২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৮:১৮:৩১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :


বায়তুল মোকাররম দক্ষিন গেটে সমাবেশ আওয়ামী লীগেরও
পল্টনঅভিমুখে মানুষ যাচ্ছে বিএনপির সমাবেশে
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-০৭-২০২৩
পল্টনঅভিমুখে মানুষ যাচ্ছে বিএনপির সমাবেশে একজন নাগরিক, তার আকুতি পোষ্টার ধারনের মাধ্যমে প্রকাশ করতে চেষ্টা করছেন/ছবি সংগৃহীত


ঢাকায় দীর্ঘদিন পর নতুন চিত্র! মহল্লায় মহল্লায় হয়েছে মাইকিং। সেখানে সেই পুরানো স্টাইলে বলা হচ্ছিল। ‘১২ তারিখের জনসভায় (১২ জুলাই) যোগ দিন, যোগ দিন।’ ‘তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, দিতে হবে দিতে হবে। হাসিনা সরকারের পদত্যাগ করতে হবে করতে হবে।’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই হয়ে আসছে এ প্রচারণা। কিন্তু বিএনপি এতে সাধারন মানুষদের সমৃক্ত করতে পাড়া মহল্লাতেও চালিয়েছে মাইকিং, অন্তত যাদের হাতে নেই স্মার্ট মোবাইল বা ইন্টারনেট তাদেরকে আমন্ত্রন জানানোর জন্য। 

মাইকিংকে সবাই যে আমলে নিয়েছিল সেটা জানা না গেলেও এর কার্যকরিতা বুঝা যাচ্ছে আজ ১২ জুলাই, ভোর থেকে। ঢাকার বিভিন্নস্থান থেকেই মানুষ ছুটছে পল্টন মুখে। সমাবেশ শুরু দুপুর ২টা থেকে। কিন্তু দলবেধে ছুটছেন তারা বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সম্মুখে অনুষ্টিত জনসভায় বেশ আগে ভাগেই। এর আগেও বিভাগীয় জনসভা গুলোতে দেখা গেছে, নির্ধারিত সময়ের আগে মানুষ সমাবেশস্থল ভরে আশপাশে ছাড়িয়ে গেলে বিএনপি কতৃপক্ষ নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই সমাবেশের কার্যক্রম শুরু করে দিতেন। 

এদিকে পল্টন অভিমুখী মানুষের ঢল, সাথে শ্লোগানের পর শ্লোগানে যেন মুখরিত করে তুলেছেন রাজধানী। পল্টনস্থ স্থানে পূর্বনির্ধারিত বিএনপির জনসভা। মুলত এ জনসভা আর দশটা বিএনপির জনসভার মত নয়। 

এ জনসভায় বিএনপি’র বহু পুরানো, প্রত্যাশিত (বিএনপি’র ভাষায়) এক দাবী বর্তমান সরকারের পদত্যাগ। সংসদ ভেঙ্গে, নিরপেক্ষ, তত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর। অর্থাৎ সরকার পতনের ‘এক দফা’ দাবী ঘোষনার জনসভা। শুধু বিএনপিই নয়। আজ বুধবার সারাদিনই রয়েছে বিএনপি ও বিএনপি সমমনা দল সমুহের আলাদা আলাদা কর্মসূচী। কেউ প্রেসক্লাবের সম্মুখে। কেউ পল্টনে। কেউ আরামবাগে দলীয় কার্যালয়ের সামনে। কেউ রিপোর্টার্স ইউনিটিতে। 

এভাবেই আলাদা আলাদা কর্মসূচী। যেখান থেকে ঘোষনা হওয়ার কথা জানানো হয়েছে ওই ‘এক দফা’র।

তবে এ কর্মসূচী ঘোষনার সময়টা বিএনপি এমন এক সময় বেছে নিল যখন ঢাকায় অবস্থান করছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কর্মকর্তাগন। যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন, মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি ও মার্কিন বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সংক্রান্ত বিষয়ের ভারপ্রাপ্ত উজরা জেয়া। সাথে ডোনাল্ড লু। 

এতে করে বিএনপি সহ সমমনা দলগুলো আরো সাহসী হয়ে উঠেছেন। কেননা এমনি মুহুর্তে সচারাচার যে পুলিশি বাধা হয়, ঢাকার রাজপথে শান্তি শৃংখলা বজায় রাখার অজুহাতে আওয়ামী লীগ সহ তাদের অঙ্গ সংগঠনের লোকজন চেয়ার নিয়ে বসে পরে পাহাড়ার নামে পরিস্থিতি অবলোকন করেন, সেটা হওয়ার সম্ভাবনা যখন ক্ষীণ। ফলে সর্বশেষ তথ্য মতে এ রিপোর্ট লেখাকালীন সময় পর্যন্ত মিছিলে, মিছিলে মুখরিত হয়ে উঠছিল পল্টন অভিমুখী পথ। অবস্থান নিতে শুরু করেছেন তারা পল্টস্থ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে। যতদূর জানা গেছে শুধু ঢাকার বিএনপির নেতাকর্মী, সমার্থকরাই নয়, দেশের বিভিন্নস্থান থেকে এসেছে বহু মানুষ এ সমাবেশে অংশ নিতে।     


১২টি জায়গা থেকে ‘এক দফা’ ঘোষণা

বিএনপি’র মিডিয়া সেল সহ বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলো আজ দুপুর থেকেই সারাদিন প্রায় কাছাকাছি সময়ে ঢাকার ১২টি জায়গা থেকে সরকার হটানোর এক দফার ঘোষণা দেবে  রাজনৈতিক দলসমুহ। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে রাষ্ট্র মেরামতে কী কী পদক্ষেপ নেবে, সেই ঘোষণাও দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

সূত্র গুলো জানিয়েছে, গণতন্ত্র মঞ্চ জাতীয় প্রেসক্লাবে, ১২ দলীয় জোট ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) তেজগাঁওয়ে দলীয় কার্যালয়ে, গণফোরাম-পিপলস পার্টি আরামবাগে, গণ অধিকার পরিষদ (নূর) কালভার্ট রোডের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে, অপর অংশ জাতীয় প্রেসক্লাবে, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, গণতান্ত্রিক পেশাজীবী জোট ও ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ প্রেসক্লাবের সামনে, লেবার পার্টি নয়াপল্টনে দলটির কার্যালয়ে আজ এক দফার ঘোষণা দেবে।

এ ছাড়া একই সময়ে বিজয়নগরে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এক দফার প্রতি সমর্থন জানাবে আমার বাংলাদেশ পার্টিও (এবি পার্টি)।

বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য ও ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু সাংবাদিকদের বলেন, শরিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে সবাই সরকারের পদত্যাগকে ‘এক দফা’ হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে আন্দোলনের নতুন যাত্রা শুরু করতে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। এক দফার সঙ্গে সংবিধান সংশোধন করে রাষ্ট্রব্যবস্থার গণতান্ত্রিক রূপান্তরের রূপরেখাও ঘোষণা হতে পারে।  


আওয়ামী লীগেরও সমাবেশ 

একইভাবে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে সমাবেশ আহ্বান করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সেখানেও বড় ধরনের শো ডাউন করার প্লান দলটির। 

আগামী নির্বাচন সময়মতো হবে এবং তা বিরোধীরা ঠেকাতে পারবে না পাড়ে সে লক্ষ্যে আজ বুধবার দুপুরে ঢাকায় সমাবেশের মাধ্যমে দলের নেতা-কর্মীদের এই বার্তা দেবে আওয়ামী লীগ।

জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে এই সমাবেশে বিশাল জমায়েত করে রাজপথে নিজেদের ‘শক্তি’ দেখাতে চায় আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি জনগণ আওয়ামী লীগের পাশে আছে, সেটিও দেখাতে চায় দলটি।

তবে জানা গেছে, পাশাপাশি সমাবেশগুলো হলেও দুই সমাবেশ ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার বা তাঁদের ওপর চড়াও না হওয়ার বিষয়ে যেমন নির্দেশনা আছে। তেমনি আওয়ামী লীগের দলীয় নেতা-কর্মীরা যাতে নিজেরাও সংঘাতে না জড়ান, সেই বার্তাও দলের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে  দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। 


শেয়ার করুন