২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৪:২১:০৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


মেট্রোপলিটন গভর্নেন্স ছাড়া ঢাকার সংকট মিটবে না
খন্দকার সালেক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-১২-২০২৩
মেট্রোপলিটন গভর্নেন্স ছাড়া ঢাকার সংকট মিটবে না


কত লোক বাস করে ক্ষুদ্র এই ঢাকা মহানগরীতে? কারো মতে ঢাকার জনসংখ্যা এমনকি গোটা অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের জনসংখ্যার থেকেও বেশি। সীমিত স্থান সেখানে গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ সরবরাহের নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থা, যাতায়াত ব্যবস্থা গড়ে না তুলেই কংক্রিটের বস্তি বানানো হয়েছে। ঢাকা মহানগরীতে দুইজন মেয়র থাকলেও ঢাকায় কাজ করা অসংখ্য সংস্থার ওপর মেয়র অফিসের কার্যকরি কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। তিতাস গ্যাস, ওয়াসা, ডেসা, ডিপিডিসি, টিএনটি, রাজউক কোনো সমন্বয় ছাড়াই যে যার মতো কাজ করছে। ঢাকার চারপাশে বহমান চারটি নদী বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ এবং বালুদূষণে আর দখলে মৃতপ্রায়। অনেক ঢাকঢোল পিটিয়ে মেট্রোরেল, এলোভেটেড এক্সপ্রেস হাইওয়ে করা হলেও এখনো ঢাকা যানজটে স্থবির হয়ে পড়ছে প্রতিনিয়ত। সামান্য বৃষ্টি হলেই হচ্ছে অস্বস্তিকর জলজট। বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, যানজট, জলজট মিলিয়ে ঢাকা বসবাসের জন্য শীর্ষস্থানীয় অনুপযোগী মহানগরী। দূষণ নিয়ন্ত্রণ দূরের কথা, মশা মারতেই পারছে না ঢাকার দুই মেয়র। যেভাবে চলছে দেখে মনে হয়, যেন ঢাকার সংকট মোকাবিলায় যেন কোথাও কেউ নেই। 

চারটি নদীকে দখলমুক্ত করে পরিকল্পিত উপায়ে বৃত্তাকার জলপথ ও নদীগুলোর পাড়ঘেঁষে বৃত্তাকার সড়ক, এমনকি বৃত্তাকার রেলপথ নির্মাণের কথা শোনা গেছে। কাজের কিছু হয়নি। এক সময় ঢাকার বুক চিরে বহমান খালগুলো উদ্ধার কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমান্বয়ে নেমে যাওয়ায় মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প হলে মহাপ্রলয়ের আশঙ্কা রয়েছে। মাটির গভীরে থাকা গ্যাস, পানি, টেলিযোগাযোগ লাইনসমূহের সঠিক ও নির্ভরযোগ্য নকশা না থাকায় অবকাঠামো নির্মাণে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। আধুনিক বিশ্বে সব শহরের নীরোরযোগ্য আন্ডারগ্রাউন্ড ম্যাপিং সিস্টেম আছে। ঢাকাসহ সব মহানগরীর আর্কজিআইএস নির্ভর আন্ডারগ্রাউন্ড ম্যাপিং ব্যবস্থা গড়ে তোলা অত্যাবশ্যক বলে মনে করি। 

সীমিত পরিসরের ঢাকার কেন্দ্র থেকে পরিকল্পিতভাবে সরকারি দফতর, ব্যবসা-বাণিজ্য কেন্দ্রগুলো মহানগরী-সংলগ্ন স্যাটেলাইটে শহরগুলোতে স্থানান্তরিত করা না হলে দ্বিতল, ত্রিতল এমনকি বহুতল যাতায়াত অবকাঠামো নির্মাণ করেও ঢাকার যানজট মিটবে বলে মনে হয় না। প্রথমেই স্থানান্তর করা উচিত ঢাকার কেন্দ্রস্থলে থাকা বাংলাদেশ সচিবালয়। পরিকল্পনা করে অবশ্যই মন্ত্রণালয়গুলো নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, সাভার, কেরানীগঞ্জ-এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, বরিশালে স্থানান্তর করা যায়। উত্তরা গণভবনকে কাজে লাগানো যায়। সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হেডকোয়ার্টার্স, সেনাসদর দফতর, বিমান বাহিনী, নৌবাহিনীর সদর দফতর ঢাকার বাইরে সরালে ঢাকা থেকে যানজট অনেক কমে যাবে। একই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকার বাইরে দ্বিতীয় ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে পারে। পদ্মা সেতুতে সড়ক এবং রেলসংযোগ দক্ষিণের জেলাগুলো থেকে ঢাকার যোগাযোগ অনেক উন্নত করেছে। মেট্রোরেল ঢাকার কিছু অংশের যাত্রীদের যোগাযোগে স্বস্তি এনেছে। কিন্তু কিছুটা সমন্বয়হীনতার করাণে যানজটের খুব একটা উপশম হয়েছে বলে মনে হয় না। শিক্ষা, স্বাস্থ্য চাকরির সুযোগের জন্য মানুষ প্রতিদিন ঢাকায় আসছে। ঢাকামুখী জনস্রোতকে ঢাকার বাইরে রাখার নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থা করে দেওয়া না হলে ঢাকা মহানগরীর অপমৃত্যু ঘটে পারে বলে অনেকের আশঙ্কা। নগরায়ণের কোনো নীতি-কৌশল মানা হয়নি, নগরবিদদের সুপারিশসমূহ অবজ্ঞা করা হয়েছে। এক সময়ের সবুজ ঢাকা এখন রুক্ষ, বিবর্ণ, ধূলি ধূসরিত নরকপুরীতে পরিণত হতে চলেছে। 

আমার মনে হয় এখনো ঢাকাকে তিলোত্তমা রূপে রূপান্তর করার সুযোগ আছে। সর্বপ্রথম মেট্রোপলিটন গভর্নেন্স ব্যবস্থা চালু করে ঢাকার সব উন্নয়ন নগরপিতাদের অফিসের মাধ্যমে সমন্বয় করতে হবে। সব উন্নয়ন সংস্থা মেয়র অফিসগুলোর কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। ঢাকা থেকে সচিবালয়, সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদর দফতর, সেনা সদর দফতরের সেনা স্থাপনা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল বিদ্যালয় দ্বিতীয় ক্যাম্পাস শহরের বাইরে করতে হবে। ঢাকার নদীগুলোর দখলদূষণ মুক্ত করে যদি কেন্দ্রিক জলপথ ও সড়ক ব্যবস্থা নির্মাণ ত্বরান্বিত করতে হবে। ঢাকা থেকে সব লক্কর-ঝক্কর বাস, মাইক্রোবাস অপসারণ করে আধুনিক পরিবহনব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। ঢাকা সড়কে চলাচল অনেকটা জনসচেতনতার অভাবে হয়ে থাকে। গাড়ির চালক, সাধারণ জনগণ কেউ ট্রাফিক আইন মেনে চলে না। ঢাকায় চলাচলকারী গাড়িসমূহের মালিকদের সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া না হলে সড়কে যানজট থেকে মুক্তি মিলবে না। 

আশা করি শুধু আশ্বাস আর প্রতিশ্রুতি নয়, আগামী দিনে সরকার কিছু অজনপ্রিয় কাজসহ ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করে ঢাকা মহানগরীকে বাঁচাতে চেষ্টা করবে। এই ক্ষেত্রে প্রধান কার্যক্রম হতে পারে আরবান রুরাল রিভার্স মাইগ্রেশন।

শেয়ার করুন