২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ৬:২১:৪৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


নবী (সা.) নিয়ে নূপুর শর্মার মন্তব্যের জের
নীরব হয়ে যাচ্ছে মুসলিম বিশ্ব
মঈনুদ্দীন নাসের
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৭-০৭-২০২২
নীরব হয়ে যাচ্ছে মুসলিম বিশ্ব


ভারতে সুপ্রিম কোর্টের রায় কি বিজেপিনেত্রী নূপুর শর্মা ও পার্টির আরেক কর্মকর্তা নবীন কুমার জিনদালের হজরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কিত বেত্তমিজ মন্তব্য নিয়ে সৃষ্ট বিস্ময়কর পরিস্থিতির কি সামাল দিতে পারবে? ভারতের বিরুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্যের সকল মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিবাদ করেছে। বিচারক সূর্যকান্ত বিজেপিনেত্রী নূপুর শর্মাকে সমগ্র দেশের কাছে ক্ষমা চাইতে বলেছেন। 

বিজেপি শর্মা ও জিনদালকে যথাক্রমে- সাময়িক বরখাস্ত ও বহিষ্কার করেছে। কিন্তু তাতে মুসলিম বিশ্বের সরকারসমূহ (বাংলাদেশ ছাড়া) থেমে থাকেনি। তারা ভারতীয় সরকারকে ক্ষমা চাইবার কথা বলেছেন। নূপুর শর্মার ধর্মদ্রোহের কারণে তাকে শাস্তি প্রদানের কথা বলেছেন, আর বাংলাদেশের জনগণের তীব্র প্রতিবাদ করে থাকলেও এর তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘বিষয়টা ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। অথচ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার এই তির্যক মন্তব্যের নিন্দা করেছে। 

ভারতীয় শাসক দল বিজেপির বরখাস্তকৃত মুখপাত্র নূপুর শর্মার মুসলিমবিরোধী ও নবী করিম (সা.) বিরোধী মন্তব্য সমগ্র মুসলিম বিশ্বের হৃদয়কে প্রকম্পিত করলেও বাংলাদেশের শাসকদল তা অভ্যন্তরীণ ব্যাপার বলে পাশ কাটিয়ে চলছে। প্রশ্ন রইলো- ইসলামের উত্থান কি আরবের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার? মূর্খ কাকে বলে মানুষ চিনে নিন। 

এদিকে এই ভারতীয় নরাধম মহিলার উক্তিতে শক্তি সঞ্চয় করার সুযোগ নিয়েছে আল-কায়েদা এবং ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর মতো উগ্রপন্থী সংগঠনগুলো। তারা নবী (সা.)-এর সম্মান রক্ষার্থে ভারতীয় টার্গেটের ওপর আত্মঘাতী হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছে। ইতিমধ্যে তারা আফগানিস্তানে এক ‘প্রতিশোধমূলক’ আক্রমণে শিখ গুরুদুয়ারা ধ্বংস করেছে। এক শিখ উপাসনাকারী এক তালিবান কর্মকর্তাসহ অনেকে তাতে নিহত হয়েছেন ও ৭ জন আহত হয়েছেন। দোষ করেছে অবিবাহিত, হিন্দু ব্রাহ্মণকন্যা নূপুর শর্মা আর তারা আক্রমণ করেছে শিখদের ওপর। এই উগ্রবাদীদের দ্বারা এমন কোনো কাজ নেই করানো যায় না। বাংলাদেশে এদের উপস্থিতি রয়েছে। ভয়াবহ যে হতে পারে তাদের আক্রমণ, তা গুলশানের ‘হলি আর্টিজান বেকারি’ আক্রমণ অন্যতম উদাহরণ।

বিশ্বের ৫৭টি ইসলামিক দেশ কঠোর ভাষায় বিজেপির প্রাক্তন মুখপাত্রের সমলোচনা করেছে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে কূটনৈতিক পর্যায়ে প্রতিবাদের পর নূপুর শর্মাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। কাতার ভারতীয় রাষ্ট্রদূত দীপক মিট্টালকে ডেকে নিয়ে এই ব্যবস্থার ব্যাখ্যা চেয়েছে। কাতার প্রতিবাদ নোট হস্তান্তর করেছে। কাতার প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার কথা বলেছে। এই সময় ভারতরে ভাইস প্রেসিডেন্ট ভেনকিয়া নাইডু কাতারে এক সরকারি সফরে ছিলেন। সে সময় নাইডুর সম্মানে আয়োজিত এক সরকারি মধ্যাহ্নভোজ বাতিল করা হয়। এই বিষয়ে প্রথম প্রতিবাদ করে পাকিস্তান। কিন্তু ভারত তাতে কর্ণপাত করেনি। কিন্তু যখন মধ্যপ্রাচ্যে এর প্রতিবাদ শুরু হয়, তখন ভারতের হুঁশ হয়। তারপর তার বিরুদ্ধে নেয়া হয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য ব্যবস্থা। কাতারই মধ্যপ্রাচ্যে প্রথম দেশ যারা প্রতিবাদ করেছে। এর সঙ্গে এখানকার অন্যান্য দেশও প্রতিবাদে যোগ দিয়েছে। 

অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) বিবৃতিতে বলেছে, এই ঘটনা ঘটেছে ভারতে ইসলামকে ঘৃণা করার নিবিড়তা বাড়ানো এবং মুসলমানদের হয়রানি করা বিশেষ করে ক্রমাগতভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাব পরা বন্ধ করা; মুসলিম সম্পদ ধ্বংস করা ও তাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বৃদ্ধি করার পরিপ্রেক্ষিতে। ওআইসি সেক্রেটারি জেনারেল ভারতে মুসলিম নিধনের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ খানের দাবি ছাড়াও বহিষ্কৃত প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা বলেছেন। ওমানের গ্র্যান্ড মুফতি ভারতীয় পণ্য বর্জনের কথা বলেছেন। সেখানে সুপার মার্কেটগুলো থেকে ভারতীয় পণ্য সরিয়ে নিয়েছে।


আরব বাণিজ্য চুক্তিসমূহ

ভারতের অর্ধেক জ্বালানি আমদনি করা হয় পশ্চিম এশিয়া থেকে এবং বিশ্বে এক ট্রিলিয়ন ডলার বাণিজ্যের ১০ শতাংশ এই অঞ্চলের সঙ্গে চলে। এই বছর ভারত ও গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল (জিসিসি)-এর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। গালফে ভারতীয় রফতানি ৪৪ বিলিয়ন ডলার। গত বছর থেকে তা ৫৮ শতাংশ বেশি। ইউনাইটেড আরব আমিরাত ও সৌদি আরব ভারতীয় বিজনেস উদ্যোগসমূহে বিনিয়োগ শুরু করেছে। তাছাড়া গালফ দেশসমূহে ৯০ লাখ ভারতীয় কর্মজীবী রয়েছে, তাদের রেমিট্যান্স আসে বার্ষিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার ভারতীয় কোষাগারে। 

কাশ্মির নিয়েও গালফ সরকারসমূহ কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি, কিন্তু ওয়াশিংটনের উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক বিশেষজ্ঞ মাইকেল কুগলম্যান বলেছেন, তিনি গালফ দেশসমূহ থেকে এতো বেশি শক্তিশালী ও ক্রোধান্বিত প্রতিবাদ ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে আগে কখনো দেখেননি। তিনি বলেন, গালফ দেশসমূহের প্রতিবাদ ভারতের জন্য বেশ ধ্বংসাত্মক হতে পারে। কুগলম্যান বলেন, বহু বছর ধরে ভারত পচতেছে। মুসলিম দেশসমূহ থেকে তারা ফ্রি পাস পেয়েছে। কারণ তারা দিল্লির সঙ্গে তাদের বাণিজ্যকে মূল্যায়ন করে। তারা মুসলমানদের সঙ্গে ভারতীয় দুর্ব্যবহার নিয়ে তাদের নৌকা ডোবাতে চায়নি, কিন্তু এখন ভারত দেখছে তাদের রুদ্র রূপ।’

রিলিজিয়াস ফ্রিডম নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রিপোর্টে ভারতে সংখ্যালঘুদের প্রতি আচরণের নিন্দা করা হয়েছে। ভারতে ইবাদতের স্থানে হামলা হচ্ছে। সংখ্যালঘুদের বাস্তুভিটা থেকে উৎখাত করা হচ্ছে। এসবকে ভারত একপেশে ও তথ্যবিহীন মন্তব্য বলে উড়িয়ে দিয়েছে। শেখ হাসিনা সরকার যে, এ নিয়ে নেহায়েত নিশ্চুপ তা বিশ্ব অবলোকন করেছে। মালদ্বীপও প্রথমদিকে চুপ ছিল, পরে সেখানের মানুষ এক যোগকেন্দ্রে আক্রমণ করে। সরকার উপায়ন্তর না দেখে নয়াদিল্লি সরকারকে নিন্দা করে। 

হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা বলেন, ইউএই কাশ্মিরে অবকাঠামো গড়তে চুক্তি করেছে। আর বিশেষ করে ইসলামিক বিশ্বে এই বিতর্ক একসময় চায়ের কাপে ঝড় তুলবে মাত্র। ভোঁতা হয়ে পড়বে ইসলামিক জজবা। 


শেয়ার করুন