২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ১০:২১:২৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


যে চ্যালেঞ্জের মুখে ২০২৩
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৪-০১-২০২৩
যে চ্যালেঞ্জের মুখে ২০২৩


বিশ্বজোড়া আতঙ্ক! অর্থনৈতিক মন্দা। তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকা জ্বালানি সংকট, পৃথিবীকে গভীর সংকটের দিকে ধাবিত করছে। খোদ জাতিসংঘ আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, দুর্ভিক্ষ হতে পারে। বিশ্বের বেশকিছু প্রান্তিক দেশে। বাংলাদেশের যদিও খাদ্য সংকট হবার সম্ভাবনা সীমিত। তবে জ্বালানি সংকটের কারণে শিল্প উৎপাদন বিশেষত রফতানিমুখী শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হতে থাকলে বৈদেশিক মুদ্রার ভা-ার সঙ্কুুচিত হতে পারে। চাকরি হারাতে পারে বেশ কিছু শ্রমিক। বন্ধ হয়ে যেতে পারে বেশকিছু শিল্পকারখানা। ২০২৩ বর্তমান সরকারের তৃতীয় টার্মের শেষ বছর। নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। বিশ্ব সংকটের সময় যদি রাজনীতি রাজপথে সংকটের সৃষ্টি করে, তাহলে ২০২৩ বাংলাদেশে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিতে পারে। বলা বাহুল্য, জ্বালানি সংকট মোকাবিলা করে শিল্প উৎপাদন অব্যাহত রাখাই এখন বাংলাদেশের মুখ্য চ্যালেঞ্জ।

এটা তো বাস্তব, কোভিড অতিমারীর অভিঘাতে লণ্ডভণ্ড জ্বালানি নিরাপত্তার পটভূমিতে বিশ্ব জ্বালানি বাজারে আগুন ধরিয়েছে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের আদলে দুই পরাশক্তির ছায়াযুদ্ধ। পশ্চিম ইউরোপ অনেকটাই নিশ্চিত রাশিয়ার বিপুল গ্যাস আর তেলসম্পদ থেকে সুলভে সরবরাহ পেয়ে। রাশিয়া আর ইউক্রেন উভয়ই ছিল ইউরোপের খাদ্য সরবরাহের মূল সূত্র। যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করলো। রাশিয়া পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে প্রয়োগ করলো জ্বালানি অস্ত্র। পশ্চিম ইউরোপ তেল-গ্যাস সরবরাহ সীমিত করে সংকটে পড়লো পশ্চিম ইউরোপ। পাশাপাশি বিশ্ববাজার থেকে জ্বালানি আমদানিকারী সমগ্র বিশ্বে দেখা দিলো জ্বালানি সংকট। বলা বাহুল্য, নরওয়ে নেদারল্যান্ডসের গ্যাস সমগ্র পশ্চিম ইউরোপের জন্য অপর্যাপ্ত থাকায় জার্মানি, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, নেদারল্যান্ডসের মতো দেশগুলো অনেকটাই রাশিয়ার গ্যাস, তেলের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল। নর্ডস্ট্রিম-১ সরাসরি রাশিয়ার গ্যাস জার্মানিতে সরবরাহ করতো, নর্ডস্ট্রিম-২ চালু হলে গোটা ইউরোপ নিশ্চিত সরবরাহ পেতো রাশিয়া থেকে। যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় সেই পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলো কয়লা বিদ্যুৎ,পারমাণবিক বিদ্যুৎ থেকে ধীরে ধীরে সরে আসছিলো। ২০২২ সংকট কোনোভাবে সামাল দিয়েছে পশ্চিমা বিশ্ব। বিকল্প হিসেবে স্পেন এলএনজি  আমদানি বাড়িয়েছে। জার্মানি দ্রুত এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করেছে। কিন্তু এলএনজি মূল্য গগনচুম্বী হয়ে যাওয়ায় সংকটে পড়েছে এলএনজি আমদানিকারক সারা বিশ্ব। বাংলাদেশ নিজেদের গ্যাস অনুসন্ধান সীমিত রেখে এলএনজি আমদানির দিকে ঝুঁকে পড়ে এখন নিদারুণ সংকটে। 

২০০০-২০২২ বাংলাদেশ ভ্রান্ত কৌশলের কারণে জলে-স্থলে জ্বালানি অনুসন্ধান করেনি। সামান্য অজুহাতে মূল্যবান কয়লা সম্পদ মাটির নিচে ফেলে রেখেছে। আর তাই ২০২২ জুলাই-নভেম্বর ২৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা নিয়েও ১৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে পারেনি। নিজেদের গ্যাস উৎপাদন ২৩০০ এমএমসিএফডি, সঙ্গে কাতার, ওমান থেকে এলএনজি আমদানি করে ৫০০ এমএমসিএফডি। ২৮০০ এমএমসিএফডি সরবরাহ সাড়ে ৪ হাজার এমএমসিএফডি চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। ২০২২ জুলাই-নভেম্বর বিদ্যুৎ লোডশেডিং করে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে বাংলাদেশ। উচ্চমূল্যের কারণে স্পট মার্কেট থেকে ৩০০ এমএমসিএফডি এলএনজি আমদানি স্থগিত করে সংকট ঘনীভূত হচ্ছিলো। 

২০২২ নভেম্বর থেকে বিদ্যুৎ চাহিদা শীত মৌসুমের আগমনে কমে গেছে। তদুপরি পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র ডিসেম্বর থেকে পূর্ণমাত্রায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করায় দেশজুড়ে লোডশেডিং পরিস্থিতি অনেক সহনীয়। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট উৎপাদনে এসেছে। আশা করা যাচ্ছে, অচিরে ভারতের আদানি কোম্পানি বিদ্যুৎ রফতানি শুরু করবে। কিন্তু এতো কিছু পরেও গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতি উন্নতি হয়নি। মার্চ ২০২৩ থেকে বিদ্যুৎ চাহিদা বেড়ে গেলে আবারো তীব্র সংকটের আশঙ্কা সবার।

ইতিমধ্যে ইউরোপ রাশিয়ার তেলের সর্বোচ্চ মূল্য বেঁধে দিয়েছে। জবাবে রাশিয়া  দেশ যারা এই মূল্যসীমায় তেল চাইবে তাদের কাছে তেল দিবে না বলে দিয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিশ্ববাজারে গ্যাস, তেল, কয়লার মূল্য আকাশছোঁয়া থাকবে বলে মনে হচ্ছে। বাংলাদেশ কোনোভাবেই ২০২৩ বিশ্ববাজার থেকে উচ্চমূল্যে এলএনজি (স্পট মার্কেট) কিনতে পারবে না। পেট্রোবাংলার তহবিল শূন্য। কিছু কিছু গ্যাস কোম্পানি হয়ে পড়েছে। 

২০২৩ জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় সরকার আর জনগণ সর্বোতভাবে জ্বালানি বিদ্যুতের সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। গ্যাসের সিস্টেম লস শূন্যের কোঠায় নামানোর জন্য চিরুনি অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। বিতরণ ব্যবস্থা, সঞ্চালন নেটওয়ার্ক থেকে গ্যাস লিকেজ বন্ধ করতে হবে। গৃহস্থালি, সিএনজি যেখানে বিকল্প জ্বালানি এলপিজি সরবরাহের সুযোগ আছে, সেখানে পরিকল্পনা করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। 

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ধরে রাখতে হলে শিল্পখাতকে বাঁচাতে হবে। আর সেটি করতে হলে শিল্পখাতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারভিত্তিতে গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। শিল্পের স্বার্থে সীমিত পরিমাণ এলএনজি স্পট মার্কেট থেকে কেনার বিষয় বিবেচনা করা যেতে পারে। সেই ক্ষেত্রে শিল্পগ্রাহকদের অপেক্ষাকৃত অধিকমূল্যে গ্যাস কিনতে হবে। বাংলাদেশকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েই গ্যাস অনুসন্ধান বাড়াতে হবে। পেট্রোবাংলা বাপেক্সের কারিগরি সক্ষমতা বহুগুণ বাড়াতে হবে। 

মনে রাখতে হবে ২০২৩ বিশ্ব মন্দ অবধারিত। বাংলাদেশেও আঁচ লাগতে শুরু করেছে। বিষয়টিকে জাতীয় সংকট বিবেচনা করে জাতীয়ভাবেই মোকাবিলা করতে হবে।

শেয়ার করুন