০৩ অক্টোবর ২০২৫, শুক্রবার, ০৯:৫১:৩০ পূর্বাহ্ন


কক্সবাজার ট্রিপ নেতাদের গতিবিধি সন্দেহ পিছু ছাড়ছে না
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-০৮-২০২৫
কক্সবাজার ট্রিপ নেতাদের গতিবিধি সন্দেহ পিছু ছাড়ছে না ছবি : সংগৃহীত


দিনটি ছিল ৫ আগস্ট ঐতিহাসিক জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠের দিন। রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে ‘৩৬ জুলাই উদ্যাপন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে ঘোষণাপত্র পাঠের জন্য করা হয় বিশাল আয়োজন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় রাজনৈতিক নেতৃত্বের উপস্থিতিতে ঘোষণাপত্র পাঠ করবেন। ঘোষণাপত্র পাঠের সময় দেখা গেলো মঞ্চে প্রধান উপদেষ্টার পাশে ছিলেন শহীদ মাহমুদুর রহমান সৈকতের বোন সাবরিনা আফরোজ শামন্তি, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির সৈয়দ রেজাউল করীম (চরমোনাই পীর), হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা সাজেদুর রহমান, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, জাতীয় গণফ্রন্টের টিপু বিশ্বাস। অতিথি সারিতে ছিলেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের আমন্ত্রিত প্রতিনিধিরা।

ছিল না ওরা

জুলাই ঘোষণাপত্র শুনে একে স্বাগত স্বাগত জানিয়েছেন জুলাই বিপ্লবের অকুতোভয় সৈনিকদের ইমেজকে ধারন করে গড়া জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপি প্রধান নেতা নাহিদ ইসলাম। ঘোষণা পাঠ শেষে তিনি গণমাধ্যমে বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র হয়েছে এটাকে স্বাগত জানাই। তবে ভালোভাবে পড়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হবে বলে জানান তিনি। আরও বললেন ‘এটা যে হয়েছে সেটাকে অভিনন্দন’। 

ঘোষণা পাঠ নিয়ে যখন এমন আয়োজন চলছিল তখন গণমাধ্যমের অনলাইন পোর্টালে জুড়ে তখন ভেসে আসছিল অন্যরকম একটি খবর। জুলাই ঘোষণাপত্রের অনুষ্ঠান উদযাপনে ঢাকায় জনতার সমাবেশে যোগ না দিয়ে কক্সবাজার চলে গেলেন এনসিপি অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ শীর্ষ নেতা। খবরে বলা হয় অনেকটা গোপনে ৫ আগস্ট মঙ্গলবার বেলা ১১টা ২০ মিনিটে বিমানযোগে হঠাৎ তারা সৈকত শহরে উপস্থিত হন তারা। তাদের এই আকস্মিক সফর ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে ধূম্রজাল। এর পাশাপাশি সাবেক এক বিদেশি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কক্সবাজারে অবস্থানরত এনসিপি নেতাদের গোপন বৈঠক হচ্ছে এমন গুঞ্জন-ও ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা আলোচনা-সমালোচনা শুর হয়। এনসিপি নেতারা বিদেশিদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করতে এসেছেন-এমন দাবি করে হোটেল ঘিরে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। তারা বলেন, ‘ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসতে পারবে না জেনে এনসিপি নেতারা পশ্চিমাদের সঙ্গে গোপন ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতায় যেতে চান। এজন্য গোপনে বৈঠক করতে এসেছেন। যেকোনো মূল্যে এ ধরনের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা হবে।’

কক্সবাজারে বেড়াতে আসা নেতারা কে কি বললেন

ওইদিন কক্সবাজারে আসা নেতারা হলেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ এবং দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা। আর জারার সঙ্গে তার স্বামী খালেদ সাইফুল্লাহ এবং সারজিস আলমের সঙ্গে তার স্ত্রী। এনসিপি নেতারা বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে (ইএ-৪৩৩) ঢাকা থেকে কক্সবাজার পৌঁছান। এরপর দ্রুত তারা বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে যান। এ সময় তাদের কয়েকজনের মুখমন্ডল মাস্কে ঢাকা ছিল বলে গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়। তবে সেখানে ঘুরতে আসা দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি পুরোপুরি গুজব। তারা মূলত কক্সবাজারে ঘুরতে এসেছেন। এর বেশি কিছু নয়।

দেয়া হলো কারণ দর্শানোর নোটিশ

এদিকে সারাদেশে এনিয়ে তোলপাড় বইতে থাকলে হাসনাত-সারজিসসহ এনসিপি’র শীর্ষ ৫ নেতাকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়। এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত স্বাক্ষরিত পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে এই নোটিশ দেওয়া হয়। কারণ দর্শানো নোটিশ পাওয়া নেতারা হলেন, এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা ও যুগ্ম আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ। নোটিশে ৫ আগস্ট এই পাঁচ নেতা ব্যক্তিগত সফরে কক্সবাজারে যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে বলা হয়, এই সফর সংক্রান্ত কোনো তথ্য বা ব্যাখ্যা রাজনৈতিক পর্ষদ বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে আগে থেকে অবগত করা হয়নি। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এসব নেতাকে এই সফরের সিদ্ধান্তের কারণ প্রেক্ষাপট সম্পর্কে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্য সচিব আখতার হোসেনের সামনে সশরীরে উপস্থিত হয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয় এই নোটিশে।

জবাবে যা এলো

এদিকে কক্সবাজার যাওয়ার কারণ দর্শাও শোকজের জবাবে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পাটির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। এতে তিনি বলেছেন, জুলাই ঘোষণাপত্রে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন হয়নি। এছাড়া ঘোষণাপত্র নিয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শহীদ পরিবার এবং আন্দোলনের কর্মীদের সম্পূণরূপে উপেক্ষা করা হয়েছে জানিয়ে নীরব প্রতিবাদের অংশ হিসেবে কক্সবাজার গিয়েছিলেন। এনসিপি মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ নোটিশের জবাব দিতে গিয়ে তার দলের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়েছেন। লিখিত জবাবে হাসনাত লিখেছেন, কক্সবাজার ঘুরতে যাওয়ার পর যা ঘটেছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। 

দলকে ঝাড়লেন হাসনাত

এদিকে শোকজ দেয়ার দলীয় সিদ্ধাস্তের বিষয়ে এনসিপির হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, যে কোনো রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে শোকজ করতে হয় গঠনতন্ত্র বা বাই-লজের কোনো নির্দিষ্ট ধারা লঙ্ঘনের কারণে। আমাকে দেয়া শোকজে এমন কিছুর উল্লেখ নেই, কারণ আমি পার্টির কোনো আইন লঙ্ঘন করিনি। এমন বিধিবহির্ভূত শোকজ দেয়া এবং অতিউৎসাহী হয়ে তা মিডিয়ায় প্রকাশ করা, কতটুকু রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচায়ক হয়েছে, সে বিষয়ে গভীরভাবে ভাববার অনুরোধ করবো। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও লিখেছেন, এনসিপির প্রতি আমি অঙ্গীকারবদ্ধ এবং মনে করি যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও গণতান্ত্রিক সহনশীলতার মাধ্যমেই আমাদের দল রাজনৈতিকভাবে আরও পরিণত হবে। কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আমাকে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যার সুযোগ দেয়ার জন্য।

দুষণের মিডিয়া ও গোয়েন্দা সংস্থাকে

তবে নিজ দলকে এক হাত দেখিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এবং মিডিয়ার নিয়ে কথা বললেন। তিনি বলেছেন, কক্সবাজার ঘুরতে গিয়ে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এবং মিডিয়ার মিথ্যা সংবাদ ও গুজবের শিকার হয়েছেন বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। পাশাপাশি এসব মিথ্যা বিষয়কে আমলে নিয়ে দলের পক্ষ থেকে অতিউৎসাহী হয়ে শোকজ করা হয়েছে বলেও মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, বিমানবন্দর থেকে আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপের ছবি ও ভিডিও করে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা মিডিয়ার হাতে তুলে দিয়েছে। কিছু মিডিয়া সেখানে ক্রাইম মুভির মিউজিক জুড়ে ইচ্ছেমতো মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর অভিযোগসহ সেইসব উপস্থাপন করেছে। কিছু মিডিয়া ও গোয়েন্দা সংস্থার যোগসাজশে আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপকে অপরাধপ্রবণ এবং সন্দেহজনক হিসেবে উপস্থাপন করার অপচেষ্টা চালিয়েছে। এমনকি গুজব ছড়ানো হয়েছে, যে আমরা পিটার হাসের সঙ্গে গোপন বৈঠকে যাচ্ছি গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র করতে। অথচ তিনি তখন বাংলাদেশেই ছিলেন না। এমন কাজ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে চলতে পারে না বলে জানিয়ে তিনি আরও লিখেছেন, রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এই প্রবণতা, যেখানে কাউকে টার্গেট করে রাষ্ট্রদ্রোহী বানিয়ে ফেলা যায়, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে চলতে পারে না। গোয়েন্দা সংস্থা ও মিডিয়ার এই সম্মিলিত ‘ডিমোনাইজেশন’ টেকনিক আজকে আমাদের টার্গেট করেছে। 

বেড়ানো নিয়ে সন্দেহের কয়েকটি দিক

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে দেখা যায় বিমানবন্দরে কর্মকর্তারা নাকি এনসিপি’র এই নেতাদের কক্সবাজার আগমনের বিষয়ে আগে থেকে কোনো কিছুই জানানো হয়নি। বিমান অবতরণের পর তারা টার্মিনালে বেশিক্ষণ অবস্থান করেননি। ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার না করে সাধারণ যাত্রীদের ব্যবহৃত গেট দিয়ে বেড়িয়ে যান তারা। পরে বিষয়টি নিয়ে চারদিক থেকে খোঁজখবর শুরু হয়। তবে জানা গেছে, এইসব নেতাদেরর আগমনের বিষয়ে ঢাকায় একটি প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। আর এই ধরনের খবরেই রহস্য তৈরি হয়েছে। কেনো কি কারণে ঢাকায় একটি প্রতিবেদন পাঠাতে হলো? গণমাধ্যমের খবরে বলা হয় এনসিপি নেতারা একটি নোহা মাইক্রোবাসে চড়ে বিমানবন্দর এলাকা ত্যাগ করেন। বিকালের দিকে তারা ইনানী সৈকতসংলগ্ন পাঁচতারকা হোটেল সি পার্ল বিচ রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা (আগের নাম রয়েল টিউলিপ)-তে যান। তবে কেউ কেউ বলছেন বিমানবন্দর থেকেই তারা হোটেলের মাইক্রোবাসে ওঠেন। কক্সবাজারের একজন পুলিশ কর্মকর্তাও একটি গণমাধ্যমে বলেছেন, ‘এনসিপি নেতাদের কক্সবাজারে আগমনের বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে আগে থেকে কিছুই জানানো হয়নি। তারা কেন এসেছেন তা আমরা জানি না। এখানে আগমনের পর তারা কোনো ধরনের প্রটোকলও নেননি।’ এজন্য তাৎক্ষনিকভাবে প্রশ্ন হচ্ছে এতো লুকোচুরি কেনো ছিল?

এনসিপির শীর্ষ নেতারা জানতেন না

বিষয়টি এখনো রহস্যজনক এই কারণে কারণ হাসনাত-সারজিসসহ এনসিপি’র শীর্ষ ৫ নেতাকে কারণ দর্শানো নোটিশে-ও একটি বিষয় উঠে এসেছে। এতে বলা হয় ৫ আগস্ট এই পাঁচ নেতা ব্যক্তিগত সফরে কক্সবাজারে যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে বলা হয়, এই সফর সংক্রান্ত কোনো তথ্য বা ব্যাখ্যা রাজনৈতিক পর্ষদ বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে আগে থেকে অবগত করা হয়নি। প্রশ্ন কেনো এনসিপির নেতাদের জানানো হলো না? 

আরও রহস্য

এদিকে সারা গণমাধ্যমে যখন খবর বেরুচ্ছিল যে এনসিপি নেতারা সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠক করতে কক্সবাজার গেছেন। তখন আরেকটি খবর থেকে জানা যায় যে, পিটার হাস নয়, একটি উচ্চ পর্যায়ের বিদেশি প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক সেরে ফেলেছেন এনসিপির নেতারা। চট্টগ্রাম থেকে বাই রোডে গাড়িতে করে বিদেশি দুজন প্রতিনিধি দল তাদের হোটেলে গিয়েছিলেন। বৈঠকের আগে তারা হোটেলের বিশেষ দরজা দিয়ে প্রবেশ করেন। পরে পেছনের বিশেষ দরজা দিয়ে বের হয়ে তারা সোজা চট্টগ্রাম চলে যান। আরেকটি সূত্র বলছে, বৈঠকে কক্সবাজারে কর্মরত জাতিসংঘের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে এনসিপি নেতাদের বৈঠক হয়েছে। প্রশ্ন ও-ই কূটনীতিক কারা? যদিও সাবেক কোনো বিদেশি রাষ্ট্রদূত বা অন্য কারও সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি সরাসরি অস্বীকার করেছেন এনসিপির নেতারা। এদিকে রহস্য আরও একারণে কারণ শুধুমাত্র নীরব প্রতিবাদের জন্যেই তারা কি কক্সবাজারে বেড়াতে গিয়েছিলেন? এতে কি নীরব প্রতিবাদ হয়েছে? তাদের নিরব প্রতিবাদে কাজ না হলে কি ধরে নেয়া যায় যে কক্সবাজারে বেড়াতে যাওয়া নেতারা এখন এনসিপি’তে গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছেন? তা না হলে এনসিপি’র সাংগঠনিক নোটিশ নিয়ে এমন মন্তব্য করলেন কেনো? কেনো কক্সবাজারে বেড়াতে গেলে তাদের পিছু নিলো রাষ্ট্রের গোয়েন্দারা? কয়েকদিন আগেও তো রাষ্ট্রের অনেক শীর্ষ সংস্থা জুলাই বিপ্লবের এসব ছাত্রনেতাদের খুবই সম্মানের চোখে দেখতেন, ভালোবাসতেন। কিন্তু এখন কি হলো যে সে-ইসব সংস্থার লোকজনদের বিরুদ্ধে এনসিপির মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ অভিযোগ করেন? কেনো বললেন তারা রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এবং মিডিয়ার মিথ্যা সংবাদ ও গুজবের শিকার হয়েছেন। কেনো হাসনাত আবদুল্লাহ বলছেন, রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এই প্রবণতা, যেখানে কাউকে টার্গেট করে রাষ্ট্রদ্রোহী বানিয়ে ফেলা যায়, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে চলতে পারে না। গোয়েন্দা সংস্থা ও মিডিয়ার এই সম্মিলিত ‘ডিমোনাইজেশন’ টেকনিক আজকে আমাদের টার্গেট করেছে। ভবিষ্যতে অন্য যে কাউকে করতে পারে। সবচেয়ে আশঙ্কাজনক ব্যাপার হলো, গোয়েন্দা সংস্থা এবং কিছু মিডিয়া এই একই প্যাটার্নে হাসিনার আমলেও বিরোধী দলের রাজনৈতিক নেতাদের নামে প্রোপাগান্ডা ক্যাম্পেইন পরিচালনা করত। নতুন বাংলাদেশেও গোয়েন্দা সংস্থা এবং কিছু মিডিয়ার এই পুরনো অপরাধপ্রবণতা আমাকে একইসঙ্গে অবাক এবং ক্ষুব্ধ করেছে বলে মনে করেন হাসনাত আবদুল্লাহ। তাহলে কি ধরে নেয়া যায় এনসিপিতে তাদের অবস্থান রাষ্ট্রের এখন সন্দেহজনক পর্যায়ে চলে গেছে? কেননা দলটির পক্ষ থেকে কক্সবাজারে বেড়াতে যাওয়া নেতাদের প্রতি নোটিশে ৫ আগস্ট এই পাঁচ নেতা ব্যক্তিগত সফরে কক্সবাজারে যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে বলা হয়। এতে বলা হয় এই সফর সংক্রান্ত কোনো তথ্য বা ব্যাখ্যা রাজনৈতিক পর্ষদ বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে আগে থেকে অবগত করা হয়নি। তাহলে ধরে নেয়া কি যায় তারা দল থেকেও এখন দূরে? পাশাপাশি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের কাছেও কি এখন তাদের এদিকে সেদিক চলাফেরা সন্দেহজনক? এমন আরও অনেক প্রশ্ন এখন সামনে চলে আসছে জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠের দিন কক্সবাজারে বেড়াতে যাওয়া নেতাদের নিয়ে। কারো কারো আশঙ্কা এনসিপির একটি পক্ষ মাঠে সক্রিয় আরেকটি রাজনৈতিক দল মিলে চেয়েছিল জুলাই ঘোষণা নিয়ে একটি নতুন প্রেক্ষাপট তৈরি করে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে। তাহলে কি ধরে নেয়া যায় কক্সবাজারে বেড়াতে যাওয়া এ-ই গ্রুপটি চেয়েছিল জুলাই ঘোষণা নিয়ে একটি নতুন খেলা মাঠে হাজির করতে? যা-না পেরে অভিমানে কক্সবাজারে বেড়াতে যান। আরও প্রশ্ন আসে কক্সবাজারে বেড়াতে যাওয়া প্রসঙ্গে এনসিপি’র মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ওই সময়ে স্থানীয় সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন যে, তারা মূলত কক্সবাজারে ঘুরতে এসেছেন, এর বেশি কিছু নয়। প্রশ্ন হচ্ছে যদি ঘুরতেই আসতেন তাহলে দলের শীর্ষ থেকে নোটিশ পাওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে সে-ই দলের মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী কোনো এখন অন্য কথা বলেন? তিনি বলেছেন, ‘সাগরের পাড়ে বসে আমি গভীরভাবে ভাবতে চেয়েছি-গণ-অভ্যুত্থান, নাগরিক কমিটি, নাগরিক পার্টির কাঠামো, ভবিষ্যৎ গণপরিষদ এবং একটি নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধানের রূপরেখা নিয়ে। আমি এটিকে কোনো অপরাধ মনে করি না, বরং একজন রাজনৈতিক কর্মীর জন্য এটি একটি দায়িত্বশীল মানসিক চর্চা।’ তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে কেনো হাসনাত আবদুল্লাহ তার কোচিং অফিসের সহকর্মীর ফোন ব্যবহার করে দলের শীর্ষ তাকে (পাটওয়ারী) ট্যুরের বিষয়টি জানালেন? গণমাধ্যমে এসেছে পাটওয়ারী ৪ আগস্ট রাতে দলের মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ তার কোচিং অফিসের সহকর্মীর ফোন ব্যবহার করে তাকে জানান, তিনি স্কুল বন্ধুদের সঙ্গে ২ দিনের জন্য ঘুরতে যাবেন। তিনি দলের আহ্বায়ককে বিষয়টি অবহিত করতে বলেন। নাসীরুদ্দীন লেখেন, ৪ আগস্ট রাতে দলীয় কার্যালয়ে আমি এনসিপির আহ্বায়কের (নাহিদ ইসলাম) সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি জানাই। একই রাতে আমি দলের সদস্য সচিবের (আখতার হোসেন) সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে জানতে পারি যে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে (জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠের অনুষ্ঠান) দল থেকে তিনজন প্রতিনিধি যাচ্ছেন এবং সেখানে আমার কোনো কাজ নেই। আমি কোনো দায়িত্বে না থাকায় এবং ব্যক্তিগত প্রয়োজন ও মানসিক প্রস্তুতির অংশ হিসাবে ঘুরতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে দলে দেওয়া নোটিশে ৫ আগস্ট এই পাঁচ নেতা ব্যক্তিগত সফরে কক্সবাজারে যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে বলা হয়, এই সফর সংক্রান্ত কোনো তথ্য বা ব্যাখ্যা রাজনৈতিক পর্ষদ বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে আগে থেকে অবগত করা হয়নি। প্রশ্ন হচ্ছে অবগত করা হয়নি বলে এনসিপির নোটিশে কেনো তাহলে উল্লেখ করা হলো? এজন্য বিরাট প্রশ্ন শুধুই কি অভিমানে এতো বড়ো একটা টিম জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ অনুষ্ঠান বাদ দিয়ে আনন্দ ভ্রমনে যেতে পারেন? সে-প্রশ্ন খুঁজে পেতে হয়ত অল্প কয়েকদিন লাগবে না যখন দেখা যায়, একিই দিনেই বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন ও অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার সুসান রাইলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা বৈঠকে বসেন।

শেয়ার করুন