প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন প্রথম দফার নিষেধাজ্ঞার চেয়ে আরো বিস্তৃত করে একটি নতুন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা চূড়ান্ত করার পথে রয়েছে। প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ দুই কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই তথ্য জানিয়েছেন। একজন কর্মকর্তা জানান, একটি খসড়া সুপারিশে ’রেড’ তালিকা তৈরি করা হয়েছে, যেখানে অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হবে। আগের নিষেধাজ্ঞায় কিউবা, ইরান, লিবিয়া, উত্তর কোরিয়া, সোমালিয়া, সুদান, সিরিয়া, ভেনেজুয়েলা এবং ইয়েমেন ছিল। এবার তালিকায় নতুন করে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানকে যোগ করার সুপারিশ করা হয়েছে। এক্সিকিউটিভ অর্ডার ১৪১৬১ অনুযায়ী, ২১ মার্চের মধ্যে যেসব দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে, সেই দেশগুলোর নাম নির্ধারণ করা হবে। এর আগে ২০১৭ সালের প্রথম মুসলিম নিষেধাজ্ঞার সময় আদালত হস্তক্ষেপ করলেও, এবারও স্থায়ী বাসিন্দাদেও (গ্রিনকার্ড ধারীদের) প্রবেশাধিকার নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
নতুন নিষেধাজ্ঞায় তিনটি পর্যায় থাকবে। রেড তালিকা: সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা, যেখানে নির্ধারিত দেশগুলোর নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকবে। অরেঞ্জ তালিকা: নির্দিষ্ট ক্যাটাগরির ভিসা অনুমোদন, যেমন শুধুমাত্র ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে বা বিশেষ ক্ষেত্রের পেশাদারদের জন্য ভিসা দেওয়া হতে পারে। ইয়েলো তালিকা: ৬০ দিনের মধ্যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করার সুযোগ। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দেশটি নির্ধারিত মানদণ্ডে পৌঁছাতে ব্যর্থ হলে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে।
কেয়ারের ভ্রমণ সতর্কতা
আমেরিকার বৃহত্তম মুসলিম নাগরিক অধিকার ও অ্যাডভোকেসি সংস্থা, কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস (কেয়ার), একটি হালনাগাদ ভ্রমণ পরামর্শ জারি করেছে। এতে বলা হয়েছে, যেসব অভিবাসী বর্তমানে আইনসম্মতভাবে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন, বিশেষ করে পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরাক, ইরান, লিবিয়া, ফিলিস্তিন/গাজা, সোমালিয়া, সুদান, সিরিয়া ও ইয়েমেনের নাগরিক, তাদের আগামী ৩০ দিনের মধ্যে দেশের বাইরে না যাওয়ার জন্য সতর্ক করা হয়েছে। নতুন নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা দেশগুলোর নাগরিকদের জন্য এই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, কারণ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নতুন নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে ২১ মার্চের মধ্যে ফেডারেল এজেন্সিগুলোকে এমন দেশগুলোর একটি প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে, যেগুলোর ভিসা যাচাই প্রক্রিয়া অপর্যাপ্ত বলে বিবেচিত হতে পারে।
কেয়ার থেকে নাগরিকদের নিরাপত্তা ও অভিবাসন অধিকার রক্ষায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অভিবাসন আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করুন: যদি আপনি উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশের নাগরিক হন, তবে আপনার অভিবাসন অবস্থা পর্যালোচনা করতে এবং আইনি অধিকার সম্পর্কে জানার জন্য আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ নিন। আন্তর্জাতিক ভ্রমণ এড়িয়ে চলুন। নতুন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে আপনি যুক্তরাষ্ট্রে ফিরতে না পারার ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। শুধুমাত্র জরুরি প্রয়োজনে ভ্রমণ করুন। গুরুত্বপূর্ণ নথির অনুলিপি রাখুন: আপনার ভ্রমণ ও অভিবাসন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ নথির কপি নিরাপদ স্থানে সংরক্ষণ করুন। সচেতন থাকুন ও আপনার অধিকার জানুন: কেয়ার একটি ‘নো ইওর রাইটস’ গাইড প্রকাশ করেছে, যেখানে অভিবাসন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সাক্ষাতের ক্ষেত্রে করণীয় সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেওয়া হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রথম দফার নির্বাহী আদেশে অভিবাসীদের রাজনৈতিক কার্যক্রম ও মতামতের ওপর নজরদারি করার নির্দেশনা ছিল। নতুন নিষেধাজ্ঞায় একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হলে, মানবাধিকার কর্মী, ফিলিস্তিনি অধিকারের পক্ষে অ্যাডভোকেট এবং মার্কিন পররাষ্ট্র নীতির সমালোচকদের ওপর চাপ বাড়তে পারে। কেয়ার জানিয়েছে, তারা বৈষম্যমূলক অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবে এবং মুসলিম নিষেধাজ্ঞা পুনরায় আরোপের প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে আইনি ও সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। যেকোনো ঘটনা রিপোর্ট করার জন্য কেয়ারের সিভিল রাইটস বিভাগে যোগাযোগ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।