০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ১০:১০:৪৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


ঢাকা মহানগরী কী অভিভাবকহীন
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৯-২০২৩
ঢাকা মহানগরী কী অভিভাবকহীন মেয়র তাপস ও মেয়র আতিক


যানজট, জলজট এরপর মহামারি আকার ধারণ করা ডেঙ্গু নিয়ে ঢাকার মেয়রদের কি কোনো জবাবদিহিতা নেই? সরকার বিচ্ছিন্নভাবে উড়ালসড়ক, মেট্রোরেলসহ খরচে নানা মেগা প্রকল্প নিয়ে যানজট নিরসনের চেষ্টা করছে। কিন্তু মহানগরীর অব্যাহত যানজট, জলজট, শব্দজট, বায়ুদূষণজনিত কারণে বসবাসের জন্য বিশ্বের অন্যতম নিকৃষ্ট শহরের পর্যায়ে থাকা ঢাকা মনে হয় যেন অভিভাবকহীন। ঢাকার অসহিষ্ণু যানজটের সামান্যই মিটেছে মেট্রোরেল বা একাধিক উড়ালসড়কসহ এলিভেটেড এক্সপ্রেস ও রেল সড়কের এক অংশ চালু হওয়ায়। কিন্তু খাল-বিল, নর্দমাগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় দুই তিন ঘণ্টার বর্ষণেই নদীর রূপ নিচ্ছে শহরতলী। আর রাজধানীর রাস্তায় সেই পানিগুলো আর সাধারণ বৃষ্টির পানি থাকে না। ড্রেনের ও স্যুয়ারেজের লাইনের পানি মিশে একাকার এক ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে। যেসব পানি নামক ড্রেন নর্দমার পানিতে মিশ্রিত হয় না এমন কিছু থাকে না। মানুষ অসহায়। এগুলোর মধ্যেই ছুটে চলে। কোথাও কোথাও (রাজধানীর নিম্নাঞ্চল ছাড়াও উত্তরখান, দক্ষিণখান থানার অনেক এলাকায়) এগুলোর সঙ্গে বাসও করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। 

ডেঙ্গু মশার উপদ্রপে ত্রাহি মধুসূধন অবস্থা নগরবাসীর। মহানগরীর উন্নয়ন নিয়ে অনেক চটকদার কথা সুমধুর কণ্ঠে বলা হয়ে থাকে। প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় অনেক বিজ্ঞ মানুষ অনেক কথা বলেন। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোসহ দুই নগর পিতা, জলজট, ডেঙ্গু মশা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে স্বপ্ন দেখান নগরবাসীকে। কিন্তু বাস্তবে কী দেখা যাচ্ছে।

দেশের পরিবেশবিদরা বেশ সোচ্চার। সুন্দরবন রক্ষা, কয়লা খনন বিরোধী বিষয়সমূহে যত সোচ্চার ঢাকার মৌলিক সমস্যাগুলো নিয়ে অজ্ঞাত কারণে খুব একটা ভাবিত নন তারা। রাজধানীর বিরাজমান প্রবলেম নিয়ে তাদের গলার স্বর উচ্চ কেন বের হয় না। ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ যেই না ঢাকায় ঘণ্টা কয়েক মুষলধারায় বৃষ্টি হলো, শহরের এক বিশাল অংশ জলমগ্ন হয়ে নগরবাসীর দুঃস্বপ্নে পরিণত হলো। উত্তরের মেয়র আতিক সাহেব এবং দক্ষিণের মেয়র ব্যারিস্টার তাপস কি জবাব দেবেন? তাদের কোনো প্রতিক্রিয়া কেউ শুনেছেন কি না জানা নেই।

ঢাকাসহ সারা দেশে ডেঙ্গু প্রায় মহামারির রূপ নিয়েছে। কেন সিটি কাউন্সিল দুটির মশক নিধনব্যবস্থা ব্যর্থ, তার জবাব আছে কিছু? অনেক সাধের মেট্রোরেলের এবং এলিভেটেড এক্সপ্রেস হাইওয়ের অংশবিশেষ চালু কতটুকু প্রভাব ফেলেছে ঢাকার যানজট নিরসনে? যতটুকুই পরুক সেটা যোগাযোগ বা সরকারের অন্য মন্ত্রণালয়ের বিষয়। কিন্তু দুই মেয়রের সাফল্য কতখানি, মানুষ এখন সে হিসাব কষতে শুরু করেছে। পদ্মা বহুমুখী সেতু চালু হওয়ার পর দক্ষিণাঞ্চল থেকে অতিদ্রুত অনেক যানবাহন ঢাকায় আসছে। কিন্তু ঢাকায় ঢুকেই হানিফ ফ্লাইওভারে বিশাল যানজটে আটকা পড়ে ভ্রমণান্দনের অনেকটাই উবে যাচ্ছে। একই অভিজ্ঞতা হচ্ছে উত্তরবঙ্গ থেকে চারলেনের মহাসড়কে দ্রুত ঢাকার উপকণ্ঠে পৌঁছে যাত্রী সাধারণের। কেন ঢাকায় নির্মিত এবং নির্মাণাধীন মেগা প্রকল্পগুলোর সঙ্গে সমন্বয় নেই ঢাকা অভিমুখী মেগা প্রকল্পসমূহের? বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো যে যার মতো কাজ করছে। কারো কোনো দায়দায়িত্ব নির্ধারণ করা যাচ্ছে না। বিশেষত দুই মেয়র অফিসের মহানগরে কর্মরত সংস্থাগুলোর ওপর ন্যূনতম প্রভাব নেই। ফলশ্রুতিতে জনগণের ট্যাক্সের টাকায় বিপুল অর্থ ব্যয়ে নানা ধরনের নির্মাণ কাজ হলেও জনদুর্ভোগ মিটছে না।   

শোনা গিয়েছে, ঢাকার চার পাশের মৃতপ্রায় নদীগুলো বাঁচানোর নানা উদ্যোগের কথা, ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে হারিয়ে যাওয়া খালগুলো পুনরুদ্ধার এবং এখনো চালু খালগুলো সংস্কারের কথা। বাস্তবে অর্জন শূন্যের কোঠায়। হাতিরঝিলের মতো স্থাপনাটিও নগরের পানি নিষ্কাশনে কোনো ভূমিকা রাখছে না।  মেয়ররা বলেন, এবারের বর্ষা মৌসুমের আগেই ঢাকার জলজট ৭৫%-৮০% মিটে যাবে। বাস্তবে ২১ সেপ্টেম্বর রাতে দেখা গেল কোনো কাজই হয়নি। কিছুই করেননি তারা। আজিমপুর, নীলক্ষেত, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নদীর সৃষ্টি হলো। নগরপিতাদের কি কোনো লজ্জা হলো? রাজধানীর উত্তরার উত্তরখান থানা ও দক্ষিণখান থানার পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে ভেঙে পড়ার উপক্রম। লাখ লাখ লোকের বাস উত্তরা, এয়ারপোর্টসংলগ্ন ওই এলাকা। কিন্তু মানুষ অসহায়। মেয়র ও ওই এলাকার জনপ্রতিনিধি বিন্দু পরিমাণ খবরও নেন না। মানুষ প্রচ- রকম ক্ষুব্ধ। অনেকেই উদাহরণ দেন, উত্তরখান দক্ষিণখানের মতো এলাকা বাংলাদেশের কোথাও আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। যেখানে গত ১৫ বছরে কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি, ওই এলাকার মানুষ বঞ্চিত। ২০১৮ সনে গেজেট প্রকাশিত হয় সিটি করপোরেশনে যুক্ত হওয়ার। কিন্তু লাইট বা ময়লা ফেলার মতো একটা স্থানও নির্ধারিত করেনি সিটি করপোরেশন। রাস্তাগুলো যতটুকু ছিল তা-ও শীত, বর্ষা সব মৌসুমে নর্দমার পানিতে ডুবে থাকে অনেক অঞ্চল। অনেকেই বাসা তালা মেরে চলে গেছেন অন্যত্র। প্রতিনিয়ত মানুষ এলাকা ত্যাগ করার প্লান কষছেন। এ এলাকা নিয়ে বহু রিপোর্ট টিভি ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশিত হলেও মেয়র ও জনপ্রতিনিধির কর্ণগোচর হচ্ছে না। মানুষ এমনিভাবে অতিষ্ঠ। সামনেই জাতীয় নির্বাচন। ক্ষমতাসীন সরকারের প্রতিনিধিরা কীভাবে ভোট ভিক্ষা করতে যাবেন এ অঞ্চলে। 

অক্টোবর মাসে সরকার ঢাকাসহ দেশজুড়ে বেশকিছু মেগা প্রকল্প উদ্বোধন করবে। এগুলোর কয়েকটি সম্পূর্ণ হবে, কয়েকটি আংশিক সম্পূর্ণ করে উদ্বোধন করা হবে। দেখতে হবে এগুলো ঢাকা নগরীর যানজট, জলজট এবং পরিবেশদূষণে কতটা ভূমিকা রাখে? যদি ঢাকা এবং অন্যান্য নগরীর নাগরিক সুবিধাদি উন্নয়নে পশ্চিমের দেশগুলোর মতো মেট্রোপলিটন গভর্ন্যান্স ব্যবস্থা চালু না করা হয়, তাহলে ঢাকার নাগরিক সুবিধা উন্নয়ন ক্রমশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। 

প্রয়োজন অবিলম্বে বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ, বালু নদী বাঁচানোর আন্দোলন, খালগুলো সত্যিকার আন্দোলনের মাধ্যমে পুনরুদ্ধার, নাগরিকদের সম্পৃক্ত করে মশক নিধন, ব্যাপক বৃক্ষ রোপণ করে নগরকে সবুজায়ন। আর এই কাজগুলো সমন্বয় আর নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ত দেওয়া উচিত দুই মেয়র অফিসকে। প্রয়োজনে বন্ধু কোনো দেশের কোনো শহরের সঙ্গে টুইন সিটি ব্যবস্থাপনার কথা ভাবা যেতে পারে।

শেয়ার করুন