২৬ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০৬:২২:০৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :


দেশকে নাজমুল হক প্রধান
এ সরকার সমালোচনা সহ্য করতে পারে না
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩১-০৮-২০২২
এ সরকার সমালোচনা সহ্য করতে পারে না নাজমুল হক প্রধান


বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বলেছেন, রাজনৈতিক অঙ্গনে এমন পরিবেশ আগেও ছিল, তবে এত খারাপ অবস্থা ছিল না। আজকে সরকার কোনো সমালোচনা সহ্য করতে পারে না। বিরোধী মত গণতান্ত্রিক সমাজে যে মুখোমুখি থাকতে পারে এই ধারণাকে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল নির্বাসিত করেছে। নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠক প্রিয় দেশ পত্রিকায় দেয়া এক সাক্ষাৎকারে নাজমুল হক প্রধান একথা বলেন। 


নাজমুল হক প্রধান ছাত্রজীবনে অষ্টম শ্রেণিতে পড়তেই ১৯৬৮ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সদস্যপদ গ্রহণ করেন। ১৯৬৯ সালে ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। এরপর ১৯৭০ সালে জাতীয় নির্বাচন প্রচারকার্যে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ লিবারেশন ফ্রন্ট (বিএলএফ)-মুজিবাহিনী সদস্য হিসেবে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং দেশ স্বাধীন হওয়ার পর রব-সিরাজ  গ্রুপের অংশগ্রহণ করে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের ধারার ছাত্রলীগে কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির পদ অলঙ্কৃত করেন। ১৯৭৬-১৯৭৭ সালে জিয়ার শাসন আমলে সামরিক আইনে কারাবরণ করেন। এর পাশাপাশি তিনি এরশাদের আমলে নানারকম নির্যাতন জুলুমের মুখোমুখি থেকেও আপসহীন থাকেন। ২০১৩ সালের জাতীয় নির্বাচনে মশাল মার্কা নিয়ে পঞ্চগড়-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নিচে তার সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো। 


দেশ: দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কিছু বলুন। 

নাজমুল হক প্রধান: বর্তমানে দেশে রাজনীতি আছে, তবে জনগণের কোনো রাজনীতি নেই, আছে শুধু ক্ষমতার রাজনীতি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে শুধুমাত্র ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতি গণতন্ত্রকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে। বিরোধী রাজনীতিকে নির্বাসিত করা হয়েছে। জবাবদিহিতার পরিবর্তে কর্তৃত্ববাদী শাসনের দিকে ক্রমান্বয়ে দেশ এগিয়ে চলছে, যা দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কল্যাণকর রাষ্ট্র থেকে অনেক দূরে ঠেলে দিয়েছে।


দেশ: রাজনৈতিক অঙ্গনে এমন পরিবেশ কি আগে ছিল না?

নাজমুল হক প্রধান: রাজনৈতিক অঙ্গনে এমন পরিবেশ আগেও ছিল, তবে এতো খারাপ অবস্থা ছিল না। আজকে আওয়ামী লীগ সরকার কোনো সমালোচনা সহ্য করতে পারে না। বিরোধী মত গণতান্ত্রিক সমাজে যে মুখোমুখি থাকতে পারে এই ধারণাকে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল নির্বাসিত করেছে।


দেশ: দেশবাসী বিএনপি বা জাতীয় পার্টির আমলে কি এমন পরিস্থিতি দেখেনি?

নাজমুল হক প্রধান: দেশবাসী বিএনপি বা জাতীয় পার্টির আমলেও এমন পরিস্থিতি দেখেছে। তবে এই সরকার বর্তমান স্থানীয় সরকার নির্বাচন থেকে শুরু করে জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত এমন এমন নির্বাচন অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে যা অতীতের সমস্ত রেকর্ড চুরমার করে দিয়ে সরকার তার উন্নয়নের সাফল্য দেখানোর চেষ্টা করছে।


দেশ: তাদের আমল কি খুব ভালো ছিল?

নাজমুল হক প্রধান: আগেই বলেছি তাদের অবস্থা এর চেয়ে ভালো ছিল না, তবে এরকম ছিল না। এভাবে চলতে থাকলে দেশের মানুষের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিনিয়ত প্রশ্নবিদ্ধ হবে।


দেশ: এ সরকার অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছে। জনগণের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করেছে বলে তারা দাবি করে। এ ব্যাপারে কিছু বলুন।

নাজমুল হক প্রধান : গণতন্ত্র আর উন্নয়ন একসাথে হাত ধরে চলার কথা থাকলেও আমাদের দেশে গণতন্ত্রকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র উন্নয়ন টেকসই হয় না। যেহেতু দেশে গণতন্ত্র নেই তাই সরকারের জবাবদিহিতাও নেই। সেই কারণে উন্নয়নের নামে চলছে মেগা দুর্নীতি যা জনগণের নিকট প্রশ্ন তৈরি করেছে।


দেশ: দেশের মানুষ উন্নয়নের সুফল পাচ্ছে বলে মাঠের আন্দোলনরত দলগুলির কথায় কর্ণপাত করছে নাÑএটা কি ঠিক?

নাজমুল হক প্রধান: এটা ঠিক না। বিরোধী রাজনীতি জনগণের দাবির সাথে দলের দাবিকে জাতীয় জীবনের সাথে যুক্ত করে কোনো আন্দোলন তৈরি করতে পারছে না বলেই সরকার টিকে আছে। তবে এই অবস্থা বেশিদিন থাকবে না।


দেশ: আপনাদের দলের ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের লক্ষ্য কী?

নাজমুল হক প্রধান : আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের লক্ষ্য হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতামূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা।


দেশ: আপনাদের মন্ত্রিত্বের আসনে বসায়নি বলে কি ১৪ দলীয় জোট ছেড়েছেন?

নাজমুল হক প্রধান: মোটেই না। ১৪ দল শুধুমাত্র দিবস পালনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। আমরা মনে করেছিলাম ১৪ দলকে কার্যকর করা, দুর্নীতি-লুটপাটের বিরুদ্ধে অবস্থান পরিষ্কার করা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মাঠে কার্যকর সংস্কার আন্দোলন গড়ে তোলা যার কোনোটাই ১৪ দল দ্বারা সম্ভব হচ্ছিল না।


দেশ: বর্তমান সরকারের কাছে আপনাদের পরামর্শ কী?

নাজমুল হক প্রধান: জনগণের ভোটাধিকার ছলেবলে কৌশলে যা কেড়ে নেয়া হয়েছে তা ফিরিয়ে দেয়া এবং দেশে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা, যার মাধ্যমে জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারবে এবং দেশে একটি কল্যাণকর জবাবদিহিতামূলক সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে।

শেয়ার করুন