১৭ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ০৫:২২:৪২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
গোপালগঞ্জ এখন মুজিববাদী সন্ত্রাসীদের আস্তানায় পরিণত হয়েছে- নাহিদ এনসিপি’র মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচি ঘিরে ব্যাপক সংঘর্ষ চারজন নিহত নিউইয়র্কে ২০ লাখ মানুষ মেডিকেইড ও ৩ লাখ পরিবার স্ন্যাপ সুবিধা হারাবে নতুন ভিসা ফিতে বাংলাদেশিদের খরচ বাড়বে আড়াই গুণ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ২ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দাবি মাহমুদ খলিলের টেক্সাসের অভিবাসন আইন এসবি ৪ অসাংবিধানিক ঘোষণা ফ্লোরিডার ‘সিনেট বিল ৪-সির কার্যকারিতা বন্ধ করলো যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট নতুন নীতি ঘোষণা : ৯ কারণে নাগরিকত্ব হারাতে পারেন জঙ্গিবাদে সতর্ক থাকার মার্কিনী পরামর্শে নানা প্রশ্ন এনসিপিসহ ১৪৪ নিবন্ধন প্রত্যাশী দলের তথ্যে ঘাটতি


নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে পুরান ঢাকার ঐতিহাসিক স্থাপনা ধ্বংস থেমে নেই
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-০৬-২০২৫
নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে পুরান ঢাকার ঐতিহাসিক স্থাপনা ধ্বংস থেমে নেই পুরান ঢাকায় ঐতিহ্যবাহী ভবন


পুরান ঢাকার ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর একযোগে ধ্বংসের প্রচেষ্টা চলছেই। সংস্থাগুলোর অব্যবস্থাপনা, দায়িত্ব পালনে অবহেলা ও ব্যর্থতা এবং ক্ষেত্রবিশেষে পরিকল্পিত নিষ্ক্রিয়তার কারণেই স্থাপনাগুলো অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ছে।

আরবান স্টাডি গ্রুপ (ইউএসজি)-এর প্রধান নির্বাহী তাইমুর ইসলাম আমেরিকা থেকে প্রকাশিত দেশ প্রতিনিধিকে তথ্য দিয়ে জানান, সম্প্রতি পুরান ঢাকার একাধিক ঐতিহাসিক ও স্থাপত্যিক গুরুত্বসম্পন্ন ভবন ধ্বংসের যে অপতৎপরতা চলছে, তা আমাদের চরমভাবে উদ্বিগ্ন ও আতঙ্কিত করেছে। এই ভাঙচুরের ঘটনাগুলো ঘটেছে কখনো বেসরকারি ভবনে, কখনও সরকারি মালিকানাধীন বা ব্যবস্থাপনাধীন ভবনে এমনকি হাইকোর্টেও নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে কিংবা সুপ্রিম কোর্টেও আপিল বিভাগে বিচারাধীন স্থাপনাতেও।

স্থপতি তাইমুর ইসলাম জানান, ঈদুল আজহার প্রাক্কালে টিপু সুলতান রোডের শতবর্ষী শঙ্খনিধি হাউজ (রাধাকৃষ্ণ মন্দির) এর ঝুল বারান্দাসহ সামনের অংশ ধসে পড়ে। বেআইনিভাবে নির্মিত একটি বাথরুম ছিল এই ধ্বংসযজ্ঞের মূল কারণ। কয়েক দশক ধরে জবরদখল, অবৈধ পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও ধ্বংসের শিকার এই ঐতিহাসিক ভবনটির সুরক্ষা নিশ্চিত করার দায়িত্ব অন্তত চারটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সংস্থার ওপর ন্যস্ত থাকলেও সংস্থাগুলোর অব্যবস্থাপনা, দায়িত্ব পালনে অবহেলা ও ব্যর্থতা এবং ক্ষেত্রবিশেষে পরিকল্পিত নিষ্ক্রিয়তার কারণেই ভবনটির অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে।

তিনি জানান, এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ফরাশগঞ্জের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা মঙ্গলালয়ে আবারও ভাঙচুর শুরু হয়। এটি আরবান স্টাডি গ্রুপ কর্তৃক তালিকাভুক্ত স্থাপনাগুলোর অন্যতম, যেগুলোর ওপর উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। গত দুই বছরে বেশ কয়েকবার পুলিশের সহযোগিতায় এই ভাঙচুর প্রতিরোধ করা গেলেও এবার পুনরায় আক্রমণ চালানো হয়েছে। আবারও পুলিশের হস্তক্ষেপে আপাতত তা বন্ধ হলেও ধারাবাহিক ধ্বংসের ফলে ভবনটির প্রায় সব অলংকরণ ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উল্লেখযোগ্য যে পুরো ফরাশগঞ্জ এলাকাটিকে ঐতিহ্যবাহী অঞ্চল হিসেবে সংরক্ষণ করা জরুরি।

ঈদের পরপরই জানা যায়, তার দুই সপ্তাহ আগে সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলা হয়েছে শতবর্ষী নারিন্দা স্যুয়ারেজ পাম্পিং স্টেশন ঢাকার প্রথম আধুনিক স্যুয়ারেজ ব্যবস্থার অংশ। এই স্থাপনাটিও আরবান স্টাডি গ্রুপের তালিকাভুক্ত ছিল এবং সেই সূত্রের ওপরও আদালতের নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল। তবুও ঢাকা ওয়াসা উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করে এটি ভেঙে ফেলেছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং আইন লঙ্ঘনের সুস্পষ্ট উদাহরণ। সরকারি মালিকানাধীন এই স্থাপনাটি উচ্চ আদালতের রায় লঙ্ঘন করে সরকারি উদ্যোগেই ভেঙে ফেলা হয়েছে।

১৩ জুন রাতে জানা যায়, বিংশ শতাব্দীর শুরুতে মুসলিম জাগরণের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব সাংবাদিক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন এবং তার স্বনামধন্য কন্যা, নারী জাগরণের অগ্রদূত নূরজাহান বেগমের বাসভবন যা নাসিরউদ্দিন স্মৃতি ভবন হিসেবে পরিচিত, সেখানেও বহুতল নির্মাণের উদ্দেশ্যে বেআইনি ভাঙচুর শুরু হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে শুনানির জন্য অপেক্ষমান ভবনগুলোর অন্যতম এই ভবনটি কোনো অনুমতি ছাড়াই ভাঙা শুরু করা হয়। ১৩ জুন রাতে ঘটনাটি জানার পর, পরদিন গেন্ডারিড়ায় থানায় একটি জিডি দায়েরের মাধ্যমে সাময়িকভাবে এই ভাঙচুর ঠেকানো সম্ভব হয়েছে। 

২০১৮ সালে হাইকোর্ট থেকে ঐতিহ্য সংরক্ষণ বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ যুগান্তকারী রায় প্রদান করা হলেও, গত সাত বছরে সরকারি দফতরগুলোর সমন্বয়হীনতা, অবহেলা এবং সদিচ্ছার অভাব, বিশেষ করে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের বিতর্কিত ভূমিকার কারণে এই রায়ের কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। এমন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা গত সাত বছরেও প্রয়োজনীয় অ্যাসেসমেন্টের মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে তালিকাভুক্ত করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে এগুলোর অস্তিত্ব আজ সংকটাপন্ন। আমরা বরং দেখছি নুরজাহান বেগম এর ভবনটি সমন্ধে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের মূল্যায়ন বলা হয়েছে সংরক্ষণের জন্য যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ নয়। এভাবেই নিলাম ঘর, ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল প্রাচীন ভবন, বড় কাটারার একাংশ আমরা হারিয়েছি।

এসব বিষয় উল্লেখ করে তাইমুর ইসলাম বলেন, পুরান ঢাকায় ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাগুলোর ওপর চলমান ধ্বংসযজ্ঞ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। তালিকাভুক্ত সব স্থাপনাকে যথাযথভাবে সুরক্ষা দিতে হবে এবং সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। ঢাকা মহানগরীর ঐতিহ্যবাহী স্থাপনার চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়ন না হওয়া পর্যন্ত হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী আরবান স্টাডি গ্রুপের তালিকাভুক্ত সব স্থাপনার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। আরবান স্টাডি গ্রুপের তালিকাভুক্ত সব স্থাপনা যথাযথ আইনানুগ প্রক্রিয়ায় মূল্যায়ন করে, চূড়ান্ত তালিকাভুক্তি ও সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে আমাদের সাংস্কৃতিক ও স্থাপত্যিক ঐতিহ্য রক্ষায় একটি স্পষ্ট, কার্যকর ও দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করতে হবে।

শেয়ার করুন