০৩ অক্টোবর ২০২৫, শুক্রবার, ০৭:২৮:২২ পূর্বাহ্ন


অফশোর ব্যাংকিং : লোভনীয় অফার দিয়ে ডলার হাতিয়ে নেওয়ার ফাঁদ
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-০৫-২০২৪
অফশোর ব্যাংকিং : লোভনীয় অফার দিয়ে ডলার হাতিয়ে নেওয়ার ফাঁদ অনুষ্ঠানে অতিথিবৃন্দ


বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম সূচক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যখন তলানিতে তখন দেশের সরকারি-বেসরকারি প্রায় ৩০টি ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী বা ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) যুক্তরাষ্ট্র সফরে এসেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমানও তাদের সঙ্গে রয়েছেন। মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের আমন্ত্রণে তারা আমেরিকায় আসেন। বিচার বিভাগের সম্মেলন শেষে তাদের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান, অগ্রণী বাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মুরশেদুল কবীর, ডাচ বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মোহাম্মদ শিরিন, ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন এবং সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিনসহ অন্যরা নিউইয়র্কে আসেন। গত ২৪ মে সন্ধ্যায় লার্গোয়াডিয়া মেরিয়ট হোটেলের বল রুমে প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিয়ে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন। অনুষ্ঠানে ঢাকা থেকে আসা পাঁচ অতিথি ছাড়াও অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ওয়াশিংটন বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান। উপস্থিত ছিলেন নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ নাজমুল হুদ। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয় ফটোসেশন নির্ভর প্রবাসের কিছু ব্যবসায়ী, সুবিধাপ্রাপ্ত কয়েকজন সম্পাদক এবং মানি ট্রান্সফার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা।

একটি সূত্র জানায়, ডলারের প্রবাহ বাড়াতে প্রবাসীদের মধ্যে অফশোর ব্যাংকিং ফিক্সড ডিপোজিট সংক্রান্ত প্রচারের জন্যই তাদের এই আয়োজন। প্রবাসীদের ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলার পাঠাতে উৎসাহিত করা হয়। তাদের মূল টার্গেট প্রবাসী বাংলাদেশিদের অধিক মুনাফার লোভ দেখিয়ে ডলার সংগ্রহ করা। যা বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই বলেছেন, আফশোর ব্যাংকিংয়ের কথা বলে এবং আকর্ষণীয় লোভ দেখিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশির ফাঁদে ফেলার কৌশল। তাদের প্রধান টার্গেট হচ্ছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছ থেকে ডলার হাতিয়ে নেওয়া।

এদিকে ডলার সংকটের কারণে রিজার্ভের পতন ঠেকাতে পারছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে উদ্বেগ এবং শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বর্তমানে রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩৭৭ কোটি ডলারে (২৩.৭৭ বিলিয়ন)। আর অন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী রিজার্ভ এখন ১ হাজার ৮৩২ কোটি ডলার (১৮.৩২ বিলিয়ন)। তবে প্রকৃত বা ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ ১৩ বিলিয়ন ডলারের কিছুটা কম, যাতে পরিস্থিতি আরো সংকটময় হয়ে ওঠার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ফলে প্রকৃত রিজার্ভের অর্থ দিয়ে তিন মাসেরও আমদানি খরচ মেটানো যাবে না।

অনুষ্ঠানে প্রতিটি এমডি বাংলাদেশে বিনিয়োগের কথা বলেছেন। 

বাংলাদেশে যে ব্যাংকগুলোর করুণ অবস্থা তা কোনোভাবেই উল্লেখ করা হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিতর্কিত ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান এক্ষেত্রে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন। তিনি রিজার্ভের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ হ্যাকের মতো ঘটনা ঘটেছে। আবার চাতুরতার সঙ্গে প্রবাসীদের বোকা ভেবে বলছেন, আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের কোনো ব্যাংক দেউলিয়া হয়নি। আমেরিকার অনেক ব্যাংক দেউলিয়া হয়েছে। কার সঙ্গে কী তুলনা করছেন? তিনি নিশ্চয় মনে করছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা মূর্খের স্বর্গে বাস করেন। আমেরিকায় কোনো ব্যাংক দেউলিয়া হলে সেই ব্যাংক তার গ্রাহকদের অর্থ ফেরত দেয়। কিন্তু বাংলাদেশে সেই নজির নেই। যে দেশের স্কুলের ভর্তি ফি ব্যাংকে জমা দিতে বলা হয় সেই দেশের ব্যাংকের অবস্থা কী তা সহজেই অনুমেয়। বাংলাদেশের সাতটি ব্যাংক নিয়ে সরকার বেকায়দায় রয়েছে। এই সব কর্মকর্তাদের সহযোগিতায়ই ওইসব ব্যাংকের অর্থ হরিলুট করা হয়েছে। সেই অর্থ বিদেশেও পাচার করা হয়েছে। বাংলাদেশে একজন গ্রাহক তার গচ্ছিত অর্থ তুলতে গেলে তাকে সেই অর্থ দেওয়া হচ্ছে না। কারণ ব্যাংকে অর্থ নেই। এসব অসৎ ব্যক্তির কারণেই ব্যাংকগুলো চরম অর্থ সংকটে ভুগছে। প্রবাসে এসে কোট-টাই পরে ভদ্র মানুষ সেজে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পকেট কাটার চেষ্টা করছেন। আবারও অবাক করা বিষয় হচ্ছে, তারা উল্লেখ করেছেন এখানকার ব্যাংকে অর্থ রেখে লাভ কী? কারণ আপনারা তো খুব একটা ইন্টারেস্ট পান না। আমাদের ব্যাংকগুলোতে অ্যাকাউন্ট করে সেসব অর্থ রাখুন, আপনাদের ৮.৪ শতাংশ হারে ইন্টারেস্ট দেওয়া হবে। অনলাইনের অ্যাকাউন্ট করা এবং অ্যাকাউন্টের অবস্থা দেখার কথাও তারা বলেছেন। অনেকেই বলেছেন, এগুলো হচ্ছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ফাঁদে পালানো। এই ফাঁদে ফেলে তারা প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছ থেকে ডলার নিতে চায়, তাদের পকেট কাটতে চায়। আর এই জন্যই কোট কোটি ডলার খরচ করে তারা এই অনুষ্ঠান করেছে। তাদের এই ফাঁদে পা না দেওয়ার জন্য ভুক্তভোগীরা আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলছেন, ডিমের আসায় হাঁস হারানোর ফাঁদে পা দেবেন না। এদের লোভনীয় অফারে বিভ্রান্ত হয়ে বিনিয়োগ করা যাবে না। তাদের প্রশ্ন হঠাৎ করে এতবছর পর এমডিদের কাছে প্রবাসীদের গুরুত্ব বেড়ে গেল কেন? সোজা উত্তর দেশের অর্থনীতি তলানিতে তাই। সুতরাং সাধু সাবধান। ভাবিয়া করিও কাজ করিয়া ভাবিও না।

শেয়ার করুন