মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডোনাল্ড লু’র ঢাকা আগমন নিয়ে এবার চিন্তায় বিএনপি। কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ দলটির হাই কমান্ডের। ডোনাল্ড লু’র আগমনে দলটির হাই কমান্ডের সর্তক দৃষ্টি। কেন, কি কারণে লু আসছেন তা নিয়ে বিএনপিতে চলছে নানান ধরনের হিসাব-নিকাশ। এসব খবর জানা গেছে দলটির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে। চলতি মাসের মাঝামাঝিতে ঢাকায় যাচ্ছেন মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ডোনাল্ড লু তথা যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রতিনিধি দলের এটাই হতে যাচ্ছে প্রথম বাংলাদেশ সফর।
এদিকে জানা গেছে এবারে লু’র সাথে থাকছেন যুক্তরাষ্ট্রের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে তার সাথে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব ও অর্থ দপ্তরের আন্তর্জাতিক অর্থায়ন বিষয়ক সহকারী আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যান এবং জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সিনিয়র ডিরেক্টর লিন্ডসে ফোর্ড।
কি কারণে লু’ ঢাকায়
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয় যে, ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক জোরদার করার পথ ও পন্থা নিয়ে জরুরি আলোচনায় ঢাকা যাচ্ছেন মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডোনাল্ড লু। তিনি এসে অবশ্যই প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এরপর তার সাক্ষাৎ এর তালিকায় থাকতে পারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এর চেয়ে বেশি জানা যায়নি।
কেন টেনশনে বিএনপি
মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডোনাল্ড লু’র ঢাকা আগমনে টেনশনে আছে বিএনপি’র হাই কমান্ড। কিন্তু কেন, কি কারণে তাদের এই টেনশন সে ব্যাপারে বেশ কয়েকজন বিএনপি’র নেতার সাথে কথা হয় দেশ প্রতিনিধির। তাদের মতে, ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক জোরদার করার পথ ও পন্থা নিয়ে লু’র জরুরি আলোচনার খববের পেছনেও খবর আছে। কারণ ছাত্র আন্দোনের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়ে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমান ভারতে অবস্থান করছেন। এই প্রেক্ষাপটে বহুলভাবে আলোচিত হচ্ছে যে শেখ হাসিনা’র ভারতের অবস্থান করা নিয়ে দেশটি এখন একটি কঠিন অবস্থার সম্মুখীন হয়েছে। দিল্লি এখন নতুন বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর চাপে পড়েছে বলে গণমাধ্যমে খবরে জানা গেছে। অন্যদিকে বিএনপি’র মনে গভীর সন্দেহ থেকে দেশে একটি দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচন দাবি করেছে। আর আরো উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, বিএনপি যখন একটি দ্রুত নির্বাচন দাবি করছে তখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আরো দীর্ঘ সময় দিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিরোধীতাকারী দল জামায়াতে ইসলামী রাজি বলে জোর গলায় জানান দিচ্ছে। আর এমন পরিস্থিতিতে বিএনপি বিপদের আঁচ করেই খোদ দলটির মহাসচিব বলেছেন দলটির নেতা কর্মীদের সর্তক থাকতে। সম্প্রতি এমনই একটি বার্তায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এখনও অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। দেশ-বিদেশে ষড়যন্ত্রের অভাব নেই। ষড়যন্ত্রকারীরা সুযোগ পেলে স্বাধীনতাকামী মানুষের ওপর আঘাত করবে। তাই ঐক্যকে আরও সুদৃঢ় করতে হবে। যদিও এক্ষেত্রে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কোনো দলের নাম বলেননি। তবে এতসব বাস্তবতার মধ্যেই মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডোনাল্ড লু’র ঢাকা আগমনকে বিএনপি’র হাই কমান্ড একটু অন্যভাবে দেখছেন। কেননা বাজারে ভেসে বেরাচ্ছে যে পশ্চিমাদের মধ্যে বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জামায়াতের ব্যাপারে কিছুটা বেশি দুর্বল। আরেকটি সূত্র জানায়, বাংলাদেশে আরেকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচন যে অত্যন্ত সুষ্ঠু এবং এর পাশাপাশি অংশগ্রহণমূলক হতে হবে সেব্যাপারে বিএনপি’র হাই কমান্ড নিশ্চিত এবং সর্তকও। কেননা কোনো দলেরই পক্ষে যেন তেনভাবে সামনের দিনে ওই নির্বাচনে বিএনপি বৈতরনী পার করতে পারবে না। এর পাশাপাশি বিএনপি’কে নিয়ে যে সব খবর প্রকাশিত হচ্ছে বিশেষ করে দখল চাদাবাজিতে দলটির নেতাকর্মীরা যেভাবে মরিয়া হয়ে উঠেছে সেক্ষেত্রেও লু’র ঢাকা আগমন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা বিএনপি’ও রাজনৈতিক প্রশাসনিক এসমনকি বৈশ্বিক ক্ষেত্রে পতিত আওয়ামী লীগের মতো আচরণ অব্যাহত রাখে কি-না তা অনেক ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠে আসতে পারে। তাছাড়া বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে আছেন। তার বাংলাদেশে আসা ও নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়টি এখনো অনেকের কাছে পরিস্কার না। কিন্তু বিএনপি’র কর্মী সমর্থকরা মাঠে যেভাবে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তা নিয়েই হাই কমান্ড বিব্রত। আবার দলের কারো কারো মাথায় রয়েছে ২ বছর আগে ব্যাপক জনবিক্ষোভের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া রাজাপাশে পরিবার ফের শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে ফিরে আসা। সামনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দেশটির বৃহত্তম রাজনৈতিক দল শ্রীলঙ্কা পদুজানা পেরুমনার (এসএলপিপি) প্রার্থী হচ্ছেন নামাল রাজাপাকশে। ২১ সেপ্টেম্বর শ্রীলঙ্কার আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন দেশ ও গোটা অঞ্চলে ব্যাপক কৌতূহল সৃষ্টি করেছে। ফলে এমন বিষয়গুলির মাঝে লু’র সফর বিএনপি’রকে কিছুটা উৎকন্ঠায় ফেলেছে বলেই কেউ কেউ মনে করেন। কেননা এই লু’কে নিয়ে অনেক আলোচনা আছে উপমহাদেশে। শ্রীলঙ্কার আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে পরে লু’র যাতায়াতও চোখে পড়ার মতো। আরো পেছনে ঘাটাঘাটি করলে দেখা যায় যে, লু’কে নিয়ে জোরেশোরে আলোচনার শুরু পাকিস্তানে ইমরান খানের পতনের সময়। ইমরান খান দাবি করেন, ২০২২ সালে তার সরকার পতনের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের হাত আছে। তবে, ইমরান খানকে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত থাকার অভিযোগ পরে অস্বীকার করেছেন ডোনাল্ড লু। গত ৩০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের হয়ে পররাষ্ট্র কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন ডোনাল্ড লু। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর (অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি) দায়িত্ব পান লু। আর এখন শুধু সেই লু ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক জোরদারের পথ ও পন্থা নিয়ে জরুরি আলোচনায় এসেছে তা ভাবার অবকাশ নেই বিএনপি’র হাই কমান্ডের।