২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৩:৫৩:৩৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


ডক্টরেট রঙ্গ
ভাই, আপনারটা কত পড়লো
হাবিব রহমান
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-০৩-২০২৪
ভাই, আপনারটা কত পড়লো


একজন ব্যবসায়ীর ডক্টরেট প্রাপ্তি নিয়ে নিউইয়র্ক এখন সরগরম। বলা যায়, টক অব দ্য সিটি। কারণটা সংগতই বলা যায়। পিএইচডি হচ্ছে স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ একাডেমিক ডিগ্রি। শিক্ষক, গবেষক ও স্কলারদের জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন। এই ডিগ্রি অর্জনের জন্য বেশ কয়েকটি দাফ পেরুতে হয় শিক্ষার্থীদের। এরমধ্যে অন্যতম গবেষণা, তত্ত্বাবধায়ক ও বহি:পরীক্ষক নিয়োগ, এলিজেবিলিটি টেস্ট, কোর্স ওয়ার্ক, একাডেমিক সেমিনার ও মানসম্মত অভিসন্দর্ভ রচনা অপরিহার্য। আন্তর্জাতিক মানের লেখনীর পরই অর্জন করা সম্ভব হয় এই ডিগ্রি। উচ্চতর পর্যায়ে কষ্টসাধ্য এই ধাপগুলো উত্তরণের জন্য করতে হয় কঠোর পরিশ্রম। বহু শ্রম, সাধনা, তিতীক্ষা ও অধ্যবসায়ের ফলে এই ডিগ্রি অর্জিত হয়। পুরো প্রক্রিয়াটি বোর্ড অব অ্যাডভান্স স্টাডিজ, অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটের অনুমোদনের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে। যেন তেন অভিসন্দর্ভ লিখলে হয় না। যে ভাষায় থিসিস রচিত হবে তার ভাষাশৈলী ও বাক্যবিন্যাস আন্তর্জাতিক মানের হওয়া বাধ্যতামূলক। থিসিসে নতুন তথ্য, ফ্যাক্ট উদ্ভাবন করতে হয় এবং ফলাফল তুলে ধরতে হয় অথবা উদ্ভাবিত তথ্য উপাত্তকে ক্রিটিক্যালি এক্সামিন করতে হয় এবং মতামত দিতে হয়। ক্ষেত্রবিশেষে সুপারভাইজার বিদেশি বিশেষজ্ঞ পরীক্ষক নিয়োগ দিয়ে থাকেন। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একজন গবেষক পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করে থাকেন। ডক্টরেট ডিগ্রি অত্যন্ত সম্মান ও মর্যাদার। গবেষক তার নামের শুরুতে ড. বা ডক্টর লিখে থাকেন। এটা স্বীকৃত রেওয়াজ। শিক্ষিত মানুষও মনে করে ডক্টরাল ডিগ্রিধারী সংশ্লিষ্ট ফিল্ড ও ডিসিপ্লিনে বিশেষজ্ঞ। আর সে ধরনের একটি কথিত ডিগ্রি যখন কোন একজন ন্যূনতম ডিগ্রি ছাড়াই একজন নিজেকে প্রাপ্তির ঘোষণা দেন তখন তা কৌতুক উদ্রেক করে বৈকি!

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখে পড়লো কমিউনিটির আরো কয়েকজনের নাম। যারা যোগ্যতার ভিত্তিতে নয় এমনিভাবে অর্থ খরচ করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ডিগ্রি নিয়ে নামের আগে ড. বা ডক্টরেট লিখে বহাল তবিয়তে বুক উঁচিয়ে কমিউনিটতে বুক উঁচিয়ে বিচরণ করছেন। একজন পিএইচডি গবেষককে তার ডিগ্রি অর্জনের জন্য মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হয়। বলা যায় পশুর মত খাটতে হয়। একবার এমনি একজন গবেষক তার চিকিৎসার জন্য একজন পশু চিকিৎসকের কাছে গেলে সেই চিকিৎসক বলেন, ‘ভাই, আমি তো পশু চিকিৎসক। আপনি ভুল জায়গায় এসেছেন।’

গবেষক তখন বলেন, ‘ডাক্তার সাহেব, দেখুন, আমি মাথায় কাজের বোঝা নিয়ে কুকুরের মত ঘুমাই, সকালে ঘোড়ার মতো জেগে উঠি, হরিণের মতো দৌড়ে কাজে যাই, সারাদিন গাধার মতো ল্যাবে পরিশ্রম করি, নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে প্রতি মুহূর্তে চিন্তা করি শিয়ালের মতো এরপরও কি আমার চিকিৎসা করতে আপনার আপত্তি আছে?’

শুনতে খারাপ লাগলেও এই জোকটি কিন্তু যারা কঠোর পরিশ্রম করে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করে তাদের একনিষ্ঠ অধ্যবসায়কেই তুলে ধরে। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে দেখা যাচ্ছে, এখন আর লজ্জা শরমের বালাই নেই। নিজের যোগ্যতার প্রশ্ন নেই। লোকে কি বল্লো তা শোনার সময় নেই। যেন প্রকারে একটা ডিগ্রি কিনে গলায় ঝুলানোর পারলেই কেল্লা ফতে!

এ ধরনের পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন যারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন তারা। যাদের পিএইচডি স্বোপার্জিত, কষ্টার্জিত। তাদের নামের আগেও ড. দেখে ভুয়া- পিএইচডিধারীরা অনেকেই এমনভাবে তাকান যেন তাদের চোখ জিগ্যেস করছে, ‘ভাই-আপনারটা কত পড়লো?’

যোগ্যতাহীন যারা অর্থ দিয়ে পিএইচডি বা ডক্টরেট ডিগ্রি কিনে নামের আগে ‘ড. লাগানোর মধ্যে দিয়ে চরম আত্ম প্রবঞ্চণা করছেন এটা কি আত্ম-প্রতারণার নামান্তর নয়? সামাজিক মর্যাদা লাভের জন্য এই আত্ম প্রবঞ্চনা আপনাদের কি একটুও লজ্জিত করেনা? ভুয়া ডক্টরেট দিয়ে বৈষয়িক লাভ বা সামাজিক মর্যাদা পাওয়া যায়- ভাল কথা। কিন্তু এই তকমাটি যেভাবে ‘ড. হয়ে গলার মধ্যে ঝুলে থাকে তা কি প্রতিনিয়ত আত্মপীড়নের কারণ হয় না? একসময় এদেশে প্রাচীন কবিরা লিখেছেন: ‘আপনারে বড় বলে, বড় সেই নয়/ লোকে যারে বড় বলে বড় সেই হয়।/ বড় হওয়া সংসারেতে কঠিন ব্যাপার/ সংসারে সে বড় হয়, বড় গুণ যার।/গুণেতে হইলে বড়, বড় বলে সবে/বড় যদি হতে চাও, ছোট হও তবে’’। (বড় কে-হরিশচন্দ্র মিত্র)।

এখন আমরা এই কবিতা বদলে দিয়েছি। আমরা লিখছি, ‘নিজে যাকে বড় বলে বড় সে-ই হয়। লোকে কাকে কী বলিল শুনিবার নয়।’

পুরোনো কবিতা বদলে দিয়ে আসুন আমরা আমাদের মতো করে বলিÑ/আপনাকে বড় বলে, বড় সেই হয়/লোকে যারে বড় বলে বড় সেই নয়।/বড় হওয়া সংসারেতে সহজ ব্যাপার/সংসারে সে বড় হয় ছোট গুণ যার।/গুণে হইলে ছোট, বড় বলে সবে/ছোট যদি হতে চাও, বড় হও তবে।’

হ্যাঁ, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমাদের বদলে যেতে হবে। নিজেদের মতো করে সবকিছু ভাবতে হবে। আগে নিজেকে নিজে বড় ভাবতে হবে। লোকে কি বলল, না বলল তাতে কিছু আসে যায় না। লোকে যাকে বড় বলে বড় সে নয়, নিজে যাকে বড় বলে বড় সেই হয়।

নিউইয়র্ক, ১৯ মার্চ।

শেয়ার করুন