১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, শনিবার, ৬:৪৫:২৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ত্রোয়েদশ জাতীয় নির্বাচন ও গনভোট ফ্যাক্টচেকিং ও কনটেন্ট মডারেশন কর্মীদের ভিসা নিষেধাজ্ঞা ৮ ডিসেম্বর থেকে এফ ও এম সাবওয়ে লাইন সপ্তাহের দিনে রুট পরিবর্তন উইন রোজারিওর খুনি পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনে লেটিকেয়ার অস্বীকৃতিতে জাপানের প্রথম রাজধানী নারা অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া পদত্যাগ ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঘোষণা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বয়কট নিষিদ্ধ করে অ্যাডামসের বিতর্কিত আদেশ হোয়াইট হাউস প্রেস সেক্রেটারির ভাতিজার মাকে মুক্তির নির্দেশ বিশ্বকাপ ফাইনালে টিকেটের দাম ৬ হাজার ডলার


নির্বাচন হওয়া না হওয়ার দুশ্চিন্তা জনমনে
মাসউদুর রহমান
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-১২-২০২৫
নির্বাচন হওয়া না হওয়ার দুশ্চিন্তা জনমনে নির্বাচন কমিশন ভবন


২০২৬ এর ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠানের যে প্লান সেটা নিয়ে অনিশ্চয়তার কালো মেঘ দূর হচ্ছে না। ইসি তফশিল ঘোষণা কবে করবে সেটা এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কিছু বলেনি। জানা গেছে, ১০ ডিসেম্বর বুধবার দিন সিইসি’র বক্তব্য সরাসরি সম্প্রচার করার জন্য টিভি স্টেশনকে চিঠি দিয়েছে। এতে বুঝা যায় বুধবার তফশিল ঘোষণার একটা সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। পেছাতেও পারে। বাংলাদেশের নির্বাচনি ডামাডোলের সূচনা হয়তো ওই তফশিল থেকেই শুরু। 

মাঠে রাজনৈতিক দলসমূহ ব্যস্ত জোট গড়া নিয়ে। বাংলাদেশে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের বাইরে গিয়ে জিতেছিল এরশাদের জাতীয় পার্টি। ওই প্রেক্ষাপট ছিল ভিন্ন। জাতীয় পার্টির অবস্থা নাজুক। এরশাদ নেই। জাতীয় পার্টিও নিভু নিভু করে বেঁচে রয়েছে। আজীবন সরকারি দলের সঙ্গে থাকা দলটির আত্মবিশ্বাসেও ঘাটতি। 

ভোটের মাঠে এখন জামায়াত নেতৃত্ব দেয়া আট দলীয় জোট ও বিএনপি। এর বাইরে এনসিপি, এবি পার্টিসহ তিন দলীয় একটা জোট করেছে। বিএনপি এখনও ২৮ সিটে তাদের মনোনয়ন ঘোষণা করেনি। হয়তো তফশিল ঘোষণা করলে ওটুকু করে ফেলবে। জামায়াত ৫ আগস্টের পরই ৩০০ আসনে মোটামুটি চূড়ান্ত করেছে প্রার্থী। যদিও ফাইনাল ঘোষণা দেয়নি। অন্যরাও দেই দিচ্ছি এমনভাবে চলছে। 

এমন প্রেক্ষাপটে জনমনে প্রশ্ন, নির্বাচন আদৌ হবে কী? ড. মুহাম্মদ ইউনূস বারবার বলছেন ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় ভোট অনুষ্ঠিত হবে এবং উৎসবমুখর ভোট হবে। কিন্তু মানুষ আশ্বস্ত হতে পারছে না। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত সবই ঠিক আছে। কথায় ফাঁকফোকর নেই। কিন্তু সরকারের অভ্যন্তরে যেসব কাজকর্ম চলছে এবং তাদের কার্যবিধির যে গতিবিধি তাতে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো প্রস্তুতি ভেতরে পরিলক্ষিত হচ্ছে না। 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে অনেক বিশ্লেষকদের অভিমত পেছাতেও পারে এক দফা নির্বাচন। শেষ পর্যন্ত যদি সেটাই হয়, তাহলে একবছরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের সম্ভাবনা ব্যাপকহারে হ্রাস পাবে। 

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠান না হওয়ার পেছনে বড় যুক্তি এখন সকলের মুখে মুখে। 

বাংলাদেশের সম্ভব্য প্রধানমন্ত্রী তারেক রহমান। জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান হলেই নির্বাচনে অনায়াসে জয় নিয়ে দায়িত্ব নেয়ার কথা তার। পরিসংখ্যানে এর বিকল্প নেই, বিশেষ করে যখন শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব নিয়ে দেশ ছেড়েছেন এরপর। কিন্তু সে তারেক রহমান অন্তর্বর্তী সরকারের দেড় বছরের মধ্যেও কেন আসছেন না এ প্রশ্ন বড় আকারে দেখা দিয়েছে। দীর্ঘ ১৭ বছর ক্ষমতার বাইরেই শুধু নয়, নেতাকর্মীদের লাখ লাখ মামলা, মকদ্দমা, গুম, ব্যবসা, চাকরি হারা সহ নানা নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। তিনি নিজেও নির্যাতিত। খালেদ জিয়া তো বটেই। কারাভোগ, এক কাপড়ে জিয়ার স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি থেকে জোড় করে বের করে দেয়া, তিলে তিলে মৃত্যুবরণ করা ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো, এর সঙ্গে আরো কত কি। ফলে এমন সুযোগে এখন তাহলে কেন দেশে ফিরছেন না তারেক, বিশেষ করে খালেদা জিয়ার এমন অসুস্থতার মধ্যেও। 

তারেক আসছেন! এমন সম্ভাবনা ও দিনক্ষণ গণনা দীর্ঘদিন থেকেই। মাসের পর মাস যায় কিন্তু আসছেন না তিনি। এর কারণও তিনি তার এক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের স্ট্যাটাসে জানিয়েছেন। সেখানে এমন এক শক্তির কথা তিনি উল্লেখ করেছেন ওই শক্তিই কী আসন্ন নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাধা তৈরি করবে কি না এ জল্পনা-কল্পনার ডালপালা মেলছে প্রতিনিয়ত। 

তারেক রহমান যা বলেছিলেন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে.. 

গত ২৮ নভেম্বর তারেক রহমান ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ ও সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যায় রয়েছেন। তার রোগমুক্তির জন্য দল মত নির্বিশেষে দেশের সব স্তরের নাগরিক আন্তরিকভাবে দোয়া অব্যাহত রেখেছেন। প্রধান উপদেষ্টা তার রোগমুক্তির জন্য দোয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসার সর্বত সহায়তার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন।

দেশ-বিদেশের চিকিৎসক দল বরাবরের মতো তাদের উচ্চ মানের পেশাদারিত্ব ছাড়াও সর্বোচ্চ আন্তরিক সেবা প্রদান অব্যাহত রেখেছেন। বন্ধু প্রতীম একাধিক রাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও উন্নত চিকিৎসাসহ সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতার আকাঙ্খা ব্যক্ত করা হয়েছে।

সর্বজন শ্রদ্ধেয়া বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি সবার আন্তরিক দোয়া ও ভালোবাসা প্রদর্শন করায় জিয়া পরিবারের পক্ষ থেকে সবার প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও গভীর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। একই সঙ্গে জিয়া পরিবার বেগম খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তির জন্য সবার প্রতি দোয়া অব্যাহত রাখার ঐকান্তিক অনুরোধ জানাচ্ছি।

এমন সংকটকালে মায়ের স্নেহ স্পর্শ পাবার তীব্র আকাঙ্খা যেকোনো সন্তানের মতো আমারও রয়েছে। কিন্তু অন্য আর সবার মতো এটা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমার একক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ অবারিত ও একক নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। স্পর্শকাতর এ বিষয়টি বিস্তারিত বর্ণনার অবকাশও সীমিত। রাজনৈতিক বাস্তবতার এ পরিস্থিতি প্রত্যাশিত পর্যায়ে উপনীত হওয়া মাত্রই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে আমার সুদীর্ঘ উদ্বিগ্ন প্রতীক্ষার অবসান ঘটবে বলেই আমাদের পরিবার আশাবাদী।’ 

তারেক রহমানের এমন আবেগঘন স্ট্যাটাসের পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি করে। বিশেষ করে ৫ আগস্টের পর তারেক রহমানের চলে আসার যে সম্ভাবনা দেখছিলেন অনেকেই, সেটা না হওয়ার পেছনে কারণ ছিল তার বিরুদ্ধে অনেকগুলো সাজানো মামলা। সেগুলো প্রত্যাহার হওয়ার পরও তিনি যখন আসছেন আসছেন করে আসছেন না, অমন মুহূর্তে খালেদা জিয়ার অসুস্থতার ইস্যুতে তার দেশে ফেরার প্রত্যাশা আরো বেড়ে যায়। চূড়ান্তও হয়ে গিয়েছিল দিনক্ষণ। কিন্তু তার পরিবর্তে যখন তার স্ত্রী জুবাইদা রহমান দেশে আসলেন, তখনই স্পষ্ট হয়ে যায় তারেক ফিরছেন না সহসাই। এবং অপেক্ষা করছেন কোনো এক সিগন্যালের! 

তারেক রহমানের আবেগঘন স্ট্যাটাস দেয়ার পরের দিন যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. মির্জা গালিব বলেছেন, তারেক রহমান কেন দেশে আসতে পারছেন না, এইটার ডিটেইলস দেশবাসীকে জানানো উচিত। ২৯ নভেম্বর রাত ৯টার দিকে ফেসবুক পোস্টে তিনি এ কথা বলেন। তিনি এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন, ‘তারেক রহমান কেন দেশে আসতে পারতেছেন না, এইটার ডিটেইলস দেশবাসীকে জানানো উচিত। এইটা শুধু উনার ব্যক্তিগত ইস্যু না, এইটা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের সঙ্গে রিলেটেড।

দেশের সবচাইতে বড় দলের ভারপ্রাপ্ত প্রধানকে আজকে যে বা যারা তার নিজের দেশে আসতে বাধা দিচ্ছে, আগামী দিনে উনি প্রধানমন্ত্রী হলে তারা দেশের স্বার্থবিরোধী কিছু করতে উনাকে চাপ দেবেন না, তার গ্যারান্টি কী?’

মির্জা গালিবের এমন স্ট্যাটাসে লেখা বক্তব্যের সঙ্গে দেশের অগনতি মানুষের অভিমত। ৫ আগস্টের পর শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগের কোনো বাধা নেই তারেক রহমানের দেশে ফেরার ক্ষেত্রে। তাহলে নতুন এ বাঁধা কী। 

তাছাড়া ওই বাঁধাই কী শেষ পর্যন্ত নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে কোনো বাধা সৃষ্টি করতে পারে- সেটাও এখন মানুষের জল্পনা-কল্পনাতে। কারণ এখন যে মহল বাধ দিচ্ছে বলে তারেক উল্লেখ করেছেন, নির্বাচন অনুষ্ঠান হলে যদি বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে সরকার গঠন করে- সেখানে তারেক যদি প্রধানমন্ত্রী হন, তাহলে ওই সময়ের অবস্থা কী হবে? নানা জটিল জটিল চিন্তাধারায় আচ্ছন্ন মানুষ। 

তবে বিএনপি সূত্র দাবি করছে, তারেক রহমান যথাসময়ে আসছেন। এবং সেটা এ ডিসেম্বরেই। তার আগে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ। আর সেটা যথাযথ তফশিল ঘোষণা ও নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে কি না। কারণ তফশিল ঘোষণা হলেই নির্বাচন যথা সময় হয়ে যাবে এমন গ্যারান্টি নেই। পূর্বে, তফশিল পরিবর্তনের নজির রয়েছে। ফলে যত দিন যাচ্ছে মানুষ একটার সঙ্গে আরেকটার মিল দেখার চেষ্টা করছে। 

অনেকে বলার চেষ্টা করছেন, প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসও তো ভালই দেশ পারিচালনা করছেন। তিনি কন্টিনিউ করলেই বা কী সমস্যা। কারণ অন্তর্বর্তী সরকার যেহেতু সংবিধান সমুন্নত রেখে সে অনুযায়ী দেশ চালাচ্ছেন। সংবিধান অনুসারে প্রেসিডেন্ট বহাল। তাহলে এ ধারায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা তো ২০২৯ সনে। ফলে এক্ষুনি নির্বাচন না হলে সাংগঠনিক কোনে জটিলতা তো তৈরি হচ্ছে না। 

৫ আগস্টের পর অন্তর্বর্তী সরকার যেসব কাজে মনযোগ দিয়েছে তা হলো দীর্ঘ ১৬ বছরের লুটপাট, জুলাই হত্যাকান্ড, গুম খুন যারা করেছেন, অর্থ পাচার করেছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। অর্থনৈতিক অবস্থারও উন্নতি ঘটিয়েছেন। তাহলে এ সরকার যদি কন্টিনিউ করে তাহলে এমন কী ক্ষতি। প্রফেসর ইউনূস নিজেও তার প্রতি সাধারণ মানুষের যে একটা সমর্থন সে কথাও উল্লেখ করেছিলেন। 

তাছাড়া নির্বাচন আয়োজনের একটা চাপ রয়েছে বিএনপিসহ অন্যান্য দলসমূহের কাছ থেকে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে থেকে পরামর্শ রয়েছে একটা অবাধ নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের। সেখানে ক্লিয়ার না করলেও কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নামটাও চলে আসে। বলার অপেক্ষা রাখে না আওয়ামী লীগের কার্যক্রম বর্তমানে নিষিদ্ধ হলেও দেশের বড় দুটি দলের একটি তারা।

জুলাই আগস্টে পরাস্থ দলটির দোসর জাতীয় পার্টির নিষিদ্ধ হওয়ার দাবি ছিল। সেটা এখন আর নেই। আগামী নির্বাচনের জন্য সেই জাতীয় পার্টিও এখন জোটবদ্ধ হচ্ছে প্রকাশ্যে। এ নিয়ে তেমন কথাও বলছে না সর্বশেষ ওই ইস্যুতে সোচ্চার জামায়াত নেতৃত্ব দেয়া আট দল ও এনসিপি। তাহলে আওয়ামী লীগও কী নির্বাচনে অংশ নেবে বা অমন পরিস্থিতি তৈরির অপেক্ষা আছে- পেছনে এমন হিসেব নিকেষও রয়েছে জনগণের আলোচনার টেবিলে। 

ফলে নানা সমীকরণ চলছে বর্তমানে। এর সব হিসেব কী মেলবে না কিছু মেলবে কিছু মেলবে না সেটাই এখন প্রশ্ন। আর যত সময় যাবে ততই নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে জল্পনা-কল্পনাও বাড়বে। সব কিছুর সমাধান একটি সুষ্ঠু নির্বাচন। সেটা হলেই বর্তমান পরিস্থিতির অবসান ঘটবে, নতুবা এসব হিসেব নিকেশ মেলানো, একের সঙ্গে অন্যটির যোগসূত্র খুঁজে বেড়ানো চলবেই।

শেয়ার করুন