২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ১১:১৬:২৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


বাংলাদেশের হবে বাংলা বসন্ত : গণতন্ত্র মঞ্চ
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-১২-২০২৩
বাংলাদেশের হবে বাংলা বসন্ত : গণতন্ত্র মঞ্চ গণতন্ত্র মঞ্চের মিছিল


একদফার আন্দোলনে ক্র্যাকডাউন করতেই ট্রেনে নাশকতা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। গত ১৯ ডিসেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মঞ্চের নেতা গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি এই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, আজকে আমরা দেখছি, এই সরকারের ষড়যন্ত্র কতমুখী। আজ (মঙ্গলবার) সকালে আমরা দেখলাম তেজগাঁওতে চলন্ত ট্রেনে আগুন দেয়া হয়েছে। সেখানে বেশ কয়েকজন মানুষ হতাহত হয়েছে আগুন পুড়ে। আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, এরকম নাশকতার সাথে এই চলমান আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই। ওরা (সরকার) নাশকতা তৈরি করে আন্দোলনকে কালিমা লিপ্ত করতে চায়, ওরা নাশকতা তৈরি করে আন্দোলনের ওপরে ক্র্যাকডাউন করতে চায়। তিনি বলেন, যেভাবে ২৮ অক্টোবর তারা পরিকল্পিতভাবে এজেন্ট-প্রোভেগেটিয়ারদের দিয়ে পরিকল্পিত উস্কানি তৈরি করে তারা সহিংসতা তৈরি করলো, একজন পুলিশ সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করল এবং তারপরে সমস্ত দোষ বিরোধী দলের ওপর চাপিয়ে তারা একটা সর্বাত্মক ক্র্যাকডাউনে নামলো। বিএনপির হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করেছে, গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করেছে, ভেবেছে জেলে পুরে রেখে আন্দোলনকে দমন করা যাবে। জেলে পুরে রেখে আন্দোলনকে দমন করতে চায় এটা আমরা আগেই বলেছি- এখন খোদ সরকারি দলের প্রেসিডিয়াম মেম্বার সরকারের কৃষিমন্ত্রী ঠান্ডা মাথায় পরিষ্কারভাবে শান্তভাবে বসে টেলিভিশন সাক্ষাতকারে বলছেন, আমরা ভেবে-চিন্তে পরিকল্পিতভাবে এই যে, বিএনপিসহ আমাদের বিরোধী আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের জেলে রেখেছেন।

হুঁশিয়ারি দিয়ে সাকি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ, কোটি কোটি জনতা তাদের আকাংখা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ, তাদের আকাংখা ভোটাধিকার, তাদের আকাংখা ন্যায় বিচার, তাদের আকাংখা মানবিক মর্যাদা, তাদের আকাংখা সুযোগের সমতা-সেই লড়াই চলবে। কোনো শক্তি, কোনো দমন-পীড়ন এই লড়াইকে থামাতে পারবে না। আপনাদের (সরকার) যদি সাহস থাকে ঠেকান- আমরা রাস্তায় নামব। আমাদের নীতির জন্য দেশপ্রেম নিয়ে রাস্তায় নামবো। আপনাদের বাধায় আমরা ভয় পাই না। আগামী দিনের লড়াই চলবে। কর্মসূচি আমরা ঘোষণা করব সময়মতো। আপনারা সেই কর্মসূচিগুলোতে অংশ নেবেন।

বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আজকে রাতে ট্রেনে যে নাশকতার ঘটনা ঘটেছে আমরা তার তীব্র নিন্দা জানাই, আমরা প্রতিবাদ জানাই। বরাবরই আমরা বলেছি, আন্দোলনে আমরা জনগণের ওপর নির্ভর করি, কোনো সহিংসতা, কোনো উস্কানিতে আমরা পা দিতে চাই না। ভন্ডুল করে আমরা আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন অব্যাহত রেখেছি। আমরা বলেছি, রাজনৈতিক প্রভাবের বাইরে প্রয়োজনে সমস্ত নাশকতার ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করুন-যারা দায়ী তাদেরকে গ্রেফতার করুন, তাদেরকে আইনের আওতায় আনুন।

সরকারের এক দফা দাবি এবং সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রতিবাদে বেলা সাড়ে ১১টায় গণতন্ত্র মঞ্চ বিজয়নগর ও তোপখানা রোড়ে মিছিল করে। পরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে তারা।

‘জাপাকে সরকারের ভিক্ষা’

জোনায়েদ সাকি বলেন, এই যে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের সাহেব বললেন না, ভিক্ষার সিট নিয়ে আমি রাজনীতি করি না। তারপরে কয়েক ঘন্টা পরে আমরা দেখলাম ২৬ আসনে সমঝোতা করে তারপরে নির্বাচনে গেছেন। জানাব জিএম কাদের সাহেব আপনাকে জাতির কাছে বলতে হবে এই ২৬টি আসন কি জিনিস-এটা কি ভিক্ষা? উনারা (সরকার) চান এরকম আসন সমঝোতা বাকি বিরোধী দলও করুক। বিএনপি, গণতন্ত্র মঞ্চ বাকি বিরোধী দল নির্বাচনে আসলে এইরকম আসন সমঝোতা করে উনার কিছু ভিক্ষা ছিটাবেন-এই হচ্ছে আওয়ামী লীগের গণতন্ত্র। এরকম গণতন্ত্রের দুর্দিনে এক রাতেই সমস্ত বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ছেড়ে দিতেন। কোথাও আইন, কোথাও আদালত, কোথা বিচার-জামিন দেয়ার এখতিয়ার সরকারের নেই। অথচ তারা নেতা-কর্মীদের ছেড়ে দেয়ার কথা বলে এভাবে তারা বিচার ব্যবস্থাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখান। এই যে ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর নৌকা একঘন্টায় নিয়ে আসেন, রাজি হলেই তিনি জামিন পেয়ে যান আর একই মামলায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখুরল ইসলাম আলমগীর কিংবা মির্জা আব্বাস কিংবা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের কোনো নেতা-কর্মীরা জামিন পান না।

সাইফুল হক বলেন, জাতীয় পার্টি আরেকবার প্রমাণ করলো যে, এতোদিন ধরে তারা যে কথা-বার্তা বলেছে, এই সরকারের অধীনে কোনো গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়- নিজেদের কথার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে, নিজেদের ফেলে দেয়া থুথুকে আবার মুখে নিয়ে সরকারের ছিঁটে-ফুটা আবার গ্রহণ করে ভিক্ষুকের মতন ২৫ টা ২৬ টা আসন নিয়ে এখন তারা নাকি নির্বাচনের যুদ্ধে আছে। এই নির্বাচন আগামী সংসদে কারা বিরোধী দল হবে সরকারি দল এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এটাও ঠিক করে দিতে হয়েছে। আগামীতে ৭ তারিখে যদিও তারা থাকতে পারেন সন্ধ্যায় বেলা-তারা যে ফলাফল ঘোষণা করবেন কাদেরকে বিরোধী দল ঘোষণা করবে। কথাটা খুব পরিষ্কার মানুষ এটাকে নির্বাচন হিসেবে দেখে না। সারাদেশে এই নির্বাচনে মানুষের আগ্রহ নেই-নির্বাচন নিয়ে গণহতাশা, গণঅনাস্থা ইতিমধ্যে দেখা দিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের দেয়া পরিপত্রের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সভা-সমাবেশের ওপরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরোপিত নিষেধাজ্ঞ ‘বেআইনি ও অসংবিধানিক’ অভিহিত করে তা অনতিবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানান বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক।

‘বাংলা বসন্ত হবে’

বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক বলেন, আপনারা শুনছেন, মস্কো থেকে মুখপাত্র মারিয়া জাকারেফা বললেন, যে পরিস্থিতি চলছে- ৭ জানুয়ারি ও তার পরবর্তি বাংলাদেশে একটা নাকি আবর বসন্ত দেখা দেবে। আরব বসন্তের অর্থ কি? একটা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সামরিক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে লক্ষ লক্ষ মানুষ কোটি মানুষ তারা রাস্তায় নেমে এসেছে। বাংলাদেশে আরব বসন্ত নয়, বাংলাদেশের হবে বাংলা বসন্ত। বাংলাদেশ বসন্তের জন্য মানুষ আবার তৈরি হচ্ছে। মানুষের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ যেকোনো সময়ে এই ক্ষোভ লক্ষ লক্ষ মানুষ রাস্তা নেমে এসে গণবিস্ফোরণ ঘটাবে। সেই আশঙ্কা এই সরকারের যারা তাবেদার ইতিমধ্যে তারা পর্যন্ত আজকে বুঝতে পারছেন। পংকজ সরণ ভারতের পুরনো নীতিনির্ধারক, এমকে আকবর তিনি একজন বড় সাংবাদিক পরবর্তিকালে বিজেপিতে যোগ দিয়ে মুখাপত্র হয়েছিলেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী-তারা অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বিদেশীদের কোনো হস্তক্ষেপ নাকি তারা দেখতে চায় না। আমি জিজ্ঞাসা করতে চাই-২০১৪ সালে এরকম একটা একতরফা নির্বাচনে ততকালীন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংকে ঢাকাতে উড়িয়ে এনে কিভাবে জাতীয় পার্টিকে বাধ্য করলেন, ২০১৮ সালে কিভাবে এরকম নিশি রাতের নির্বাচনকে সমর্থন করলেন। আমরা পরিষ্কার করে বলি, বাংলাদেশের ভাগ্য, বাংলাদেশের মানুষ নির্ধারণ করবে। বিদেশীদের কোনো ক্ষেত্রে, বিদেশীদের কোনো চক্রান্ত অতীতে যেমন আমরা বরদাশত করিনি, ভবিষ্যতেও আমরা করব না।

নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সারের সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আবদুর রাজ্জাক রাজা’র সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সাংগঠনিক সমন্বয়ক ইমরান ইমন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

এছাড়া, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, গণঅধিকার পরিষদ, এলডিপি, লেবার পার্টি, গণফোরাম-পিপপলস পার্টি আলাদা আলাদাভাবে বিজয়নগর-তোপখানা রোডে মিছিল করে।

শেয়ার করুন