২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৬:২৩:৫৫ পূর্বাহ্ন


সাউথ ক্যারোলিনার প্রাথমিক নির্বাচনে বাইডেনের সহজ জয়
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৭-০২-২০২৪
সাউথ ক্যারোলিনার প্রাথমিক নির্বাচনে বাইডেনের সহজ জয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন


যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনকে সামনে রেখে সাউথ ক্যারোলিনা অঙ্গরাজ্যে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাথমিক বাছাইপর্বে সহজেই জিতে গেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এটি ডেমোক্র্যাটদের প্রথম প্রাথমিক বাছাইপর্ব।

সাউথ ক্যারোলিনাতে বিজয়ী হওয়ার পর বাইডেন বলেছেন, নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে সম্ভাব্য রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দ্বিতীয়বারের মতো পরাজিত করবেন তিনি।

ডেমোক্র্যাটরা এখন এই নির্বাচনী ফলাফলের ওপর ঝাঁপিয়ে। তারা কাটাছেঁড়া করে দেখতে চাইবে জনসমর্থনের খারাপ আলামত সত্ত্বেও ৮১ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট কত ভালোভাবে কৃষ্ণাঙ্গ ভোট টানতে পারলেন। কৃষ্ণাঙ্গ ভোটের জোরেই তিন চার বছর আগে ট্রাম্পকে হটিয়ে হোয়াইট হাউসে ঢুকেছিলেন।

২০২৪ সালের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে প্রাথমিক বাছাইপর্ব শুরু হয়েছে। ৫০ শতাংশ ব্যালট গণনা শেষে দেখা গেছে, বাইডেন ৯৬ দশমিক ৪ শতাংশ ভোট পেয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্য অনুসারে, সাউথ ক্যারোলিনাতে ডেমোক্র্যাটদের প্রাথমিক বাছাইপর্বে বাইডেনের প্রতিদ্বন্দ্বী ও লেখক ম্যারিয়ান উইলিয়ামসন ২ শতাংশ ভোট পেয়েছেন। মিনেসোটার কংগ্রেস সদস্য ডিন ফিলিপস জিতেছেন ১ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট।

ক্যালিফোর্নিয়ায় নির্বাচনী সমাবেশে অংশ নেওয়ার সময় সাউথ ক্যারোলিনা অঙ্গরাজ্যে বড় জয়ের খবর পান বাইডেন। এরপর এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘২০২৪ সালে সাউথ ক্যারোলিনার জনগণ আবারও তাদের রায় দিয়েছেন। আপনারা আবারও যে আমাদের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথ তৈরি করে দেবেন, সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। এতে ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও পরাজিত হবেন।’ যদিও নভেম্বরের নির্বাচনে সাউথ ক্যারোলিনা অঙ্গরাজ্যের নিয়ন্ত্রণ সম্ভবত রিপাবলিকানদের হাতেই থাকবে। তবে বাইডেন অঙ্গরাজ্যটিকে খুব গুরুত্ব দেন। এতোটাই যে তিনি এ অঙ্গরাজ্যটিকে তার প্রতি কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের সমর্থন প্রমাণের ক্ষেত্র হিসেবে দেখেন।

অবশ্য, সাম্প্রতিক কয়েকটি জরিপে দেখা গেছে, বাইডেনের প্রতি তাদের সমর্থন কমে যাচ্ছে। বিশেষ করে কম বয়সী কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষদের কাছে বাইডেনের জনপ্রিয়তা কমেছে। তাদের অভিযোগ, চার বছর আগে তিনি কৃষ্ণাঙ্গদের জন্য কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিলেও জয়ের পর কৃষ্ণাঙ্গদের অগ্রাধিকারের জায়গাগুলোকে গুরুত্ব দেননি।

জর্জিয়া: গত নির্বাচনে জয় পাওয়া অঙ্গরাজ্যে পিছিয়ে বাইডেন

২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যে সামান্য ব্যবধানে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়েছিলেন জো বাইডেন। তবে সম্প্রতি চালানো এক জরিপে দেখা গেছে, এই রাজ্যে এখন বাইডেনের থেকে ট্রাম্প অনেক বেশি জনপ্রিয়। গত ১ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হয় ফক্স নিউজের ওই জরিপ। জর্জিয়ার ভোটারদের মধ্যে চালানো ওই জরিপে ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছেন ৫০ শতাংশের বেশি। আর অন্যদিকে বাইডেনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন ৪৩ শতাংশ। 

গণমাধ্যমটি জানিয়েছে, ২০২০ সালের নির্বাচনে সামান্য ব্যবধানে জর্জিয়ায় জয় পেয়েছিলেন বাইডেন। তিনি পেয়েছিলেন ৪৯.৪৭ শতাংশ ভোট আর ট্রাম্প পেয়েছিলেন ৪৯.২৪ শতাংশ ভোট। তবে এখন ট্রাম্প ওই রাজ্যে তার থেকে বেশি জনপ্রিয়। ভোটারদের কাছে প্রশ্ন করা হয়, এখন যদি নির্বাচন হয়, তাহলে তারা কাকে ভোট দেবেন? এর উত্তরে ৫১ শতাংশ ট্রাম্পের পক্ষ নেন এবং ৪৩ শতাংশ নেন বাইডেনের পক্ষ। অর্থাৎ গুরুত্বপূর্ণ এই রাজ্যে ৮ শতাংশ ব্যবধানে এগিয়ে আছেন ট্রাম্প।

জর্জিয়ার প্রতি ১০ জনের ৮ জন জানিয়েছেন, তারা এই দুই জনের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিত দেখার জন্য মুখিয়ে আছেন। তবে নির্বাচন নিয়ে রিপাবলিকানদের (৮৩ শতাংশ) মধ্যে আগ্রহ ডেমোক্র্যাটদের (৭৮ শতাংশ) থেকে বেশি দেখা গেছে।

এছাড়া তরুণ ভোটারদের মধ্যেও ট্রাম্প বাইডেনের থেকে ৭ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন। 

২০২০ সালের নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছিল কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ৬০ শতাংশ ইতিবাচক উত্তর দিয়েছেন। তারা মনে করেন বাইডেন ২০২০ সালের বৈধ বিজয়ী ছিলেন। তবে তাদের মধ্যে ২২ শতাংশ আবার এ বছর ট্রাম্পকেই ভোট দেবেন বলে জানিয়েছেন। অন্যদিকে ৩২ শতাংশ জর্জিয়ান জানিয়েছেন যে, তারা বিশ্বাস করেন বাইডেনের জয় প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। তাদের মধ্যে ৯৭ শতাংশই এবার ট্রাম্পকে ভোট দেবেন।


ক্যালিফোর্নিয়ায় বাইডেন প্রশাসনের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা খারিজ

ইউএস ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট অব নর্দার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার সিনিয়র জজ জেফ্রি এস হোয়াটের এক নজিরবিহীন রায়ে গাজায় ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর ইসরায়েলের চলমান সহযোগিতা এবং ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন বন্ধের দাবিতে বাইডেন প্রশাসনকে আহ্বান জানিয়ে পলিটিক্যাল ব্রাঞ্চ অব গভর্নমেন্টের ফরেন পলিসি বিষয়ে মামলার বিচারকার্য পরিচালনা করতে আদালতের এখতিয়ারগত ক্ষমতার কারণে মামলাটি খারিজ করেন। সেন্টার ফর কনস্টিটিউশনার রাইটও (সিসিআর) ডিফেন্স ফর চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনাল প্যালেস্টাইন বাইডেন প্রশাসনের বিরুদ্ধে গত বছর নভেম্বরে ইউএস ডিস্ট্রিক কোর্ট অব নর্দার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার আদালতে এই মামলা দায়ের করে। মামলার অন্য বিবাদীরা হলেন সেক্রেটারি অব স্টেট অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এবং সেক্রেটারি অব ডিফেন্স অস্টিন।

ইসরায়েল কর্তৃক গণহত্যা, অবরোধ ও নির্বিচারে বোমার হামলায় আরো অস্ত্র, অর্থ, সামরিক এবং কূটনৈতিক সহায়তা প্রদান থেকে বাইডেন প্রশাসনকে বিরত রাখতে দায়ের করা মামলার প্রাথমিক শুনানি শেষে গত ১ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার এখতিয়ারগত কারণে খারিজ করা হয়েছে। ইউএস ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট অব নর্দার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার সিনিয়র জজ জেফ্রি এস হোয়াটের এক রায়ে মামলাটি বিচারকার্য পরিচালনায় আদালতের এখতিয়ারের অভাবের খারিজ করেন। আদালত বলে, এই মামলাটি সমাধান করার ক্ষমতার অভাব রয়েছে। কারণ এটি মার্কিন পররাষ্ট্র নীতির নির্বাহী সিদ্ধান্ত গ্রহণকে জড়িত করে। ফলে মামলাটি খারিজ হয়। যদিও এখতিয়ারগত কারণে মামলাটি খারিজ করায় বাদীরা হতাশ হয়েছেন। কিন্তু আদালত তার রায়ে বাইডেন প্রশাসনকে তিরস্কার ছিল ঐতিহাসিক এবং অভূতপূর্ব বার্তা। সেই সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধের তীব্রতা সম্পর্কে একটি স্পষ্ট বার্তা দেয়। বিচারক বাইডেন প্রশাসনকে ইসরায়েলর প্রতি তার অবাধ সমর্থন পুনর্মূল্যায়ন করার আহ্বান জানিয়েছেন।

রায়ে জজ জেফ্রি বলেন, আদালতে এমন কিছু মামলা রয়েছে যেখানে পছন্দের ফলাফলে পৌঁছানো যায় না বা পাওয়া যায় না। এই মামলাটি সেরকম একটি মামলা। আদালত বিভিন্ন মামলার উদাহরণ দ্বারা আবদ্ধ এবং আমাদের সরকারের সমন্বয়কারী বিভাগ এই বিষয়ে এখতিয়ার প্রয়োগ করা থেকে বিরত থাকে। তবুও এটা বিশ্বাসযোগ্য যে, ইসরাইলের আচরণ গণহত্যার সমান, যেমন ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ জাস্টিস তা খুঁজে পেয়েছে। এই আদালত অভিযুক্তদের গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সামরিক অবরোধে তাদের অপ্রতিরোধ্য সমর্থনের ফলাফল পরীক্ষা করার জন্য আহ্বান জানান।

মামলার অন্য বাদীরা হলেন-ফিলিস্তিনি মানবাধিকার সংস্থা ডিফেন্স ফর চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনাল প্যালেস্টাইন এবং আল-হক, মার্কিন নাগরিক আহমেদ আবু আর্তেমা, ডা. ওমর আল-নাজ্জার এবং মোহাম্মদ আহমেদ আবু রোকবেহ। মার্কিন নাগরিকদের পরিবার যারা গাজায় বসবাস করেন, তাদের মধ্যে মোহাম্মদ মোনাদেল হারজাল্লাহ, লায়লা এলহাদ্দাদ, ওয়াইল এলভাসি ফেডারেল কোর্টে এবং বাসিম এলকারের পক্ষ থেকে সেন্টার ফর কনস্টিটিউশনার রাইট (সিসিআর) বাইডেন প্রশাসনের বিরুদ্ধে ইউএস ডিস্ট্রিক কোর্ট অব নর্দার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার আদালতে মামলা দায়ের করেন।

শেয়ার করুন