জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে একটি রাজনৈতিক দলের বাড়াবাড়ি রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক সন্দেহ দেখা দিয়েছে। কারো কারো মতে, রাজনৈতিক দলটি দেশ নয় সম্পূর্ণ নিজেদের স্বার্থের কারণে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে দাবি করছে। কেউ কেউ মনে করেন, দলটি একের পর এক বিভিন্ন ধরনের দাবি করে ঘোলা পানিতে কিছু একটা বাগিয়ে নিতে চায়। তার মধ্যে একটি হচ্ছে মাঠের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি’কে চাপে রাখা। দর কষাকষি করে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই বিএনপি থেকে বড়ো কিছু বাগিয়ে নিতে চায়। তবে অন্য একটি মত হচ্ছে, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন দাবি করে এবং তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে পুরো দেশে একটা বিশৃংখল অবস্থা তৈরি করে ফায়দা নিতে তৎপর। রাজনৈতিক মাঠ ঘুরে এসব তথ্য মিলেছে।
জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে জামায়াতের নেতারা এখন আগের চেয়ে বেশি সোচ্চার হতে দেখা যাচ্ছে। সাথে কিছু ইসলামী দলকেও পাশে নিতে নানান ধরনের তৎপরতা চালিয়েছে দলটি। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সেইসব ইসলামী দলটি এখন জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন করার ব্যাপারে জামায়াতের সাথে সুর মিলিয়ে তেমনভাবে উচ্চবাচ্য করছে না। তবে জামায়াত এখন একাই জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন করার করার তাদের কন্ঠ জোড়ালো করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে কেনো জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন করার জামায়াত এখন জোড়াজুড়ি করছে?
বিএনপি’র সাথে শক্ত দরকষাকষি চায়
রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি সূত্র জানায়, মুলত জামায়াত চায় বিএনপি’র সাথে একটি শক্ত আসন ভাগাভাগি নিয়ে সমঝোতা। জামায়াত বুঝতে পারছে তারা যতই হাক ডাক মারুক না কোনো ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে কোনাভাবেই ক্ষমতায় আসীন হতে পারবে না। সেক্ষেত্রে জামায়াত নেতারা মনে করেন বিভিন্ন দাবি জানিয়ে বা পরিস্থিতি ঘোলাটে করে বিএনপি’র থেকে কিছু একটা বাগিয়ে নিতে হবে। তার একটি হচ্ছে অন্তত ৫০ থেকে ৭০ আসন যেনো বিএনপি জামায়াতের জন্য ছেড়ে দেয়। এমনকি ওইসব সমঝোতার আসনগুলিতে যেনো বিএনপি শক্ত প্রার্থী না দেয়।
মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি থেকে দূরে রাখার কৌশল
এদিকে একটি সূত্র জানায়, জামায়াত জানে তাদের একাত্তরে ভূমিকার পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক ইমেজের কারণে বিএনপি এখন দলটিকে পাশ কেটে চলতে চায়। জামায়াতের পর্যবেক্ষণ হলো, বিএনপি এখন মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সকল প্রগতিশীল অসাম্প্রদায়িক দলগুলিকে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে যুগপৎ আন্দোলন করে আসছে। এছাড়া বিএনপি’র এমন পরিকল্পনাও রয়েছে তারা ক্ষমতায় গেলেও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের এসব প্রগতিশীল অসাম্প্রদায়িক দলগুলিকে নিয়েই সরকার গঠন করবে। জামায়াতের আরও পর্যবেক্ষণ রয়েছে যে বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের উদার গণতান্ত্রিক ইসলামী দলগুলিকে-ও সাথে রাখতে আগ্রহী। ফলে, জামায়াত নেতারা মনে করেন, তারা দেশের অন্যতম একটি শক্তিশালি জাতীয়তাবাদি রাজনৈতিক শক্তি থেকে সত্যিকারভাবেই দূরে সরে যাচ্ছে। এর পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে বিএনপি’র সাথে মারাত্মক তিক্ততা। তাছাড়া জামায়াতের বড়ো একটি পর্যবেক্ষণ হলো বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সকল প্রগতিশীল অসাম্প্রদায়িক দলগুলিকে নিয়ে যে একটি শক্ত ভিত তৈরি করেছে সে-টি পশ্চিমাদেরও আকর্ষণ করেছে। একারণে জামায়াত চায় বিএনপি’র সাথে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সকল প্রগতিশীল অসাম্প্রদায়িক দলগুলিকে বিচ্ছিন করে ফেলতে। এজন্য জামায়াত ইতোমধ্যে বিএনপি’র সাথে যুগপৎ আন্দোলনে শরিকদেরও বিভিন্নভাবে বিভ্রান্ত করে যাচ্ছে, বিভিন্ন ধরনের টোপ দিচ্ছে।
তবে এতে-ও কুলকিনারা করতে পারছে না কারণ বিএনপি’র সাথে যুগপৎ আন্দোলনে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সকল প্রগতিশীল অসাম্প্রদায়িক দলগুলি একাট্টা। একারণে জামায়াত এখন জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন করার ব্যাপারে জোড়ালো দাবির পাশাপাশি আরও বিভিন্ন ইস্যুতে মাঠ গরম করতে চায়। একিই সঙ্গে এই ইস্যুতে ভিন্ন পরিস্থিতি তৈরি করতে সচেষ্ট বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। দলটি মনে করে একটা পরিস্থিতি তৈর করতে পারলে হয়তবা বিএনপি’র হাইকমান্ড একটি সমঝোতায় আসতে পারে। সে-সমঝোতার সুযোগে জামায়াত তার কাঙ্খিত লক্ষ্যটি পুরণ করতে পারবে। কেননা এর আগে জাতীয় সরকার বা একটি অনির্বাচিতদের নিয়ে ঐক্যমতের সরকারও প্রতিষ্ঠায় বেশ তোড়জোর করে। আর এসব ইস্যুতে জামায়াত কৌশলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার ইমেজকে কাজে লাগাতে চায়।
সরকারের সিদ্ধান্তে জামায়াত বেকায়দায়
আরেক সূত্র জানায়, জামায়াত এতোদিন ধরে দাবি করে আসছিল বড় ধরনের সংস্কারের আগে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন না। কিন্তু ইতোমধ্যে জামায়াত বুঝে ফেলেছে যে, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন করার ব্যাপারে সরকারের এখন আর আগ্রহই নেই। কেননা দ্রুত একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে এনে নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে দেশী বিদেশী চাপ প্রচণ্ড। ফলে সরকার এখন কোনোভাবেই জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন করছে না। পারলে সরকার আরো আগেই জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করে ফেলে। আর এসব জেনে এখন জামায়াত জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন করার দাবি জানাচ্ছে যেনো ঘোলাটে পরিস্থিতি তৈরি করে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেকে আরো পিছিয়ে দেয়া যায়।
এখনতো নির্বাচনের পরিবেশ-ই নেই
এদিকে বিএনপি’র একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আমেরিকা থেকে প্রকাশিত দেশ পত্রিকার প্রতিনিধিকে একটি ব্যাখ্যা দেন কেনো জামায়াত এসব করছে? তিনি বলেন, জামায়াততো দীর্ঘ মেয়াদী সংস্কার চেয়েছে। এটা না হলে নির্বাচনই সুষ্ঠু হবে না বলে জামায়াত নেতাদের অভিমত। তারা সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমে বলেছেন, বিরাজমান পরিস্থিতিতে নির্বাচন হলে তা সুষ্ঠু হবে না। প্রশ্ন হচ্ছে বিরাজমান পরিস্থিতিতে নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে তাহলে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের দাবি তারা কোনো জোড়ালো করছে? প্রশ্ন হচ্ছে সংস্কার কি হয়ে গেছে? বিএনপি’র এই নেতা এসব প্রশ্ন রেখে দেশ প্রতিনিধিকে আভাস দেন যে, সামনে জামায়াত আরও অনেক ইস্যু তৈরি করতে চেষ্টা করবে। এসব ইস্যু তৈরি করে জামায়াত দেশে একটি ঘোলাটে পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করবে। তবে শেষ মেষ তারা শোচনীয়ভাবে হেরে যাবে। এর পাশাপাশি দলটি মারাত্মকভাবে দেশে বিদেশে একটি চিহ্নিত অপশক্তি হিসাবে পরিচিতি পাবে বলে ওই বিএনপি’র নেতা মনে করেন।