২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৪:৪২:২২ পূর্বাহ্ন


বিএনপির মানবন্ধনে মানুষের ঢল
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-১২-২০২৩
বিএনপির মানবন্ধনে মানুষের ঢল বিএনপির মানববন্ধনের দৃশ্য


একদিকে আসন ভাগাভাগির হাসি-কান্না। আরেকটি ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতার মসনদে বসার প্লান প্রোগ্রামের অংশ বিশেষে জাতীয় সংসদের আসন ভাগ নিয়ে টানাপড়েন। অন্যদিকে গণতন্ত্রের লড়াই নিজেদের দাবি-দাওয়া নিয়ে কিছুটা স্বস্তিতে রাস্তায় দাঁড়াতে পারার আত্মতৃপ্তি। দুই ধারে, বাংলাদেশের রাজনীতির বর্তমান চিত্র। 

অন্তত দেড় মাস পর জনসম্মুখে দাঁড়ালো বিএনপি। সেটাও একটা উপলক্ষকে সামনে রেখে। দিনটি ছিল ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস। দীর্ঘ অবরোধ কালচার কর্মসূচিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ, সেটা স্থগিত করে এদিন বিএনপি ও তাদের মিত্ররা বেছে নিয়েছিল মানবন্ধন কর্মসূচি দেশের প্রতিটা জেলা শহরে। ছোটখাটো দুই-একটি অভিযোগ ছাড়া এদিন ঘর ও লুকানো স্থান থেকে বের হয়ে আসে বিএনপির নেতাকর্মীরা। ছিলেন না শীর্ষ পর্যায়ের তেমন কেউ। তবুও বিএনপি যে রীতিতে এখন চলছে, একজন আটক বা গ্রেফতার বা অন্য কারণে আড়ালে থাকলে তার অবর্তমানে পরের ব্যক্তি দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেবে। হাল ছেড়ে দেওয়া যাবে না-এমন রীতি অনুসারে ব্যাপক জনসমাগমের উপস্থিতি দেখিয়ে প্রমাণ দিয়েছে পেছনে নেই। বরং আন্দোলনের মাঠে বেশ ভালোমতোই ফ্রন্টফুটেই বিএনপি। 

তবে এদিন মূল জনসমাগম হয়েছে রাজধানী ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সম্মুখে। পল্টনস্থ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ২৮ অক্টোবরের পর থেকে তালাবদ্ধ। এখনো। সেখানে যেতে পারছেন না বিএনপি নেতারা-এমন অভিযোগ বিএনপির। কারণ ২৮ অক্টোবরের পর সেটা দখল নিয়েছিল পুলিশ-ক্রাইম সিন দেখিয়ে। দীর্ঘদিন আটকে রাখার পর পুলিশ ধীরে ধীরে ক্রাইম সিন, ব্যারিকেড, পুলিশ প্রহরা সরিয়ে নিলেও আশপাশে এখনো পুলিশের অবস্থান লক্ষ করা যায়। রাস্তায়ও সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে আরো। ফলে এর সম্মুখে কে এলো, গেল সেটা পর্যবেক্ষণ করা হয়, যা সম্মুখে গেলেও আঁচ করা যায়। এতে করে বিএনপির যারা কারাগারের বাইরে আছেন, তারা গ্রেফতার এড়াতে সেখানে যেতে ভয় পাচ্ছেন। এতে করে মানবন্ধনের জন্য প্রেসক্লাবকেই বেছে নেয় বিএনপি। 

মানবন্ধন থেকে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান ঘোষণা দেন নিজেদের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে অনুসারী সমর্থকদের কোনো দোকান খুলবে না, মানুষ বিদেশ ভ্রমণও বন্ধ করে দেবে, এমনকি বিয়ের আয়োজনও সংক্ষিপ্ত পরিসরে হবে। তার প্রত্যাশা এভাবে সরকারকে প্রতি পদক্ষেপে ‘না’ বলে ‘প্রতিরোধ গড়ে’ তুলতে পারলে সরকারের পতন সময়ের ব্যাপার হয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি। 

সরকার পতন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে গত ২৯ অক্টোবর থেকে প্রতি সপ্তাহে একদিন বিরতি দিয়ে টানা হরতাল ও অবরোধের মধ্যে এই প্রথম সপ্তাহে প্রথম কর্মদিবসে অন্য কর্মসূচি পালন করলো বিএনপি। ঢাকাসহ দেশের সব শহরেই একই ধরনের কর্মসূচিতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নেতাকর্মী জড়োও হয়েছে। 

এ সময় সেলিমা রহমান বলেন, বাংলাদেশের মানুষ রাস্তায় নেমে পড়েছে, মিছিলে মিছিলে সারা বাংলাদেশ মুখর। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যিনি বিএনপিকে সংগঠিত করে নতুন করে দাঁড় করিয়েছেন, তার আহ্বান, আপনারা যে যেখান থেকে পারেন সরকারকে ‘না’ বলুন, ‘না’ বলুন, ‘না’ বলুন। সরকারের কোনো কিছুতে অংশগ্রহণ করবেন না। এমনকি দোকান শ্রমিক যারা আছেন সবাই দোকানপাট বন্ধ করে দিন, আপনাদের বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ করে দিন, বিয়েশাদির পার্টিগুলো ছোট করে দিন।

বিএনপির নেতাকর্মীরা পরিবারের সঙ্গে থাকতে না পেরে ‘বনে-জঙ্গলে ঘুরে বেড়াচ্ছে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, তাদের কথা চিন্তা করে আপনারা আসুন, আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। আপনারা দেখবেন অতি শিগগির জনগণ এই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটাবে। সেলিমা রহমান বলেন, মনে সাহস রাখুন। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। তারা (ক্ষমতাসীনরা) লাঠিয়াল বাহিনী, হেলমেট বাহিনী তৈরি করে জনগণের ওপর অত্যাচার করছে। এটা বেশি দিন চলবে না। আমি বলবো, মনে সাহস রাখুন। আমরা রাজপথে আছি, রাজপথে থাকব। মিছিলে মিছিলে সারা বাংলাদেশ ভরে দেবো। তবু এই সরকারের নির্বাচন আমরা মানবো না, মানবো না।

গত ২৮ অক্টোবর থেকে পুলিশ বিএনপির নেতাকর্মীদের না পেয়ে স্বজনদের ধরে নিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন সেলিমা রহমান বলেন, বাবাকে না পেলে ছেলেকে নিয়ে যায়, ছেলেকে না পেলে মাকে নিয়ে যায়। গত ৯ ডিসেম্বর (শনিবার) মানববন্ধন করেছে ‘মায়ের ডাক’। সেখান একজন নারী বললো, তার বিরুদ্ধে দুটি খুনের মামলা দেওয়া হয়েছে। সে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এই হলো দেশের অবস্থা, এই হলো মানবাধিকার পরিস্থিতি।

‘মানবাধিকার লঙ্ঘনে’ বাংলাদেশ এখন বিশ্বে প্রথম দাবি করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ২৮ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ২০ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সর্বগ্রাসী ‘দানব’ বাংলাদেশ পরিচালনা করছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, তাদের লাঠিপেটা করেছে প্রশাসন। আমরা প্রশাসনকে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলতে চাই, আপনারা বিবেক দিয়ে কাজ করুন। বিচারকরা একজনের নির্দেশে চলছেন। যিনি শাসন করছেন, তিনিই সব নির্দেশ করছেন।

বিএনপির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরীর সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টো জয়নুল আবদিন ফারুক, তাসসিনা রুশদীর লুনা, আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, কেন্দ্রীয় নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, রেহানা আখতার রানু, মীর নেওয়াজ আলী, হুম্মাম কাদের চৌধুরী, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

ঢাকার বাইরে 

বিএনপির এমন কর্মসূচি ঢাকার বাইরে বেশ কিছু স্থানে পালিত হয়েছে। তবে সেসব স্থানে কেন্দ্রীয় ও সে অঞ্চলের নেতাদের অনেকেরই আটকের শিকার হওয়ায় পরবর্তী নেতৃত্ব মাঠে মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে বগুড়া, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, বাগের হাট, মানিকগঞ্জ, বরিশাল, গাজীপুর, সাতক্ষীরা, নোয়াখালী, চুয়াডাঙ্গা, পঞ্চগড়, মুন্সিগঞ্জসহ বিভিন্নস্থানে পালিত হয় এ কর্মসূচি। 

কর্মসূচি পালন করেছে যুগপতের শরিকরাও 

বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা গণতন্ত্র মঞ্চ কারওয়ান বাজারে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সামনে, ১২ দলীয় জোট ও গণঅধিকার পরিষদ (নূর) বিজয়নগরে পানির ট্যাংকের সামনে; জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট পুরানা পল্টনে আল-রাজী কমপ্লেক্সের সামনে, এলডিপি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে। এছাড়াও গণফোরাম ও পিপলস পার্টি হাইকোর্ট এলাকায় কদম ফোয়ারার কাছে; গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য জাতীয় প্রেসক্লাবের উল্টো দিকে; লেবার পার্টি তোপখানা রোডে মেহরাব প্লাজার সামনে, গণঅধিকার পরিষদ (রেজা কিবরিয়া) পুরানা পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে, এ বি পার্টি বিজয় নগরে কর্মসূচি পালন করে। 

এর বাইরেও পেশাজীবীরাও আলাদা ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে এ কর্মসূচিতে অংশ নেয়।

শেয়ার করুন