যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক পুরোনো। বাংলাদেশের অনেক ক্ষেত্রে সহযোগিতার হাত প্রসারিত থাকে যুক্তরাষ্ট্রের সব সময়ই। ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে সম্পর্কে কিছুটা কাটছাঁট হয়েছিল বলে মনে হচ্ছিল। তাছাড়া বাইডেন প্রশাসন বাংলাদেশকে নিয়ে যতটা চিন্তা ভাবনা করে যাচ্ছিলেন, ট্রাম্প সে নীতিতে নেই। এরপরও একটা সম্পর্ক তো অবশ্যই থাকা উচিত। সেটাও ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাইডেনের কাছের মানুষ হওয়ায় ট্রাম্প সেটা কাউন্ট করেছেন বলে শোনা যায়। তবে যতটা ভাবা হয়েছিল ততটা ঠিক নয়।
বসেছিলেন না ড. ইউনূসও। সুযোগ খুঁজছিলেন। অবশেষে সফল হতে শুরু করেছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের অত্যন্ত কাছের যে মানুষ সেই ইলন মাস্কের সঙ্গে ইউনূসের ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি পেয়েছে। মাস্কও ইউনূস ও বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী বলে জানিয়েছেন। বাংলাদেশ মাস্কের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট ব্যবহার করার সুযোগ চাওয়ার পর ইলন মাস্ক রাজি হয়ে যান।
ফলে ক্রমেই দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসছে। বাংলাদেশও ইন্টারনেট দুনিয়ায় বৈপ্লবিক পরিবর্তনের অপেক্ষায়। স্টারলিংকের স্যাটেলাইন কানেকশন যে বাংলাদেশ গ্রহণ করছে সে খবর ইতিমধ্যে পৌঁছে গেছে ইলন মাস্কের কাছে। এ সূত্র ধরে ইতিমধ্যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ব্যবসায়ী এবং স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্ককে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন এবং দেশে স্টারলিংক স্যাটেলাইট সেবা চালুর প্রস্তাব দিয়েছেন।
১৯ ফেব্রুয়ারি মাস্ককে পাঠানো এক চিঠিতে প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন যে, তার বাংলাদেশ সফর দেশের তরুণ-তরুণীদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ করে দেবে, যারা এই অগ্রণী প্রযুক্তির অন্যতম প্রধান সুবিধাভোগী হবে। চিঠিতে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আসুন, একটি উন্নত ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে আমরা একসঙ্গে কাজ করি।’ চিঠিতে আরো বলা হয়, ‘বাংলাদেশের অবকাঠামোর সঙ্গে স্টারলিংকের সংযোগ যুক্ত করা হলে বিশেষ করে দেশের উদ্যমী যুবসমাজ, গ্রামীণ ও সুবিধাবঞ্চিত নারী এবং প্রত্যন্ত ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য তা বৈপ্লবিক পরিবর্তন বয়ে আনবে।’
প্রধান উপদেষ্টা তার উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি ড. খলিলুর রহমানকে স্পেসএক্স টিমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন। যাতে আগামী নব্বই কার্যদিবসের মধ্যে বাংলাদেশে স্টারলিংক চালুর ক্ষেত্র প্রস্তুত করা যায়।
ড. ইউনূস এই এক ইস্যুই শুধু নয়, বাংলাদেশে বিনিয়োগে ইলন মাস্ককে আরো কিছু প্রস্তাবনা দিতে পারেন। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ইলন মাস্কের মধ্যে একটা নতুন সম্পর্ক স্থাপন হওয়ারও সুযোগ দেখছে বাংলাদেশ। যা বাইডেন পরবর্তী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গেও যে কিছুটা দূরত্ব রয়েছে ড. ইউনূসের, সেটা অনেকটাই কাটিয়ে উঠবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। কারণ ইলন মাস্ক একান্ত বন্ধু ট্রাম্পের। বিভিন্ন ইস্যুতেই দুইজন বেশ ঘনিষ্ঠ। ফলে বাংলাদেশে স্টারলিংক সংযোগ, ইলন মাস্কের বাংলাদেশ সফর এসবই ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা না করে ইলন মাস্ক করেছেন বলে মনে হয় না।
এটাতে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ট্রাম্পের এ সময় যে একটা দূরত্বের একটা সম্ভাবনা দেখা হচ্ছিল, সেটা কাটিয়ে ওঠাও সম্ভব হবে।
এর আগে ড. ইউনূস মধ্যপ্রাচ্যে সফরকালীন সময়ে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ইলন মাস্কের সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে ফোনালাপ করেন। এ সময় ভবিষ্যৎ সহযোগিতার সম্ভাবনা এবং বাংলাদেশে স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা চালুর অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ব্যবসায়ী এবং স্পেসএক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্ককে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন এবং দেশে স্টারলিংক স্যাটেলাইট সেবা চালুর প্রস্তাব দিয়েছেন।
ইলন মাস্ক তখনই বলেছিলেন ড. ইউনূসের সঙ্গে কাজ করতে তিনি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন এবং বাংলাদেশ সফরের অধীর আগ্রহে রয়েছেন। ফলে ড. ইউনূসের এমন আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ খুব শিগগিরই একটা দিনক্ষণ জানা যাবে নিঃসন্দেহে।
এটা তো দুই দেশের ব্যবসায়ী একটা হিসাবনিকাশ। তবে ড. ইউনূস সম্ভবত এ চান্সটা মিস করবেন না ট্রাম্পের কাছে চলে যাওয়ার। তাছাড়া ট্রাম্পও উদারপন্থী। বাংলাদেশের মতো ছোট্ট একটি দেশ ও দেশের পলিটিকস, এখানে কে তাকে পছন্দ করলো কী করলো না এটা ভাবার সুযোগ তার নেই। তার প্রয়োজন চতুর্মুখী সম্পর্কোন্নয়ন। প্রথম প্রেসিডেন্ট হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের চির শত্রুর সঙ্গেও তিনি হাত মিলিয়েছেন। যার মধ্যে চীন, উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট অন্যতম। সে তুলনায় বাংলাদেশ ও ড. ইউনূস একেবারেই তুচ্ছ। কারণ ড. ইউনূস হয়তো বাইডেনকে সমর্থন করেছেন। এটা ব্যক্তিগত বিষয়। কারণ ইউনূস তো তখন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না। এখন প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্বে। ফলে ট্রাম্প ও ইউনূসের মধ্যে সম্পর্ক উন্নতির জন্য ইলন মাস্কের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন একটা সেতুবন্ধন হলে অসম্ভব কিছু না।
বাংলাদেশও চাইবে বিশ্বের এতো বড় এক পরাশক্তির সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে এগিয়ে যেতে। কারণ বিপদআপদে বহু সহযোগিতা যুক্তরাষ্ট্র করে আসছে। যার মধ্যে অন্যতম করোনাকালীন সময়ে ফ্রি টিকা প্রদান। যেখানে ভারত অগ্রিম অর্থ নিয়েও টিকা দেয়নি, সেখানে যুক্তরাষ্ট্র তার চেয়েও উন্নতমানেরটা দিয়েছে ফ্রি। ফলে ওই বিপদকালীন সহায়তা চিরদিন মনে রাখবে বাংলাদেশের মানুষ।