হাঁক-ডাক দিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের চীনের প্রশংসা করা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে জল্পনা কল্পনার শেষ নেই। কেউ কেউ মনে করছে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এধরনের মন্তব্য অতি নিকটে থাকা প্রতিবেশীকে কৌশলী খোঁচা মেরেছেন ফখরুল। কারো কারো মতে, শুধু ভারত নয়, চীনকেও একহাত নিয়ে নিলেন তিনি।
কি বললেন মির্জা ফখরুল
গত ৩০ জুন সোমবার বিকালে রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপি’র পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। দলটির সাম্প্রতিক চীন সফর বিষয়ে জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। চীনের কমিউনিস্ট পার্টিও (সিপিসি) আমন্ত্রণে ছিল ওই সফর। বিএনপি নেতারা দাবি করেন তাদের সফরটা ছিল মূলত রাজনৈতিক। অন্যদিকে পাঁচ দিনের এ সফরে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে বলেও জানান বিএনপির মহাসচিব। তবে সংবাদ সম্মেলনে একটি বক্তব্য নজর কেড়েছে সবার। তা হলো
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ধারা ফেরাতে চীনের মনোভাব ইতিবাচক। সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে আওয়ামী লীগ আমলে অনুষ্ঠিত তিনটি নির্বাচনে চীনের সমর্থনের বিষয়টি উঠে আসে। বর্তমানে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ধারা ফেরাতে চীনের মনোভাব কেমন দেখা গেছে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অত্যন্ত পজিটিভ (ইতিবাচক) দেখেছি।’
এমন বক্তব্যের তাৎপর্য কি?
দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ভোটের দাবি বিএনপিসহ পুরো দেশবাসী আন্দোলন করে আসছিল। কিন্তু ১৭ বছরে বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার ব্যাপারে বিশ্বের অনেক শক্তিশালি দেশ তেমন উচ্চবাচ্য করেনি। তারমধ্যে চীনও প্রথম কাতারে। এমনও জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে বিএনপি’র শীর্ষ নেতারা বহুবার সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যাপারে চীনের সহানভুতি বা সুদৃষ্টি চেয়েও ব্যর্থ হয়েছেন। এমনকি খোঁজ নিয়ে জানা যায় ওই সময়ে চীনারা বিএনপি’কে একপ্রকার পাশ কেটেই চলতো। এমনকি আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে বিএনপি’র নেতারা চীনাদের ন্যূনতম চায়ের দাওয়াতে-ও স্থান করে নিতে পারতো না অথবা সুযোগই পেতো না। সে-ই চীন এখন বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ধারা ফেরাতে ‘অত্যন্ত পজিটিভ (ইতিবাচক) দেখেছেন বলে প্রশংসা করছেন মির্জা ফখরুল? বিষয়টা অনেকের কাছেই একধরনের ‘ভদ্রলোকের খোচা’ মারার কায়দা বলেই মনে করেন। তবে কারো মতে, একটি মাত্র মন্তব্যে মির্জা ফখরুল অনেক কিছুই বুঝিয়েছেন বলেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন। মির্জা ফখরুলের এমন বক্তব্য যে কেবল চীনকে ঘায়েল করা হয়েছে তা-ও নয়। এই তীর ছোড়া হয়েছে ভারতের দিকেও। কেননা প্রতিবেশী ভারত যে কি-না একাত্তরে নিরস্ত্র বাংলাদেশের জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন অথচ সেই দেশ ১৭ বছরে এখানে একটি সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যাপারে ন্যূনতম টান অনুভব করেনি। ‘আওয়ামী লীগই আমার’ বাংলাদেশের জনগণ নয়-এমন নীতিতে ১৭ বছর ধরে একটি ফ্যাসিবাদী সরকারকে দেশটি অকুন্ঠ সমর্থন দিয়ে গেছে সে-ই ভারত। এতে করে ভারতের বর্তমান সরকার যেমন বাংলাদেশের জনগণের সেন্টিমেন্টকে অগ্রাহ্য করেছে তেমনি দেশটি কৌশলগতভাবে হেরে গেছে বলে নিজ দেশেও বদনাম কুড়াচ্ছে। কারো কারো মতে, সেই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারকেই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গিয়ে আবারও ক্ষমতায় তাদেরকে নিয়ে আসতে ভারতের বর্তমান সরকার নানান ধরনের ছলচাতুরির আশ্রয় নিচ্ছে। অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনে চেয়ে কারো কারো মতে সেই আওয়ামী লীগকেই বাংলাদেশে রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। কোনো কোনো বিশ্লেষক মনে করেন ভারত বর্তমানে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের ব্যাাপারে বেশ সোচ্চার। কিন্তু বিগত ১৭ বছরে তেমনটি চায়নি পাত্তাই দেয়নি বাংলাদেশের জনগণের সেন্টিমেন্টকে। আবার কারো কারো মতে এখনইবা ভারত বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচন চায় কি-না সেব্যাপারেও সন্দেহ রয়েছে। কারো কারো মতে, গণতান্ত্রিক ধারা ফেরাতে চীনকে মির্জা ফখরুল ‘অত্যন্ত পজিটিভ (ইতিবাচক) যে চোখ দিয়ে দেখেছন বলে প্রশংসা করলেন, ঠিক তেমনটা ভারতকেও বুঝিয়েছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা গণতান্ত্রিক ধারা ফেরাতে চীনকে মির্জা ফখরুলের ‘অত্যন্ত পজিটিভ (ইতিবাচক) বলে মন্তব্যকে এভাবেই দেখেন। তবে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এমন কৌশলী খোচা মারার বিষয়টি রাজনৈতিক অঙ্গনই নয়, পুরো কূটনৈতিক মহলে বেশ সাড়া ফেলেছে।