৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৩:২৯:৫১ অপরাহ্ন


অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নিরপেক্ষতা প্রমাণ জরুরি
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৫-০৩-২০২৫
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নিরপেক্ষতা প্রমাণ জরুরি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস


ছাত্র-জনতার রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করছে। নিরপেক্ষতার স্বার্থে ছাত্র উপদেষ্টাসহ বিশেষ পরিচয়ে পরিচিত উপদেষ্টাদের পদত্যাগ করা উচিত। একজন উপদেষ্টা সঠিকভাবে পদত্যাগ করেছেন। অন্য উপদেষ্টাবৃন্দ যারা ছাত্র প্রতিনিধি কোটায় উপদেষ্টা পরিষদে তাদের দ্রুত পদত্যাগ না করলে অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। একই সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবকেও অনুধাবন প্রয়োজন যে, তিনি একজন সরকারি কর্মচারী। তাকে সব বিষয়ে জাতিকে উপদেশ দেওয়া শোভনীয় নয়, যা প্রধান উপদেষ্টা, তথা অন্তর্বর্তী সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে। সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সরকারঘনিষ্ঠ সবার এখন অতিকথন নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।

দেশের সেনাপ্রধান কিছু বিতর্কিত বিষয় নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। পূর্ববর্তী সরকার পরিবর্তনের প্রথম ঘোষণা এসেছিল সেনাপ্রধানের তরফ থেকে। তিনি পূর্ববর্তী সরকারপ্রধানের পদত্যাগ এবং সেনা প্রহরায় দেশত্যাগের ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেনা সদর দফতরেও তিনি কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুলকে ডেকে নিয়েছিলেন। দেশে সেনাশাসন বা জরুরি অবস্থা ঘোষিত হয়নি। বরং আদালতের উপদেশ নিয়ে রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দিয়ে সংবিধানের আলোকে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করেন। সেই সরকার সংবিধান রক্ষার অঙ্গীকার করে শপথ গ্রহণ করে কীভাবে। কোন যোগ্যতার ভিত্তিতে সেই সরকারের উপদেষ্টাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, সেটি কেউ খোলাসা করে বলেনি। 

দেশে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাজুক। জুলাই-আগস্ট ২০২৪ আন্দোলনের সময় অনেক পুলিশ হত্যা, থানা, অস্ত্রাগার লুট, অগ্নিকাণ্ড ঘটিয়ে পুলিশ বাহিনীর মনোবল ভেঙে দেওয়া হয়েছে। অনেক চেষ্টা করেও পুলিশ বাহিনীকে আগের রূপে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। জেলখানা থেকে অনেকে পালিয়ে গেছে, অনেক সন্ত্রাসীকে জামিন দেওয়া হয়েছে। এখন সারা দেশে সন্ত্রাসী বাহিনী খুন, লুট রাহাজানিতে মেতে উঠেছে।

সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য পুলিশ, র‌্যাব, বিজেবির পাশাপাশি ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সেনা বাহিনীকে দায়িত্ব দিয়েছে। কিন্তু তবুও সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দেশজুড়ে পূর্ব ঘোষণা দিয়ে বঙ্গবন্ধু জাদুঘর, আওয়ামী লীগ নেতাদের বাসস্থানসহ নানা স্থাপনা ভাঙচুর করেছে। মহান স্বাধীনতা আন্দোলনের অনেক স্মারক এবং মুক্তিযুদ্ধের নিদর্শন ধ্বংস হয়েছে। দেশজুড়ে যখন অরাজকতা তুঙ্গে, তখন সেনাপ্রধান সম্প্রতি কড়া ভাষায় বক্তব্য দিলেন।

প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে তিনি অনেক কথা প্রকাশ্যে না বলে প্রধান উপদেষ্টা এবং উপদেষ্টাদের বলা শোভনীয় ছিল। জাতীয় নির্বাচন কবে হবে, সে বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা সংশ্লিষ্ট মহলের সঙ্গে আলাপ করে ইতিমধ্যেই ইঙ্গিত দিয়েছেন। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো সেনাবাহিনীকেও সে অনুযায়ী সরকারকে সহায়তা করতে হবে। সেনাপ্রধান অনেক কথাই বলেছেন, যার মধ্যে সেনা শাসকের মতো মনে হয়েছে। বিডিআর হত্যাকাণ্ড বিষয়ে চূড়ান্ত কিছু বলা সংগত বা শোভনীয় হয়নি। বিষয়টি এখন বিচারাধীন এবং স্পর্শকাতর। 

দেশের বৃহত্তর স্বার্থে সবাইকে নিজেদের অধিকার সচেতন থেকে অবাধ, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আদর্শ পরিবেশ গড়ে তলায় সচেষ্ট হয় উচিত। দেশি-বিদেশি নানা মহল দেশের ঐক্য বিনষ্ট করে দেশকে বিপদগামী করতে ষড়যন্ত্র করছে। নাজুক সময়ে কারোই নিজের সীমা অতিক্রম করা উচিত হবে না। জনগণের ভোট নিশ্চিত করতে সবাইকে সচেষ্ট থেকে সহযোগিতা করতে হবে।

শেয়ার করুন