০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০২:১৮:৪৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও সুশাসনের অভাব
ঋণ ও সঞ্চয় তুলে সরকারি প্রতিষ্ঠান পঙ্গু করেছে সরকার
খন্দকার সালেক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-০৬-২০২৪
ঋণ ও সঞ্চয় তুলে সরকারি প্রতিষ্ঠান পঙ্গু করেছে সরকার


৬ জুন ২০২৪ শেখ হাসিনা নেতৃত্বের আওয়ামী লীগ সরকার ধারাবাহিক চতুর্থ মেয়াদের সরকারি দায়িত্বে থেকে এ মেয়াদের প্রথম জাতীয় বাজেট ঘোষণা করলো। সংসদে সরকারি দলের নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় খসড়া বাজেটে খুব একটা পরিবর্তন ছাড়াই বাজেট পাশ হবে এটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

নানা বৈষয়িক কারণ ছাড়াও জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এবং সুশাসনের অভাবে বাংলাদেশে এখন অর্থনৈতিক সংকট ঘনীভূত হয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি আতঙ্কজনক পর্যায়ে উপনীত, সিন্ডিকেদের দাপটে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। সীমিত আয়ের মানুষদের দিনগুলো কাটছে নুন আন্তে পান্তা ফুরোনোর অবস্থায়। বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় সীমিত হয়ে আসছে। আমদানিনির্ভর গ্যাস-বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং সরবরাহ সংকটের পথে। বিরূপ প্রভাব পড়েছে শিল্পবাণিজ্যসহ জনজীবনে। প্রায় ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দায়ে ন্যুব্জ হয়ে পড়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন উন্নয়ন বোর্ড, পেট্রোবাংলা। বারবার দাম বাড়িয়েও এই দুই খাতের সাবসিডি কমানো যাচ্ছে না। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন অ্যাক্ট সংশোধন করে সরকার জ্বালানি-বিদ্যুতের মূল্য নির্ধারণ ক্ষমতা বার্কের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ওপর অর্পণ করেছে। 

জ্বালানি এবং খনিজ মন্ত্রণালয়ের স্টেট মিনিস্টার নাসরুল হামিদ বলেছেন নির্দিষ্ট বিরতিতে গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি করে আগামী তিন বছরের মধ্যে দুটি খাত থেকে সাবসিডি সম্পূর্ণভাবে তুলে নেওয়া হবে। বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এটি আদৌ সম্ভব কি না সন্দেহ রয়েছে। এমনকি বাজেটে সাবসিডি বৃদ্ধি করা না হলে কোনোভাবেই বিপিডিবি এবং পেট্রোবাংলা দেনার দায় থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে না। সংকট ঘনীভূত হবে। শিল্পখাত বিশেষত রফতানিমুখী শিল্প খাতের সংকট দীর্ঘস্থায়ী হলে রফতানি আয় কমে যাবে। এমনিতেই বৈদেশিক মুদ্রার সংকট আশঙ্কাজনক পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। বিগত কয়েক বছর যাবৎ বড়মাপের বাজেট ঘোষিত হলেও অভ্যন্তরীণ সূত্র থেকে কাক্সিক্ষত রেভিনিউ আহরণ হয়নি। দেশের বিপুলসংখ্যক সচ্ছল মানুষকে কর নেটওয়ার্কের আওতায় আনা যাচ্ছে না। কর কাঠামো নানাভাবে পরিবর্তন করেও সুফল ফলেনি। 

সরকার ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ গ্রহণ করছে, সরকারি প্রতিষ্ঠাগুলোর সঞ্চয়গুলো তুলে নিয়ে অনেক প্রতিষ্ঠানকেও পঙ্গু করে ফেলেছে। সন্দেহ নেই সরকার বিগত ১৫ বছর একাধারে ক্ষমতায় থেকে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠাগুলোর কার্যক্রমে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি না থাকায় দুর্নীতির রাহুগ্রাস অর্থনীতিকে বিপর্যয়ে ফেলেছে। অনেক ক্ষেত্রেই বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের পরিকল্পনা স্তরে ঝুঁকি মূল্যয়ান, ঝুঁকি নিরসন পরিকল্পনা না করে অনেক মেগা প্রকল্প অচিরেই গলার কাঁটা হয়ে পড়তে পারে। বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক ঋণ সুদসহ পরিশোধ কঠিন হয়ে পড়তে পারে। অর্থনীতির এই বিপর্যস্ত হয়ে পড়া মুহূর্তে সরকার ডলারের সঙ্গে টাকার বিনিময় হার পরিবর্তন করেছে ব্যাংকঋণের সুদের হার বেরিয়েছে। লুটেরারা ইতিমধ্যে অবাধ লুটপাটের মাধ্যমে ব্যাংক এবং অর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে তারল্য সংকট সৃষ্টি করেছে। এমতাবস্থায় ব্যাংকঋণের সুদের হার বৃদ্ধি শুধু নতুন বিনিয়োগ নয়, চালু থাকা শিল্পপ্রতিষ্ঠাগুলোর পরিচালন ব্যয় মেটানোর পুঁজি সংগ্রহ দুরূহ করে তুলবে।

জ্বালানি বিদ্যুৎখাতকে সংকট মুক্ত করতে বিশেষত দায়দেনা থেকে বেরিয়ে আসতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা, একই সঙ্গে নিজস্ব প্রাথমিক জ্বালানি আহরণ এবং উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধি ছাড়া বিকল্প নেই। জ্বালানি ট্রানজিশন এবং জ্বালানি খাতকে কার্বনদূষণমুক্ত করার জন্য নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ অবদান বৃদ্ধির জন্য সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য আমদানিতব্য উপকরণ সোলার প্যানেল, ইনভার্টার, ব্যাটারির ওপর কমাতে বা সম্পূর্ণভাবে দুই-তিন বছরের জন্য তুলে নিতে হবে। 

কত টাকার বাজেট 

মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে ৬ জুন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট অনুমোদন করা হয়েছে। জাতীয় সংসদ ভবনের মন্ত্রিসভা কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অর্থমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, মন্ত্রিসভার অন্যান্য মন্ত্রী এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিমন্ত্রীরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

রাষ্ট্রপতি কর্তৃক বাজেট অনুমোদনের পর ওইদিন বিকালে অর্থমন্ত্রী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট সংসদে উত্থাপন করেন। এ এইচ মাহমুদ আলী ২৬৫ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিসহ (এডিপি) ৭ সাত ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করবেন।

ইতিমধ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) পরিবহন এবং যোগাযোগ খাতের জন্য সর্বোচ্চ ৭০,৬৮৭.৭৫ কোটি টাকা (বরাদ্দের ২৬. ৬৭ শতাংশ) বরাদ্দ রেখে ২৬৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের এডিপি অনুমোদন করেছে। এছাড়া এনইসি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা করপোরেশনের প্রায় ১৩ হাজার ২৮৮ কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন করেছে।

এই বরাদ্দসহ ২০২৪-২০২৫-এর জন্য এডিপির মোট আকার দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা।

১ হাজার ১৩৩টি বিনিয়োগ প্রকল্প, ২১টি সমীক্ষা প্রকল্প, ৮৭টি প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রকল্প এবং স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও করপোরেশন থেকে ৮০টি প্রকল্পসহ এডিপিতে মোট প্রকল্পের সংখ্যা ১ হাজার ৩২১টি।

মন্ত্রণালয় এবং বিভাগগুলোর মধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগ এডিপিতে সর্বোচ্চ ৩৮ হাজার ৮০৯ কোটি টাকা (বরাদ্দের ১৫ শতাংশ) বরাদ্দ পেতে যাচ্ছে।

শেয়ার করুন