২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৪:৪৯:৩৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


তবুও অস্বস্তিতে আওয়ামী লীগ
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-১১-২০২৩
তবুও অস্বস্তিতে আওয়ামী লীগ


দিল্লির উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের একটি শক্তিশালি প্রতিনিধির বৈঠকের ফলাফল আওয়ামী লীগের পক্ষে গেছে মনে করা গেলেও মন ভালো নেই দলটির নেতাকর্মীদের। তারা আছেন উদ্বেগ উৎকণ্ঠায়। একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অর্থাৎ বিএনপিকে ছাড়াই আসলেই এবার পার পাওয়া যাবে কি-না তার সদুত্তর কারো কাছে পাচ্ছে না তারা। তার বদলে শীর্ষ পর্যায় থেকে বরং বিভিন্ন ধরনের আশঙ্কা প্রকাশ করে বক্তব্য দেয়া হচ্ছে। আর এমন পরিস্থিতিতে মাঠ থেকে শীর্ষ পর্যায়ের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আছেন অস্বস্তিতে। এমন খবর মিলছে দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা কর্মীদের সাথে কথা বলে। 

দিল্লির উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের যুক্তরাষ্ট্রের শক্ত প্রতিনিধিদলের সঙ্গে গত ১০ নভেম্বর শুক্রবার এক বৈঠক হয়ে গেছে। এমন বৈঠকের নাম দেয়া হয়েছে ‘টু-প্লাস-টু’ বৈঠক। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকেন ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে ‘টু-প্লাস-টু’ বৈঠকে অংশ নেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। 

গত শুক্রবারের এই বৈঠকের রাতেই বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হতে থাকে হরেক রকমের খবর। গণমাধ্যমের খবরে বলা হয় যে, ওই বৈঠকের পর বিকালে এক বিশেষ সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রা জানান, এতে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে দুই দেশের নেতারা বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। বলা হয় যে, আলোচনায় বাংলাদেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ‘উদ্বেগ’ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। খবরে দাবি করা হয়, দক্ষিণ এশিয়া ও বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তের আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়েছে। আর একারণে বাংলাদেশের বিষয়ে ভারতও তাদের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে। 

ভারত কি তুলে ধরেছে?

সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কোয়াত্রা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ নিয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি খুবই স্পষ্ট করে তুলে ধরেছি। এর পাশাপাশি এক্ষেত্রে তিনি উল্লেখ করেছেন যে তৃতীয় কোনো দেশের নীতিমালা নিয়ে আমাদের মন্তব্য করার জায়গা নেই। আর বলেছেন, বাংলাদেশের নির্বাচন তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সেদেশের মানুষ তাদের নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি বলেন, ‘এক বন্ধু এবং সঙ্গী দেশ হিসাবে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে আমরা সম্মান জানাই। একটি স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও প্রগতিশীল রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশকে সে দেশের মানুষ যেভাবে দেখতে চায়, সেই ‘ভিশন’কে ভারত সমর্থন করে। বাংলাদেশকে স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধিশালী করে তুলতে সে দেশের দৃষ্টিভঙ্গিকে ভারত বরাবর সমর্থন করে আসছে। সেই সমর্থন অব্যাহত থাকবে। এছাড়া আরো অনেক ভূ-রাজনৈতিক বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। বিনয় কোয়াত্রা বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন কেমন হবে, নির্বাচন কেমন হবে, তা সে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বাংলাদেশের জনগণই তা ঠিক করবেন। তাঁরাই তাঁদের দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবেন। বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ভারত। সে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি ভারত শ্রদ্ধাশীল। বাংলাদেশকে স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধিশালী করে তুলতে সে দেশের দৃষ্টিভঙ্গিকে ভারত বরাবর সমর্থন করে আসছে। সেই সমর্থন অব্যাহত থাকবে। তবে এর বাইরে বাংলাদেশ নিয়ে সত্যিকারার্থে কি হয়েছে যে ব্যাপারটি না এসে গণমাধ্যমে অন্য তথ্য দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হতে পারে, সেজন্য যুক্তরাষ্ট্র আগ্রহ প্রকাশের পাশাপাশি যথেষ্ট চাপ ও সক্রিয়তায় আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে পারে-এমন শঙ্কা না-কি আছে ভারতের। কারণ ভারতের মতে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হলে মৌলবাদী শক্তি মাথাচাড়া দেবে। আর এধরনের রং মাখিয়ে নিউজ পরিবেশন করে ভারতের কয়েকটি গণমাধ্যমের সংবাদকর্মী লিখে যাচ্ছেন আর দিচ্ছেন নানান ধরনের তথ্য। বলা হচ্ছে যে, বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন যাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের চাপ দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের প্রভাবও মাত্রাতিরিক্তভাবে বেড়ে যাবে। দাবি করা হয় এতে শুধু ভারত নয়, যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও সমস্যা হয়ে উঠতে পারে। বলা হচ্ছে টু-প্লাস-টু বৈঠকে বাংলাদেশের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই ব্যাখ্যা গত শুক্রবারের বৈঠকেও সেটা নতুন করে জানানো হয়েছে। 

বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র কি বলেছে?

মার্কিন-ভারত টু প্লাস টু বৈঠকের পর বাংলাদেশসহ ভারতীয় গণমাধ্যমে অনেক খবর বেড়িয়েছে। দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে অনেক তথ্য। যদিও মার্কিন-ভারত টু প্লাস টু বৈঠকের পর এক যৌথ বিবৃতিতে অন্য কিছু দেখা গেছে। এতে বলা হয় যে, পারস্পরিক বিশ্বাস এবং বোঝাপড়ার ভিত্তিতে চার মন্ত্রী মার্কিন-ভারত সম্পর্ককে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয় যে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের জুন ২০২৩ ও সেপ্টেম্বর ২০২৩ সফরের ভিত্তিতে চার মন্ত্রী বৈঠকে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে মার্কিন-ভারত ব্যাপক বৈশ্বিক কৌশলগত অংশীদারত্বের গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তারা কোয়াডের মতো প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি মুক্ত, উন্মুক্ত এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ইন্দো-প্যাসিফিককে রক্ষা করার জন্য দৃঢ় প্রতিশ্রুতিও তুলে ধরেন। এর পাশাপাশি দুই দেশ তারা গণতন্ত্র, মানবাধিকার, বহুত্ববাদের অগ্রগতি ও কৌশলগত স্বার্থের বিষয় নিজেদের মধ্যে ভাগ করার অঙ্গীকার করেছে বলেও খবর আছে। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব কেমন ছিল, সে ব্যাপারে কোনো আভাস অবশ্য ভারতীয় পররাষ্ট্রসচিবও দেননি। তবে তিনি বলেন, তৃতীয় কোনো দেশের নীতি নিয়ে মন্তব্য ভারত সমীচীন মনে করে না। কিন্তু মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন প্রতিটি বৈঠকের পরে টুইট করেছেন। সেই টুইটে বাংলাদেশের বিষয়টি একেবারেই নেই।

প্রশ্ন হচ্ছে ‘টু-প্লাস-টু তেই ফয়সালা?

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইতোমধ্যে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংঘাত, সহিংসতা নিয়ে জনমনে উদ্বেগ বাড়ছে। সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো ধারাবাহিকভাবে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি দিয়েই চলেছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচনের পথেই এগুচ্ছে। সহসা তফসিলও ঘোষণা হয়ে যাচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে ‘টু-প্লাস-টু’ বৈঠকের পরই কি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বাড়তি কোনো টনিক পেয়ে গেছে? ধরে নিচ্ছে ‘টু-প্লাস-টু’-ই শেষ ফয়সালা। রাজপথে বিএনপি যে দাবি আদায়ে মাঠে নেমেছে তার লক্ষ্য পূরণ না পর্যন্ত কি দলটি থেমে যাবে? প্রশ্ন হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপানসহ ২৮অক্টোবরে বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে ঢাকায় সহিংসতায় হতাহতের ঘটনায় যেভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপানসহ কয়েকটি দেশের কূটনৈতিক মিশন তার কি হবে? 

আবার অতি সম্প্রতি বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচন সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন করার কানাডার আট সংসদ সদস্যের আহ্বানের কি হবে? অন্যদিকে বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচন ঘিরে বিরোধী নেতাকর্মী গ্রেপ্তার, দমনপীড়ন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিাংদ্ধে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। আবার বাংলাদেশে বিএনপি’র আন্দোলনে সহিংসতাকে ‘রাজনৈতিক প্রতিবাদ’ বলে দিয়েছে জাতিসংঘ। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ঋণমানবিষয়ক আভাস অবনমন করেছে ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা মুডিস। দেশটির ঋণমান তারা ‘স্থিতিশীল’ থেকে অবনমন করে ‘ঋণাত্মক’ করেছে। কারণ হিসেবে যে দুটি বিষয়কে তারা চিহ্নিত করেছে, সে দুটি হলো, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণ বেড়ে যাওয়া এবং তার ঋণ নেওয়ার সক্ষমতায় ভাটা পড়া।

সর্বশেষ জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার চতুর্থ সর্বজনীন নিয়মিত পর্যালোচনা বা ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউ, ইউপিআরের জন্য সংস্থার তৈরি সারসংকলনে যে পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়েছে তার কি হবে? এই পর্যবেক্ষণে তো বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা ভেঙে পড়ার পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহল মনে করেন, বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করার প্রশ্নে সৃষ্ট রাজনৈতিক বিরোধকে ঘিরে দেশব্যাপী রাজনৈতিক বিরোধীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক দমন অভিযান নিয়ে পশ্চিমারা কঠোর বিবৃতি দিয়েছে। সেক্ষেত্রে এবারের জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার চতুর্থ সর্বজনীন নিয়মিত পর্যালোচনা বা ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউ, ইউপিআরের পর্যবেক্ষণ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে তারা মনে করে। আর একারণে দিল্লির উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্প্রতি ‘টু-প্লাস-টু’-ই শেষ ফয়সালা কি-না তা সঠিক করে কেউ বলতো পারছেন না। কিন্তু এমন বৈঠকের খবরের প্রকাশের পরপরই বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে রগ রগে খবর প্রকাশিত হতে শুরু করেছে যে, বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আছে ফুরফুরে মেজাজে। দাবি করা হচ্ছে, আগামীতে যেভাবেই হোক ক্ষমতার মসনদে বসছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের শরিকদের কয়েকজনের সাথে কথা বলার পাশাপাশি রাজনৈতিক মাঠ চষে যা জানা গেলো তাতে ভিন্ন ব্যাখা মিলছে। তাত দেখা যায়, দিল্লী-আমেরিকা বৈঠককে যতোই উচ্চমার্গে নিয়ে যাওয়া হোক না কোনো ভেতরে নানান ধরনের শঙ্কায় রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তারা মনে করে, শুধু যুক্তরাষ্ট্র-দিল্লীর বৈঠকেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে না, যেখানে পুরো পশ্চিমারা বাংলাদেশ পরিস্থিতি এমন কি খোদ জাতিসংঘও একের পর এক কঠোর বিবৃতি ও বিভিন্ন ধরনের উষ্মা প্রকাশ করছে। আর একারণে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহল মনে করেন বাহিরে থেকে যতো বলা হোক না কেনো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ফুরফুরে মেজাজে আছে, আসলে বাস্তবে ভিন্ন চিত্র। ভেতরে ভেতরে দলটির সব স্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা। কেননা এতো কিছুর পরও বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়ার পাশাপাশি তাতে দেশের জনগণের আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটানোই যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য বলে জানিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রধান উপ মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল। দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবার কাছে পরিষ্কার। যদিও একটি মহল বলে যাচ্ছে যে ‘টু প্লাস টু’ বৈঠকে বাংলাদেশের নির্বাচন ইস্যুতে ভারত তাদের অবস্থান নিয়ে সামনে এসেছে। যাতে মতানৈক্য রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে। কিন্তু ভূ-কূটনীতি করাণে বাংলাদেশ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের নীতির পরিবর্তন আসবে, তা ভাবার কারণ নেই। কারণ চীন, আঞ্চলিক নিরাপত্তা, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা সবকিছু চিন্তা করেই বাংলাদেশ কেন্দ্রিক গণতন্ত্র বা নির্বাচনের বিষয়ে অবস্থান নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আর নিজ অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, জাতীয় নিরাপত্তা ও স্বার্থকে কেন্দ্র করে ভারত বাংলাদেশ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করেছে। বাংলাদেশ ইস্যুতে ভারতের অবস্থান অতীতে যা ছিল, বর্তমানে তা রয়েছে আর ভবিষ্যতেও তাই থাকবে বলে ধারণা করেন অনেক আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক। তাদের মতে, অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের আয়োজন, আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী মানবাধিকার সমুন্নত রাখা এবং নির্বাচনের সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা না গেলে বাংলাদেশের বর্তমান ক্ষমতাসীনরা ‘টু প্লাস টু’ বৈঠকে দাবিকৃত সফলতা আসলে থাকবে কি-না তা নিয়ে অস্বস্তি আছে আওয়ামী লীগে। কেননা তারাও মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, যাতে সেখানে মানুষের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটানো। বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানে ‘টু প্লাস টু’ বৈঠকের মধেই পরিবর্তন হয়ে যাবে সে-টি ভাবা মোটেই ঠিক না। ‘টু প্লাস টু’ বৈঠকের পর যদি ক্ষমতাসীন মহল বেশ স্বাচ্ছন্দ বোধ করতো তাহলে কোনোইবা খোদ সরকারের শীর্ষ মহল থেকেই বলা হচ্ছে যে, নির্বাচন সামনে রেখে নানা দিক থেকে চক্রান্ত হচ্ছে। কেনো বলা হচ্ছে মূল লক্ষ্য হচ্ছে একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা। কেনো বলা হচ্ছে সব দিক থেকে চেষ্টা হচ্ছে। কেনোইবা বিএনপি অংশ নেবে ধরেই নেতাকর্মীদের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা দিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এএসব রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন যতোই মনে করা হোক না কেনো ‘টু প্লাস টু’ বৈঠকের মধেই পরিবর্তন হয়ে যাবে। কারণ একশ্রেণীর বিশ্লেষকরা যতোই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাথে ভারতের সাথে তাদের গভীর বন্ধুত্বের দোহাই দিক না কেনো আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হোক দেশটির সাধারণ জনগণের মতো ভারতেরও কাম্য। আর এসব কারণ বিশ্লেষণ করে দিল্লির উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের একটি শক্তিশালি প্রতিনিধির বৈঠকের ফলাফল আওয়ামী লীগের পক্ষে গেছে মনে করলেও পারিপাশ্বিক অবস্থা দেখে একেবারে শতভাগ নিশ্চিন্ত হতে পারছে না দলটির মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। এটাই বড়ো অস্বস্তির জায়গা আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের।

শেয়ার করুন