২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৯:০৯:৫৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


কথার কথকতা
মাইন উদ্দিন আহমেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৫-২০২২
কথার কথকতা


এটা তো নেহায়েতই একটা ‘মুশকিলিয়াস’ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মুশকিল কথাটার অর্থ হচ্ছে কঠিন, কষ্টকর, শক্ত, দুরূহ, খারাপ ইত্যাদি। এর ইংরেজি শব্দ হচ্ছে ডিফিকাল্ট, ল্যাবর্ড, ট্রাবলসাম ইত্যাদি। ‘মুশকিলিয়াস’ কথাটা কোত্থেকে এলো এবং বিষয়টা কি এগুলো জানতে চাইবেন তো, প্রিয় পাঠক, বলবো। শব্দটা সম্পর্কে পরে বলি, মূল বিষয়টা জানাচ্ছি এখন।

আপনারা জানেন যে, নিউইয়র্ক কখনো ঘুমিয়ে পড়ে না এবং নিজস্ব গাড়ি না থাকলেও এই সিটিতে আপনি এমটিএ’র বাস এবং সাবওয়ে ট্রেন ব্যবহার করে পুরো সিটিতে ভ্রমণ করতে পারবেন। তবে হ্যাঁ, যোগাযোগের রকমটা আপনার জানা থাকতে হবে। এই কমিউনিকেশন স্টাইলটি বুঝবার জন্য আমি একবার এ-ট্রেনের দুইপ্রান্তের শেষ দুই স্টেশন দেখতে গিয়েছিলাম। যা-ই হোক, এখন এ বিষয়ে লিখতে বসলাম কেন তা বলার চেষ্টা করছি।

অতি সম্প্রতি জ্যাকসন হাইটের জুইস সেন্টারে রাতের একটা অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে বারোটারও পরে সাবওয়েতে ঢুকলাম, যাবো ব্রæকলিনের শেষ মাথায়, কুইন্সের ওজোন পার্ক এলাকার গা-ঘেঁষে অবস্থিত আমার বাসায়।

এখানে প্রায়শই সাবওয়ের বিভিন্ন অংশে মেরামতের কাজ চলতে থাকে। তখন ট্রেনের গতিবিধি কিছুটা এদিক-সেদিক হয়। সংযোগ ট্রেনগুলোর হিসাব পাল্টে যায়। কখনো কখনো মধ্যিখানে সংযোগ বাস ধরতে হয়। এগুলো বুঝে উঠতে নতুন কারো অনেক সময় লেগে যায়। এই কয়েক বছরে আমি অনেকটাই বুঝে উঠেছি, কিন্তু সমস্যাটি নতুন নতুন মাত্রা নিয়ে হাজির হচ্ছে বলে সমাধানগুলো অনুসরণ করতে পারছি না, তাই লিখতে হচ্ছে।

নতুন নতুন দিকনির্দশনা বা নিয়মিত বিষয়গুলো ট্রেন বা বাসের ভেতর এবং সাবওয়ে স্টেশনগুলোতো ইলেকট্রনিক্যালি ঘোষণা দেয়া হয়। এেেত্র ইন্সপেকশন থাকা উচিত এই মর্মে যে, কথাগুলো স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে কিনা অথবা সবাই ভাষাটি বুঝতে পারছে কিনা। নিউইয়র্কে অফিসিয়ালি চিহ্নিত ভাষা মাধ্যম সম্ভবত আটটি, কিন্তু ঘোষণা হয় মাত্র একটি ভাষায় যা সবসময় স্পষ্ট অর্থাৎ শ্রুতিযোগ্য মানে অডিবল হয় না। অনেক সময় ইলেকট্রনিক্যালি লিখিত নির্দেশনাগুলো পরিপূর্ণ পরিস্থিতিকে স্পষ্ট করে তোলে না। এরকম এক পরিস্থিতিতে অতি সম্প্রতি আমাকে কি করতে হয়েছে তার বর্ণনা করছি।

আমি জ্যাকজন হাইট থেকে ই-ট্রেনে উঠে ৪২ স্ট্রিটে এসে এ-ট্রেন ধরে ব্রুকলিন এসে গ্র্যান্ট অ্যাভিনিউ অথবা ৮০ স্ট্রিটে নামি। অবশ্য মাঝেমাঝে ওয়েস্টওয়ে নেমেও ট্রেন পাল্টাই। এদিন দেখলাম, ট্রেন স্কেজুলে প্রচুর পরিবর্তন, কথাগুলো ভালো করে বুঝতে পারছি না, তবে ই-ট্রেনের ইলেকট্রনিক ডিসপ্লেতে স্পষ্টই দেখলাম ৪২ স্ট্রিটে এ-ট্রেন পাওয়া যাবে। সেখানে নেমে লেখা ফলো করে মাটির নিচেই মাইলখানেক হাঁটলাম। এ-ট্রেন যেখানে পাবো সেখানে এসে দেখলাম, আপটাউন যাবার এ-ট্রেন আছে, ডাউনটাউন যাবার সিঁড়িগুলো লালফিতা দিয়ে বন্ধ করা; অর্থাৎ ট্রেন নেই। এই পরিস্থিতিতে অন্য একদিন আপটাউনের গাড়ি ধরে একটা বড় স্টেশনে মনের সায় পেয়ে নেমে এ-ট্রেন পেয়ে গেলাম, যেটা বিজ্ঞানভিত্তিক সিদ্ধান্ত ছিলো না, ওটা ছিলো রোমান্টিক কবিতা লেখার মতো একটি অনিশ্চিত সিদ্ধান্ত। এই দিন আমি আর রোমান্টিক সিদ্ধান্ত নিতে পারলাম না। হার্টে তিনটা রিং আর উচ্চরক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস নিয়ে রিস্কে গেলাম না। কিন্তু বাসায় তো পৌঁছতে হবে! মাটির নিচ দিয়ে আবার অনেক রাস্তা পার হয়ে এ-ট্রেনে উঠে আবার জ্যাকসন হাইট ফিরে গেলাম। ধন্যবাদ ড্রিম লাইটারের বন্ধুদেরকে, ওরা তাদের দায়িত্বে গাড়িতে করে আমাকে বাসায় পৌঁছে দিয়েছিলো।

আপনারা কে কি বলবেন, কে পরামর্শ দেবেন আর কে কি বলে বকাবকি করবেন, জানি না তবে ঘরে বসে থেকে জমে যেতে আমি চাই না। জি হ্যাঁ, ‘মুশকিলিয়াস’ শব্দটির কথা আমি ভুলিনি, এক্ষুনি এ শব্দটির ব্যখ্যা দিচ্ছি।

আপনারা জানেন যে, ইংরেজিতে ‘হিলারিয়াস’ বলে একটি শব্দ আছে। অতি কঠিন কোনো কাজকে বোঝাতে হলে ‘এ হিলারিয়াস টাস্ক’ কথাটি ব্যবহৃত হয়। না, না, এই শব্দের সাথে হিলারী কিনটন ম্যাডামের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে শব্দটির উৎপত্তিস্থল হচ্ছে একটি পর্বত, এটাই জেনে রাখুন। আর হ্যাঁ, একটা মানুষের নামও এতে জড়িয়ে আছে।

‘হিলারিয়াস’ কথাটি ১৯৫৩ সনে ইংরেজি ভাষায় যুক্ত হয়, যা বিশেষণ হিসেবে খুবই কঠিন ধরনের কাজকে বোঝায়। আপনারা অনেকেই জানেন যে, ১৯৫৩ সালের ২৯ মে তারিখে নিউজিল্যান্ডের একজন অধিবাসী, যাঁর নাম স্যার এডমান্ড পার্সিভাল হিলারী হিমালয় পর্বতের সর্বোচ্চ চ‚ড়া মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছিলেন, অর্থাৎ সেখানে পৌঁছেছিলেন। তাঁকে সংক্ষেপে এডমান্ড হিলারী নামে সবাই চেনেন। হিমালয়ের সর্বোচ্চ চ‚ড়ায় পৌঁছবার মতো অতি কঠিন কাজটি সম্পন্ন করার পর থেকেই কোনো অতি কঠিন কাজ বোঝাবার জন্য ইংরেজিতে ‘হিলারিয়াস টাস্ক’ কথাটি ব্যবহৃত হয়। তাহলে আশা করা যায় যে, ‘অতি মুশকিল’ কোনো কাজকে ‘মুশকিলিয়াস’ বলতে আর আপনাদের কোনো আপত্তি থাকবে না। আমরা আশা করবো, এমটিএ কর্তৃপ আমাদের এই ‘মুশকিলিয়াস’ বিষয়টির দিকে খেয়াল রাখবেন।

ও হ্যাঁ, আরেকটা কথা আপনাদেরকে কানে কানে ফিসফিস করে বলে রাখি, তা হলো, এডমান্ড হিলারী সাহেব ১৯৫৩ সালে এভারেস্ট চুড়ায় পৌঁছে গিয়েছিলেন আর এদিকে পৃথিবীতে আরো একটা ‘মুশকিলিয়াস’ ঘটনা ঘটে গেছে একই বছর-১৯৫৩ সালেই পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশে অবতরণ করেছিলেন ‘মাইন উদ্দিন আহমেদ’ নামের এক মানব সন্তান!!!

শেয়ার করুন