৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ৬:৩৫:৪১ অপরাহ্ন


আলজাজিরাকে সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস
শেখ হাসিনা ও গণহত্যার বিচার শিগগিরই
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩০-০৪-২০২৫
শেখ হাসিনা ও গণহত্যার বিচার শিগগিরই আলজাজিরার সঙ্গে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা


শিগগিরই (মে মাস) শেখ হাসিনার বিচারকার্য শুরু হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গত ২৭ এপ্রিল কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আলজাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি। 

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, চলতি মাসের শেষে কিংবা মে মাসের শুরুতে জুলাই আন্দোলনে গণহত্যা চালানোর অভিযোগে বিচার শুরু হবে। তিনি আরো বলেন, পতিত শেখ হাসিনা সরকার, হত্যা-গুমসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো যেসব ঘটনা ঘটিয়েছে, তার প্রমাণ উঠে এসেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রতিবেদনে। ট্রাইব্যুনালে তদন্ত শেষে চলতি মাসের শেষে অথবা আগামী মাসের শুরুতে শেখ হাসিনার বিচার শুরুর কথা জানান প্রধান উপদেষ্টা। শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরাতে ভারতকে চিঠি ও দেশটির প্রধানমন্ত্রীকেও জানানো হয়েছে বলেও জানান দিয়েছেন তিনি। 

২৭ এপ্রিল আলজাজিরার ‘টক টু আলজাজিরা’ অনুষ্ঠানে দেওয়া ওই সাক্ষাৎকার গণমাধ্যমটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়। সেখানে বাংলাদেশের নির্বাচন, সংস্কার, পতিত শেখ হাসিনার সরকারের অনিয়ম-দুর্নীতির বিচারসহ সম্প্রতি চীন সফর নিয়েও কথা বলেন, বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। একই সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষ এখনো অন্তর্বর্তী সরকারকে ভালো সমাধান মনে করছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ড. ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশের পরিস্থিতি দেখে এখনো মানুষ মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার এখনো তাদের জন্য ভালো সমাধান।’

নির্বাচন প্রসঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিগত দিনের অনিয়ম দুর্নীতি দূর করে দেশে অর্থবহ সংস্কার এবং এযাবৎকালের সেরা নির্বাচন উপহার দেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে সংস্কারের তালিকা ছোট হলে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন এবং তালিকা বড় হলে আগামী বছর জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন জুনের পরে যাবে না।

অন্তর্বর্তী সরকারের ‘হানিমুন পিরিয়ড’ শেষ হয়ে গেছে কি না- জানতে চাইলে ড. ইউনূস বলেন, মানুষ মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার এখনো তাদের জন্য একটি ভালো সমাধান।’ তিনি আরো বলেন, ‘তারা বলছে না যে, অন্তর্বর্তী সরকারকে যেতে দাও, আজই নির্বাচন করো... আমরা এমন কোনো সমস্যার মুখোমুখি হইনি যেখানে লোকেরা বলছে যে ‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ক্ষমতা হস্তান্তর করো’।

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখনো নিজেকে ‘ন্যায়সংগত প্রধানমন্ত্রী’ দাবি করে বিবৃতি দিচ্ছে এবং সরকার ভারতে তার উপস্থিতি কীভাবে দেখছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে ড. ইউনূস বলেন, ‘ব্যাংককে অনুষ্ঠিত বিমসটেক সম্মেলনে মোদির সঙ্গে আমার আলোচনায় আমি স্পষ্ট করেছিলাম, শেখ হাসিনাকে ভারতে রাখতে চাইলে তা আপনার ইচ্ছা। কিন্তু তার উচিত নয় বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে মন্তব্য করা। তার বক্তব্য জনগণকে উত্তেজিত করছে এবং আমাদের জন্য সমস্যা তৈরি করছে।’ তখন মোদি কী বলেছিলেন জানতে চাইলে ইউনূস বলেন, মোদি জানান, ভারতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উন্মুক্ত থাকায় শেখ হাসিনার বক্তব্য নিয়ন্ত্রণ করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। আলজাজিরা সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, অর্থাৎ আপনি বলছেন, মোদি বলেছেন ভারতে বাকস্বাধীনতা বন্ধ করতে পারবেন না। ফলে শেখ হাসিনাকে ফেরানোর কোনো নিশ্চয়তাও পাননি। এ অবস্থায় বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের কী প্রভাব পড়বে?

প্রধান উপদেষ্টা জবাবে বলেন, এটা আমাদের দ্বিপক্ষীয়ভাবে সমাধান করতে হবে। আমরা আমাদের আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করছি। ভারতের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরত চাওয়া হয়েছে, তবে এখনো কোনো সাড়া পাইনি। আইনি প্রক্রিয়া এগিয়ে গেলে বিষয়টি উচ্চপর্যায়ে উঠবে। সাক্ষাৎকারে অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত দল আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, এটি দলের (আওয়ামী লীগ) ওপর নির্ভর করবে তারা অংশগ্রহণ করবে কি না। আমরা এখনো জানি না; তারা কিছু ঘোষণা করেনি। যখন তারা করবে, নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উপযুক্ত পদক্ষেপ নেবে।

এই বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের ওপর ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে কি না- প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, শুধু নির্বাচন কমিশন নয়। অন্যান্য দল বা আইনগত বিধানও এর মধ্যে আসতে পারে, যার অধীনে তাদের অংশগ্রহণের অনুমতি নাও হতে পারে। ভারতের আগে চীন সফর করার সিদ্ধান্ত কি ইচ্ছাকৃত কি না ও এর মাধ্যমে কোনো বার্তা দিতে চেয়েছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আমি আমার প্রতিবেশী দেশগুলোকেই সফর করছি। ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলাম, সাড়া পাইনি। তাই প্রথমে চীন গেলাম। এরপর মালয়েশিয়া যাবো। এর আগে থাইল্যান্ডের ব্যাংককেও ছিলাম। আমি আশপাশের অনেক দেশেই সফর করছি এবং চেষ্টা করছি দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর সংগঠন সার্ককে আবার সক্রিয় করতে।

তিনি আরো বলেন, সার্ক এখন অচল অবস্থায় রয়েছে। আমি সব সার্ক নেতাদের আহ্বান জানাচ্ছি চলুন একসঙ্গে কাজ করি, আবার যোগাযোগ বাড়াই। একই সঙ্গে বিমসটেক নিয়েও কাজ করছি। বলছি, আসুন একত্র হই, সমস্যা মেটাই এবং এগিয়ে চলি। মূল লক্ষ্য হলো দেশগুলোকে একত্র করে মানুষের জীবনমান উন্নত করা। বর্তমানে বাংলাদেশ বিমসটেকের চেয়ারম্যান, তাই এই দায়িত্ব গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি আমরা আসিয়ান সদস্যপদ পাওয়ার চেষ্টা করছি। ইতিমধ্যে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি।

এ সময় প্রশ্নকর্তা জানতে চান, আপনি আঞ্চলিকভাবে যার সঙ্গে সম্ভব, তার সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। তবে ভারত কিছুটা উদাসীনতা দেখিয়েছে। এখন কি পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার দিকে ঝুঁকছেন?

এর জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আমি ‘উদাসীনতা’ বলবো না। এটা সাময়িক একটা বিষয়। আমাদের একসঙ্গে সমাধান করতে হবে। আমি এটাকে চূড়ান্ত বা দীর্ঘস্থায়ী কিছু মনে করি না। বন্ধুত্বই টিকে থাকার চাবিকাঠি। আমি প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ার ওপর জোর দিচ্ছি। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক বিশ্বের সেরা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কগুলোর একটি হওয়া উচিত। আরেক প্রশ্নে সাংবাদিক জানতে চান, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রকাশ্যে আপনার প্রতি অসন্তোষ দেখিয়েছেন। শোনা যায়, আপনি তাকে হারানোর জন্য তহবিল দিয়েছিলেন। ২০১৬ সালে ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে আপনার অনুদানের কথা উল্লেখ করা হয়। এখন ট্রাম্প আবার ক্ষমতায় ফিরছেন, এই পরিপ্রেক্ষিতে কি আপনি সে সিদ্ধান্তের জন্য অনুতপ্ত?

এই বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক রয়েছে। কোনো সমস্যা নেই। আমরা একসঙ্গে কাজ করছি এবং শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করছি। তিনি কী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে দেখেন নাকি তাকে বেইজিং এবং ওয়াশিংটন ডিসির মধ্যে একটি বেছে নিতে বাধ্য করা হচ্ছে, জানতে চাইলে ড. ইউনূস বলেন, ‘না। এটা কোনো পক্ষ নেওয়ার বিষয় নয়। সবাই আমাদের বন্ধু যুক্তরাষ্ট্র বন্ধু, চীন বন্ধু, ভারতও বন্ধু।’

ড. ইউনূস জানান, বিদেশি সরকারগুলো বাংলাদেশকে সাহায্য করছে যাতে বাংলাদেশ বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত পেতে পারে।

শেয়ার করুন