শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন। মন্ত্রিপরিষদের সব পালাতক। সংসদ ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। মন্ত্রীবর্গের দফতর চুর্ণবিচুর্ণ সংসদ ভেঙ্গে দেয়ার পর। স্পিকার পদত্যাগ করেছেন। সাংবিধানিকভাবে একজনই আছেন, তিনি রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ চুপ্পু। প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস দেশ চালাচ্ছেন উপদেষ্টা পরিষদ নিয়ে। এমনি মুহূর্তে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেননি, বা রাষ্ট্রপতি যদি বলেন শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র আমার কাছে নেই। বা উনি (শেখ হাসিনা) যাবার সময় তো কিছু বলে গেলেন না। এ জাতীয় মীমাংসিত কথাবার্তার গুরুত্ব কতখানি।
কথা উঠতে শুরু করেছে, সাংবিধানিকভাবে শেখ হাসিনা এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। সংবিধান মেনেই যদি উপদেষ্টাগণ শপথ নেন, তাহলে সংবিধানে তো উপদেষ্টার কোনো সিস্টেম নেই। তাহলে শেখ হাসিনা পদত্যাগ না করে থাকলে তিনিই তো এখনও ওই দায়িত্বে। এসব কথাবার্তায় উৎফুল্ল হচ্ছে আওয়ামীপন্থী প্রশাসনের অনেক কর্তা। ফেরার স্বপ্নে বিভোর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। এটাতে দোষের কিছু নেই। রাজনীতির অধিকার তাদের আছে। কিন্তু এমনি মুহূর্তে এমন চিন্তাধারা বা বের হওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে থাকাদের সঙ্গে ভীষণ সাংঘর্ষিক। কেননা দেড় হাজারের মত হত্যাকাণ্ডের রক্তের দাগ এখনও শুকায়নি। এখনও গুলিবিদ্ধ আহতদের কেউ কেউ নিহত হচ্ছেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের দেশ পরিচালনায় এসব আজগুবি কথাবার্তায় সয়লাব বাংলাদেশ, সয়লাব রাজনীতিবিদগনের বক্তব্যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। কখনও মনে হয় এসবের কোনো ভিত্তি নেই। আবার কখনও মনে হয় এসব কথার উত্তর দেবে কে? পাওয়াও যাচ্ছে না। এহেন পরিস্থিতিতে যে বিষয়টা সামনে চলে আসছে তা হলো দেশ চলছে কিসের উপর ভিত্তি করে। সংবিধান আছে? সে অনুপাতেই চলছে, নাকি অন্য কোনো নির্দেশনা ফলো হচ্ছে। কে চালাচ্ছেন? কার নীল নক্সায় চলছে সবকিছু। আসলেই কী সব ঠিকমত চলছে নাকি কোনো ষড়যন্ত্র আভাস এসবকিছু। কে করছে সেই ষড়যন্ত্র। ক্রমশ গুজবপ্রিয় হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ? নাকি অন্তর্বর্তী সরকারকে স্বস্তিতে দেশ পরিচালনা না করতে দেয়ার আওয়ামী লীগের এক একটা ইস্যু তৈরি এবং সেটা নিয়ে বিতর্ক ছড়িয়ে দেয়া।
সাহাবুদ্দিন চুপ্পু যে সত্যি সত্যিই হাসিনার পদত্যাগপত্র না পাওয়া নিয়ে কথা বলেছেন সেটার প্রমাণ মেলে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের বক্তব্য দেখে। কেনই রাষ্ট্রপতি এমন কথা বলেছেন তার সাক্ষাৎকারে। আর যিনি ওই সাক্ষাৎকার নিয়েছেন, তারই বা কী উদ্দেশ্য এমনি মুহূর্তে এ বিষয়টা ছড়িয়ে দেয়ার?
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ইস্যুতে বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন মিথ্যাচার করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। ২১ অক্টোবর সোমবার সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টার অফিস কক্ষে সাংবাদিকদের কাছে এ মন্তব্য করেন তিনি।
কী বলেছিলেন রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন চুপ্পু
গত ২০ অক্টোবর রোববার একটি ম্যাগাজিন (জনতার চোখ) এ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ঐ প্রতিবেদনে দৈনিক মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে আলাপকালে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্রের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমি শুনেছি তিনি পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু আমার কাছে কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই। বহু চেষ্টা করেও আমি ব্যর্থ হয়েছি। তিনি হয়তো সময় পাননি।’
প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘৫ই আগস্ট সকাল সাড়ে দশটায় বঙ্গভবনে ফোন এলো প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন থেকে। বলা হলো, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবনে আসবেন মহামান্য প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য। এটা শুনেই প্রস্তুতি শুরু হলো বঙ্গভবনে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই ফোন এলো তিনি আসছেন না।’
রাষ্ট্রপতির এমন বক্তব্যে ঝড় বইছে। এটা আবারও কোনো ষড়যন্ত্রের অংশবিষেশ কি না এটা নিশ্চিত হতে মানুষ উৎসাহী হয়ে ওঠে। কারণ সম্প্রতি একের পর এক গুজব ভাসছে বাংলাদেশে। এরমধ্যে দীর্ঘ সময়জুড়ে ছিল ‘চট করে ঢুকে পরতে পারি আমি’। শেখ হাসিনার ডায়ালগ। এতে প্রশাসনে থাকা অনেকেই যারা উপদেষ্টাদের নির্দেশনায় চলছিল, তারাও ভড়কে যান, ভবিষ্যত যদি অন্ধকারচ্ছন্ন হয়ে যায় এ ভেবে।
আইন উপদেষ্টার প্রতিক্রিয়া
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল কড়া সমালোচনা করেছেন রাষ্ট্রপতির ওই বক্তব্যের। সোমবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘আমার কথা হচ্ছে রাষ্ট্রপতি যে বলেছেন-উনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র পাননি। এটা মিথ্যাচার। এটা উনার শপথ লঙ্ঘনের শামিল। উনি (রাষ্ট্রপতি) নিজেই ৫ই আগস্ট রাত ১১টা ২০ মিনিটে পেছনে তিন বাহিনীর প্রধানকে নিয়ে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী উনার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং উনি তা গ্রহণ করেছেন।’
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘এরপর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে জানতে চাওয়া হয়, এই পরিস্থিতিতে করণীয় কী। সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, উপদেশমূলক এখতিয়ার প্রয়োগ করে জানতে চাওয়া হয়। সেটার পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ও সব সব বিচারপতিরা মিলে ১০৬ অনুচ্ছেদের অধীনে মতামত দেন, রাষ্ট্রপতির রেফারেন্সের ভিত্তিতে। এর প্রথম লাইন ছিল, দেশের বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যেহেতু প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) পদত্যাগ করেছেন, তারপর অন্যান্য কথা।’
আসিফ নজরুল আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন, রাষ্ট্রপতি জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়েছেন, এর পরিপ্রেক্ষিতে যে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা যায়, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের এই মতামতের ভিত্তিতে একটি নোট আমরা মন্ত্রণালয় থেকে রাষ্ট্রপতির দপ্তরে পাঠিয়েছি। নোটে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর দেখিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি এই মতামতটা দেখেছেন এবং গ্রহণ করেছেন। এরপর উনি নিজে অন্তর্বর্তীকালীন গঠন করেছেন। ৫ই আগস্ট রাত ১১টা ২০ মিনিটে নিজের মুখে ভাষণে বলেছেন, উনাকে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগপত্র দিয়েছেন এবং উনি গ্রহণ করেছেন। পরবর্তীতে একের পর এক কার্যাবলীর মধ্য দিয়ে এটা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, উনি পুরো জাতির কাছে বিভিন্নভাবে নিশ্চিত করেছেন, আবারও নিশ্চিত করেছেন যে, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগপত্র দিয়েছেন এবং তিনি গ্রহণ করেছেন।’
কিছুটা গম্ভীর গলায় তিনি আরও বলেন, ‘আজকে যদি উনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগপত্র দেননি। এত দিন পরে, প্রায় আড়াই মাস পরে, তাহলে এটা এক ধরনের স্ববিরোধিতা হয়। উনার শপথ লঙ্ঘন হয় এবং এই পদে থাকার যোগ্যতা উনার আর আছে কি না প্রশ্ন আসে। কারণ আমরা জানি বাংলাদেশের সংবিধানে বলা হয়েছে, শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা না থাকলে বা গুরুতর অসদাচরণ করলে রাষ্ট্রপতি হিসেবে থাকতে পারে কি না সেটা নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আমাদের দেশের সংবিধানে আছে।’
রাষ্ট্রপতি পদে থাকার যোগত্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘এখন উনার স্ববিরোধী কথা বলার কোনো সুযোগ নেই। যদি উনি এই বক্তব্যে অটল থাকেন, তাহলে উনার রাষ্ট্রপতি পদে থাকার যোগ্যতা আছে কি না সেটা আমাদের উপদেষ্টামণ্ডলীর সভায় ভেবে দেখা হবে।’
সমন্বয়ত হাসনাত আব্দুল্লাহ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, “সাম্প্রতিক ঘটনা ও বিবৃতির পর আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক ক্ষমতা ফিরে পেতে গোপনে পুনর্বাসনের ষড়যন্ত্র করছে।” সোমবার (২১ অক্টোবর) বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে পোস্ট করা এক ভিডিও বার্তায় হাসনাত অভিযোগ করেন, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক উত্থান-পতন সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ দেশের ওপর আধিপত্য পুনরুদ্ধারে তৎপর হয়ে উঠছে।
তিনি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের একটি বিবৃতির কথা উল্লেখ করেন, রাষ্ট্রপতি বলেছেন, দেশ ছেড়ে পালানোর আগে শেখ হাসিনা কোনো পদত্যাগপত্র জমা দেননি। রাজনৈতিক পুনর্বাসনের নামে আওয়ামী লীগ যে ফিরে আসার কৌশল নিচ্ছে, এটাকে হাসনাত তারই লক্ষণ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন।
হাসনাত বলেন, “চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড আমরা দেখেছি, যেখানে তারা পুনর্গঠনের ভিত্তি তৈরি করছে বলে মনে হচ্ছে। ঢাকায় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের বিভিন্ন অংশ পুনরায় সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। এসব ঘটনাকে সংযুক্ত করলে বোঝা যায়, তারা ফ্যাসিবাদী কাঠামোকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করছে।”
দলের পুনর্বাসনে প্রশাসনিক ও বিচারিক প্রচেষ্টা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।” এর মোকাবিলায় সমন্বয়কারী জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং দলের পুনরুত্থান ঠেকাতে নাগরিকদের একত্রিত হওয়ার আহ্বান জানান।
অতীতের রাজনৈতিক জোটের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে ৫ আগস্টের আগে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ ছিলাম। আমরা মজলুমে হিসেবে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়িয়েছি, অত্যাচারীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। ৫ আগস্টের পর ক্ষুদ্র ব্যক্তি স্বার্থ আমাদের মাঝে বিভক্তি সৃষ্টি করেছে, যা আওয়ামী লীগের জন্য ফিরে আসার ষড়যন্ত্রের সুযোগ তৈরি করেছে।”
হাসনাত রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার ঊর্ধ্বে উঠে দলের পুনর্বাসন প্রচেষ্টা প্রতিহত করতে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “রাজপথে আমাদের উপস্থিতি বজায় রাখতে হবে এবং বাংলাদেশের মাটি থেকে আওয়ামী লীগকে সমূলে উৎখাত করতে হবে।”
রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের বক্তব্যের জবাবে হাসনাত ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে দাবি করেন, “হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে; জনগণ একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে একটি অবৈধ সরকারকে উৎখাত করেছে। এখানে পদত্যাগপত্রের প্রশ্নই ওঠে না।”
এসব প্রশ্ন উঠছে কেন?
গণঅভ্যুত্থানের যে স্প্রিরিট সেটা মলিন উপদেষ্টা পরিষদের কর্মকাণ্ডে। ধীরালয়ে চলছে সবকিছু। বিশেষ করে ল অ্যান্ড অর্ডার বলতে কিছু আছে এটা এখনও ঠাহর করতে পারছে না মানুষ। বেতন নিচ্ছেন, সরকারি সব সুবিধাদিও। এরপরও পুলিশ এখনও ধীর গতিতে। মানুষ আস্থা রাখতে পারছেন না পুলিশের উপর। প্রশাসন, বিচারকার্যের উপরও আস্থাহীনতা। জুলাই আগস্টের ঘটনায় বহুজনের নামে হত্যাকাণ্ড। শেখ হাসিনা ছাড়া আর সবাই দেশে ছিলেন। কিন্তু এদের অনেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত দিয়ে দেশ ছেড়ে গেছেন। কিভাবে? এর কোনো ব্যাখ্যা নেই। মানুষ চরম সন্দেহ এখানে। প্রশাসনের মদদ ছাড়া এসব লোকজন পালাতে পারে?
কিন্তু প্রশাসনের কে তাদের সহায়তা করবে?
এখনও গণহত্যায় সংশিলিষ্ট থাকা বা মদদদানকারী প্রভাবশালীদের অনেকেই ধরাছোয়ার বাইরে। একজন দুইজন করে আগে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ হওয়ার নামে সিগনাল দেয়া হয়। এরপর আটক। এর মধ্যে সাবের হোসেন চৌধুরী পাঁচ হত্যা মামলার আসামী হওয়া স্বত্ত্বেও তাকে রিমান্ড বন্ধ করে জামিন দিয়ে বাসায় চলে যেতে দেয়ার রহস্য মানুষ এখনও জানে না। এরপর আরেক সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রীকেও জামিন। ফলে আওয়ামী লীগের প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের যে অগাধ দয়াও রয়েছে সেটার বহিঃপ্রকাশ ঘটছে এরমধ্যে। এছাড়াও অসমর্থিত সূত্র থেকে জানা গেছে, কারাগারে গ্রেপ্তারকৃতরা বেশ আরাম আয়েশেই রয়েছেন। ধরা পড়ছেন না সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজনেরা কেউ।
ফলে যা হচ্ছে এগুলো যে আইন উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্টদের দয়ার বহিঃপ্রকাশ সেটাই প্রকারান্তরে বলতে চেয়েছেন সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। কিন্তু কেন এমন অনুগ্রহ দেখানো, এত হত্যাকান্ড ঘটানো একটি দলের নেতাকর্মীদের?
কে বাধ্য করছেন এসব, নাকি এমনি এমনিতেই- এমন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস এসব ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করছেন না। উপদেষ্টাদের মধ্যেও কথাবার্তা কম। ফলে আসলেই মানুষ এখন বুঝতে চেষ্টা করছে, অন্তর্বর্তী সরকার কী আসলেই শক্ত অবস্থানে না নড়বড়ে! সত্যিই কী অন্তর্বর্তী সরকারের কন্ট্রোল সর্বত্র রয়েছে, নাকি কোথাও কোথাও বাইপাস হচ্ছে। মানুষ এটা বিশ্বাস করছে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন প্রধান কাজ পার্শ্ববর্তী একটি দেশের।
ফলে দেশের বিভিন্ন স্তরে সেট হওয়া দীর্ঘ ১৬ বছরের যে সেটআপ প্রশাসনে তাদের তো কেউ তেমন পরিবর্তিত হননি। এখন কী তারা পতিত সরকারকে পুনর্বাসনে স্বপ্নে বিভোর নাকি অন্তর্বর্তীদের কথা শুনছে। কী হচ্ছে আসলে, কোথা থেকে কলকাঠি নড়ছে কোন নীল নক্সা বাস্তবায়নে সেটাই জানার প্রত্যাশায় বাংলাদেশের নীরিহ জনগণ।