২৫ অক্টোবর ২০২৫, শনিবার, ০৭:১৬:৪২ অপরাহ্ন


মহান বিজয় মাসে মুক্তিযুদ্ধ মৃদুভাবে উচ্চারিত কেন?
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-১২-২০২৪
মহান বিজয় মাসে মুক্তিযুদ্ধ মৃদুভাবে উচ্চারিত কেন?


ডিসেম্বর বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মাস। লক্ষ শহীদের আত্মত্যাগ আর লক্ষ মা বোনের সম্ভ্ৰম হানির বিনময়ে অর্জিত বাংলাদেশে এবার ২০২৪ মুক্তিযুদ্ধ মৃদুভাবে উচ্চারিত হচ্ছে। সবাই জানে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ ছিল হানাদার পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে  সাতকোটি নিপীড়িত মানুষের একটি মরণপণ জীবন যুদ্ধ। মুষ্টিমেয় কিছু দালাল মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী মানুষ ছাড়া বাংলাদেশের সবাই কোন না কোন ভাবে যুদ্ধ জয়ে অবদান রেখেছিলো। কিন্তু ভুরাজনৈতিক নানা ষড়যন্ত্রের কারণে স্বাধীনতা অর্জনের ৫৩ বছর পরেও  বৈষম্য বিরোধী তরুণ সমাজকে আরো একটি গণ বিফোরণের মাদ্ধমে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ সৃষ্টি করতে হয়েছে।


কিন্তু গভীর উৎবেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি প্রতিক্রিয়াশীল একটি চক্র সুযোগ বুঝে মুক্তিযুদ্ধ ,মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননা করে বাঙালি জাতির সংগ্রামের ইতিহাস নতুন ভাবে সৃষ্টির অপপ্রয়াস নিয়েছে। বঙ্গবন্ধু জাদুঘর ধ্বংস , বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযুদ্ধের স্মারক সহ নিদর্শন ধ্বংস করার পাশাপাশি ঐতিহাসিক ৭ মার্চ ,১৭ এপ্রিল মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। মহান বিজয়ের মাসেও মুক্তিযোদ্ধাদের ভিলেন বানানোর অপচেস্টা দৃশ্যমান। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের কিছু নেতাদের আচরণ এবং উচ্চারণে স্বাধীনতা বিরোধী চেতনার বহিঃপ্রকাশ দৃশ্যমান।


স্বীকার করতে দ্বিধা নেই ২০০৯-২০২৪ স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্ব দানকারী সরকার মুক্তিযুদ্ধকে তাদের একক অর্জন আরো স্পষ্ট করে বললে শেখ পরিবারের পারিবারিক অর্জন বলে প্রমান করার সব ধরণের অপপ্রয়াস নেয়ার কারণে সাধারণ মানুষের মনে নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে।  অন্নান্য সরকারের চেয়ে বিগত পতিত সরকার স্বাধীনতার মূল আদর্শ বিচ্যুত হয়ে সীমাহীন দুর্নীতির মাদ্ধমে দেশের সম্পদ লুটপাট করে বিদেশে পাচার করেছে। তাদের


পাপের ফসল শোচনীয় পতন

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র সমাজের মুক্ষ ভূমিকা থাকলেও বর্তমান সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ক্রমাগত স্বাধীনতা বিরোধী ভূমিকা নানা ষড়যন্ত্র তথ্যের জন্ম দিচ্ছে।  চিন্নিত স্বাধীনতা বিরোধী চক্র আস্ফালন করছে। স্বাধীনতার সকল অর্জন ধ্বংস করার পায়তারায় মেতেছে। জানিনা এই ধরণের আচরণের পেছনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বা সরকার প্রধানের সম্মতি আছে কিনা।


আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ কিন্তু আমাদের কাছে জীবন্ত ইতিহাস।  কোনো রূপ কথার কল্প কাহিনী নয়. মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম জানে কিভাবে রাজনৈতিক দলগুলো ধারাবাহিক ভাবে ইতিহাস বিকৃত করেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের হানাহানি দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করে একে একে মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করেছে। বৈষম্যের কারণে একটি মেধাবী প্রজন্ম দেশান্তরী হয়ে প্রবাসী হয়েছে। মেধাহীন প্রজন্ম ,দুর্তিনীতিপরায়ণ রাজনৈতিক নেতা ,অসৎ ব্যাবসায়ীদের সঙ্গে সিন্ডিকেট বানিয়ে দেশকে লুটপাটের অভয় অরণ্য বানিয়েছে। পাকিস্তান আমলের ২২ পরিবারের স্থানে ২ লক্ষ পরিবার দেশের সকল সম্পদ কুক্ষিগত করেছে।  সামরিক এবং বেসামরিক জনগণের মধ্যে বিশাল বৈষম্য দৃশ্যমান হয়েছে।


ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষনে দেশের হাল ধরার সুযোগ পাওয়ায় নভেল লরিয়েট ডক্টর এম ইউনূসের কাছে জাতির বিপুল প্রত্যাশা।  কিন্তু চারমাস পেরিয়ে পাঁচ মাস হতে চললেও গণহত্যার বিচার শুরু করা দূরের কথা কোনো শীর্ষ দুর্নীতিবাজের বিচার হয় নি. মনে রাখতে হবে জুলাই আগস্টে ক্যাষ্ট্রো জনতা হত্যা ছাড়াও পুলিশ ,বিজেবি সদস্যদের নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছে, থানা লুটপাট করে অস্ত্র লুট করা হয়েছে ,জেল থেকে সন্ত্রাসী দাগি আসামিদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। নিঃসন্দেহে নিরীহ ছাত্র জনতা এগুলো করে নি. বিগত কয়েক মাসে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাজুক হয়ে রয়েছে। চাঁদাবাজরা নতুন রূপে আবির্ভুত হয়েছে। এগুলো সামাল দেয়া একটি অরাজনৈতিক ,অনির্বাচিত সরকারের সাদ্ধ  এবং সামর্থের বাইরে বলে মনে হচ্ছে।


যেভাবে শুরু করেছিলাম। ডিসেম্বর বাংলাদেশের গৌরব মাস। এই মাসে বাংলাদেশী জাতি বিপুল পরাক্রমশালী পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মরণপণ যুদ্ধ করে স্বাধীনতা এনেছিল। ভুলে গেলে চলবে না ১৯৭১ না হলে ২০২৪ হতো না. ৭ মার্চ ,২৬ মার্চ ,১৬ ডিসেম্বর বিস্মৃত হলে এক সময় ৫ আগস্ট মানুষ ভুলে যাবে। ইতিহাস বিস্মৃত জাতি কখনো বিশ্ব সভায় গৌরবে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। 
দাবি করছি বুদ্ধিজীবী হত্যা দিবস ,বিজয় দিবস   যেন যথাযথ মর্যাদায় প্রতিপালিত হয় ,বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যেন যথাযথ ভাবে সম্মানিত করতে কেউ কুন্ঠিত না হয়. নীরব ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলো যেন দলদাসে পরিণত হয়ে না  থাকে।

শেয়ার করুন