১৮ জুন ২০১২, মঙ্গলবার, ০৭:৫৯:২৭ অপরাহ্ন


হঠাৎ করে দুর্নীতিবিরোধী তৎপরতার নেপথ্যে কি?
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৫-০৬-২০২৪
হঠাৎ করে দুর্নীতিবিরোধী তৎপরতার নেপথ্যে কি? বেনজীর আহমেদ ও জেনারেল আজিজ


অর্থনীতির নাজুক অবস্থা। তীব্রতর জ্বালানি-বিদ্যুৎ সংকট ঘনীভূত হতে থাকার সময়ে হঠাৎ করে দুর্নীতি দমন সংস্থার নিদ্রা ভঙ্গ হওয়ার নেপথ্যের ঘটনা নিয়ে নানা কানাঘুষা চলছে। সরকারের পূর্ববর্তী টার্মসসমূহে দাপটের সঙ্গে চাকরি করা প্রতাপশালী প্রাক্তন সেনাবহিনী প্রধান এবং পুলিশপ্রধানের (আইজিপি) বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ নিয়ে তদন্তের তোড়জোড় দেখে অনুমান করতে অসুবিধা হয় সরকারের মধ্যে থাকা এই দুই শক্তিধর ব্যক্তির পৃষ্ঠপোষকরা হয়তো কোনো কারণে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। তদন্তের শুরুতেই পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদের ব্যাংক হিসাবসমূহ শূন্য হয়ে যাওয়া, পরিবারসহ বিদেশে চলে যাওয়া থেকে আশঙ্কা করা হচ্ছে, শেষ পর্যন্ত দুই প্রাক্তন প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে সূচিত তদন্তের কার্যক্রম ক্যাসিনোকাণ্ডের হোতাদের মতো এক পর্যায়ে দীর্ঘসূত্রতার আড়ালে বিলীন হয়ে যাবে নাতো?

প্রাক্তন পুলিশপ্রধানের দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, বিনোদন জগতের বিতর্কিত নারীদের নিয়ে নানা মুখরোচক সংবাদ বাংলাদেশে দীর্ঘদিন জুড়েই আলোচনায় ছিল। বলতে দ্বিধা নেই উঁচু মহলের আশীর্বাদ থাকায় দোর্দণ্ড প্রতাপশালী এই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে টু শব্দটি করার সাহস ছিল না কারোই। এখন কেন কোন অদৃশ্য শক্তির ইশারায় তাকে নিয়ে টানাহিঁচড়া শুরু হয়েছে, এর নেপথ্যেই বা কী, বোঝা যাচ্ছে না। একইভাবে প্রাক্তন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজকে নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে বেশ আগেই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জেনারেল আজিজকে সেই দেশে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় তার বিষয়েও তদন্ত করার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। মন্ত্রীরা বক্তব্য দিচ্ছেন। প্রাক্তন সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ দোষী হলে তার বিচার সেনাবাহিনী করবে বলেও বলেছেন এক মন্ত্রী।

এটা ঠিক, দুইজন প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চলমান থাকায় অনেক কথিত দুর্নীতিবাজদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সরকার যদি কথিত অর্থ পাচারকারী, দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আপসহীনভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ না করে, তাহলে মনে হতে পাওে বেনজীর আহমেদ এবং জেনারেল আজিজের দুর্নীতি বিষয়ে তদন্তের তোড়জোড় ক্ষয়িষ্ণু ভাবমূর্তি উন্নয়নের চমক মাত্র।

প্রশ্ন জাগছে, বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা জমা থাকা বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ জব্দ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগেই কীভাবে তাকে ব্যাংক হিসাব শূন্য করার সুযোগ দেওয়া হলো? কীভাবে বিদেশ গমন নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ার আগে পরিবারসহ তিনি পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেলেন। একই কা- হয়েছিল পি কে হালদারের বিরুদ্ধে। পালিয়ে যাওয়ার ১৩ মিনিট পর ইমিগ্রেশনে চিঠি পৌঁছায়। গুরুত্বপূর্ণ খবর চিঠি মারফত পৌঁছাতে হয় ডিজিটাল/স্মার্ট শাসনামলে। কান পাতলেই শোনা যাবে জনগণ বলে বেড়াচ্ছেন যে, বাংলাদেশের কোনো প্রভাবশালী দুর্নীতিবাজ ক্ষমতাশালী মহলের আশীর্বাদ ছাড়া অবাধে দুর্নীতি করতে পারে না। আবার ক্ষমতাশালীরাও তাদের স্বার্থসিদ্ধি হয়ে গেলে মুখ ফিরিয়ে নেয়। স্মরণে আছে একসময় ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির সময়ে অনেক প্রভাবশালীর গ্রেফতার করা হয়েছিল। আবার মুক্তিও পান তারা এবং কোনো সময়ে সেটাও মানুষ নোটে রেখেছে। 

পরবর্তীতে করোনা মহামারির সময় স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীবাজদের আইনের আওতায় আনা হয়েছিল। এসব অনেক ঘটনায় এখন স্মৃতি-বিস্মৃতির আড়ালে অবরুদ্ধ হয়ে আছে। সাগর-রুনি হত্যাকা-ের মতো অনেক সাড়া জাগানো হত্যাকা-ের জট খোলেনি।

এমতাবস্থায় একসময় হয়তো প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া আইনি ব্যবস্থাও হয়তো হিমাগারে চলে যাবে। কিন্তু দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের বিরুদ্ধে আইনিব্যবস্থা গ্রহণের দীর্ঘসূত্রতা সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে না। অনেকেই ভেবে নেবে চমক জাগানো ঘটনাগুলো সরকারের ক্ষয়িষ্ণু ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার চমক।

শেয়ার করুন