন সুর দেখা যাচ্ছে। তার ফাঁস হওয়া ভিডিওতে শোনা গেছে যুক্তরাষ্ট্রের নেতাকর্মীদের স্থানীয় মূলধারার নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের পরামর্শ দিয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি খবর চোখে পড়লো যে, গত ১৯ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ওয়াশিংটনে স্টেট ডিপার্টমেন্টের সামনে গিয়ে অন্তর্র্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছেন। যেভাবেই হোক না কেন ট্রাম্পকে দিয়ে বাংলাদেশের হিন্দুদের পক্ষে একটা বিবৃতি দেওয়ানো গেছে।

আবার পলাতক আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে তার সমর্থকদের ট্রাম্পের ছবি মিছিল করতে বলেছেন। তার মানে তারা যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছেন। ক্ষমতায় থাকার সময় আমেরিকা চক্ষুকূল, আর বিপদের সময় ত্রাণকর্তা-আওয়ামী লীগের এই মনোভাবে দুর্মুখদের কেউ কেউ মন্তব্য করছেন, সেই তো ফিরেই এলি, তবে কেন খেল দেখালি।

কার্ড সাংবাদিক!

নিউইয়র্কে প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিলিয়ে কতগুলো মিডিয়া? তাতে ক’জন সাংবাদিক কর্মরত? ফোবানা, সোসাইটি বা জালালাবাদের নির্বাচন বা সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ সরকার প্রধানের অনুষ্ঠান কভার করতে যারা গলায় কার্ড ঝুলিয়ে প্রথমসারির আসনগুলো দখল করে থাকেন, তাদের কত জন পেশাদার! তাদের কত জন অনুষ্ঠানের খবর রিপোর্ট করেন? এগুলো কোন পত্রিকা বা টিভিতে প্রচারিত হয় কেউ কি কারো হদিস রাখেন?

প্রসঙ্গটা উঠলো সদ্য সমাপ্ত বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচন প্রসঙ্গে। জানা যায়, নির্বাচন কমিশন এবার ১৩০টি প্রেসকার্ড ইস্যু করে। জানা গেছে, ভোটগ্রহণ শেষে সাংবাদিকদের ভিড়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার অ্যাডভোকেট জামাল আহমেদ জনি।

ঢাকার খ্যাত-অখ্যাত গণমাধ্যমের আইডি ঝুলিয়ে যারা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যান, তাদের অধিকাংশই সেসব মিডিয়ার কাছ থেকে কানাকড়িও পান না। তাদের অনেকেই অনুষ্ঠানের কোনো রিপোর্টও করেন না। তাদের জন্য প্রকৃত পেশাদার সাংবাদিককেও লজ্জা পেতে হয়।

সংশোধনের জন্য আত্মসমালোচনা একান্ত আবশ্যক। আমরা চাই সাংবাদিকতা সৎ এবং মহান পেশার চেহারা নিয়ে আমাদের কাছে বেঁচে থাকুক। সাংবাদিকতার মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত না হোক এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

শেয়ার করুন