২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ৬:৫৩:০৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম :


দেশকে রুহিন হোসেন প্রিন্স
এই সরকার তো কর্তৃত্ববাদী সরকার
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৯-২০২৩
এই সরকার তো কর্তৃত্ববাদী সরকার রুহিন হোসেন প্রিন্স


বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, এ সরকার তো একটা স্বৈরাচারী সরকার, এই সরকার তো কর্র্তৃত্ববাদী সরকার। দিন দিন এ সরকারের ফ্যাসিবাদী তৎপরতা বেড়েই চলেছে। যারাই এই ধরনের কর্তৃত্ববাদী, ফ্যাসিবাদী প্রবণতার সরকার হয়, তারা মনে করে সবই তার পক্ষে। চারিদিকে তাঁবেদার সৃষ্টি হয়। আমেরিকা থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকায় এক সাক্ষাৎকারে রুহিন হোসেন প্রিন্স এ কথা বলেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ। 

দেশ : রাজনৈতিক অঙ্গনে বলা হচ্ছে যে, সিপিবির পাশাপাশি বিভিন্ন বাম দল সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি বা গণতন্ত্র রক্ষার ইস্যুতে রাজপথে সক্রিয় না। এর পাশাপাশি এ ধরনের ইস্যুতে আপনারা আন্দোলন করছেন না-এ ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কি?

রুহিন হোসেন প্রিন্স: না.. আসলে এধরনের কথা বলা হয়, এই কারণে যে দ্বিদলীয় রাজনীতি যারা চালু রেখেছে বা রাখতে চায় এবং এর পাশাপাশি বাম প্রগতিশীলদের অগ্রসরকে থামিয়ে দিতে চায়। মেহনতি মানুষের মুক্তি যারা চায় না, তারাই দেখতে চায় সিপিবিসহ বামপন্থীরা হয় আওয়ামী লীগ বলয়ে যাবে কিংবা বিএনপির পাশে থাকবে। যেহেতু আমরা আওয়ামী বা বিএনপির বলয়ের বা এই ধারার বাইরে বিকল্প শক্তি সমাবেশের আয়োজন করছি এবং প্রতিনিয়তই মাঠে চষে বেড়াচ্ছি-এজন্যই তারা এমনটা প্রচার করে। এরাই আপনি (সাংবাদিককে উদ্দেশ্য করে) বা আপনার মতো অনেকেই প্রশ্ন করে থাকে যে, সিপিবি বা বামপন্থীরা আন্দোলনে নেই। আপনি নিশ্চয়ই জানেন বাম গণতান্ত্রিক জোট ছয়টি দল নিয়ে গঠন করা হয়েছে। এর পাশাপাশি আমাদের সমমনাদের বাইরে পড়ে ইতিমধ্যে তারা বিশেষ করে বাংলাদেশ জাসদ এবং ঐক্য ন্যাপ-তারাও যুগপৎ ধারায় আন্দোলন করছে। আপনার সঙ্গে এখন যে কথা বলছি তার মাত্র কয়েক দিন আগে ঢাকায় একটি সমাবেশ করেছি। সেটার প্রধান দাবি ছিল নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচন। এর পাশাপাশি আমরা চাই নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন। অবৈধ ফ্যাসিবাদী সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে কিন্তু আমরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে আন্দোলন করে যাচ্ছি। এছাড়াও আমরা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম কমানো, সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য বন্ধ করা, গ্রাম-শহরের শ্রমজীবী মানুষকে স্বল্পমূল্যে রেশন দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। আমরা যেই আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়েছি ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে যা চলমান..। আগামী ১৫ দিন পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন থানায় দেশের বিভিন্ন উপজেলায় সমাবেশ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনে কাজ করে যাচ্ছি। এর বাইরে আমরা ৫ অক্টোবর নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ঢাকাসহ সারা দেশে অবস্থানে কর্মসূচি নিয়েছি। ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সকাল ১০টা থেকে ২টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালিত হবে কেন্দ্রীয়ভাবে। সেখানে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ আসবে। সব জেলা শহরে এটা হবে। অন্যদিকে আগামী ৮ অক্টোবর থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রধান প্রধান জেলা শহরে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে আমরা জনসভা করবো। এসব বলার অর্থই হচ্ছে যে, আমরা তো প্রতিদিনই মাঠে আছি। চলমান যে দাবি আছে, তার পাশাপাশি তাদের মুক্তির যে দাবি সে দাবির সঙ্গেও আমরা আছি। তাই বলতে হচ্ছে, স্বাভাবিকভাবেই যে প্রশ্ন আপনি করেছেন এবং অনেকে যারা বাম দল বা জোট সম্পর্কে যেসব কথা বলে থাকে তা উদ্দেশ্যমূলক এবং বামদের দুই দলের মধ্যে আবদ্ধ করার প্রয়াস মাত্র। তাই আমরা বলতে চাই, আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে যেমন আমরা লড়াই সংগ্রাম করছি, তেমনি ব্যবস্থা বদলের সংগ্রামও করছি। এটা না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাবো না। 

দেশ: কিন্তু এমন আন্দোলনে তো তেমন সফলতা আসছে না। আপনারা কেমন আশাবাদী?

রুহিন হোসেন প্রিন্স : আমরা মনে করি, আমরা যখন এসব দাবি নিয়ে বাংলার মানুষের কাছে যাই, তখন তারা আমাদের সপক্ষেই আন্দোলন করে। বাংলাদেশের মানুষ আমাদের এই ধরনের আন্দোলনের পক্ষে আছে। সুতরাং সেক্ষেত্রে আমরা আশাবাদী হই। কিন্তু এটাই বাস্তবতাই হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রচারমাধ্যম এবং অনান্য জায়গাগুলোতে দ্বিদলীয় ধারা চলে এলে এর বিপরীতে একটা অল্টারনেট ধারাটা আসা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। দুই নম্বর হচ্ছে বাংলাদেশের দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতি এখন কাজ করে যাচ্ছে অসৎ রাজনীতির পক্ষে, অসৎ আমলা-ব্যবসায়ীর পক্ষে। এরা মিলেই বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করে যাচ্ছে। এরা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি শক্তিশালী। এরাই আমাদের উত্থান ঠেকাতে চাইছে। সুতরাং একদিকে জনসমর্থন আছে। অন্যদিকে দুর্বৃত্ত শক্তিও আছে। তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে আমাদের উত্থানে হয়তো সময় লাগবে। কিন্তু আমরা আশাবাদী। দিন যতো যাচ্ছে মানুষ বুঝতে পারছে.. যে দুঃশাসনের অবসান হলেই হবে না। ব্যবস্থারও পরিবর্তন হতে হবে। নীতিনিষ্ঠ রাজনীতিও লাগবে। কমিউনিস্ট পার্টি এবং বামপন্থীরাই হচ্ছে দেশের মানুষের কাছে পরিচিত নীতিনিষ্ঠ রাজনীতির শক্তি। সুতরাং ভয়-লোভ সবকিছু উপেক্ষা করে যে আন্দোলন-সংগ্রাম করছে, জনগণ তাতে আস্থাশীল। আমি এ ব্যাপারে আশাবাদী। 

দেশ: কিন্তু আপনি কি মনে করেন সরকার খুব দুর্বল পজিশনে আছে বা যাদের বিরুদ্ধে কথা বলছেন, তাদের মোকাবিলার সামর্থ্য আপনাদের আছে। ধরুন, এই সরকার অনেক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করেছে বলে দাবি করে আর এজন্য তারা জনগণের কাছে জনপ্রিয়। এসব বক্তব্য খণ্ডাবেন কীভাবে। এক্ষেত্রে আপনারা যে আন্দোলন করে যাচ্ছেন বা পুরো বিরোধী দল যে আন্দোলন করে যাচ্ছে, তার সফলতা সহসাই আসবে?

রুহিন হোসেন প্রিন্স: আপনি সরকার নিয়ে যে কথা বললেন, সেখানে তো অস্বাভাবিক কিছু দেখি না। এ সরকার তো একটা স্বৈরাচারী সরকার, এই সরকার কর্তৃত্ববাদী সরকার। দিন দিন এ সরকারের ফ্যাসিবাদী তৎপরতা বেড়েই চলেছে। যখনই এই ধরনের কর্তৃত্ববাদী-ফ্যাসিবাদী প্রবণতার সরকার হয়, তারা মনে করে সবই তার পক্ষে। চারিদিকে তাঁবেদার সৃষ্টি হয়। একমাত্র জনগণ যখন মাঠে নামবে..কখন নামবে তা এখনই বলতে পারি না..। তখন সব খানখান হয়ে যাবে। আমরা আশা করি, এবার সরকার অতীতের মতো করতে পারবে না। যদি এর বাইরে সরকার অন্যকিছু ভাবে সেক্ষেত্রে অগণতান্ত্রিক শক্তি বা অপশক্তি মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে, যা আখেরে এই দুঃশাসনকেই প্রলম্বিত করবে। সেক্ষেত্রে একমাত্র প্রতিরোধ হচ্ছে জনগণের শক্তিকে জাগ্রত করা। তা করার জন্যই আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

শেয়ার করুন