পকেটে উঁকি মারছে একটা পেন। আসলে তা নিরীহ না-ও হতে পারে। হতে পারে এটি একটি গোয়েন্দা চোখ বা স্পাই ক্যাম। লক্ষ্য আপনিই। সস্তা একটা হ্যান্ড ব্যাগ চেয়ে আছে আপনার দিকে। হয়তো অনামিকায় অদ্ভুত দর্শন একটা আংটি। আসলে এগুলো হতে পারে গোপন ক্যামেরা। সংক্ষেপে স্পাই ক্যাম বা গুপ্তচর ক্যামেরা। সবকিছুর সাক্ষী হতে পারে ক্ষুদে দৈত্যের এই চোখ। ছবি তুলছে। কথা রেকর্ড করছে। তাই বাসে ট্রেনে কথা বলতে সাবধান!
সাবওয়ে ট্রেনে, সুপার মার্কেটে বা চলতি পথে বাংলা বুঝবে না মনে করে আমরা অনেকেই মনের আগল খুলে বন্ধুর সঙ্গে গল্পে মেতে উঠি। এমন তথ্য আদান প্রদান করি অবলীলায় যা বিপদ ডেকে আনতে পারে। আমাদের জানা নেই সাদা বা কালো চামড়ার কেউ বেশ দূরত্ব বজায় রেখে এগুলো রেকর্ড করে চলছে, যা আপনার জন্য সমূহ বিপদের কারণ হতে পারে।
কত ছোট হতে পারে এ গুপ্তচর ক্যামেরা তা আপনার ধারণা আছে? হতে পারে একটা সুগার কিউবের মত। জামার বোতাম বা কপালের গোল টিপ বা পাথর বসানো আংটির মতো। এ স্পাই ক্যামগুলো মূলত ওয়ারলেস, আকারে ছোট এবং অবশ্যই হ্যান্ডি। এর বাকি অংশের ডিভাইসগুলো থাকে কিছু দূরে অপারেটরের কাছে। অপারেটর স্ক্রীনে দেখে টার্গেটের ছবি নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু কত দূরে থাকে অপারেটর? এটা নির্ভর করে স্পাই ক্যামগুলো কতটা শক্তিশালী তার উপর। যার কাছে ক্যামেরা তার কানে থাকে একটা ছোট্ট মাইক্রোফোন যার সাহায্যে অপারেটর নির্দেশ দেবে ক্যামেরা পজিশনের।
রুমটা যদি আলো আঁধারিতেও থাকে তাতেও কোনো সমস্যা হয় না। স্পাই ক্যামে ফিট করা থাকে ছোট্ট লেজার। তবে তা আচমকা ফ্ল্যাশ করে টার্গেটকে সজাগ করবে না। অথবা রুমে যদি ১০০ ওয়াটের আলো জ্বালানো থাকে তাতেও কিছু আসে যায়না। শুধু ডাঙ্গায় কেন, জলের গভীরেও চলে এই এক চক্ষু দৈত্যের তীক্ষè দৃষ্টি।
সেলফোনেও এই স্পাই ক্যাম বসানো থাকতে পারে। এতে থাকে একটি ভিডিও রেকর্ডার। যে কোন সময় আপনার ওপর গোয়েন্দাগিরি করতে পারে এই অদৃশ্য দানবের চোখ।বর্তমানের এই প্রযুক্তি বিশ্বে এই স্পাই ক্যাম এক অদ্ভুত যন্ত্রণা। তাই বাসে, সাবওয়ে, ট্রেনে, সুপার মার্কেটে কথা বার্তায় সতর্ক হোন। বলা তো যায় না স্পাই ক্যাম নিয়ে হয়তো আপনার অজান্তেই আপনাকে ফলো করছে। এই স্পাই স্ক্যামগুলো স্বচক্ষে দেখে একটা ধারণা পেতে চান? চলে যান ম্যানহাটনে। চোখ খোলা রাখলেই ‘স্পাই শপ’-এর সাইনবোর্ড দেখতে পাবেন। ঢুকে যান ভেতরে। স্বচক্ষে বিভিন্ন মডেলের দানবচক্ষু দেখতে পাবেন। তাছাড়া ঘরে তো কম্পিউটার আছেই। গুগলকে বলুন স্পাই শপের কথা। আলাদীনের দৈত্যের মতো নিমেষে অনেক স্পাই শপের ঠিকানা আপনার সামনে হাজির করে দেবে।
নিউইয়র্কে ‘ব্রাঞ্চ’ খাবারের রেস্তোরাঁ
ছুটির দিনে ঘুম থেকে দেরিতে উঠেছেন! নাস্তা করার সময় নেই আবার দুপুরের খাবারেরও সময় হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে সারা সপ্তাহের জমে থাকা কাজও করতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে যে ভোজের ব্যবস্থা করা হয় তাকেই প্রচলিতভাবে ব্রাঞ্চ বলে। ব্রাঞ্চ মানে ব্রেকফাস্ট ও লাঞ্চ একসঙ্গে করা। অনেকে বলেন, কনসেপ্টটা আসলে লেজি সানডে কাটানো।
১৮৯৫ সালে একটি ম্যাগাজিনে প্রথম ‘ব্রাঞ্চ’-এর
উল্লেখ পাওয়া যায়। ব্রেকফাস্ট ও লাঞ্চ একসঙ্গে ‘ব্রাঞ্চ’। সারা সপ্তাহ কাজ করে অনেকেই শনিবার অনেক রাত পর্যন্ত পার্টি করেন। রোববার ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়। ব্রেকফাস্টের জন্য দেরি হয়ে যায়, এদিকে লাঞ্চের সময়ও এগিয়ে আসে। তাই একটু লেট মর্নিং ব্রাঞ্চ শুরু হয়। বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আড্ডা, বেশ অনেকক্ষণ ধরে খাওয়াদাওয়া মিলিয়ে একটু আনন্দ আর কী! ব্রাঞ্চের মেনুও একটু বড় হয়।
ব্রাঞ্চেও বিপ্লব
উনিশ শতকের গোড়ার দিক। ইউরোপের পুরুষেরা সপ্তাহভর কাজে ব্যস্ত থাকায় রবিবার একটু দেরি করে উঠে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা ও খাওয়া-দাওয়া করার জন্য ব্রাঞ্চের আয়োজন করতেন। খাওয়া-দাওয়ার সময় লাঞ্চের দিকে পিছিয়ে গেলে তখন তাকে বলা হত ‘ব্রাঞ্চ’। সে ক্ষেত্রে একটু বেলা হত তা শেষ হতে। তবে এই ব্রাঞ্চ বা ব্রাঞ্চ সীমাবদ্ধ ছিল সমাজের অভিজাত শ্রেণির মধ্যে। মহিলারাও তখন অংশ নিতে পারতেন না। এর পরে ক্রমশ ব্রাঞ্চে সংযোজন হল নানা ধরনের ককটেল। ইউরোপ থেকে ব্রাঞ্চ জনপ্রিয়তা লাভ করল আমেরিকায়। ক্রমে তা ছড়িয়ে পড়লো সমাজের মধ্যবিত্ত মহলেও। ধীরে ধীরে ব্রাঞ্চে মহিলাদের প্রবেশও ঘটল। তারা দেখলেন, সারা সপ্তাহ কাজের পরে রেস্তরাঁয় সানডে ব্রাঞ্চ করলে তো রান্নাবান্নার ঝক্কি পোহাতে হয় না! ফলে খুব শিগগিরই তা জনপ্রিয় হয়ে উঠলো। বিভিন্ন অভিজাত রেস্তোরাঁ ও ক্লাবে ‘ব্রাঞ্চ’ সার্ভ করা শুরু হল। উইকেন্ড বাদেও ইস্টার, ক্রিসমাস, বিয়ে উপলক্ষেও শুরু হল ব্রাঞ্চ।
নিউইয়র্কে অন্যান্য জাতির রেস্তোরাঁগুলোতে ব্রাঞ্চ খাবার চালু থাকলেও বাংলাদেশিদের রেস্টুরেন্টগুলোতে অফিসিয়ালি ঘোষণা দিয়ে ব্রাঞ্চ খাবারের ব্যবস্থা একেবারেই হাতে গোনা। তাদেরই একটি জ্যাকসন হাইটস সংলগ্ন সানশাইন রেস্টুরেন্ট। এখানে প্রতি শনি ও রোববার ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ব্রাঞ্চ খাবারের ব্যবস্থা থাকে। মেনুতে থাকে নিহারী, কিমা, গোট পায়া, বিফ হালিম, চিকেন বিরিয়ানি/পোলাও /হালুয়া, পুরি, চনা, আলু, চা, অমলেট, পরোটা, বেভারেজ, লাচ্ছি, মাঠা, নান পরোটা ইত্যাদি।
ব্রাঞ্চ খাবারের মূল্য ১৫ ডলার।
তাহলে ঠিকানাটা জেনে নিন-
সানসাইন জ্যাকসন হাইটস
৭৩-১০ নর্দার্ন বুলেভার্ড
কুইন্স, নিউইয়র্ক-১১৩৭২
ফোন : ৭১৮ ৭৭৯ ৬৭০০
সুস্বাস্থ্যের ভালো দাওয়াই ‘ভ্রমণ’
নাগরিক জীবনের ব্যস্ততা ও কাজের চাপে কখনো কখনো সব অসহ্য হয়ে ওঠে। শরীর ও মনে চেপে বসে অবসাদ। বিরক্তিকর হয়ে ওঠে নিত্যদিনের জীবনযাপন। এসময় নিজেকে কিছুটা চাপমুক্ত করতে সব কাজ থেকে ছুটি নিয়ে দূরে কোথাও ঘুরে আসতে পারেন। আর চাপমুক্ত হওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে ভ্রমণ। শহুরে বিষণ্নতা কাটানোর জন্য ঘুরে আসতে পারেন প্রকৃতির কাছাকাছি। গবেষকদের মতে, ভ্রমণ স্বাস্থ্যের উপকারি দাওয়াই। ব্যস্ততা থেকে একটু অবসর নিয়ে ঘুরে এলে কমবে মানসিক অবসাদ। এমনকী নিয়মিত ভ্রমণ হৃদরোগসহ অন্য শারীরিক ও মানসিক রোগের ঝুঁকি কমায়। এছাড়া নতুন কোনো জায়গা ঘুরে এলে পাবেন ওই এলাকার নিজস্ব ইতিহাস, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, জীবনযাপন ও খাবারের স্বাদ। পাশাপাশি নতুন অনেক কিছু শেখার ও সুযোগ হয়।
তাই ব্যস্ত জীবনে হাঁপিয়ে উঠলে একটু সময় বের করে কোথাও ঘুরে এসে নতুন উদ্দীপনা নিয়ে শুরু করতে পারেন কর্মজীবন। তবে গন্তব্য যেটাই হোক না কেন, ভ্রমণ জরুরি। তাই শারীরিক ও মানসিক অবসাদ ঝেড়ে সতেজ শরীর ও মন নিয়ে কাজে যোগ দিতে আপনার মনমতো কোথাও ঘুরে আসুন। দেখবেন জীবনটাকে আপনি নতুনভাবে দেখছেন। পাশাপাশি সারাজীবন মনে রাখার মতো স্মৃতি জমা হবে আপনার ঝুলিতে। এমনকি ঘুরতে গিয়ে অচেনা বা ভিনদেশি কারো সঙ্গে বন্ধুত্বও তৈরি হতে পারে। আমি এই পর্বে আপনাদের নিয়ে যাবো আমাদের নিউইয়র্কের অদূরে ভার্জিনিয়া স্টেটে। চাইলে দিনে গিয়ে দিনেই ঘুরে আসতে পারেন। পাশেই কোনো হোটেলে থাকাটা হবে বোনাস।
হাতছানি দেয় লুরে কেভার্ন
এ যেন এক পাতালপুরীর রাজপ্রাসাদ।
৮০ একর জায়গায়, জমি থেকে ১৬৫ ফুট নিচে নেমে প্রকৃতির এই শোভা উপভোগ করা যায়। সব গুহা যে অত নিচুতে, তা কিন্তু নয়। এই পাতালপুরীতে বৈদ্যুতিক আলোর সুব্যবস্থা রয়েছে। বিদ্যুতের আলোয় গুহাগুলো যেন ঝলমল করছে। সে কারণে গুহার নানা কারুকার্য ও রঙের অফুরন্ত খেলা দেখে ভ্রমণার্থীরা মুগ্ধ হয়ে পড়েন।
হ্যাঁ, আমি বলছিলাম ল্যুরে কেভার্নের কথা।
লুরে ক্যাভার্নকে প্রধানত ‘লুরে কেভ’ হিসেবেও অনেকে অভিহিত করে থাকেন। ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের লুরে শহরের পশ্চিমে সেনানদোহা ভ্যালিতে এই গুহা অবস্থিত। ১৮৭৮ সালে বিশাল আকারের এ গুহাটি আবিষ্কৃত হয়। পরে তা বাণিজ্যিকভাবে দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রাকৃতিক দর্শনীয় স্থানগুলোর একটি এই লুরে ক্যাভার্ন।
যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘতম প্রাকৃতিক গুহার একটি এই লুরে ক্যাভার্ন। রহস্যে ভরা লুরে ক্যাভার্নে রয়েছে অসংখ্য গুহা। প্রত্যেকটি গুহায় তৈরি হয়েছে প্রকৃতির অসংখ্য নিদর্শন। গুহাগুলো সমতল থেকে প্রায় দেড়শো ফুট উঁচুতে অবস্থিত। প্রকৃতির এক অত্যাশ্চর্য সৃষ্টির মহড়া চলছে যেন এখানকার প্রত্যেকটি গুহায়। গুহার এই নান্দনিক সৃষ্টিকর্ম পর্যটকদের মনে তাই প্রতিনিয়ত বিস্ময় জাগায়। হাজার হাজার, লাখ লাখ বছর যেন মূর্ত হয়ে তাদের চোখের সামনে উপস্থিত হয়। লুরের সৌন্দর্য দেখতে পর্যটকদের ভিড় সবসময় লেগেই থাকে। প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক পর্যটক প্রকৃতির সাজঘর লুরে ক্যাভার্ন দেখতে ভিড় করেন। দর্শনীর বিনিময়ে দেখতে পাওয়া যায় প্রকৃতির এই অসাধারণ সৃষ্টি। দর্শনীর অধিকাংশ অর্থ ব্যয় করা করা হয় স্থানীয় এক দাতব্য প্রতিষ্ঠানে। লোহা মিশ্রিত পাথর থেকে এসেছে লাল রঙ, তামা মেশানো পাথর দিয়েছে সবুজ রঙ। এমনি করে বিচিত্র রঙের পাথরের স্তম্ভ, জোড়া স্তম্ভ, জলপ্রপাতের মতো ঝালরগুচ্ছ, ভৌতিক স্তম্ভ, ভাঁজ করা সাজানো কাপড়চোপড়ের মতো বৈচিত্র্যময় সব সৃষ্টি দর্শকদের নজর কেড়ে নেয়।
৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫