বিতর্ক জোড়ালো হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ। কতদিন থাকবে এ সরকার। কারো কারো মধ্যে চলছে উৎকণ্ঠা। বলছে না কিছু অন্তর্বর্তী সরকারও। এদের মেয়াদ নিয়ে যারা পক্ষ বিপক্ষে, তারা যে যার অবস্থান থেকে যুক্তি তর্ক উপাস্থন করছেন প্রতিনিয়ত। এ ব্যাপারে কোথাও ক্লিয়ার ম্যাসেজ নেই। রক্তগঙ্গা পার হয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার যে দীর্ঘ সময় অবস্থান করবে তার কিছু কিছু ইঙ্গিত তাদের কার্যাদি যেমন সংস্কারসহ অন্যান্য ও নানা প্লাটফর্ম থেকে ওঠা আলোচনায় ইঙ্গিত মিলছে। যুক্তরাষ্ট্র, এডিবি যেভাবে এ সরকার প্রধান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সহযোগিতার আশ্বাস দিচ্ছেন, খোলামেলা আলোচনা করছেন, তাতে ইউনূসের নেতৃত্ব দেয়া অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ দীর্ঘসময় হবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে। সেটা যে কত বছর, এখনও ঠাহর করা না গেলেও বিএনপিসহ অন্যান্য দল যারা দীর্ঘদিন শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে গেছেন, তাদের উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় অনুমান করা যাচ্ছে। এ সরকারের বয়স সবে এক মাস। এর মধ্যে যেসব কথা বার্তা বিএনপিসহ এ ঘরনার অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদগণ দেখছেন, তা ওই দীর্ঘায়িত হওয়ার আলামতই!
অন্তর্বর্তী সরকারের সূচনা থেকেই দাবি জানিয়ে আসছে রাজনৈতিক দল বিএনপি ও সমমনারা। একই সঙ্গে সদ্য বিদায়ী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ও তার এক বক্তব্যে বলেছিলেন, দেশ পরিচালনা করবে আওয়ামী লীগ বা বিএনপি। সাধারণত অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা। এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করেছে ছাত্র জনতা। ঢেলে দিয়েছে সহস্রাধিক মানুষের বুকের তাজা রক্ত। ছাত্র জনতার বিপ্লবে এ সরকার। যেভাবে সাধারণত সরকারের পরিবর্তন ও অন্তর্বর্তী সরকার, এভাবে সংবিধানে স্পষ্টভাবে নেই। কিন্তু গণ অভ্যুত্থানের পরের এ সরকার ও তাদের কাজকর্ম সংবিধানের চেয়েও বড় কিছু। কারণ যেখানে জনগণ জড়িত, জনগণ রক্ত দিয়ে এক সরকারকে হটিয়েছে সেখানে সংবিধান কিছু সময়ের জন্য গৌণ! জনগণ ঐক্যমত হয়ে দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে যা যা করার করেছে। তারা অন্তর্বর্তী এ সরকারকে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছে।
ফলে জনগণের দাবি সংস্কার বা অন্যসব কাজ, যা সম্পাদিত করে সুন্দর একটা ভিতের উপর রাষ্ট্রীয় কাঠামো দাঁড় করানোর যে দায়ভার- সেটা করতে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে বাধ্যবাদকতা সেটাও আপাতত অস্পষ্টই থাকছে। আরেকটা বড় সমস্যা, যেটা মানসিক। সাধারণ মানুষ এখন আর রাজনৈতিক দলকে বিশ্বাস করতেও চান না। তাই তারা চান নির্দলীয় নিরপেক্ষ এমন সরকার, যারা হবেন নির্লোভ। যে প্রতিচ্ছবি দেখতে পাচ্ছেন প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে থাকা সরকারের মধ্যেই। ফলে এদেরই সাপোর্ট দিচ্ছেন মনে প্রাণে। এ বিষয়টা বুঝে গেছে অন্তর্বর্তী সরকার। তাইতো নির্ভয়ে পথচলা শুরু তাদের। তাছাড়া অন্তর্বর্তী সরকার, কতদিন থাকবে সেটা নিয়ে বিভক্তি রাজনৈতিক দলসমূহ। অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ কতদিন হবে এ নিয়ে যৌক্তিক, অযৌক্তিক অনেক ব্যাখ্যা থাকলেও এসব হালে পানি পাচ্ছে না এ সময়ে।
সাধারণ মানুষের অভিপ্রায়
দীর্ঘ ১৬ বছর টানা ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগ সরকার যে তিনবার নির্বাচন করেছে, সেখানে গণতন্ত্রের কবর রচিত হয়েছে। ভোটের প্রয়োজন হয়নি। ২০১৪, ২০১৮, ২০২৪। এ তিনবারের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। ক্ষমতাসীনরা যা চেয়েছে সেটাই হয়েছে। বিরোধী দলসমূহ প্রতিবাদ করতে গিয়ে গুম, খুন, মামলা জেল, জরিমানা এমন কিছু আর বাকি ছিল না, সেগুলোতে এ দীর্ঘ দেড় যুগে ভুগতে না হয়েছে। কিন্তু ক্ষমতার মসনদে সামান্য আচরটুকু লাগতে দেয়নি হাসিনা ও তার সজাানো প্রশাসন। প্রশাসন কাজে লাগিয়ে যে ক্ষমতার দম্ভ দেখিয়েছে বিগত সরকার, এবং সীমাহীন অর্থপাচার লুটপাট, দুর্নীতি এতে রাজনৈতিক দলের উপর চরম বিরক্তিভাব চলে এসেছে। মানুষ এখন আর কোনো রাজনৈতিক দলকে বিশ্বাস করতেই চাইছে না।
বিএনপি, আওয়ামী লীগ
সাধারণ মানুষ আওয়ামী লীগের কৃত কর্মে অতিষ্ঠ হয়ে বিএনপির উপর আস্থা রাখবে সে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে। তাছাড়া অতীতে ওয়ান ইলেভেনের আগে বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ যেভাবে প্রপাগান্ডা চালিয়েছে, সেটাও মানুষের মনে দাগ কেটে রয়েছে। বিএনপির কাউন্টার সেভাবে হয়নি। তাছাড়া বিএনপির নেতৃত্বেও আওয়ামী প্রেমী যারা ছিলেন, তারা এ ক্ষেত্রে ছিলেন নিশ্চুপ। এখানে বিপাকে পড়েছে বিএনপি। দীর্ঘ দেড় যুগ দলটির বিশেষ করে তৃণমূলের লাখো নেতাকর্মী জুলুম নির্যাতন সহ্য করে এখনও তারা ভীলেনর ভূমিকায়।
মানুষ আওয়ামী লীগের দৃষ্টিতে বিএনপিকেও দেখতে শুরু করেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএনপির বিরুদ্ধে পরিকল্পিত অপপ্রচার- সেটাও কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিএনপি কিছু করেনি তাও না। কিছু অপকর্ম করেছেও এমন সময়ে। সেটাকেও বড় করে দেখানোর ফলে সব পজেটিভ মনভাব জমা পড়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপর। বাংলাদেশে সরকার পরিচালনার ক্ষমতা এ মুহূর্তে বিএনপি নতুবা আওয়ামী লীগের। এর বাইরে এমন কোনো দল নেই বা তাদের জনসমার্থন বা বিশ্বস্ত লোকবল- যারা ক্ষমতা পরিচালনা করতে পারবে। ফলে আওয়ামী লীগের স্থানে নির্বাচন বলে বিএনপি- এটাই দিবালোকের মত সত্য। এমন প্রেক্ষাপটে মাঠের খবর-
আপাতত মানুষ এ রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছেন!
তাহলে কী হবে?
দুই শীর্ষ রাজনৈতিক দলের বাইরে অন্য কেউ নেই এটাও সত্য নয়। বিশেষ করে ছাত্র জনতা, যারা এ গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছেন তারা যে লক্ষ্য উদ্দেশ্যের কথা বলছেন তাতে সবে প্রথম ধাপ পার হয়েছে মাত্র। এরপর সংস্কার আনবে তারা সর্বক্ষেত্রে এমন ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। সাধারণ মানুষ এমন সংস্কারের পক্ষে। ছাত্র সমাজ যে অন্তর্বর্তী সরকারের সূচনা করে দিয়েছে এর মাধ্যমে বিশাল একটা সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করেই কেবল নির্বাচনের মাধ্যমে দেশ পরিচালিত হবে এমনটা জানান দিচ্ছেন। এরমধ্যে এসব বৈষম্য বিরোধী ছাত্র সমাজ জনতা নিয়ে একটা রাজনৈতিক দল গঠনেরও অভিলাষ শোনা যাচ্ছে। কোথাও কোথাও এর কার্যক্রমও আড়ালে আবডালে শুরু হয়েছে বলে আলোচিত হচ্ছে।
রাজনৈতিক মহলে সমস্যার সূচনা এখানেই। এতে করে রাজনৈতিক দলসমূহের অনেকেই সুদূর প্রসারী ক্ষমতা আকড়ে থাকার একটা অভিলাষের বিষয় আঁচ করছেন এসব ছাত্র জনতা। এমনটা পূর্বে হয়নি তাও নয়। রাজনৈতিক দলের অনেকেই মনে করছেন যে সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে এটা করতে দীর্ঘ সময় নিয়ে মূলত এ অন্তর্বর্তী নতুন কোনো দল নিয়ে মুভমেন্ট করলে বিস্মিত হওয়ার কিছু থাকবে না।
তাইতো এক্ষুণি অন্তর্বর্তী সরকারের রোডম্যাপ চাইছেন তারা।
সংস্কারে হাত দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকার
উপদেষ্টা পরিষদের প্রধান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার সরকারের এক মাস পূর্তিতে যে ভাষণ দিয়েছেন সেখানে অন্তত ৬টি খাতে সংস্কারের জন্য কমিটি প্রধানের নাম ঘোষনা করেছেন।
ভাষণে ড. ইউনূস জানান, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ড. বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে কাজ করবেন সফর রাজ হোসেন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ড. ইফতেখারুজ্জামান, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে ড. শাহদীন মালিক দায়িত্ব পালন করবেন।
ফলে এসব বিষয়গুলো সংস্কার করতে তিন চার বা ৮-১০ মাসের কাজ নয়। দীর্ঘ সময়েরই প্রয়োজন। তবে চাইলে দ্রুতও করা যায়, যদি আন্তরিকতা থাকে। এখন প্রশ্ন- উপদেষ্টা পরিষদ কতদিনে এটা সংস্কার করবেন সেটাই মুখ্য।
তবে রাজনৈতিক কেউ কেউ এসব সংস্কার রাজনৈতিক দলের পক্ষে করা সম্ভব এবং দ্রুত নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের মাধ্যমে সূচারুভাবে এসকল কার্যাদি সম্পন্ন করার পক্ষে।
নির্বাচন প্রসঙ্গে সরব যুক্তরাষ্ট্র, এখন কী উদাসীন
পতিত হাসিনা সরকারের কট্টর সমার্থক ভারত এটা এখন আরো স্পষ্ট। কিন্তু বিগত সময়ে বহুবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের হাসিনা ও তার সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাত ঘটেছে বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহনমূলক, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে। যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছিল, বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যাশা নিজেদের নেতা তারা নিজে যাতে বেছে নিতে পারেন। কিন্তু হাসিনা সরকার যুক্তরাষ্ট্রের এসব কথা উপেক্ষা করে গেছে। বাংলাদেশে সুষ্ঠু গণাতিন্ত্রক ধারা প্রতিষ্ঠার জন্য মানবাধিকার লংঘন, নির্বাচনে সহায়তাকারীদের যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ ভিসা নিষেধাজ্ঞায় ফেলারও হুমকি ধমকি ছিল। কিন্তু ২০২৪ সনের নির্বাচনের পর ওসব কিছুই দৃষ্টিগোচর হয়নি। বরং স্বাভাবিকভাবেই বাইডেন প্রশাসন শেখ হাসিনার নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে গেছেন।
জুলাই আগস্টের পট পরিবর্তনের এক মাসের মাথায় বাংলাদেশে আসেন বহুল পরিচিত মুখ ডোনাল্ড লু ও অন্যান্যরা। ইতিমধ্যে কয়েকজন উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাত করে দেশে ফিরে গেছেন তারা। কিন্তু এসব বৈঠকে বাংলাদেশের পরবর্তি নির্বাচন কিভাবে হবে এসব প্রসঙ্গ অনুপুস্থিত ছিল বলেই জানা গেছে। বরং অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে দৃঢ়তা দেখিয়েছেন তারা। এ ব্যাপারে মার্কিন দূতাবাস এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়- সফররত যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ-পর্যায়ের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণ, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা গড়ে তোলা এবং মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে। দূতাবাস বলেছে, “আমরা আমাদের অংশীদার বাংলাদেশের সাথে অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণ, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা গড়ে তোলা, মানবাধিকার সমুন্নত রাখা এবং জলবায়ু ঝুঁকি কমিয়ে আনতে সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মোঃ তৌহিদ হোসেন এবং সফররত প্রতিনিধি দলের মধ্যে বৈঠক শেষে গত ১৫ সেপ্টেম্বর রোববার দূতাবাস তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে এ কথা জানায়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের আন্তর্জাতিক অর্থবিষয়ক সহকারি সচিব ব্রেন্ট নেইম্যান এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ব্যুরোর সহকারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। দূতাবাস পদ্মা হাউসে পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টার সাথে বৈঠকের বিষয়টিকে দারুণ বলে উল্লেখ করেছে।
দুশ্চিন্তায় বিএনপি ও তাদের সমার্থিত দল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ১৬ সেপ্টেস্বর সোমবার এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, বেশ কিছু সংগঠন, বেশ কিছু গোষ্ঠী, যারা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে-‘এই অন্তর্বর্তী সরকারকে অনির্দিষ্টকালের জন্য রাখা হোক।’ তারা (অন্তর্বর্তী সরকার) একেবারে পরিবর্তন করে দেবে, সব সংস্কার তারাই করে দেবে। তাহলে তো জনগণের দরকার নেই, পার্লামেন্টের দরকার নেই।
সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে জেএসডি আয়োজিত ‘দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট: উচ্চকক্ষের গঠন’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একটা পত্রিকায় খবর দিয়েছে একটা জরিপের বরাত দিয়ে। এই জরিপ কারা দিয়েছে-আমরা বলতে পারবো না। নাম দিয়েছে ব্র্যাক ইনস্টিটিউট। আমি জানি না তারা কীভাবে জরিপটা করেছে। তারা বলেছে-৮০ পার্সেন্ট লোক চায় যতদিন খুশি এই সরকার থাকুক। আমি জানি না তারা এই কথা কোথা থেকে পেলো। জনগণ এটা কোনোদিনই মেনে নেবে না। এই ধরনের কথা, এই ধরনের রিপোর্ট করা থেকে.. আমার মনে হয় ভেবেচিন্তে করা উচিত। এটায় যেন বিভ্রান্তি সৃষ্টি না হয়।’
সমাজের বিজ্ঞ লোকেরাও এখন বিভ্রান্তিকর কথা বলছেন জানিয়ে তিনি বলেন,‘ আমি অবাক হই যখন দেখি আমাদের অত্যন্ত শিক্ষিত মানুষেরা, সমাজে যাদের গুরুত্ব আছে-তারা এখন বিভিন্ন রকম কথা বলেন, যা অত্যন্ত বিভ্রান্তিমূলক। যারা দায়িত্ব পেয়েছেন এই সরকারের, তাদের মধ্যে যখন অনেকে বলেন নতুন দল তৈরি করতে হবে। তখন বিস্মিত না হয়ে পারা যায় না। এই এখতিয়ার ওনাকে কে দিয়েছে। উনি এই দায়িত্ব পেলেন কোথায় যে বলবেন, নতুন দল করতে হবে। তাহলে আমরা... জনগণ কীভাবে ভাববে যে এরা নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়েছে আপাতত রাষ্ট্র পরিচালনা এবং নির্বাচনের ব্যবস্থা করার জন্য মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমার দল যেটা বিশ্বাস করে-(রাষ্ট্রে) মৌলিক যে পরিবর্তন আনতে হবে, সেগুলো জনগণের মতামত ছাড়া সম্ভব নয়। তার জন্য একমাত্র জায়গা হচ্ছে পার্লামেন্ট। সুতরাং এর জন্য সত্যিকার অর্থে একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে হবে। সেই নির্বাচনে যারা নির্বাচিত হবেন, তারা সিদ্ধান্ত নেবেন কোন পরিবর্তনগুলো হওয়া দরকার। শুধু পরিবর্তনই করতে হবে, নাকি নতুন করে লিখতে হবে, নাকি একেবারে বাতিল করে নতুন সংবিধান আনতে হবে-সেটা পার্লামেন্টই সিদ্ধান্ত নেবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’
অন্তর্বর্তী সরকারকে বার্তা দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখনও আপনাদের প্রশাসনে সেসব ব্যক্তি রয়ে গেছেন, যারা ফ্যাসিস্ট সরকারের ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার জন্য মদদ দিয়ে গেছেন। তাদের এখনও সেসব জায়গা থেকে অপসারণ করা হয়নি। আমি আহ্বান জানাবো, দ্রুত তাদের চিহ্নিত করে আপনাদের যে জায়গা থেকে পলিসিগুলো হয়-সেখান থেকে সরিয়ে দিয়ে এমন একটি কাঠামো তৈরি করেন, যেখানে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে।’
সবশেষ
বিএনপির পর আওয়ামীলীগের চেপে বসা ১৬ বছরের শাসনে যে পরিমাণ লুট, খুন, গুম অর্থ পাচারের সূত্র ধরে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, সমাজে বৈষম্য, বেকার বেড়ে যাওয়া। অযোগ্যদের প্রসাশনের বিভিন্নস্থানে বসানো, সমাজে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের প্রশাসনের চেয়েও বড়কিছু হয়ে যাওয়া ও প্রভাব বিস্তার করে শান্তিপ্রিয় মানুষদের অশান্ত করে ফেলেছিল। এতেই শেখ হাসিনা সরকারকে পতনের ডাকে ঘর ছেড়ে মাঠে নেমে আসে সাধারণ মানুষ। আর ছাত্র জনতা শেখ হাসিনার আইনশৃংখলা বাহিনীর একাংশের গুলিতে পিছু না হটে শেষ পর্যন্ত পতন ঘটায় স্বৈরাচারী সরকারের। মানুষ চায় স্বস্তি। এবং সেটা আপাতত কোনো রাজনৈতিক দলের প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড থেকে। প্রফেসর ইউনূসকে তারা টেস্ট কেস হিসেবে দেখছে। পরখ করছে। আপাতত এটাতেই তাদের বিশ্বাস অবিচল। এ অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকাণ্ডে অবিশ্বাসের ছিটেফোটা ফেলে মানুষ আবারও ফুসে উঠবে- এটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাছাড়া তাদের সাপোর্ট দিতে এখন বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগও নামবে- এটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।