২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০১:১৯:২৩ অপরাহ্ন


পরশ-তাপস দ্বন্দ্বে সুপ্রিম কোর্টের নির্বাচন কলঙ্কিত : রিজভী
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-০৩-২০২৪
পরশ-তাপস দ্বন্দ্বে সুপ্রিম কোর্টের নির্বাচন কলঙ্কিত : রিজভী বক্তব্য রাখছেন রুহুল কবীর রিজভী


সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচলের ফলাফল প্রত্যাখান করে অবিলম্বে নতুন নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে বিএনপি নেতারা। তারা বলেছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের ছত্রছায়ায় দেশের কোথাও কোন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। গত ১২ মার্চ মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই দাবি জানান।

তিনি বলেন, আমরা সবসময় বলে আসছি যে, এই সরকার জনগণের ভোটারাধিকারে বিশ্বাসী নয়। বিগত তিনটি সংসদ নির্বাচন ও বিভিন্ন স্তরের স্থানীয় নির্বাচনে তা বার বার প্রমাণিত হয়েছে। সর্বশেষ প্রমাণিত হলো সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনেও। এটা নির্বাচন নয়, সরকার ও সরকারি দলের সংঘাত, মারামারি, জালিয়াতির তামাশা হয়েছে। বর্তমানে সেখানে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে সেই পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে বিএনপি’র পক্ষ থেকে আমি দৃঢ় কণ্ঠে বলতে চাই, ৬ ও ৭ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখান করছি এবং অবিলম্বে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির তথাকথিত নির্বাচনী ফলাফল বাতিল করে নির্বাচনের নতুন তারিখ ঘোষণা করতে হবে। একই সঙ্গে ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল এবং ব্যারিস্টার ওসমান চৌধুরীসহ গ্রেফতারকৃত বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের মুক্তির দাবিও জানান রিজভী।

গত ৯ মার্চ শনিবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি (২০২৪-২০২৫) নির্বাচনে ১৪টি পদের বিপরীতে সভাপতিসহ চারটি পদে বিজয়ী হয়েছে বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল। অপরদিকে সম্পাদকসহ ১০টি পদে বিজয়ী হয়েছে সরকার সমর্থিত বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ। বিএনপির নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের (নীল প্যানেল হিসেবে পরিচিত) বিজয়ী প্রার্থীরা হচ্ছেন- সভাপতি পদে এ এম মাহবুব উদ্দিন (খোকন) এবং সদস্য পদে সৈয়দ ফজলে এলাহী, ফাতিমা আক্তার ও মো. শফিকুল ইসলাম শফিক।

বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ (সাদা প্যানেল হিসেবে পরিচিত) বিজয়ীরা হচ্ছেন- সম্পাদক শাহ মঞ্জুরুল হক, সহ-সভাপতি পদে রমজান আলী শিকদার ও দেওয়ান মো. আবু ওবাঈদ হোসেন সেতু, কোষাধ্যক্ষ পদে মোহাম্মদ নুরুল হুদা আনসারী, সহ-সম্পাদক পদে মো. হুমায়ুন কবির ও মোহাম্মদ হুমায়ন কবির। সদস্য পদে বিজয়ী প্রার্থীরা হচ্ছেন- মো. বেলাল হোসেন শাহীন, খালেদ মোশাররফ রিপন, মো. রায়হান রনি ও রাশেদুল হক খোকন।

নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ এই সংবাদ সম্মেলনে রিজভী অভিযোগ করে বলেন, শেখ হাসিনার হাতের মুঠোয় রয়েছে ধ্বংসের শক্তি। লণ্ডভণ্ড নির্বাচনী ব্যবস্থা ও পেশীশক্তির উন্মত্ততার হিংস্রতার প্রতিফলন দেশের জনগণ অবলোকন করলো সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গনেও। রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে রাখতে আওয়ামী লীগ যে সকল কূটকৌশল অবলম্বন করছে তার সব কিছুই তারা সদ্য সমাপ্ত সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে প্রয়োগ করেছে। গত ৬-৭ মার্চ অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে নজিরবিহীন ভোট জালিয়াতি, কারচুপি, আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সাথে যুবলীগের কামড়া-কামড়ি, হাঙ্গামা, সংঘর্ষ, অস্ত্রের মুখে যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের স্ত্রী স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদ সুলতানা যুথিকে সম্পাদক পদে নির্বাচিত ঘোষণা, পরে আবার শেখ হাসিনা ও মেয়র তাপসের প্রার্থীকে সম্পাদক পদে বিজয়ী ঘোষণার মাধ্যমে দেশের সর্বোচ্চ আইনাঙ্গনের আইনজীবীদের মর্যাদা ধুলোয় লুটিয়ে দিয়েছে। ওরা হিংসা-প্রতিহিংসার পথে দেশের রাজনীতিকে উপসংহারহীন পরিস্থিতির দিকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছ। তিনি বলেন, এই ভোট জালিয়াতি ও নিজেদের অপকর্মের ঘটনা থেকে মানুষের দৃষ্টি সরাতে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের জনপ্রিয় সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলকে সম্পূর্ণ পূর্বপরিকল্পিত মিথ্যা সাজানো মামলায় গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। ফলাফল গণনা নাটকের নামে জালিয়াতি করে ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলকে হারিয়ে শেখ হাসিনা ও যুবলীগের চেয়ারম্যান পরশের আপন ভাই মেয়র তাপসের প্রার্থী শাহ মঞ্জুরুল হককে বিজয়ী ঘোষনা করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্বাচনে ভোটে যার সেক্রেটারি নির্বাচিত হওয়ার কথা তাকে পুরা হয়েছে জেলে! আর যার নিশ্চিত পরাজিত হওয়ার কথা তাকে শেখ হাসিনার নির্দেশে বসানো হয়েছে সম্পাদকের চেয়ারে। ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলকে যে মামলায় আটক করা হয়েছে সেই মামলায় এক নম্বর আসামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের স্ত্রী নাহিদ সুলতানা যুথিকে গ্রেফতার তো দূরের কথা তার নাম নিতেও ভয় পাচ্ছে পুলিশ। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান বলেছেন, যুথিকে খুঁজে পাচ্ছে না আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। অথচ মামলার পর সেই রাতেই বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার ওসমান চৌধুরীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের নগ্ন হস্তক্ষেপের চিত্র তুলে ধরে রিজভী বলেন, মামলায় ২০ জনের নামে করা এজাহারে যুথি শুধু এক নম্বর আসামীই নয়, দৃশ্যমান আক্রমণকারীদের একজন পৃষ্ঠপোষক। নির্বাচন সাব কমিটির কোঅপ্ট সদস্য সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সাইফুর রহমান সিদ্দিকী সাইফ গত ৮ মার্চ শুক্রবার রাতে দায়েরকৃত এজাহারে বলেছেন, এক নম্বর আসামির (যুথী) নির্দেশে এবং প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্ট বার সমিতির নিচ তলার শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে অস্ত্র হাতে ঢুকে বাদীসহ নির্বাচন সাবকমিটির অন্য সদস্যদের গালিগালাজ করেন আসামিরা। দুই আসামি লোহার রড দিয়ে হত্যার উদ্দেশে মাথায় আঘাত করতে গেলে বাদী বাধা দেন। এতে তিনি বাঁম কানের উপরে মাথার অংশে মারাত্মক জখম হন। অন্য আসামিরা লাঠি ও চেয়ার দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর এবং লাথি দিয়ে বাদীর শরীরে জখম করেন। তার পরনের কাপড়ও ছিঁড়ে ফেলা হয়। এজাহারে আরো বলা হয়, “নির্বাচন সাবকমিটির প্রধান অ্যাডভোকেট আবুল খায়েরকে অস্ত্রের মুখে ভোট গণনা ছাড়াই সম্পাদক হিসেবে নিজেকে নির্বাচিত ঘোষণা করতে বাধ্য করেন এক নম্বর আসামি। নির্বাচন সাব-কমিটির সদস্যরা জীবন বাঁচাতে ভোট গণনার কাজ না করেই চলে যেতে বাধ্য হন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে ঘটনার সবকিছু ধারণ করা আছে। পরশ-তাপস দুই ভাইয়ের মারামারি এবং পারিবারিক ক্ষমতার দ্বন্দ্ব সামাল দিতে এবং সম্পাদক পদ দখলের জন্য কারারুদ্ধ করা হয়েছে কাজলকে। এতো সহিংস ঘটলেও বিচারপতিরা নিশ্চুপ।

সংবাদ সম্মেলনে সুপ্রিম কোর্ট জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম সজল, অ্যাডভোকেট আবদুল জাব্বার ভুঁইয়াসহ আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন