২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৪:১৭:১০ পূর্বাহ্ন


দেশকে শামসুজ্জামান দুদু
ইতিহাসের ভয়ংকর সময় পার করছে এ সরকার
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩০-১১-২০২২
ইতিহাসের ভয়ংকর সময় পার করছে এ সরকার শামসুজ্জামান দুদু


বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, যতোই ভালো করে থাকুক না কোনো তার দুঃশাসন, স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা সবকিছুকেই গ্রাস করে ফেলেছে। আর একারণে তারা ইতিহাসের এক ভয়ংকর সময় পার করছে এসরকার। আমেরিকা থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সাথে এক সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন, দেশ পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ।

দেশ : দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন বলে মনে করেন?

শামসুজ্জামান দুদু: আমার কাছে মনে হয় এমন অশ্চিয়তাপূর্ণ রাজনীতি এর আগে আমি দেখিনি। একেবারে সব দিক থেকেই। অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ক্রীড়া, শিল্প- যেদিক থেকেই বিবেচনা করুন না কেন এটা খুব ভঙ্গুর সরকার, সব দিক থেকে। এজন্যই আমার মনে হয়, সব মিলিয়ে বাংলাদেশ ভালো নেই। 

দেশ: এমন অবস্থার জন্য কি এ সরকারই দায়ী? বৈশ্বিক অবস্থা বিবেচনা করবেন না?

শামসুজ্জামান দুদু: প্রথমত. আমার কাছে এর কারণ হিসেবে মনে হয় যে, এ সরকার প্রচ- আকারে দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। কোনো দেশে দশ থেকে বারো লক্ষ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যায়? এটাতো দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার কোনো দেশেই এমনটা পাওয়া যায় না। এ কাজে সরকারের সাথে যারা আছে তারাই জড়িত। এ ব্যাপারে সরকারের সাথে আছেন তারাই বলছেন। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননসহ অনেকে নিজেরাই স্বীকার করেছেন এ বিষয়টি। অন্যদিকে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকেও রিজার্ভ চুরি হয়ে গেছে। এধরনের ঘটনা গত পঞ্চাশ বছরে দেখা যায়নি। সে কারণে আমার মনে হয়.. বাংলাদেশ ভালো নেই। 

দেশ: আচ্ছা বিএনপির আমলে কি দেশ অনেক ভালো ছিল? 

শামসুজ্জামান দুদু: (একটু হাসি দিয়ে) এর চেয়ে অনেক ভালো ছিল..আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতো এদের চেয়ে ভালো ছিল। অর্থনৈতিক অবস্থাও অনেক ভালো ছিল। সামাজিক ক্ষেত্রে অনেক উন্নতি ছিল। খাতওয়ারি বললে বলতে হবে চালের দাম আমাদের সময় ছিল কেজি ১৬ টাকা। এ সরকার ক্ষমতায় আসার আগে অঙ্গীকার করেছিল তারা ১০ টাকায় এক কেজি চাল খাওয়াবে। বিএনপি আমলে সারের দাম অনেক কম ছিল। অথচ এ সরকারের অঙ্গীকার ছিল যে তারা ক্ষমতায় গেলে ফ্রি সার দেবে। এখন তো মানুষের চাকরি চলে যাচ্ছে। চাকরির ক্ষেত্রে বলা হয়েছিল ঘরে ঘরে চাকরি দেয়া হবে। তারা ন্যূনতম সফলতা তো দূরের কথা বিএনপির শাসনামলে ধারে কাছেই যেতে পারেনি।  

দেশ: আপনার কথা যদি সত্য হয়, তাহলে জনগণ কি এ ব্যাপারে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। আপনাদের কে বিশ্বাস করে কি সমর্থন দিচ্ছে? আপনি ব্যক্তিগতভাবে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন দেখেছেন, অংশ নিয়েছেন। জনগণ সেসময় কীভাবে ফুঁসে উঠতো তাও দেখেছেন। এখন কি সে অবস্থা দেখছেন?

শামসুজ্জামান দুদু: অবশ্যই। এখন জনস্রোত তৈরি হয়েছে। এটা অভূতপূর্ব ঘটনা। বিএনপি যখন কোনো সমাবেশের ডাক দেয় তখন কোনো যানবাহন থাকে না। বাস নাই ট্রাক নাই..পরিবহন ধর্মঘট তৈরি করা হয়। লঞ্চ চলে না..গত দুই মাসের কাছাকাছি সময়ে সাতটি বিভাগীয় সমাবেশ হয়েছে। লক্ষ করবেন, এসব সমাবেশের দিকে। আমার কাছে মনে হয় এভাবে এতো প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে এদেশের ইতিহাসে এ ধরনের বড়ো সমাবেশ করতে পারেনি। তাই বলতেই হবে জনগণ মাঠে নামছে না এটা ঠিক না। আর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় একটি কর্তৃত্ববাদী শাসন থাকলে তো ভিন্নকথা। আর এই কর্তৃত্ববাদী সরকার প্রশাসন, মিলিটারি সবকিছুকে একাকার করে ফেলেছে। পুলিশ এখন শুধু মামলাই করে না..গায়েবি মামলাও করে। যে ঘটনা ঘটেনি তা ঘটেছে বলে মামলা করে ফেলে। এটা তারা সরকারের স্বার্থে করে। যেখানেই আমরা সমাবেশ করছি তার পরের দিনই পাঁচটা-দশটা মামলা করে ফেলে। যেখানে আসামি করা হচ্ছে পাঁচশ থেকে সাতশ পর্যন্ত বা তারও বেশি। 

দেশ: এসব সমাবেশে জনসমাগম দেখেই বুঝে ফেললেন বিএনপির জনসমর্থন বেড়ে গেছে? 

শামসুজ্জামান দুদু: শুধু বাড়ছেই না..এই জনসমর্থনের কারণেই শেখ হাসিনা নিজেই কেয়ার টেকার সরকারেরর দাবিতে যে আন্দোলন করেছে এবং এর পাশাপাশি তার দলের নেতাকর্মীরা যেভাবে রক্ত দিয়েছে তাতেই যদি উনি পারফেক্ট থাকতেন তাহলে তো কেয়ার টেকার সরকারে ফিরে যেতেন পদত্যাগ করেই। তিনি রাজনৈতিক জীবনে বড়ো একটি সময় ব্যয় করেছেন আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন অথচ এমন রাজনৈতিক জীবনের ওপর তিনি বিশ্বাস রাখতে পারছেন না। আমার ধারণা কেয়ার টেকার সরকারে উনার আর আস্থা নেই। কারণ এ সরকার জনপ্রিয় না। 

দেশ: কীভাবে বলছেন এ সরকার জনপ্রিয় না। এ সরকার রাস্তাঘাট করেছেন। পদ্মা ব্রিজ করেছে। অনেক উন্নয়ন তো এখন জনগণেরই মুখে মুখে..

শামসুজ্জামান দুদু: যতোই ভালো করে থাকুক না কোনো তার দুঃশাসন, স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা সবকিছুকেই গ্রাস করে ফেলেছে। আর এ কারণে তারা ইতিহাসের এক ভয়ংকর সময় পার করছে এ সরকার। 

দেশ: অভিযোগ আছে বিএনপি একটি সাম্প্রদায়িক দল। এদলটির সাথে জনগণ নেই। বিএনপির শাসনামলে অন্য ধর্মের মানুষ নিরাপদ থাকতে পারে না..এটা কীভাবে দেখেন..

শামসুজ্জামান দুদু: এটা কে বলেছে? কার মুখে শুনেছেন?

দেশ: কোনো এটাতো বিভিন্ন গণমাধ্যমেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে বলা হয়ে থাকে...

শামসুজ্জামান দুদু: এ ধরনের কথা আওয়ামী লীগ আর কয়েকটি সরকারি বামদল ছাড়া কেউ বলবে না যে বিএনপি একটি সাম্প্রদায়িক দল। তথাকথিত বাম যারা আওয়ামী ঘরনার..তারাই এভাবে বলে থাকে। বিএনপি একটি সাম্প্রদায়িক দল বলে যারা বলে থাকে তাতে কোনো বাস্তবতা নেই। 

দেশ: কেন একথা শোনা যায় বিএনপিতে একসময় ভিন্নধর্মী সম্প্রদায়ের মানুষ দলের বিভিন্ন পদ-পদবি পেতো। এখন বিএনপিতে তা দেখা যায় না..

শামসুজ্জামান দুদু: না না..এটা ঠিক না। আমরাতো মনে করি না বাংলাদেশে হিন্দু-খ্রিস্টান-বৌদ্ধ বা অন্য কোনো ধর্মে বিশ্বাসীরা এদেশে সংখ্যালঘু। যা অনেকে মনে করেন। আমরা মনে করি তারাতো সব্বাই বাংলাদেশি। আবার খেয়াল করে দেখবেন স্বাভাবিক কারণে জিয়াউর রহমান থেকে শুরু করে বেগম খালেদা জিয়ার আমলসহ সব সরকারের উনাদের প্রতিনিধিত্ব ছিল। কিন্তু হিন্দুকে আওয়ামী লীগ তো সিল মেরে দিয়েছে তাদের সম্পত্তি হিসাবে। যা বিএনপি করে না।  বিএনপির নেতা-কর্মীরা মনে করেন সব শ্রেণি-পেশার মতামত যেমন নিজস্ব মতামত আছে, তেমনি হিন্দুসহ সব ধর্মীয় সম্প্রদায়কেও নিজস্ব মতামত আছে। কোনো তারা আওয়ামী লীগের নিজস্ব সম্পত্তি হিসাবে চিহ্নিত হবেন? এদেশে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সবাই মিলেই তো যুদ্ধ করেছে। তাহলে কেউ যদি কোনো সম্প্রদায়কে উসকায় তাহলে এর ভেতরে কোনো মতলবি ধারণা আছে। 

দেশ: এসরকারের প্রতি আপনার পরামর্শ কি?

শামসুজ্জামান দুদু: ইতিহাসে তিনি (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) অনন্য হয়ে থাকতে পারেন যদি গণদাবি মেনে একটি গ্রহণযোগ্য স্বাভাবিক নির্বাচন দিয়ে যেতে পারেন। একটি ভালো নির্বাচন করার পদক্ষেপ নেন তিনি। আমি বলবো মানুষ কি চাচ্ছে..তা যদি বুঝতে পেরে পদক্ষেপ নেন তাহলে তার নিজের ও দেশের জন্য মঙ্গল হবে। 

দেশ: বলা হচ্ছে উপরে সরকার বিরোধী আন্দোলন আর তলে তলে সমঝোতা। এছছাড়াও শোনা যাচ্ছে সিট ভাগাভাগি গোপন আলোচনা...

শামসুজ্জামান দুদু: এটা সরকারি প্রচারণা। বিএনপি এগুলো নিয়ে মাথা ঘামায় না। 

শেয়ার করুন