২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ১০:২৮:৫৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


মহাপ্রলয় আসছে
ইশতিয়াক রূপু
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৩-০৬-২০২২
মহাপ্রলয় আসছে


বন্যার পানি নামছে ধীরে। তবে বন্যা কেন হলো? কার ভুলে ৪০ লাখ লোক প্রকৃতির নিকট জিম্মি ছিলো তা নিয়ে চলছে তুমুল বিতর্ক। কেউ কেউ বলছেন১২২ বছরের মধ্যে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হওয়াতে এবার এই বিপর্যয় নেমে এসেছে। 

কেউ কেউ আবার শুধু ভারতীয় পরিসংখ্যান নিয়ে থেমে নেই যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের দেয়া তথ্য নিয়ে তর্কের ময়দানে নেমেছে। যে বিশেষজ্ঞরা বন্যা নিয়ে বিতর্ক করছেন তাদের কেউ কিন্তু দুর্গত এলাকায় নেই। শোনা যাচ্ছে, কোনো কোনো জগদ্বিখ্যাত পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা দেশের বিশেষ মহলের পক্ষে  বক্তব্য দিতে মাঠে নামছেন। কেউ কেউ নাকি বন্যা কেন হলো তার পক্ষে যুক্তি দিতে কোমর বেঁধে মাঠে। কিন্তু এই মুহূর্তে দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের ৪০ লাখ অধিবাসীর জন্য চলতি বন্যা বা উজানের ঢল স্থায়ী কোনো বার্তা দিলো কিনা।

কারো কারো মতে, এ ধরনের বন্যা তথা উজান থেকে নেমে আসা জলের তাণ্ডব নাকি অচিরেই স্থায়ী রূপ নিবে, যা আমি একটু লেখায় তিন বৎসর পূর্বে উল্লেখ করেছিলাম। আন্তর্জাতিক ভূগর্ভ-বিষয়ক কয়েকটি জার্নাল পৃথিবীর জনবহুল দুটি দেশ ভারত ও ব্রাজিলকে সতর্কবার্তা দিয়ে যাচ্ছে এক দশক যাবৎ। যথেচ্ছা খনন কার্য না চালানোর জন্য। তাদের আশঙ্কা এই ধরনের যথেচ্ছা পাহাড় খননে প্রাকৃতিক বিপর্যয় আসবে। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ফলস্বরূপ ভাটির দেশের বিশাল অংশ অকাল বন্যায় ডুবে যাবে। পাহাড়জুড়ে ভূমিধস হবে। সবুজ বন ও জঙ্গল ক্রমে উজাড় হয়ে অকল্পনীয় পরিবেশ বিপর্যয় সৃষ্টি হবে।

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে প্রায় এক সপ্তাহ যাবৎ উজানের ঢলে সৃষ্ট তাণ্ডব দেখে সাধারণ জনগণ সব বিশেষজ্ঞরা হতবাক। এতো সবের পর দেশ-বিদেশে চলছে এই মহাবিপর্যয় নিয়ে নানা গবেষণা ও তথ্য অনুসন্ধান। সিলেট জেলার পূর্বাঞ্চল এবং পুরো সুনামগঞ্জ জেলা ৪-৫ ফুট পানির নিচে তলিয়ে যাওয়াসহ তিনদিন পানি স্থির থাকা বোধ করি প্রকৃতি সংশ্লিষ্ট সবাইকে আগাম কোনো সঙ্কেত দেখাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা যখন বলছেন, নানা কারণে ও জনগণের চাহিদা পূরণে ভারতের সংরক্ষিত বনাঞ্চল ধ্বংস হচ্ছে খুবই দ্রুত। যার প্রভাবে মৌসুমি বায়ুর সঙ্গে আসা মেঘ থেকে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত হবে। আর সেই বৃষ্টির জলের সিংহভাগ একসঙ্গে নেমে আসবে ভাটির অঞ্চল তথা, দেশের পূর্বাঞ্চলের সমতল ভূমিসহ ফসলের ক্ষেতে। অতিরিক্ত পানি নদীর কূল ছাপিয়ে শহর ও নগরকে ভাসমান নগরীতে পরিণত করবে দ্রুত।

অকাল বন্যার এ প্রলয়ঙ্করী আঘাতে জনজীবন যে প্রাথমিক ধাক্কা আসে, তা সারতে তেমন বেশি সময় না নিলেও সবচেয়ে সমস্যা হয় কাঠামোগত সমস্যার সমাধানে। যেমন বন্যা ও উজান থেকে নেমে আসা বিপুল জলরাশি যোগাযোগ-ব্যবস্থার অন্যতম কাঁচা-পাকা রাস্তা ও ছোট-বড় ব্রিজসমূহের বড় অংশ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়, নয়তো ভেসে যায়। সেই ভাঙা রাস্তা বা ব্রিজ ঠিক করতে না করতে আবার জলদৈত্যের আক্রমণ শুরু হয়, যা সংশ্লিষ্ট সবাইকে ভাবিয়ে তুলছে। বৃহত্তর সিলেট বিভাগের মধ্যে সুনামগঞ্জ জেলার প্রাকৃতিক অবস্থান ভীষণ নাজুক পর্যায়ে। এর ওপর ‘মড়ার উপর খাঁড়ার গা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে অকালে ভারত থেকে নেমে আসা উজানের ঢল।

প্রসঙ্গক্রমে বলতে হয়েছে আজ থেকে ৩০ বছর পূর্বে সুরমা নদী শাসন ও দীর্ঘস্থায়ী ভাঙনরোধ পরিকল্পনায় প্রয়োজন হয়। বিদেশি অভিজ্ঞ নদী শাসন দেশ থেকে আগত বিশেষজ্ঞদের জরিপ। উনাদের দেয়া ফলাফল বা রিপোর্টের সব অংশ না জানা গেলেও আংশিক অংশে আগামী দিনের যে চিত্র ছিলো বা এখনো আছে তা ভয়াবহ। গবেষণায় উঠে আসে এই অঞ্চল একসময় বিশাল মহাসমুদ্র সমান কালীদহ সাগর ছিলো। জরিপকারীদের দেয়া রিপোর্টে উল্লেখ আছে, অর্ধশত বছরে হয়তো সেই সাগর সদৃশ্য লেক বা হ্রদ ফিরে আসতে পারে।

যার নমুনা কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি বলে বিশিষ্ট পরিবেশ বিজ্ঞানীদের ধারণা। তাই এই মুহূর্তে নিজ চোখে দেয়া ভয়াবহ ও প্রলয়ঙ্করী বন্যা বোধ করি আমাদের  আগামীতে ধেয়ে আসা মহাবিপর্যয়ের নমুনা দেখিয়ে বারবার সতর্ক করে দিচ্ছে। তাই বাংলাদেশ সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে দেশের পূর্বাঞ্চলের বিশাল অংশে অধুনা ঘটে যাওয়া প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঠেকানো এবং জনজীবন এমনকি গবাদিপশুকে নিরাপদ রাখতে সঠিক তথ্যনির্ভর মহাপরিকল্পনা নেয়া অতীব জরুরি।


শেয়ার করুন