২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৩:০৯:৪৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


আন্তর্জাতিক ‘হট ইস্যুতে’ বাংলাদেশের নির্বাচন
খন্দকার সালেক
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-০৮-২০২৩
আন্তর্জাতিক ‘হট ইস্যুতে’ বাংলাদেশের নির্বাচন


জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট, তিল তিল করে এখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিদিনের আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে। পরিস্থিতিটা এমনই এক অবস্থানে গিয়ে পৌঁছেছে যে, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, বাংলাদেশের নির্বাচন যেন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বিদ্যমান অর্থনৈতিক সংকট, জ্বালানি সংকট থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। প্রায় সময় দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা, কংগ্রেসম্যান, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে ফলাও করে প্রচারিত হয়, পৃথিবীর হাজারো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু পেছনে ফেলে বাংলাদেশের নির্বাচন ও নির্বচনপূর্ব ইস্যু। 

প্রতিনিয়ত বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রবিষয়ক মুখপাত্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, এমনকি জাতিসংঘও। বাংলাদেশে ছুটে যাচ্ছেন প্রতিনিধি, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, মানবাধিকার কমিশনের যেন ঘুম হারাম হয়ে গেছে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে। প্রধানমন্ত্রী, কয়েকজন মন্ত্রী প্রতিনিয়ত অবাধ, সুষ্ঠু , নির্বাচন নিয়ে অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করছেন। কিন্তু তাতে পুরাপুরি আস্থা রাখতে পারছেন না যেন! তবে এখানে বিভিন্ন লবিংও কাজ করছে বলে মনে হচ্ছে। সরকার যেমন লবিং করছে, বিরোধীদলও একই পন্থা অবলম্বন করে প্রচুর অর্থ খরচা করে ওই পথে হাঁটছে। এতে করে বিদেশে অনেকেই সোচ্চার এ ইস্যুতে। তার বাইরে অনেক দেশের স্বার্থও এখানে জড়িত। তাছাড়া অত্র অঞ্চল নিয়ে একটা ভূরাজনীতি এটাতো বেশ কিছুদিন থেকেই চলে আসছে। তার প্রভাবও পড়ছে বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটের ওপর। বাংলাদেশের শান্তিপ্রিয় মানুষ এসব এখন বোঝে। কিন্তু কী করতে পারবেন তারা। তাইতো এসবে তারাও প্রচ- রকম শঙ্কায়। 

বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করার একদফা আন্দোলনে একের পর এক কার্যক্রম নিয়ে রাজপথে অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি এবং সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো।  সরকারি দল এবং ফ্রন্টগুলো বিরোধীদলের সঙ্গে রাজপথে পাল্টাপাল্টি কার্যক্রম নিয়ে মুখোমুখি।  জনগণ শঙ্কিত, আতঙ্কগ্রস্ত। এমনিতেই দ্রব্যমূল্যের চাপে, গ্যাস, বিদ্যুৎ সংকটে জনজীবন অতিষ্ঠ। নির্বাচনকে জনগণ এখন বাড়তি সংকট বলেই ভাবছে। নির্বাচন নিয়ে সরকার এবং কিছু বিদেশি শক্তির মুখোমুখি অবস্থানকে ভালো চোখে দেখছে না শান্তিপ্রিয় বাংলাদেশি জনগণ। 

দেশের বাস্তবতায় রাজপথে মুখোমুখি অবস্থানে সমাধান হবে না রাজনৈতিক সংকট। সংশ্লিষ্ট সবাই জানে, রাজপথে আন্দোলন করে বর্তমান সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করার মতো জনসম্পৃক্ত আন্দোলন করার মতো পরিবেশ, শক্তি-সামর্থ্য নেই সরকারবিরোধী গোষ্ঠীর। আর সরকার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একেবারে মিত্রহীন নয় যে, ১৯৯০-এর গণআন্দোলনে এরশাদ সরকারের মতো, ১৯৯৬ এবং ২০০৬ বিএনপি-জামাত সরকারের মতো ঝরে পড়বে। যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা সরকারগুলোর তৎপরতা সত্ত্বেও বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভারত নীরব কূটনীতি বজায় রেখেছে। রাশিয়া, চীন, ইরান নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর অবস্থানকে বাড়াবাড়ি মনে করে বিবৃতি দিয়েছে। এসব পক্ষে-বিপক্ষের মতোই এখন বড় শঙ্কার কারণ। তাহলে বাংলাদেশ নির্বাচনপূর্ব পরিস্থিতি কী ভয়ঙ্কর কোনো পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে। বর্তমান সরকারের অধীনে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনও হয়েছে। সেটা নিয়ে খুব বেশি কথা নেই বিদেশিদের। কিন্তু হঠাৎ করে ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচন নিয়ে কেন এমন পক্ষে-বিপক্ষে বাক্যবিনিময় এটাই আলোচ্য বিষয়। এর মূল কারণ হিসেবে অনেকেই ওই ভূরাজনীতির প্রভাব বলে মনে করছেন।   

ক্ষমতাসীন বর্তমান সরকার সংবিধানের আলোকে নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন অনুষ্ঠান করার ব্যাপারে ক্রমশ অগ্রসর হচ্ছে। তবে যে হারে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের চোখ ও মার্কিন ভিসানীতির একটা কড়াকড়ি, সে অবস্থায় বর্তমান বাস্তবতায় সেই নির্বাচন ২০১৪ বা ২০১৮ নির্বাচনের মতো বিতর্কিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বিএনপি ২০১৪ নির্বাচনে না এসে ভুল করেছে বলে দলের শুভাকাঙ্ক্ষীরা মনে করে। এবারও যদি নির্বাচন হয় এবং বিএনপি বর্জন করে, তাহলে সেটি নির্বাচনমুখী দলটির মাঠ পর্যায়ের নেতা-সমর্থকরা কীভাবে নেবে সঠিক মূল্যায়ন প্রয়োজন। 

১৫ বছর একাধারে সরকার পরিচালনার কারণে সরকারি দলের সুযোগ হয়ে অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করে দেশের খোলনলচে পাল্টে দেওয়ার। দেশ খাদ্যে বলা যায় স্বয়ংসম্পূর্ণ, ক্ষুধা, দারিদ্র্য অনেকটাই অনুপস্থিত। ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ, যোগাযোগ ব্যবস্থার বৈপ্লবিক উন্নয়ন হয়েছে। তবে একশ্রেণির সরকার ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী, আমলা, সরকারি নেতারা দুর্নীতি করে সম্পদের পাহাড় গড়েছে। সম্পদের সুষম বণ্টন হয়নি। সরকার দুর্নীতি দমনে ব্যর্থ হয়েছে। সব বিরোধীদল নির্বাচনে এলে সরকার জনরোষের শিকার হতেও পারে।

শুনেছি সরকারপ্রধান তার গোয়েন্দা সংস্থাসমূহের মাধ্যমে নিজের দলের মন্ত্রী, সাংসদের আমলনামা তৈরি করেছেন। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হলে হয়তো সরকারপ্রধান তৃণমূলে জনপ্রিয় নেতাদের মনোনয়ন দেবেন। জনগণ কিন্তু প্রধান বিরোধীদলের অতীত কার্যক্রমের কথা ভুলে যায়নি। ২০০১-২০০৬ বিএনপি জামাত সরকারের শাসন আমলে আন্দোলনে থাকা বিএনপি নেতা-নেত্রীরা কি করেছেন তার রেকর্ডস এখনো অনেকের স্মৃতিতেই আছে। তাই নির্বাচন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হলেই বিএনপি জয়লাভ করবে ভাবার কোনো কারণ নেই। তবুও অংশগ্রহণ নির্বাচন হলে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। শক্তিশালী বিরোধীদলসহ একটি কার্যকরি পার্লামেন্ট গঠিত হবে।

বাংলাদেশের জন্য ২০২৪-২০৩০ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক সরকার ক্ষমতায় থাকলে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা বজায় থাকবে, বিদ্যমান এবং আগামীর চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করে বিজ্ঞানমনস্ক মেধাবী নতুন প্রজন্ম দেশকে এগিয়ে নেবে। তাই বলছি, রাজপথে সংকট সৃষ্টি না করে আলোচনা, সংলাপের ভিত্তিতে নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে। রাজপথে বর্তমান সংকটের সমাধান সুদূর পরাহত।

শেয়ার করুন