১৭ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ০৭:০৭:২৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
গোপালগঞ্জ এখন মুজিববাদী সন্ত্রাসীদের আস্তানায় পরিণত হয়েছে- নাহিদ এনসিপি’র মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচি ঘিরে ব্যাপক সংঘর্ষ চারজন নিহত নিউইয়র্কে ২০ লাখ মানুষ মেডিকেইড ও ৩ লাখ পরিবার স্ন্যাপ সুবিধা হারাবে নতুন ভিসা ফিতে বাংলাদেশিদের খরচ বাড়বে আড়াই গুণ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ২ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দাবি মাহমুদ খলিলের টেক্সাসের অভিবাসন আইন এসবি ৪ অসাংবিধানিক ঘোষণা ফ্লোরিডার ‘সিনেট বিল ৪-সির কার্যকারিতা বন্ধ করলো যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট নতুন নীতি ঘোষণা : ৯ কারণে নাগরিকত্ব হারাতে পারেন জঙ্গিবাদে সতর্ক থাকার মার্কিনী পরামর্শে নানা প্রশ্ন এনসিপিসহ ১৪৪ নিবন্ধন প্রত্যাশী দলের তথ্যে ঘাটতি


বড় ধরনের রাজনৈতিক হোঁচট খেয়ে গোসসা জামায়াতের
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৮-০৬-২০২৫
বড় ধরনের রাজনৈতিক হোঁচট খেয়ে গোসসা জামায়াতের


বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী অভিমান করেছে। দলটি ১৭ জুন মঙ্গলবার ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে অংশ না নিয়ে তাদের অভিমান প্রকাশ করেছে। তবে দলটির এমন অভিমান রহস্য ঠেকেছে অনেকের কাছে। দলটির এমন নতুন আচরণ নানান ধরনের প্রশ্ন সন্দেহ দেখা দিয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। 

আলোচিত জুলাই সনদ ঘোষণা ও অসমাপ্ত প্রস্তাবগুলোতে ঐকমত্যে পৌঁছাতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনার দিন ছিল গত ১৭ জুন মঙ্গলবার। প্রথম ধাপের অসমাপ্ত আলোচনা এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর ঐকমত্য গঠনে এ বৈঠকে গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে শোনা যায়। বৈঠকের আলোচনার বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ, স্থায়ী কমিটির সভাপতি মনোনয়ন, নারী প্রতিনিধিত্বসহ দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ এবং প্রধান বিচারপতির নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যে দ্বিমত রয়েছে সেসব বিষয়। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এই বৈঠকে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে আগে থেকে কেউ কিছু না বললেও হুট করে জানা গেলো রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে এ আলোচনায় ঐকমত্য কমিশনের আজকের বৈঠকে জামায়াতে ইসলামী অংশ নিচ্ছে না। 

কারণ কি?

আলোচনায় জামায়াতের অংশ না নেওয়ার তথ্য নিশ্চিত করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টার লন্ডন সফরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের পর যৌথ ঘোষণার মাধ্যমে জামায়াতকে ‘ইগনোর’ করা হয়েছে বলে মনে করে দলটি। এর প্রতিবাদ হিসেবে তারা মঙ্গলবারের বৈঠকে যোগ দেবে না। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে জামায়াতের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন দলটির নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। ঈদের আগের (৩ জুন) বৈঠকে তাঁর সঙ্গে ছিলেন দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান ও হামিদুর রহমান আজাদ। সেদিন সকালে জামায়াতের সংবাদ সম্মেলন থাকায় দুপুরের বিরতির পর দলটির প্রতিনিধিরা বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু এবারে কমিশনের পক্ষ থেকে দুই ঘণ্টা পরে হলেও জামায়াতকে বৈঠকে যোগ দিতে অনুরোধ করা হয় বলে জানা গেছে। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। 

তবে আশ্বর্যজনক হলেও জামায়াত বাদে মঙ্গলবারের বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, বিএনপি চেয়ারপার্সন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, জাতীয় গণফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাস, গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, এবি পার্টিও জেনারেল সেক্রেটারি আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মুস্তাফিজুর রহমান ইরান, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (বিএলডিপি) চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, বাংলাদেশ জাসদের পক্ষ থেকে ডা. মুশতাক হোসেনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশগ্রহণ করেন।

অভিমান ভাঙ্গাবে কে ও শেষ কথা

তবে সঠিক কারণ তেমন না বললেও দলটি যে সম্প্রতি বেশ কয়েকটি কারণে বিএনপি’র পাশাপাশি সবার সাথেই দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ কিংবা স্থানীয় সরকারের নির্বাচন আগে না-কি বড়ো ধরনের সংস্কার - প্রশ্নেই এমন দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে বিএনপি’র সাথে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার অল্প কয়েকদিন পর থেকে। এমনিতেই দেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষ প্রশ্নেই বলা চলে জামায়াতকে সব সময় রাজনৈতিকভাবে একধরনের বয়কট করে চলেছে সবাই। বজায় রেখে থাকে দলটির সাথে দূরত্ব। এতো কিছুর পরও মাঠে বিএনপি’ তাদের জামায়াতের মিত্রতা ছিল। 

কিন্তু বর্তমানে বলা চলে বিএনপিসহ প্রায় সবদলের সাথে এমনকি ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে ঘটে যাওয়া আন্দোলনের ইমেজকে ধারণ করে গঠিত জাতীয় নাগরিক কমিটির সাথেও সৃষ্টি হয়েছে জামায়াতের দূরুত্ব। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে যারা মূখ্য ভুমিকা রেখেছিলেন সে-ইসব ছাত্রনেতাদের সাথে জামায়াতের দূরত্বই নয় একটা ফয়সালা করে নেয়ার চাপ দেয়া লক্ষ্য করা গেছে। এমন অবস্থায় দলটি যখন একে একে বড়ো ধরনের দূরত্বের মধ্যে পড়েছে তখনই দেখা যাচ্ছে আরেকটি ঘটনা ঘটে গেলো রাজনৈতিক অঙ্গনে। দলটিকে কোনো প্রকার গুরুত্ব না দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে বিএনপিসহ তাদের চলা দীর্ঘদিন ধরে যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের উদার গণতান্ত্রিক দলগুলিকে কাছে টেনে নিচ্ছে।

বিশেষ করে লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পরে যৌথ বিবৃতিতে নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সূচি ঘোষণার পর এব্যাপারে জামায়াতের টনক নড়ে। তাদের বোধোদয় হয় যে দলটির সাথে আসলে একপর্যায়ে সবাই দূরে সরে যেতে স্বচ্ছন্দ বোধ করছে। এদিকে কারো কারো মতে, রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি প্রতিবেশী রাষ্ট্রসহ বাইরের বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রের সাথে গোপন বৈঠক আলোচনায় আসে-সে কারণে দলটির সাথে অনেকের ভালো দূরত্ব তৈরি হয়েছে। 

আর এমন পরিস্থিতি জামায়াতের মান ভাঙ্গাতে কে আগ্রহী হওয়ার দায় দায়িত্ব নেবে তা হয়তো সময় বলে দেবে। তবে লন্ডনে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমানের সাথে বৈঠকের পর জামায়াত যে একটা বড়ো ধরনের রাজনৈতিক হোঁচট খেয়েছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। 

তবে শেষ খবর হলো জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর ১৮ জুন বুধবারের আলোচনায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী অংশ নেবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। শেষ মেষ কেনো আবার মত পালটানো হলে আপাতত বলা যাচ্ছে না। এত্তো টুকু বলা যায় হয়তোবা একটু শক্তভাব দেখিয়ে নিজেদের দলের অবস্থানের জানান দিয়েছে।

শেয়ার করুন