২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৫:০০:৫৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম :


দেনার দায়ে দেউলিয়া হয়ে পড়েছে বিপিডিবি-পেট্রোবাংলা ও বিপিসি
নতুন সরকার যেসব চ্যালেঞ্জের মুখে
খন্দকার সালেক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-০১-২০২৪
নতুন সরকার যেসব চ্যালেঞ্জের মুখে


দেশে এবং প্রবাসে নানা বিতর্ক, কিছু বিরোধীদলের বর্জনের মুখে নির্বাচন করে ধারাবাহিকভাবে চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করেছে শেখ হাসিনা নেতৃত্বের আওয়ামী লীগ সরকার। পুরোনো সরকার কিছু সংযোজন বিয়োজন করে নতুন সরকার গঠন করে ইতিমধ্যে নতুন মিশন শুরু করেছে। সম্প্রতি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের জন্য অর্থনীতি, মুদ্রাস্ফীতিসহ পাঁচটি প্রধান চ্যালেঞ্জের কথা বলা হয়েছে।

সেখানে যুক্তিসংগত কারণেই ঘনীভূত জ্বালানি সংকটকেই প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। কেন, কি কারণে বাংলাদেশে জ্বালানি সংকট আতঙ্কজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে সেটি বোদ্ধা মহলের অজানা নয়। দেশীয় প্রাথমিক জ্বালানি আহরণ উপেক্ষা করে ক্রমাগত আমদানিকৃত জ্বালানিনির্ভর হওয়ার পরিকল্পনা যে বর্তমান সংকটের জন্য দায়ী সেটি এখন সবাই হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করছে। দায়ী আমলা এবং ব্যবসায়ী নিয়ন্ত্রিত জ্বালানি ব্যবস্থাপনার ভুল নীতি, ভ্রান্ত কৌশল এবং দুর্নীতি। মূল প্রশ্ন হলো প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে। তার সঙ্গে আছেন উপদেষ্টা হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত একজন ডাকসাইটে আমলা, আছেন মুখ্য সচিব, জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী ও দুইজন সচিব। এরপরও সরকার জ্বালানি ব্যবস্থাপনাকে সংকটাপন্ন মনে করেন কিনা কে জানে। এ প্রেক্ষাপটে পুরাতন সরকার নতুনভাবে দায়িত্ব নিলেও জ্বালানি ব্যবস্থাপনায় মূল ব্যক্তিগুলো যথাস্থানে আছেন। ধরে নেওয়া যায় সরকার বিগত দিনে তাদের কার্যক্রম যথাযথ মনে করে। সরকার কিন্তু পররাষ্ট্র, অর্থ, বাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ, কৃষিসহ অধিকাংশ মন্ত্রণালয়ে পরিবর্তন এনেছে।

সরকারি হিসাবেই ২৬ হাজার মেগাওয়াটের অধিক গ্রিড সংযোজিত বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা নিয়েও সরকার ১৫০০০-১৬০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। মূল কারণ জ্বালানি সরবরাহ সংকট, বিদ্যুৎ সঞ্চালন এবং বিতরণ ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা। নিজেদের জ্বালানি কয়লা গ্যাস অনুসন্ধান আর উন্নয়নে শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ সরকার। ফলশ্রুতিতে ৯০ শতাংশ নিজস্ব জ্বালানি নির্ভরতা থেকে ৫০ শতাংশ আমদানি জ্বালানিনির্ভর এখন দেশ। নানা বৈষয়িক কারণে আন্তর্জাতিক জ্বালানি বাজার বিক্ষুব্ধ থাকায় এবং ডলার সংকটের কারণে প্রয়োজনীয় জ্বালানি কিনতে সক্ষমতা হারিয়েছে সরকারি সংস্থাগুলো। দেনার দায়ে দেউলিয়া হয়ে পড়েছে বিপিডিবি, পেট্রোবাংলা, বিপিসি। অন্যদিকে জ্বালানি সংকটে ভুগছে বিদ্যুৎখাত, শিল্পসহ সব জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গ্রাহক। বর্তমান সরকার ২০০৮ সাল থেকে রাষ্ট্রপরিচালনা শুরুর সময় অনেকটা ইনডেমনিটি আইনের মোড়কে স্বল্পকালীন ব্যবস্থা হিসেবে দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহ আইন করে দরপত্রবিহীন অস্বচ্ছ আইনের আওতায় দ্রুত বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করে। পরিস্থিতির কারণে স্বল্পকালীন ব্যবস্থা হিসাবে এটি সমর্থন যোগ্য ছিল। কিন্তু বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা অর্জনের পরেও এই অস্বচ্ছ আইন একটি স্বাধীন দেশে চালু থাকা অমার্জনীয়। এই যে বিশাল মাত্রার রিজার্ভ মার্জিন, উৎপাদন ক্ষমতা অলস থাকার কারণে ক্যাপাসিটি চার্জ প্রদানের বাদ্ধবাধকতা এগুলোর জন্য দায়ী কে বা কারা ? কেন পিএসএমপি ২০১০, পিএসএমপি ২০১৬, গ্যাস সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান অনুসরণ করা হলো না? কেন দেশের বিপুল কয়লা সম্পদ মাটির নিচে পড়ে আছে? কেন জলে-স্থলে গ্যাস সম্পদ আহরণে দারুণভাবে ব্যর্থ সরকার? 

অনেকের মত জ্বালানি বিদ্যুৎ সেক্টরে দৈত শাসন অনেক ক্ষেত্রে জটিলতার সৃষ্টি করছে। অনেক বিষয়ই উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রীর মতের মিলছে না। কয়লা মাটির নিচে রয়েছে কিছু দুষ্টু মানুষ কর্তৃক প্রধানমন্ত্রীকে ভুল পরামর্শের কারণে। একইভাবে সাগরে গ্যাস অনুসন্ধান বিলম্বিত হওয়ার পেছনেও সরকার ঘনিষ্ঠ একটি মহলের ষড়যন্ত্র আছে। ভুল কৌশলের কারণে ভোলার আবিষ্কৃত গ্যাস জাতীয় গ্যাস গ্রিডে সংযুক্ত হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার গ্যাস সম্ভবা এলাকায় গ্যাস অনুসন্ধান করা হয়নি। আমলাদের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে দিয়ে পেট্রোবাংলা এবং কোম্পানিগুলোর সক্ষমতা সীমিত করা হয়েছে।

একই ধরনের ব্যর্থ ব্যবস্থাপনা দিয়ে নতুন সরকার জ্বালানি সংকট মেটাতে পারবে বলে সংশয় আছে। নিজেদের জ্বালানি ব্যবস্থা দ্রুতভাবে সম্পন্ন করা, জ্বালানি অপচয় রোধ, দক্ষ ব্যবহার নিশ্চিত করা, কৃচ্ছ্রতা এবং প্রণোদনা দিয়ে সৌরবিদ্যুতের অবদান বাড়ানো ছাড়া আশু সমাধান নেই। সেটি করতে হলে সঠিক ব্যক্তিদের সঠিক পদে পদায়ন করে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে।

শেয়ার করুন