০৩ অক্টোবর ২০২৫, শুক্রবার, ০৪:৪৩:২৭ পূর্বাহ্ন


অন্তবর্তী সরকারের কতিপয় প্রশ্নের জবাব মিলছে না
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২১-০৫-২০২৫
অন্তবর্তী সরকারের কতিপয় প্রশ্নের জবাব মিলছে না উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক


অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিবেশ উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা ক্ষমতায় আরোহণের পর পরিবেশ রক্ষা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার নানা উদ্যোগের কথা ঘোষণা করলেন। শোনা গেলো দেশ দ্রুত পলিথিন মুক্ত হবে, ঢাকাসহ সারাদেশের নদী জলাশয় পর্যায়ক্রমে দখলমুক্ত করা হবে, মহানগরগুলোকে শব্দদূষণ, বায়ুদূষণ মুক্ত করা হবে। ভদ্রমহিলা রুচিশীল সাজে সেজে সুন্দর করে নিয়মিত মিডিয়ায় কথা বলেছেন। তিনি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বিশেষত রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়েও কথা বলেছেন। 

শুরু হলো সেন্ট মার্টিন প্রবাল দ্বীপের পরিবেশ রক্ষা নিয়ে। সেখানে পর্যটকদের যাতায়াত সীমিত এবং নিয়ন্ত্রিত করা হলো। প্রবাল দ্বীপকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার উদ্যোগকে স্বাগত জানানো হলো। অনেকেই আবার সংঘাত বিক্ষুব্ধ মায়ানমার সংলগ্ল এই অঞ্চলকে বিচ্ছিন্ন করার উদ্যোগ হিসাবে বিবেচনায় নিয়ে উৎবেগ প্রকাশ করলেন। ঢাকায় লাল কার্পেট বিছিয়ে কয়েকটি খাল পুনঃখননের আয়োজন দেখা গেলো। কয়েকটি সড়কে হর্ন নিষিদ্ধ হলো। দেশবাসী বর্তমান সরকারের ৯ মাস পেরিয়ে ১০ মাস হতে চলেছে। এক বর্ষা মৌসুম পেরিয়ে আরেক বর্ষা মৌসুম সমাগত। দেশ কতটা পলিথিন মুক্ত হয়েছে? কতটা খাল দদখলমুক্ত, দূষণমুক্ত হলো? ঢাকা মহানগরী এখনো বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দূষিত নগরী। সামান্য বৃষ্টি হলেই জলমগ্ন হয় অলি গলি রাজপথ। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এখনও গারমেন্টস, ওয়াশিং প্লান্ট। যেখানে থেকে বের হয় ক্যামিক্যালযুক্ত পানি, বর্জ। যা মানব দেহের জন্য ভয়ানক ক্ষতিকর। পরিবেশ উপদেষ্টা কি ভাবছেন? এসব বিষয় আপনার মাথায় কোনো কাজ করছে কী। রামপাল বা অন্য কয়লা বিদ্যুৎ প্লান্টগুলো পরিবেশের কি ক্ষতি করছে উপদেষ্টা কি তথ্য ভিত্তিক কোনো প্রতিবেদন জানাবেন জনগণকে? 

সবার জন্য আইন সমান ভাবে প্রযোজ্য এই কথা আইন উপদেষ্টা জোর গলায় বলে আসছেন। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের ৯ মাস সময়ে হত্যাকান্ড। মব জাস্টিস সামাল দিতে আইন মন্ত্রণালয় বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কতটুকু নিজেদের ভূমিকা পালন করতে পেরেছে। দেশজুড়ে চলছে জবর দখল , চাঁদাবাজির মহোৎসব। ভুক্তভুগীরা বিচার পাচ্ছে না। আইনের শাসন সমানভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে না। বিরুদ্ধ মতকে নির্দয় ভাবে দমন করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক ক্রাইম ট্রাইব্যুনালকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিতর্কিত ব্যক্তিদের দিয়ে সাজানো হয়েছে। যেভাবে চলছে কোনোভাবেই জুলাই আগস্ট ২০২৪ অথবা তত পরবর্তী হত্যাযজ্ঞের নিরপেক্ষ বিচার হবার সম্ভাবনা ক্ষীণ। একটি মহল চাইছে ১৯৭২ সংবিধান ছুঁড়ে ফেলতে। একটুও ভাবছে না তাহলে বর্তমান সরকার তাহলে অবৈধ হয়ে যাবে। বর্তমান অবস্থায় আইন উপদেষ্টার সুস্পষ্ট জবাবদিহি প্রয়োজন। 

মাঠে এখনো সেনাবাহিনী। অথচ সীমান্ত প্রায় অরক্ষিত। পুশইন করার চেষ্টা করছে পার্শ্ববর্তী দেশ প্রতিনিয়ত। এই মুহূর্তে সেনাবহিনী ব্যারাকে ফিরে গেলে সরকার বিপর্যস্ত হবে। নানা কর্মকান্ডে সরকার ইতিমধ্যে নিজেদের ক্রমশ বিতর্কিত করে ফেলেছে। প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে বৈরী সম্পর্ক সৃষ্টি করে বাণিজ্যিক, আর্থিক এবং নিরাপত্তা ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে। নিজেদের শক্তি সামর্থের সঠিক মূল্যায়ন না করেই আঞ্চলিক ভূরাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ আঞ্চলিক রাজনীতিতে না জড়িয়ে উপায়ও নেই। তবু উচিৎ সবার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে এগিয়ে যাওয়া। এখানে কাউকে সুবিধা দিতে যেয়ে অন্যকে খাট করা বা অসম্মান বা বৈরি সম্পর্ক সৃষ্টি করা বাংলাদেশের মত দেশের জন্য শোভনীয় নয়। ফলে এসব বিষয়ে ভেবে চিন্তে এগুনোও উচিৎ।

শেয়ার করুন