২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৭:৪৭:০০ অপরাহ্ন
শিরোনাম :


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে নির্বাচনে সকল দলের অংশগ্রহণ জরুরি
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-০৭-২০২৩
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে নির্বাচনে সকল দলের অংশগ্রহণ জরুরি গ্রেগরি মিক্সের সাথে নেতৃবৃন্দ


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত ১৫ বছর বাংলাদেশে অভূতপূর্ব উন্নয়নের প্রশংসা করে মার্কিন কংগ্রেসে পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির র‌্যাঙ্কিং মেম্বার এবং কংগ্রেসনাল ব্ল্যাক ককাসের চেয়ারপার্সন কংগ্রেসম্যান গ্রেগরি মিক্স বললেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের অগণতান্ত্রিক আচরণে আমাদের গণতন্ত্র নিয়েও কথা উঠেছিলো। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে সুসংহত করতে আমরা কাজ করছি নিরন্তরভাবে। একইভাবে বাংলাদেশকেও সুপরিকল্পিতভাবে কাজ করে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে মজবুত করতে হবে। গণতন্ত্র যথাযথভাবে কাজ করলেই মানুষের জীবন-মানের উন্নয়ন ঘটানো সহজ হয়, উন্নয়নের অভিযাত্রা ত্বরান্বিত হয়।

বাংলাদেশি আমেরিকানদের পরীক্ষিত বন্ধু এবং কুইন্স থেকে টানা ১৩ বারের নির্বাচিত কংগ্রেসম্যান (ডেমক্র্যাট) গ্রেগরি মিক্স ২৪ জুলাই সোমবার সন্ধ্যায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের সাথে সমসাময়িক প্রসঙ্গে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশি বর্বরতার বিরুদ্ধে তুমুল আন্দোলন রচিত হয়েছিল। তবুও কমেনি বর্বরতা। একই অবস্থা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বিরাজন করছে। বাংলাদেশের ব্যাপারেও নানা কথা শোনা যায়। আশা করছি মানবিকতার স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশসহ সমগ্র বিশ্বের পুলিশী আচরণ সংশোধিত হবে।

কংগ্রেসে পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির চেয়ারপার্সন হিসেবে (২০২২ সাল পর্যন্ত) দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা বর্ণনাকালে গ্রেগরি মিক্স উল্লেখ করেন, রোহিঙ্গা ইস্যুও স্থায়ী ও টেকসই সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ ফলপ্রসূ হচ্ছে না রাশিয়া এবং চীনের কারণে। নিরাপত্তা পরিষদে এ দুটি দেশ ভিটো দিয়ে আসছে রোহিঙ্গা ইস্যুতে।

বাংলাদেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে ক্যাটাগরিকেলি কমিটমেন্ট রয়েছে শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে, কিন্তু তার এই পদক্ষেপ ফলপ্রসূ করতে সকল দলের অংশগ্রহণ জরুরি। দুয়েকটি দল এখনও তাদের নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছে। এ প্রসঙ্গে কংগ্রেসম্যান বলেন, নির্বাচন হচ্ছে জনগণের পছন্দের সরকার গঠনের একমাত্র অবলম্বন। তাই সকলেরই উচিত অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে সহযোগিতা করা। গ্রেগরি মিক্স পুনরায় উল্লেখ করেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বৈরাচারি আচরণ ও মনোভাবের পরিপ্রেক্ষিতে গোটাবিশ্ব থেকে যুক্তরাষ্ট্র বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। বাইডেন চেষ্টা করছেন সকল দেশের সাথে সম্পর্ক জোরদার করতে। সে অভিপ্রায়ে আমরা ডেমক্র্যাটরা একযোগে কাজ করছি। তাই সামনের বছরের নির্বাচনটি বাংলাদেশের মত যুক্তরাষ্ট্রের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ব্যালট যুদ্ধে সকল অগণতান্ত্রিক শক্তিকে পরাস্থ করে জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠার মধ্যদিয়ে শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ সুগম করতে হবে। কংগ্রেসম্যান বলেন, গতকাল (২৩ জুলাই) ব্রুকলীনে মেডগার এভারট কলেজের মিলনায়তনে ব্ল্যাক ককাসের এক সমাবেশে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের চলমান সংকট নিয়ে কথা বলেছি। সে সময় আমরা সংকল্প ব্যক্ত করেছি যুক্তরাষ্টের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের এবং সকলের ভোটাধিকার নিশ্চিত কল্পে জন ল্যুইসের ভোটাধিকার আইনের প্রয়োজনীয়তার কথা ব্যক্ত করেছি। কংগ্রেসম্যান ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন রিপাবলিকানদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন যে, ওরা পুনরায় ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংসের জন্যে।

ডেমক্র্যাটিক পার্টির ন্যাশনাল কমিটির (ডিএনসি) অন্যতম সদস্য নিজাম চৌধুরীর বক্তব্য উদ্ধৃত করে গ্রেগরি মিক্স বলেন, সামনের নির্বাচনে জো বাইডেনকে বিপুল বিজয় দিয়ে গণতন্ত্রকে নাজুক অবস্থা থেকে রক্ষার পথ সুগম করতে হবে। উল্লেখ্য, এ মতবিনিময় অনুষ্ঠানের ভাইস চেয়ার ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক ও ডিএনসি মেম্বার নিজাম চৌধুরী। নিজাম চৌধুরী তার বক্তব্যে বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নের মধ্যদিয়ে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করার সংক্ষিপ্ত বিবরণী উপস্থাপন করেন। মহলবিশেষের রাজনৈতিক বিদ্বেষমূলক অপপ্রচারণায় বাংলাদেশের সত্যিকারের বন্ধু হিসেবে গ্রেগরি মিক্স যাতে বিভ্রান্ত না হন সে আহবানও উচ্চারিত হয় নিজাম চৌধুরীর বক্তব্যে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেগরি মিক্স বলেন, সাফল্যের অনেক গল্প রয়েছে বাংলাদেশের। গত ১৫ বছরে দেশটি নিতান্তই গরিব থেকে মাঝারি আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক পার্টনার। বাংলাদেশে আমরা ইউএসএআইডি অব্যাহত রেখেছি। এবং আমরা দেখতে পাচ্ছি বাংলাদেশ গ্রোয়িং, গেটিং স্ট্রঙ্গার এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে অধিষ্ঠিত হচ্ছে। করোনা মহামারির মধ্যেও বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে খুবই শক্তিশালী ছিল। গ্রেগরি মিক্স উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আমি সবসময় সোচ্চার রয়েছি। কারণ, সকল দেশের জন্যেই মানবাধিকার সুরক্ষার ব্যাপারটি গুরুত্বপূর্ণ। যেখানেই মানবাধিকারের প্রতি হুমকি দেখি, সেখানেই রুখে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি।

এ মতবিনিময় অনুষ্ঠানের চেয়ারম্যান ডেমক্র্যাট মোর্শেদ আলম স্বাগত বক্তব্যে কংগ্রেসম্যানের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানান সবসময় প্রবাসী বাংলাদেশি এবং বাংলাদেশের ব্যাপারে মনোযোগী থাকায়। মতবিনিময়ে অংশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ’৭১ এর সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসার কংগ্রেসম্যানকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেন, ইতিমধ্যেই স্টেট ডিপার্টমেন্টের পদস্থ কর্মকর্তারা বাংলাদেশ সফর করেছেন। সরেজমিন ভ্রমণের পর তারাও অনুধাবনে সক্ষম হয়েছেন কীভাবে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে ধাবিত হচ্ছে। তাই উভয় দলের একটি কংগ্রেসনাল টিম নিয়ে বাংলাদেশ সফর করলে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের ব্যাপারে অনেক বিভ্রান্তিই দূর হয়ে যাবে। এর জবাবে কংগ্রেসম্যান গ্রেগরি মিক্স বলেন, সামনের নির্বাচনে প্রতিনিধি পরিষদে আমরা আবারো সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে আমি পররাষ্ট্র সম্পর্কিত কমিটির চেয়ারম্যান হবো, স্পিকার হবেন আমারই মতো আরেকজন জেফরি হাকিম, সে সময় অবশ্যই রিপাবলিকানদের সাথে নিয়ে বাংলাদেশ ভ্রমণের পরিকল্পনা করবো।

বাংলাদেশী আমেরিকান ডেমক্র্যাটিক ফ্রন্টের প্রেসিডেন্ট খোরশেদ খন্দকার জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালের জন্যে কংগ্রেসম্যানের সহায়তা চাইলে গ্রেগরি মিক্স বলেন, বিষয়টি নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। শ্রমিক কল্যাণের জন্যে আরো কিছু কাজ করতে হবে বাংলাদেশকে।

এ আয়োজনে সার্বিক সহযোগিতাকারিগণের মধ্যে আরো ছিলেন জুডিশিয়াল ডেলিগেট নূসরাত আলম, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা এম ফজলুর রহমান, ফ্লোরিডা আওয়ামী লীগের নেতা মুজিবউদ্দিন, রানা খান এবং এম রহমান জহীর, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহাবুবুর রহমান, আইরিন পারভিন, মহিউদ্দিন দেওয়ান, এম জাহাঙ্গির, শামসুল আবদিন, ডেনি চৌধুরী, সালেহা মোর্শেদ, বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকার প্রেসিডেন্ট সাহিদা হাই, কানেকটিকাট আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট জিহাদুল হক জিহাদ প্রমুখ।

শেয়ার করুন