১৭ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ০৬:৪৮:৪৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
গোপালগঞ্জ এখন মুজিববাদী সন্ত্রাসীদের আস্তানায় পরিণত হয়েছে- নাহিদ এনসিপি’র মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচি ঘিরে ব্যাপক সংঘর্ষ চারজন নিহত নিউইয়র্কে ২০ লাখ মানুষ মেডিকেইড ও ৩ লাখ পরিবার স্ন্যাপ সুবিধা হারাবে নতুন ভিসা ফিতে বাংলাদেশিদের খরচ বাড়বে আড়াই গুণ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ২ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দাবি মাহমুদ খলিলের টেক্সাসের অভিবাসন আইন এসবি ৪ অসাংবিধানিক ঘোষণা ফ্লোরিডার ‘সিনেট বিল ৪-সির কার্যকারিতা বন্ধ করলো যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট নতুন নীতি ঘোষণা : ৯ কারণে নাগরিকত্ব হারাতে পারেন জঙ্গিবাদে সতর্ক থাকার মার্কিনী পরামর্শে নানা প্রশ্ন এনসিপিসহ ১৪৪ নিবন্ধন প্রত্যাশী দলের তথ্যে ঘাটতি


ডিটেনশন সেন্টারে রেকর্ড ৫৯ হাজার অভিবাসী
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-০৭-২০২৫
ডিটেনশন সেন্টারে রেকর্ড ৫৯ হাজার অভিবাসী ক্যালিফোর্নিয়ার ম্যাকফারল্যান্ডে অবস্থিত গোল্ডেন স্টেট অ্যানেক্স-যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) পরিচালিত একটি ডিটেনশন সেন্টার


যুক্তরাষ্ট্রে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস) বর্তমানে ৫৯ হাজারের বেশি অভিবাসীকে বিভিন্ন ডিটেনশন সেন্টারে আটক করে রেখেছে। এই সংখ্যা দেশটির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এতো বিশাল বন্দি সংখ্যার রেকর্ড তৈরি করেছে। অভ্যন্তরীণ সরকারি তথ্য অনুযায়ী, আইসিই বর্তমানে ৪১ হাজার ৫০০ জন ধারণক্ষমতার তুলনায় ১৪০ শতাংশেরও বেশি মানুষকে আটকে রেখেছে, যা কংগ্রেস কর্তৃক নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করেছে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, বর্তমানে আটক অভিবাসীদের প্রায় ৪৭ শতাংশের বিরুদ্ধে কোনো অপরাধমূলক রেকর্ড নেই, এবং মাত্র ৩০ শতাংশ কোনো অপরাধে দণ্ডিত হয়েছেন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের অধীনে অভিবাসনবিরোধী অভিযানে ব্যাপকভাবে ধরপাকড়ের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে এই পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। যদিও ট্রাম্প তার প্রচারণায় অপরাধী অভিবাসীদের দেশছাড়া করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, বাস্তবে অনিয়মিত বা কাগজপত্রবিহীন অভিবাসীদের নির্বিশেষে আটক করা হচ্ছে। এমনকি যাদের বিরুদ্ধে কোনো অপরাধ নেই, তারাও বাদ পড়ছেন না। আইস প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১ হাজার ২০০ জনকে গ্রেফতার করছে; জুন মাসে কয়েকদিন এই সংখ্যা ২ হাজার ছাড়িয়েছে। অথচ ট্রাম্প প্রশাসনের শীর্ষ উপদেষ্টা স্টিফেন মিলার মন্তব্য করেছিলেন, প্রতিদিন কমপক্ষে ৩ হাজার অভিবাসীকে গ্রেফতার করা উচিত।

সিরাকিউজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অধ্যাপক অস্টিন কোচার বলেন, আমি যতদূর জানি, আইস কখনো এত বিপুল সংখ্যক অভিবাসীকে একসঙ্গে আটক রাখেনি। এটি যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন আটক ইতিহাসে নজিরবিহীন। বর্তমানে যাদের আটক রাখা হয়েছে, তাদের প্রায় ৭০ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে অর্থাৎ সীমান্ত পার হওয়ার সময় নয়, বরং দেশের ভেতরে দীর্ঘদিন বসবাসরতদের লক্ষ্য করেই এই অভিযান চলছে। বাইডেন প্রশাসনের শেষ দিকে অভ্যন্তরীণ গ্রেফতারের হার ছিল ৪০ শতাংশেরও নিচে। আইসিই তাদের ধরপাকড় অভিযান আরও জোরদার করেছে বিভিন্ন ফেডারেল সংস্থার, যেমন সীমান্ত রক্ষা বাহিনী, এফবিআই ও ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সহায়তায়। পাশাপাশি, রাজ্য ও স্থানীয় জেল থেকে অপরাধী সন্দেহে অভিবাসীদের হেফাজতে নেওয়া হচ্ছে।

ট্রাম্প প্রশাসন বাইডেন আমলের সীমিত নির্দেশনা বাতিল করে আইসিইকে প্রায় সব অনিয়মিত অভিবাসীকে আটক করার ক্ষমতা দিয়েছে। শুধু তাই নয়, কর্মস্থল থেকে অভিবাসী ধরপাকড়ের ওপর যে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা ছিল, সেটিও তুলে নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি নেব্রাসকার একটি মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা ও লুইজিয়ানার একটি ঘোড়দৌড় ট্র্যাকে বড় আকারে অভিযান চালানো হয়। কংগ্রেস আইসকে যতজন বন্দি রাখার জন্য অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে, তার চেয়ে অনেক বেশি মানুষ এখন আটক রয়েছে। প্রশাসন তাই বিকল্প বন্দিশিবির খোঁজার চেষ্টা করছে। টেক্সাসের ফোর্ট ব্লিস সামরিক ঘাঁটি এবং ফ্লোরিডার এভারগ্লেডসে নতুন ডিটেনশন সেন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা চলছে। ফ্লোরিডা সরকার ‘অ্যালিগেটর আলকাট্রাজ’ নামে একটি বড় ডিটেনশন সাইট নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে।

আইস এক বিবৃতিতে জানায়, বিপুলসংখ্যক অপরাধী ও জননিরাপত্তার হুমকিস্বরূপ অনিয়মিত অভিবাসীদের গ্রেফতার করতে গিয়ে আমাদের বড় আকারের হেফাজতের প্রয়োজন হয়েছে। তারা আরো জানায়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সমর্থিত ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল’-এর মাধ্যমে অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত হলে তারা ১ লাখ পর্যন্ত ডিটেনশন শয্যার ব্যবস্থা করতে পারবে। অধ্যাপক কোচার এ প্রসঙ্গে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এই হারে গ্রেফতার ও বন্দিশিবিরে লোকসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে আইসিই কীভাবে মানবিক মানদণ্ড বজায় রাখবে ও যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করবে, তা নিয়ে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।

যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন নীতি বর্তমানে আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় কঠোর ও বিস্তৃত হয়েছে। আইসিইয়ের হাতে বিপুলসংখ্যক মানুষ আটকে থাকার ঘটনায় যেমন মানবাধিকার সংস্থাগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করছে, তেমনি এ নিয়ে আইনি ও নৈতিক প্রশ্ন উঠেছে-এই গ্রেফতার কি কেবল নিরাপত্তা রক্ষার উদ্দেশ্যে, না কি এর পেছনে অন্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও রয়েছে? এদিকে ২০২৫ সালের সর্বশেষ সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, আইসিই হেফাজতে বর্তমানে ৫৬ হাজার ৩৯৭ জন অভিবাসী রয়েছে, যা ইতিহাসে রেকর্ড। এর মধ্যে ৭১.৭ শতাংশের বিরুদ্ধে কোনো অপরাধমূলক অভিযোগ নেই। রাজ্যভিত্তিক হিসেবে সবচেয়ে বেশি অভিবাসী আটক রয়েছে টেক্সাসে-প্রায় ১২ হাজার ৬২৩ জন। এরপর লুইজিয়ানা ৭ হাজার ২৮৯ জন, ক্যালিফোর্নিয়া ৩ হাজার ১৯৯ জন, জর্জিয়া ২ হাজার ৭৯০ জন এবং অ্যারিজোনা ২ হাজার ৪৯৯ জন।

এই বিপুলসংখ্যক অভিবাসী আটক থাকার ফলে মানবিক, আইনি এবং রাজনৈতিক দিক থেকে গুরুতর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অনেক বন্দিশিবিরে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত মানুষকে রাখা হচ্ছে, ফলে সেগুলোর স্বাস্থ্যসেবা, আইনি সহায়তা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো অভিযোগ করছে, অপরাধহীন অভিবাসীদের দীর্ঘ সময় আটকে রাখা যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের লঙ্ঘন।

এই পরিসংখ্যান স্পষ্ট করে যে অভিবাসন নীতির প্রয়োগ কেবল সীমান্তে সীমাবদ্ধ নেই, বরং দেশের অভ্যন্তরে বহু বছর ধরে বসবাসরত অভিবাসীদের বিরুদ্ধেও ব্যাপক ধরপাকড় চলছে। ফলে, বিভিন্ন রাজ্যে সম্প্রদায়ভিত্তিক আতঙ্ক, পরিবার বিচ্ছিন্নতা এবং স্থানীয় অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব স্পষ্টভাবে দেখা দিচ্ছে।

শেয়ার করুন