বিএনপির সঙ্গে জামায়াত আর কোনো ইস্যুতেই বাড়াবাড়ি করবে না। থাকবে নমনীয়। বিভিন্নভাবে দেশে-বিদেশে কোণঠাসা হয়ে পড়ায় দলটি এখন বিএনপি’র সাথে মতভেদে জড়াতে চায় না। অন্যদিনে বিএনপি’র সর্বোচ্চ পর্যায় জামায়াত সম্পর্কে হার্ডলাইনে থাকাতেও বিপাকেও পড়ে নমনীয় হয়ে পড়েছে বলে শোনা যায়। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে পলায়নের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জামায়াত বেশ ফুরফুরে মেজাজে ছিল। জামায়াতের নেতাকর্মীরা বলা যায় একপ্রকার প্রচার করতে শুরু করে তাদেরকে ক্ষমতায় বসাতেই ৫ আগস্ট সরকারের পরিবর্তন ঘটানো হয়েছে। এছাড়াও জামায়াত বিভিন্নভাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কৌশলে বিএনপি’র বিরুদ্ধেই ব্যবহার করার চেষ্টা করে।
বিরোধের আরো কারণ
একটি সূত্র জানায়, বিএনপি’র অনেকে মনে করে সংস্কার যতো দীর্ঘমেয়াদী হবে ততই জামায়াত প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে কৌশলে তাদের সমর্থিত লোকদের ক্ষমতার কেন্দ্র বিন্দুতে বসাতে থাকবে। বলা যায় প্রশাসনে একটা গোপন সেটআপ দিয়ে রাখবে নির্বাচনকে সামনে রেখে, ঠিক আওয়ামী লীগের মতো। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কৌশলে ব্যবহার করে ইতোমধ্যে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে জামায়াত তাদের সমর্থিতদের পুনর্বাসনে লিপ্ত। বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এখন জামায়াত কৌশলে প্রশাসনকে ব্যবহার করে করায়াত্ত করে ফেলছে। বাদ যাচ্ছে না গণমাধ্যম, বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনও। আর বিএনপি এসব পর্যবেক্ষণে হতবিহব্বল হয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে, কি করবে তার কোনো ধরনের কূলকিনারাই পাচ্ছে না। এনিয়ে বিএনপি’তে প্রচণ্ড ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। কিন্তু দিন যতোই যাচ্ছে বিএনপি ততই বিভিন্ন ধরনের অভিযোগে ভারাকান্ত হচ্ছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে বিএনপি’র দুর্নাম বাড়ছে। বলা হচ্ছে, দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিএনপি’র নেতাকর্মীরা অপকর্মে লিপ্ত। তবে একটি সূত্র জানায় দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিএনপি’র দু-একজন প্রতিষ্ঠা করে বা তাদের ব্র্যান্ডকে ব্যবহার জামায়াত ওইসব প্রতিষ্ঠান পুরোটাই গ্রাস করে নিচ্ছে। আর এধরনের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে বিএনপি’র এক শ্রেণীর প্রভাবশালী নেতাও বিপাকে পড়ছে, মান সম্মান হারাচ্ছেন। সূত্র জানায়, বিএনপি’র হাই কমান্ড এসব বিষয় বুঝতে পেরেছে। এবং একধরনের রাজনৈতিক শক্ত দূরত্ব তৈরি করেছে, যার কারণে জামায়াত দেশে বিদেশে বিতর্কিত হয়ে পড়ছে। আর তাই এখন কূটকৌশলে ব্যর্থ হয়ে জামায়াত নমনীয় হয়ে আসেছে বলে শোনা যাচ্ছে ।
তারেক রহমানের সাক্ষাৎ মিললো না
এদিকে দ্বন্দ্ব-সংঘাত মতভেদ এমন চরমে পৌঁছায় যে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্প্রতি লন্ডনে জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান’কে সাক্ষাৎ দেননি। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পূর্ব লন্ডনের মায়েদা গ্রিল হলে বৃটেনের সর্বদলীয় ওলামা সংগঠন ‘বাংলাদেশি ওলামা মাশায়েখ ইউকে’ আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে সেখানে যান আমীর ডা. শফিকুর রহমান। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তারেক রহমান লন্ডনে আমীর ডা. শফিকুর রহমানের সাথে সাক্ষাৎ করতে কোনো আন্তরিকতাই দেখাননি। কারো মতে, নির্বাচন না আগে সংস্কারসহ আরো অনেক ইস্যুতে তারেক রহমান জামায়াতের আচরণে অনেক ক্ষুব্দ হয়ে আছেন।
সুর পাল্টে বলা হচ্ছে বিরোধ নেই
অথচ অনেকটা আকস্মিকভাবে এখন বলা হচ্ছে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের কোনো বিরোধ নেই। গত ১৩ জানুয়ারি সোমবার বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের কোনো বিরোধ নেই বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। তিনি বলেছেন, বিএনপির সঙ্গে কোনো দূরত্ব আছে বলেও মনে করে না জামায়াত। সোমবার মগবাজারে দলের কেন্দ্র্রীয় কার্যালয়ে ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত পাওলো ফারনান্দো দিয়াস ফেরেসের সঙ্গে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানের সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের একথা বলেন আবদুল্লাহ মো. তাহের।
জামায়াতের এই নায়েবে আমির এমন সময় কথাগুলো বললেন যখন বিএনপি’র সর্বোচ্চ পর্যায় থেকেই দলটির বিরুদ্ধে একের পর এক নেতারা কঠোর মনোভাবের পরিচয় দিচ্ছেন। আবার মাঠেও বিএনপি-জামায়াত মুখোমুখি অবস্থানে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহল মনে করেন, দেশে-বিদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাথে জামায়াতের সর্ম্পক গভীর ও মধুর- এমন প্রচারণায় দলটি কোনঠাসা হয়ে পড়েছে। কারণ পশ্চিমারা কোনোভাবে জামায়াতকে এখনো একটি অসাম্প্রদায়িক এবং এর পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী বলে মনে করেই না। ফলে জামায়াত যেভাবে রাজনৈতিক অঙ্গনে একলা ছড়ি ঘোরাতে চাইছিল তা বলা যায় ভেস্তে গেছে।