৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৮:০৩:৪৬ অপরাহ্ন


ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল ও ট্রাম্পের শুল্ক সমাচারে কী বার্তা
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৬-০৪-২০২৫
ভারতের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল ও ট্রাম্পের শুল্ক সমাচারে কী বার্তা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প


ভারত বাংলাদেশের রাজনৈতিক টানাপড়েনের পটভূমিতে ভারত তাদের ভূমি ব্যবহার করে বাংলাদেশের বিভিন্ন দেশে বাণিজ্য করার সুবিধা বাতিল করেছে। আর একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশসহ বেশ কিছু দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্কবৃদ্ধির ব্যবস্থা তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছে। দুটি ঘটনা দুইভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করবে। বাংলাদেশের বন্দর (স্থল, জল ও বিমান) ব্যবহার করার থেকে সড়কপথে পণ্য ভারতে পাঠিয়ে ভারতের বন্দরসমূহ ব্যবহার করে পণ্য রফতানি আর্থিকভাবে লাভজনক থাকায় এতো দিন বাংলাদেশ ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা ভোগ করেছে। ভারত নিজেদের বন্দরসমূহে পণ্যজট হওয়ার যুক্তি তুলে এই সুবিধা বাতিল করেছে। বিশাল ভারতের অনেক বন্দরের সামান্য কিছু ক্ষমতা ব্যবহার করে বাংলাদেশ কীভাবে ভারতের অসুবিধার সৃষ্টি করলো বোধগম্য নয়। সিদ্ধান্তটি রাজনৈতিক সেটি বলাই বাহুল্য। কিন্তু এর ফলে বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্য কিছুটা হলেও ধাক্কা খাবে সাময়িকভাবে, সন্দেহ নেই। অন্যদিকে ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশসহ বেশ কিছু দেশের আমদানি পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত তিন মাসের জন্য স্থগিত করে বাংলাদেশ নিজেদের বাণিজ্য কৌশল সমন্বয়ের সুযোগ পাবে। স্মরণে রাখতে হবে, যুক্তরাষ্ট্র চীন পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করায় সঠিক দ্যূতিয়ালি করে বাংলাদেশ বাড়তি সুবিধা নিতে পারবে। 

ভারতের বন্দর সুবিধা ব্যবহার করে রফতানি 

ভারত-বাংলাদেশ সৎ প্রতিবেশীমূলক সম্পর্কের নিদর্শন হিসেবেই বাংলাদেশ যেমন ভারতকে নিজেদের ভূমি ব্যবহার করে পূর্ব-পশ্চিম পণ্য ট্রানজিট সুবিধা দিয়েছে। একইভাবে ভারত বাংলাদেশকে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দিয়েছিল। বর্তমান বিশ্বে প্রতিবেশী দেশগুলো এ ধরনের পারস্পরিক সহযোগিতা করার অনেক নজির আছে। ভারত কোনো আলাপ-আলোচনা না করেই হঠাৎ একতরফাভাবে এই সুবিধা স্থগিত করা আদৌ সঠিক হয়নি। বাংলাদেশ কিন্তু হঠকারী করে দ্রুত ভারতের ট্রানজিট সুবিধা বাতিল করার মতো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। বরং নিজেদের সমুদ্র এবং বিমানবন্দরগুলোর সক্ষমতা ও শুল্কায়ন ব্যবস্থা সংস্কার করে বিকল্প ব্যবস্থার পথে হাঁটছে। আশা করি দুই প্রতিবেশী দেশ আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে বিষয়টি সমাধান করবে। দুই প্রতিবেশীর সাময়িক বৈরী সম্পর্ক উভয় দেশের জনগণের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করবে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল পূর্ণমাত্রায় চালু হলে চট্টগ্রাম এবং মাতারবাড়ী বন্দর সুবিধা সম্প্রসারিত হলে বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট প্রয়োজন হবে না। নেপাল, ভুটান, চীন ও ভারত বাংলাদেশের বন্দর সুবিধা নিতে পারবে। ভারত বাংলাদেশ বর্তমানে ভিসা সুবিধা সংকুচিত করায় বাংলাদেশের মতো ভারতের বাণিজ্য স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয়েছে। আশা করি, দুটি দেশের পলিসি মেকার্সরা বিষয়টি বুঝতে পারছেন। কয়েকটি আগেই দুই দেশের সরকারপ্রধান ব্যাংককে কথা বললেন। হঠাৎ করে কেন ভারত এমন সিদ্ধান্ত নিলো?

ট্রাম্পের শুল্ক দ্যুতিয়ালি 

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় ক্ষমতায় এসে বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেছে। তার এই অযাচিত বাণিজ্যযুদ্ধের মূললক্ষ্য চীন হলেও ইতিমধ্যে নিজেদের দেশ এবং বিশ্বজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। চীন পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ বিবেচনার মুহূর্তে ট্রাম্প চীন ছাড়া সব দেশের জন্য প্রযোজ্য ৩৭ শতাংশ বাড়তি শুল্কায়ন তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রধান রফতানি পণ্য তৈরি পোশাকের মূল বাজার। বর্তমানে বাংলাদেশ চীনের পরে দ্বিতীয় প্রধান তৈরি পোশাক এবং টেক্সটাইল দ্রব্যদি রফতানিকারক দেশ। চীনের রফতানি পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক বজায় থাকায় এবং বাংলাদেশের অপর প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনাম, ভারত, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার চেয়ে বাংলাদেশের পণ্যের গুণগত মান উন্নততর হওয়ায় বাংলাদেশ এই সময় বাণিজ্য সম্প্রসারণ করতে পারবে, একই সময় সুলভ শুল্ক সুবিধা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইস্পাত দ্রব্য, গম, ভোজ্যতেল আমদানি করে বাণিজ্য সমতা করতে পারবে। আমার ধারণা তিন মাস পর পরিস্থিতি অনেক পাল্টে যাবে। বাংলাদেশের উচিত এখন নিজেদের শিল্পকারখানাগুলোর গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি উন্নয়ন, শ্রমিক সমস্যার দিয়ে নজর দেওয়া এবং সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়ন। 

দেশ অনতিবিলম্বে নির্বাচনমুখী হবে। বর্তমান সরকারের উচিত রাজনৈতিক দলসহ সব অংশীজনের সঙ্গে শিল্পবাণিজ্য, বৈদেশিক সম্পর্কের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে কৌশলগত ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা, পলিসি এবং বাস্তবায়ন কৌশলের ধারবাহিকতা বিষয়ে বিশ্বকে সঠিক সংকেত প্রদান। ভারসাম্য অবস্থান ছাড়া কিন্তু বাংলাদেশের উন্নয়ন ধারবাহিকতা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।

শেয়ার করুন