০৯ মে ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০১:১৭:০১ পূর্বাহ্ন


নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেট ॥ অনিয়মই নিয়ম যেখানে
নিয়মনীতির তোয়াক্কা নেই দালালিতেই পদোন্নতি
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-০৪-২০২৩
নিয়মনীতির তোয়াক্কা নেই দালালিতেই পদোন্নতি


নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট। যেখানে অনিয়মই নিয়মে পরিণত হয়েছে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই যেখানে দালালিতে পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে। সরকারি অর্থের শ্রাদ্ধ করা হচ্ছে। আবার যাদের লোকাল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাদেরও সময়সীমা শেষে হচ্ছে, ফিরে যাচ্ছে না। আবার দেশ থেকেও বিশেষ ব্যবস্থায় লোকাল শব্দটি ব্যবহার করে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। স্টেট ডিপার্টমেন্ট বারবার চিঠি দেয়া সত্ত্বেও তাদের ব্যাপারে কোনো উত্তর দেওয়া হচ্ছে না কনস্যুলেট অফিস থেকে। তাদের ব্যাপারে কনস্যুলেটে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। কেন স্টেট ডিপার্টমেন্টের চিঠির উত্তর দেয়া হচ্ছে না বা নীরব ভূমিকা পালন করা হচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকরির কিছু নিয়ম আছে, যোগ্যতা লাগে কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে দালালি আর দলবাজিই একমাত্র যোগ্যতার মাপকাঠিতে পরিণত হয়েছে। এই অনিয়ম দীর্ঘদিন থেকেই চলছে। যিনিই কনসাল জেনারেল নিযুক্ত হন তিনিই তার পছন্দের লোকজনকে বাংলাদেশ থেকে নিয়ে আসেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে লোকাল শব্দটি ব্যবহার করা হয়। আবার কোন কোন সময় তাদের বিশেষ পাসপোর্টও তদবির করে বের করা হয়। শামীম আহমেদ যখন কনসাল জেনারেল ছিলেন, তখন তিনি বাংলাদেশ থেকে ৪ জনকে এনেছিলেন। তাদের মধ্যে শাহীন মিয়া, আব্দুল আহাদ এবং মধু নামে একজন ছিলেন। এদের প্রায় সবাইকেই লোকাল শব্দটি ব্যবহার করে নিয়ে আসা হয়। আব্দুল আহাদ এখন কনস্যুলেটে ম্যাসেঞ্জার হিসেবে কাজ করছেন। তসলিমুল ইসলামকে তৎকালীন ভাইস কনসাল সাহেদুল ইসলাম নিয়ে আসেন। লোকাল নিয়োগ দেখানো হলেও তাকে অফিসিয়াল জব দেখিয়ে নিয়ে আসা হয় অফিসিয়াল পাসপোর্ট দেখিয়ে। তিনি এখনো কাজ করছে নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনসু্যুলেটে।

এনামুল হককেও দুই বছর ভিসার মেয়াদে নিয়ে আসা হয়। চাকরি দেখিয়ে দুই বছরের ভিসার মেয়াদে নিয়ে এলেও তিনি এখনো বহাল তবিয়তে কনসু্যুলেটে কাজ করছে। এনামুল হক এবং তাসলিমুল ইসলামের বিষয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্ট বারবার চিঠি দিলেও কনসু্যুলেট থেকে কোনো উত্তর দেওয়া হচ্ছে না। কনস্যুলেট অফিস অনেকটা নীরব ভূমিকা পালন করছে। কেন তাদের বিষয়ে এবং স্টেট ডিপার্টমেন্টের ব্যাপারে কনসু্যুলেট নীরব? লোকাল নিয়োগের শব্দটি ব্যবহার করে কেন বাংলাদেশ থেকে লোক নিয়ে আসা হচ্ছে, তারও কোনো উত্তর নেই কেন? এনামুল হক একা আসলেও এক সময় তার পরিবারকেও আমেরিকায় নিয়ে আসেন। তাসলিসুল ইসলাম অবশ্য এখানেই বিয়ে করেছেন।

আসিফ আহমেদ। তিনি ছিলেন লোকাল নিয়োগ। তাকে নিয়োগ দেওয়া হয় এমএলএসএস হিসাবে। যাকে সোজা বাংলায় বলা যায় পিয়ন। তিনি ভাই এবং দালালির মাধ্যমে আস্তে আস্তে নিজের আসন পোক্ত করতে থাকেন। মাঝে একবার বিএনপির শাসনামলে তার চাকরিও চলে গিয়েছিল। আবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতা এলে তিনি বীরদর্পে আবারো ফিরে আসেন। ফিরো এসেই তিনি প্রভাবশালী হয়ে পড়েন। বর্তমানে তিনি মহা প্রভাবশালী। তাকে থার্ড সেক্রেটারি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। বলা যায় বর্তমানে কনসু্যুলেটে এবং বাইরে তার প্রভাব চলছে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই তাকে থার্ড সেক্রেটারি বানিয়ে দেওয়া হয়। থার্ড সেক্রেটারি পদটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। এই পদে নিয়োগের নিয়মনীতি রয়েছে, শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু আসিফ আহমেদের ব্যাপারে নিয়ননীতি এবং শিক্ষাগত যোগ্যতার কোনো কিছুই মানা হয়নি। এখন তিনি মাঝেমধ্যে নিজেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে ভাইস কনসাল হিসেবেও পরিচয় দেন। একজন পিয়ন কীভাবে থার্ড সেক্রেটারি হন তা নিয়েও নানা প্রশ্ন রয়েছে। যে আসিফ আহমেদ ভাড়া করা বাসায় থাকতেন, তিনি এখন বিশাল সরকারি বাসায় থাকেন, সরকারের সকল সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করেন। একজন পিয়নকে এই পদ দিয়ে কেন সরকারি অর্থ শ্রাদ্ধ করা হচ্ছে তা নিয়েও নানা প্রশ্ন রয়েছে। এসব অনিয়ম দূর করা প্রয়োজন। তা না হলে সেবার মান কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা সহজেই অনুমেয়। অনেকেই প্রশ্ন করে বলেছেন, একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান কীভাবে বছরের পর বছর নিয়মের ওপর ভর করে চলে?

শেয়ার করুন